এক পশলা বৃষ্টি আর সে, পর্ব – ১৫

0
780

৩১
,
,
,
রূপসি থেকে ফিরে এলাম ওনার জয়েনিং এর ঠিক আগের দিন বিকেলে….. এদিকে দুই তিন দিন থেকে আমার খুব একটা পোশালো না……আমার মুখভার দেখে ওনি ফেরার আগের রাতে কোলে করে সারা রাত ছাদে হাটলেন….. একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা অনুভূতি ব্যাপক লজ্জা পাওয়া স্বত্তেও খুব করে চাইছিলাম সময় টা থেমে যাক….. রাত টা চলে না যাক….. ভোরটা দেরি তে আসুক…..ওনার কোলে নেবার ধরন টাও সুন্দর…. একেবারে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে রেখেছে…. কানে ওনার হৃদস্পন্দন আর চোখে আকাশ ভর্তি তারা…. একেবারে ঘোর লেগে যাচ্ছে…… কিছুক্ষণ হাটাহাটির পর ছাদের কোণে রাখা মাচার উপর বসে পড়লো আমাকে কোলে নিয়েই….. তখন এতটাই ওনার উপর নির্ভরশীল হয়ে গিয়েছিলাম যে বসা মাত্রই ওনার ঘেমে যাওয়া বুকের সাথে লেপ্টে পিঠ ঠেকিয়ে বসে বসে আকাশ দেখে যাচ্ছি…. বলা চলে অনেকটাই নিজের মধ্যে নেই….. ধাতস্থ হলাম ওনার দ্রুত উঠা নামা করা গরম নিঃশ্বাসে…. যা আমার কাধ ভেদ করে ক্রমশ গলায় আর বুকে আছড়ে পড়ছে…. একটা গা নাড়িয়ে দেওয়া শিহরণ সাথে সাথেই সারা শরীর খেলে গেলো….. চারেদিকে শুনশান নীরবতায় ওনার নিশ্বাসের শব্দ শুনে বেশ বুঝা যাচ্ছে যে অনেকটা হাপিয়ে গেছেন….. যাবারই তো কথা….. কত গুলো সিড়ি পেড়িয়ে ইয়া বড় একটা ছাদে বার কয়েক হাটাহাটি চারটে খানি কথা…. তারউপর আবার এভাবে কোল চেপে বসে আছে…. ছিঃ ছিঃ….. বিবেক বিবেচনা এতো লোপ পেলো আমার….. ভাবতে ভাবতেই ওনার কোল থেকে উঠে গেলাম একধরনের অপরাধ বোধ নিয়ে….. মাচায় বসে তখনো বেশ ধীরে সুস্থে দুপাশে দুই হাতে সারা গায়ের ভর ছেড়ে দিয়ে ঢিলেমিভাবে বসে চোখ দুটি পিটপিট করে আমার তাকিয়ে আছে…… আমি একপলক তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো……. বিদ্যুৎ গতিতে কয়েক পা সামনে এগিয়ে গেলাম যেনো কোন বড়সড় চুরির পর ধরা পরে যাচ্ছিলাম….. সামনে এগিয়ে এসেও একপ্রকার ঘোরে পড়ে আছি যেনো….. এই বাড়িটা আসলে বাড়ি না একটা স্বর্গ পুর এতো সুন্দর চারপাশে যে কেনটা রেখে কোনটা দেখবো…..
,
,
,
আমি যখন প্রকৃতির রূপে মজে আছি তখন হুট করে যম ঠাকুর আমার সামনে এসে দাড়ালেন….. ঘোর লাগা নয়নে ওনার চোখে চোখ রেখে দিব্যি দাড়িয়ে আছি…… নেই কোন সংকোচ আর নেই কোন ভয়….. ওনিও ধীরেধীরে গায়ের সাথে ঘেষে মুখোমুখি দাড়ালেন….. দুহাতে কোমড় জড়িয়ে আরও নিবিড়ভাবে গা ঘেষে রইলো আমার……শীতলক্ষ্যার শিরশির করা হাওয়া…. আর তার সাথে আমার ক্রমশ প্রিয় মানুষ টার গায়ের উষ্ণতা….. ঠিক যেন কনকনে শীতের মধ্যে ধুয়াউঠা ভাতের প্রশান্তির মতো…… উষ্ণতা সারা গায়ে লেপ্টে ওনার কপালে আছড়ে পড়া চুল গুলোর অদ্ভুত সৌন্দর্য দেখতে ব্যাস্ত আমি তখন…… পূর্নিমার আলোয় সবকিছু স্পষ্ট…… ওনার ঠোঁটের কোনের সেই মৃদু হাসিটাও….. সব মিলিয়ে এই মূহুর্তে যম ঠাকুরকে পরির মতন সুন্দর লাগছে…. উমমম…. ছেলেরাতো পরি হয় না…..কালে কালে কবিরা মেয়েদের সৌন্দর্যের কত উপমা দিয়ে গেছেন অথচ খোদ ছেলে হয়ে নিজেদের জন্য কোন কিছু রাখলেন না!!! তাতে কি….. কেউ দেয় নি তো কি হয়েছে!!! আমি দেবো…..