এক পশলা বৃষ্টি আর সে, পর্ব – ১১

0
1030

২২
,
,
,
ফিরানিতে যাবার সময় আম্মুকে খুব জোর করলাম সাথে যাবার জন্য কিন্তু তিনি গেলেন না…. উল্টো আমার কথা শুনে হেসে কুটি কুটি….. ছেলে বউয়ের সাথে নাকি এখন শ্বাশুড়ি ফিরানিতে যাবে….. লোক হাসানো যাকে বলে….. এসব বলছে আর হাসছেন…… যম ঠাকুর আম্মুর রুমে আসতেই আম্মু ওনাকে সব বলে দিলেন….. আমিও একপ্রকার জেদ ধরেই ওনাকে বললাম আম্মুকে যেনো বুঝিয়ে বলেন আমাদের সাথে যাবার জন্য……আমার এই কথা শুনে মা ছেলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলেন….. আমি অবাক হয়ে ওনাদের কান্ড দেখছি…. কি এমন বলেছি যে দুজন মিলে যুক্তি করে হাসছে!!! আমি মুখটা কালো করে খালার কাছে গিয়ে বললাম….. খালা আম্মুকে রাজি করিয়ে দিন না!!! সাথে আপনিও চলেন…. আপনাদেরকে আমার সাথে নিয়ে যাবো…. ওমা খালাও দেখি হাসে….. ওনি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন….. যাবো মা জান…. অবশ্যই যাবো….. তবে আজকে না…. আজকে মায়েরা ছেলে মেয়েদের সাথে যাবার যে নিয়ম নেই মা জান….. লোকে তো হাসবে…… খালার কথা বলার মাঝেই আম্মু আসলেন…… ফুলি তোর মা জানরে বুঝা….. মেয়ে নাকি আমারে নিয়ে যাবে ফিরানিতে….. বল!! এতো অবুঝ….. তবে একদিকে ভালোই হয়েছে বল…. তুই আর আমি মিলে ওর গাল টেনে, চুল টেনে, পিটিয়ে পিটিয়ে সংসারি শিখিয়ে দিবো কি বল….. আমি আম্মুর দিকে ভয়ে তাকাতেই আম্মু খুব সুন্দর করে হেসে কপালে চুমু খেয়ে বললেন…. মনে করে কিন্তু মায়ের কাছে বিচার দিয়ে আসিস….. তরে যে মেরে ধরে সংসার শিখানোর কথা বলেছি…..বলেই দুজন আমাকে মাঝ খানে রেখে জড়িয়ে ধরলেন….. এই তিনদিনে মানুষ গুলোকে যত দেখছি ততই তাদের প্রতি ভালোলাগাটা বেড়ে যাচ্ছে….. ফুলি খালার প্রতি আম্মুর নির্ভরতা আর বিশ্বাস দেখে আমি ভুলেই গিয়েছি যে ওনি এখানে কাজ করেন…..আম্মু আমাকে বিয়ের পরদিন রাতে…. যেদিন ফুলি খালার সাথে আমার প্রথম কথা হলো সেদিন ই….. আড়ালে ঢেকে নিয়ে বলেছেন……
,
,
,
——— তুলি আমি কখনো তোকে বউমা ডাকবো না….. কথাটা শুনে বেশ চমকে ছিলাম…. আম্মু আমাকে আরও চমকে দিয়ে বললেন আমি তোর মাকে কথা দিয়েছি তোকে আমি আমার মেয়ে করে রাখবো….. যদি তোকে বউমা বলে ডাকি তাহলে তো নিজেকে তোর শ্বাশুড়ি মনে হবে মা না….. আমি চাই না আমি তোর সাথে শ্বাশুড়ি হয়ে থাকি তোকে কোন কষ্ট দেই….. তোকে আমি আগেও যেমন টুকি ডেকেছি এখনো ডাকবো কেমন!!তোকে যেমন আমি বউ ভাবি না তেমনি ফুলিকে ও আমি কাজের লোক ভাবি না….. ও আমাকে আপা ডাকে…. আর আমি ওকে আমার ছোট বোন ভাবি….. টুকি তুইও কখনো ওকে কাজের লোক ভাবিস না মা….. ওর সাথে তোর তুলনা করলাম বলে নিজেকে ছোট ভাবিস না বা আমার উপর রেগে থাকিস না….. আমি সব মানুষ কেই এক ভাবি….. পরম আল্লাহ আমাদের নিজ হাতে বানিয়েছেন….. তার সৃষ্টিকে সামান্য কয়টা টাকার জন্য কিভাবে ভেদাভেদ করি বলতো….. বরং তারা আছে বলেই আমরা এতো ভালো আছি, সুখে আছি বল…..সত্যি কথা বলতে আমার নিজের ছেলেমেয়ের থেকে এদের অবদান বেশি আমার জীবনে….. ছেলে মেয়ে মানুষ করেছি তারা বড় হয়েছে নিজেদের মতো করে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে….. কতটুকু কাছে পেয়েছি ওদের!! এরাই ছিলো তখন….. দেখভাল করেছে…. হাতে হাতে কাজ করেছে….. হ্যা বলতে পারিস টাকার বিনিময়ে কিন্তু ওদের পারিশ্রমিক এর বিনিময়ে এই কয়টা টাকা খুবই নগন্য……
,
,
,
সেদিন অবাক হয়ে শুধু আম্মুর কথাই শুনে গেছি….. মানুষ টা শুধু সরল না অনেক সুন্দর মনের অধিকারি….. এই মানুষটাকে যতবার দেখি ততবারই আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়…..হয়তো আমার কোন জন্মের পূন্যের ফল তিনি…..
,
,
,
সকালে একবার মা ফোন দিয়ে দিয়েছে এখনো কেনো বের হচ্ছি না….. আম্মু আমাকে রেডি করাতে নিয়ে গেলেন আর যম ঠাকুরকে সব বলে গেলেন কি কি নিয়ে আসতে হবে বাজার থেকে…… আফটার অল ব্যাটা প্রথম বার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে বিয়ের পর….. এদিকে ওনি আম্মুর সাথে রেগে বোম হয়ে আছেন….
,
,
,
——— আম্মু একসাথে দুজন রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলেই তো হয়….. যাবার পথে বাজার থেকে সব কিনে নিয়ে যাবো….. তাহলে তো আর বাসায় উল্টো সব নিয়ে ফিরতে হচ্ছে না
,
,
,
——— একদম না….. বাজারের ভেতরে টুকিকে রিক্সায় বসিয়ে তোমার বাজার করতে হবে না…….. এমনিতেও বাইরে অনেক রোদ ও ঘামিয়ে যাবে….
,
,
——— আর আমি এখন বাইরে গেলে মনে হচ্ছে পুষ্পবৃষ্টি হবে……. আম্মু কি শুরু করলা বলোতো!!!
,
,
——— তুই গেলি!!!!
,
,,
,
ওনি রাগে গজগজ করতে করতে বাজারে চলে গেলেন…… আমি রেডি হয়ে আম্মুর রুমেই বসে ছিলাম…… যম ঠাকুরের ঘরে আর আসি নি।।।।। অই জ্বিনের ভয়ে…… আজকে শাড়ি পড়িয়ে দেবার সময় ও আম্মু কোমড়ের বিছা খানা দেখেছেন কিন্তু কিছু বলে নি….. বেশ ওশখোশ লাগছে…. ঠিক করলাম আম্মুকে সব টা খুলেই বলি….. ঠিক তখনি যম ঠাকুর চেচিয়ে আমায় ডাকতে লাগলেন তাকে একগ্লাস পানি দেবার জন্য….. হুইহহহ…. নিজের কাজ নিজের করতে হয় বলে আমাকে আবার জ্ঞান দেয়….. অথচ নিজেই সামান্য পানির জন্য কিভাবে চেচাচ্ছে দেখো….ডায়নিং থেকে পানির গ্লাস নিয়েই ঘরে ঢুকলাম….. ওনি দরজার দিকে মুখ করে ফ্যানের নিচে দারিয়ে শার্টের বোতাম খুলছে….. ঘামিয়ে একেবারে গোসল সেরে নিয়েছে যাকে বলে…… পানির গ্লাস টা এক ঢুকেই খালি করে আমার হাতে ধরিয়ে একেবারে হ্যাচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এলেন….. ব্যাপারটা এতো দ্রুত ঘটিয়েছে যে আমি হকচকিয়ে ওনার দিকেই তাকিয়েই আছি….
,
,
,
——— তখন মায়ের পিছনে দারিয়ে মিটিমিটি হাসা হচ্ছিলো তাই না!!! খুব হাসি পায় নাহ!!! নিজে বেশ সেজেগুজে ফ্যানের নিচে আছো…. আর আমি যে গরমে ঘেমে এলাম!!! একটুও মায়া দয়া নাই নাহ বরের জন্য!!! একেবারে আমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে
,
,
,
——— আয়ায়ায়ামি
,
,
,
আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের মাথার ঘাম টা আমার ডান কাধের ব্লাউজের উপর মুছে ফেলতে ফেলতে বললেন শাস্তি শেষ হয় নাই বাকি আছে…. খবরদার বাথরুম থেকে বেরিয়ে যেনো রুমে পাই….. যম ঠাকুর টা সেদিন বাথরুম থেকে বেরিয়ে গামছা দিয়ে তার হাত-পা মুছিয়েছেন….শার্টের বোতাম লাগিয়েছেন… হাতের ঘড়ি টা ও বাদ রাখেন নি…..এমন কি মানিব্যাগ টা আমাকে দিয়ে তার পকেটে ঢুকিয়েছেন……
,
,
,

শাস্তি দেবার বেলায় এই ব্যাটা আসলেই অনন্য…..কোথা থেকে যে বের করে আনে এসব…..বাকিগুলো ঠিক ই ছিলো কিন্তু শার্টের বোতাম লাগানোর সময় মনে হচ্ছিলো দর্জি শার্টে এতোগুলা বোতাম না লাগিয়ে চেইন ই তো লাগায় দিতে পারে…… এদিকে একেকটা বোতাম লাগাতে গিয়ে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি হার্ট টুপ করে বেরিয়ে গেলো যে হারে বাজনা বাজাচ্ছে…..একেবারে কাপাকাপি অবস্থা যাকে বলে…..
,
,
,
২৩
,
,
,
আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম….. আমাদের সাথে যম ঠাকুরের সব বন্ধু বান্ধব ও যাচ্ছে…..সেদিন একসাথে বাড়ির মোড়ে সাতটা রিকশা আর সবার সামনে একটা ভ্যান গাড়ি ঢুকেছে….. আশেপাশের লোকজন তো হা করে তাকিয়ে দেখছে….. যম ঠাকুর ভ্যান গাড়ি ভর্তি করে বাজার করে নিয়েছে….. মিষ্টির কার্টুনেই অর্ধেক ভ্যান গাড়ি ফিলাপ করে ফেলেছে……মা তো গিয়ে বসার সাথে সাথে আপ্যায়ন শুরু করে দিয়েছে ওদের….. এত শত ব্যাস্ততার মাঝেও ফাকে ফাকে আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছেন….. আমি হাসছি কি না খেয়াল করছেন।।।।। বিয়ে উপলক্ষে আসা আত্নীয় স্বজন সবই রয়ে গেছে আমাদের বাড়িতে….. যার জন্য হৈ- হোল্লার টাও বেশি….. আমাকে যেই দেখছে সেই বলছে কিরে তুলি তুই তো একেবারে চকচক করছিস…… আর বাকি গুলো….. কিরে তুলি তোর শাশুড়ী আর জামাই তো হেব্বি কাজের….. গিয়েছিলি তো হাগতে হাগতে পাটকাটি হয়ে তিনদিনেই একবারে মানুষ করে দিলো….. এই শুনে রাখো নেক্সট কারো হাগার ব্যামো হলে বদনাটা বগলদাবা করে ওর শশুর বাড়ি চলে যাবা….. ওর জামাই আর শাশুড়ী মিলে যত্নআত্নি করে সুস্থ করে দেবে…..এগুলো আমাকে আর কোন দিকেই ছাড়লো না….. শেষ পর্যন্ত আমার অত ভালো শাশুড়ী টাকে নিয়েও এরা মজা করে….. এদের ভালো হবে না…. অভিশাপ দিলাম তোদের সবার কোষ্ঠকাঠিন্য হোক….. আমার হাগা নিয়ে তো তোদের অনেক আনন্দ….. নে তোরা এবার না হাগতে হাগতে মর…. হাড়ে বজ্জাত সব…….
,
,
,
আসার পর থেকেই দাদি আমাকে ইশারা ঈংিতে ডেকে যাচ্ছেন কিন্তু প্রতিবারই যম ঠাকুর আমাকে কিছু না কিছু বলে আটকে দিচ্ছেন…… এদিকে আসার পর থেকেই সবার মুখে মুখে যম ঠাকুরের নামে গুনগান চলছে…. কি ভালো ছেলে….. একদম নিজের খরচে বিয়ে করেছে….. মেয়ের বাবাকে এক পয়সা ও খরচ করতে দেয় নি…. দেনমোহর বিয়ের দিনই শোধ করেছে….. সবার সাথে কি সুন্দর কথা বলছে….. না মেয়ে জামাই পেয়েছে ভাগ্য করে…… বাহ যম ঠাকুরের তো বেশ সুনাম চলছে সবার মুখে মুখে…… চলবেই বা না কেন….. ছোট বড় সবার সাথে ওনি কি সুন্দর করে হাশি ঠাট্রা করতে করতে কথা বলছেন….. নানি তো আমাকে ওনার সামনেই বলে দিলো….. তোর জামাইয়ের অঙ্গে রসে ভর্তি লো তুলি কোন কথা ছেমরা আর মাটিতে পরতে দেয় না…..সামলায়া রাখিস বইন তোর জামাইরে….এদিকে সমান তালে ওনিও বলে যাচ্ছেন ———
,
,
,
——— ইশশশ নানি আপনারে আগে দেখা হলে ত নিশ্চিত এই বিয়ে হইতো না……নানি এবার যাবার সময় তুলিকে রেখে যাবো….. সংসারি টা আমি আপনার সাথেই করতে চাই নানি….
,
,
——— রসের আলাপ বন্ধ করো নাত জামাই…. এক পা কবরে আর আরেক পা কবর স্থানের দরজায়…. যারে দিছি তারে নিয়াই সুখি হও ভাই….. আজকে তোমার নানা বাইচা থাকলে খুব খুশি হইতো বুঝলা….. তুলি যে তার কি আদরের ছিলো….. অন্যান্য নাতি দের ও করতো কিন্তু তুলি নাকি তার মায়ের মতন দেখতে হয়েছে….. কত কাধে নিয়ে বেড়িয়েছে!! কখনো নাম ধরে ডাকতো না…. ছোট বেগম…. ব্যাস এই ডাকটা শুনলেই মেয়ে রেগে বোম হয়ে যেতো…… বুঝলে ভাই মানুষ টা সবসময় বলতো রাণু তোমার আগে যেনো আল্লাহ আমাকে নেয়….. তোমার মরণ আমি সহ্য করতে পারবো না….. আল্লাহ তার ফরিয়াদ কবুল করেছে ভাই….. কিন্তু আমার টা শুনছে না……রোজ রাইতে তারে স্বপ্ন দেখি আমার পাশে আইসা বইসা রইসে….. তার যাবার সময় আমি কান্নাকাটি করি…… সে আমারে বুঝায়…. বলে রাণু আর বেশি দিন নাই….. তুমি কান্নাকাটি কইরো না তো…..
,
,
,
ড্রয়িং রুম থেকে তুলিদের খাবার রোম একেবারে স্পষ্ট দেখা যায়….. তুলি সেখানে দারিয়েই মায়ের সাথে কথা বলছে….. সেতো ঘুনাক্ষরে ও বলতে পারবে না এক জোড়া চোখ তার দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে…… সাদাফ নানির সাথে কথা শেষ করে বন্ধুদের সাথে গিয়ে বসলো একেকটার অবস্থা একেবারে নাজেহাল….. সকালে খাইয়েই এদের এই অবস্থা বাকি তো আর ও দুইবেলা রয়েছে…..
,
,
,
সবার জন্য চা নিয়ে রুমে ঢুকার পর আর বেরুতে দেয় নি তারা….. সবার একটাই কথা এখানে বসে তাদের সাথে আড্ডা দিতে হবে….. সবগুলো যম ঠাকুরের বন্ধু মেয়ে বলতে আমি একা…. বেশ আনইজি ফিল করছি…. যম ঠাকুর টা আমার হাতের কনুই টেনে আমাকে তার পাশে বসিয়ে দিলেন….. আমি পিঠের উপর আঁচল টেনে বসে পড়লাম….
,
,
,
——— শালা খুওওওব বউ এর পাশে বসা শিখে গেছো না….!!!এমনিতে তো লোকাল বাসে ও কোন মেয়ের পাশে দাড়াও না….
,
,
———এইটাই আমার চরিত্র…. যাহা ফুলের চেয়েও পবিত্র….. এতোকাল আমার পাশে থেকেও তো কিচ্ছু শিখতে পারলি না…..বিয়ের পর তো চিরকাল বউএর সন্দেহের তালিকায় থাকবি…… আর শোন তুলির সামনে আর কখনো গালি দিবি না…. আমার বউটা নেহাৎ ই বাচ্চা মানুষ….. আমি চাই না তার উপর কোন বাজে প্রভাব পরুক…. আফটার অল এতোদিনকার কোলে পিঠে করে মানুষ করা বউ আমার…. কতো খেটেছি বলতো….. তোর যদি গালিই দেবার থাকে আমাকে আগে বলবি…. আমি ওর কান চেপে ধরে রাখবো দেন তুই গালি দিবি….ঠিক আছে!!
,
,
,
ওনার এই কথা শুনে একেকজন পারে না হাসতে হাসতে খাট আর ফ্লোর ফাটিয়ে ফেলে…..কথায় কথায় কি এক পাইছে কোলে পিঠে করে মানুষ করা বউ…… সবসময় ই আমাকে নিয়ে তার হাসি ঠাট্টা…..
,
,
,
——— আচ্ছা এসব বাদ তোদের লাভ স্টোরি টা বল শুনি
,
,
——— আমাদের প্রেম কাহিনি টা বলো তো তুলি সুন্দর করে….
,
,
——— নাউজুবিল্লাহ….. আস্তাগফিরোল্লাহ…. ইন্নালিল্লাহ…..প্রেম আর আমি তাও ওনার সাথে তওবা তওবা….. কথা গুলো বলে আর আমি ওখানে এক দন্ড ও অপেক্ষা করি নি….. বেরিয়ে এসে পড়েছি….. ওনার কথা শুনে রাগে আমার গা সমানে কেপে উঠছে…… কি সুন্দর করে বলে প্রেম কাহিনি বলতে….. প্রেম!!! ওনি প্রেম করেছে আমার সাথে!!! পান থেকে চুন খসলেই বেতের বাড়ি মিস হতো না….. মেরে মেরে আমার ঠ্যাং খুড়া করে ছেড়েছে….. আবার বলে প্রেম কাহিনি বলতে……. যা করলাম না তাই আমাকে বলতে হবে….. এবং চারেদিকে তাই রটে গেছে….. এতো ভালো ক্যান আমার কপাল…. ক্যান!
,
,
,
২৪
,
,
,
সেদিন রাতে যম ঠাকুর আমার রুমেই ঘুমালেন…..ওনি খেয়ে আগেই শুয়ে ছিলেন….. আমি একটু দেরি করেই রুমে এসেছি….. মায়ের সাথে কথা বলে…. রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শোয়া মাত্রই ওনি আমাকে পেট আগলে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন….আমার বাম কাধটায় মাথ রাখলেন বালিশ থেকে সামান্য নেমে….. গলায় বুকে ওনার গরম নিশ্বাস গুলো পড়া মাত্রই এক আলাদা শিহরণ জাগাচ্ছে সারা গায়ে….. আমি বিন্দু মাত্র নড়লাম না….. ওনি আমাকে অবাক করে দিয়ে শাড়ির আঁচল গলিয়ে পেটের উপর হাত রাখলেন….. এতোক্ষণ ওনার হাতটা শাড়ির উপর ই ছিলো…..
,
,
,
——— তখন এতো রাগের কি ছিলো!!! আমি কিন্তু পরে ওদের সব বুঝিয়ে বলেছি…..এভাবে কিন্তু হুটহাট রেগে যাওয়া একদম ই ঠিক না তুলি….. এতে করে অজান্তেই আমরা অন্যদের হার্ট করে ফেলি….. কি ব্যাপার কিছু বলছো না কেন!!
,
,
——— আপনি একটু সরে ঘুমাবেন প্লিজ!! শাড়ি পড়ে আমার বড্ড গরম লাগছে……
,
,
——— আচ্ছা…. বলেই ওনি আমার পায়ের উপর এক পা তুলে দিলো…..
,
,
——— এইটা কি হলো!! আমি তো আপনাকে সরতে বললাম নাকি!!
,
,
——— বেশি গরম লাগলে কাপড় খুলে ঘুমাও…. এমনিতে ও তোমার যা ঘুম…. ঘুমালে তো হুশ ই থাকে না… কাপড় গায়ে আছে নাকি চান্দে!!এর থেকে বেশি সরে ঘুমানো আমার পক্ষে পসিবল না…. কারণ আমার কোন প্রকার লাথি খাবার ইচ্ছা নাই…..
,
,
——— ঠিক আছে…. আমি নিচে বিছানা করে ঘুমাচ্ছি…
,
,
——— সে তুমি ঘুমাতেই পারো…. তবে মাঝরাতে খাটের নিচে বা নিজের পাশে কাউকে ঘুমাতে দেখলে আবার চেচামেচি করে লোক সজাগ করো না যেনো….
,
,
——— মানে…
,
,
——— আগেই বলেছিলাম আমাদের বাড়ির জ্বিন টা আমায় খুব সমীহ করে….. আমি রাতে যেখানে থাকি সে ও সেখানে থাকে…. খাটের নিচে…. ঘরের কোনে… মাঝেমধ্যে তো পায়ে শুরশুরি ও দেয়….
,
,
,
ওনার কথা শুনে ভয়ে আমি আরো ওনার সাথে সেধিয়ে গেলাম…..ঘুমের মধ্যে আমার পায়ের পাতায় ওনার পায়ের ছোয়া লাগলেই ঘুম ভেঙে কেপে উঠছি….. ব্যাপার টা ওনি ঘুমের মাঝেই খেয়াল করে আমি আমি বলে আমার কপালে চুমু খেয়ে বলতেন ঘুমিয়ে পড়ো…. কিন্তু ঘুম গাড়ো হচ্ছিলো না কোন মতেই….. রাতে ওয়াশরুমে যাবার সময় ও ওনাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে ওয়াশরুমের বাইরে দার করিয়ে তারপর ওয়াশরুমে যেতাম…. এমন করেই দুদিন কেটে গেলো বাপের বাড়িতে….. রাতে না ঘুমানোর জন্য দিনের বেলা বসে বসে ঝিমুতাম….. এতে সবাই বেশ হাসাহাসি করতো….. যম ঠাকুর আমাকে সুযোগ পেলেই রুমে নিয়ে এসে ঘুমাতে বলতো…. কিন্তু আমি ঘুমাতে পারতাম না…. চোখ বুজলেই মনে হতো কেউ তাকিয়ে আছে…. কখনো ঘুমিয়ে পড়লেও মনে হতো ঘুমের মধ্যেই গায়ে হাত দিচ্ছে….. কাপড় ধরছে…. কিছুতেই রুমে এসবের মধ্যে ঘুম হতো না….. তবে রাতে ওনার পাশে শুয়ে আধো ঘুম আধো জাগরণে থাকতাম…
,
,
,
বাড়ি থেকে ফেরার পথে যম ঠাকুর আমাকে ডাক্তারের কাছে চেকাপ করিয়ে আনলেন….. কোন সমস্যা না পেয়ে স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খেতে বলেছেন দুর্বলতার জন্য…..সেদিন বাড়ি ফেরার পর আম্মু আমাকে অনেক্ক্ষণ জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন….. আর বার বার করে বললেন টুকি এখন থেকে তুই যেখানে যাবি আমাকেও সাথে করে নিয়ে যাবি বুঝলি….. আমার একা বাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এই তিন দিনে….. তুই এই কয়দিনেই আমার অভ্যাস পুরো পালটে দিয়েছিস রে….. অথচ যেই আমি এতোকাল একা একা থেকে এসেছি সেই আমিই কিনা একা থাকতে ভয় পাচ্ছি…. কথা দে আমাকে সাথে নিয়ে যাবি যেখানে যাস…. আমিও হেসে সেদিন আম্মুকে জড়িয়ে রইলাম অনেকক্ষণ……
,
,
,
চলবে……

লেখনিতে: চৈত্র রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here