মেয়েরা পরি হলে ছেলেরা হবে পরা….. হুম যম ঠাকুরকে একেবারে পরার মতন সুন্দর লাগছে…… আমি যখন আমার এইসব হাবিজাবি ভাবনাতে মশগুল ওনি তখন আমার ঠোঁটের গভীরতা মশগুল….. কি হচ্ছে ব্যাপারটা আমার মস্তিষ্কে যখন পৌছালো তখন কোত্থেকে যেন অজানা শীহরন আমার সারা শরীরে খেলা করছে…. তার সাথে শীতলক্ষ্যার ঠান্ডা বাতাস….. সব মিলিয়ে যেনো আমি হিম হয়ে যাচ্ছি…. নিজের ভারসাম্য নিজেই রাখতে পারছি না….. ওনার কাছ থেকে হালকা গা ঘেষা হতেই ওনি ক্ষুদিত পাষানের মতো আরও নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলেন…… খুব ইচ্ছে করছে ওনার পিঠ আগলে চুল খামছে ধরি…..ঘাড়ে বুকে করে দেই শত শত ক্ষত….. আরো নিবিড় ভাবে হারিয়ে যাই…..কিছুক্ষণ পরেই ওনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আড়ষ্টভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন….. তারপর বিনা বাক্য ব্যায়ে আমার দু হাত ওনার বুকের দুপাশে রেখে নতুন উদ্যমে ফের মেতে উঠলেন…….
,
,
,
চারেদিকে শুনশান নীরবতা….. পূর্ণিমার আলোয় এখান থেকেই নদীর ঝিকিমিকি করা পানি গুলো দেখা যাচ্ছে…. আশে পাশে আর কোন দোতলা বাড়ি না থাকায় এতো শত গাছ গাছালী যেনো রাতের সৌন্দর্য আর ও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে….নদীর হাওয়ার সাথে বাগানের সদ্য ফুটা ফুলের মাতাল গন্ধ চারেদিকে ম ম করছে…….. বাড়ির পেছন দিকের পুকুরের উপর তো জোনাকিপোকার হাট বসেছে….. কি যে সুন্দর লাগছে একেকটা জিনিস বলার বাইরে….. এতো শত সৌন্দর্য আমার কাছে ফিকে হয়ে গেলো যম ঠাকুরের বুকের সেই ধুকপুক করে উঠা শব্দটাতে…… একটু আগে কি হয়েছে ভাবলেই কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে….. মাচার উপর ওনার বুকের সাথে পিঠ ঘেষিয়ে বসাতে আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পারছি ওনার সেই ধুকপুকানির উঠানামা…… কেমন যেনো একটা ছন্দের মতন…… এতো ভালো লাগছে কেনো হঠাৎ করে!!!! এর মধ্যেই ওনি শাড়ি গলিয়ে আমার পেটের উপর বা হাত রেখে ডান হাতে ওনার ডান হাত টা গুজে দিলেন…….. চুপচাপ নিরবতায় ও মনে হচ্ছিলো দুটি মন এই চুপচাপ নিরবতায় পাশাপাশিতে চুটিয়ে মন খোলে কথা বলছে…..
,
,
,
৩২
,
,
,
রূপসী থেকে ফেরার পরপরই ওনি ফুল ফর্মে চলে এলেন আগের মতন……. অগত্যা আমাকে আবার বইয়ের কাছেই মাথা ঠুকতে হলো……. এদিকে ওনার নতুন অফিসে জয়েনিং টাও খুব ভালো করে হয়ে গেলো…… অফিসে যাবার সময় রোজকার আমাকে সাথে করে কলেজ পর্যন্ত এগিয়ে দেওয়া তারপর কলেজ ছুটির পর মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া করা রিকশায় বাড়ি ফেরা….. তারপর বাড়ি ফিরে ঘড়ির কাটা আর দরজা দেখা…..আজকাল মানুষটাকে কেন যেনো খুব মিস করি…. ইচ্ছে করে যেনো সারাক্ষণ ওনার আশেপাশে থাকি নয়তো ওনি আমার সাথে থাকুক…… আগেতো তাও দুপুরে খেতে আসতেন কিন্তু এখন তো একেবারে বিকেল ছয়টায় বাড়ি ফেরেন…….. ওনাকে যতই দেখি ততই অবাক হই….. সারাদিন খাটা খাটুনি করে আমাকে নিয়ে নিয়ম করে টেবিলে বসবে…… রোজ পড়া চেক করবে…….একটু ভুল হলেই বলবে…… কাজের চাপে আজকাল খুব একটা চুমু খাওয়া হচ্ছে না….. তোমার মাথার ভাইটামিন সব কমে গেছে….. আসো আসো ইনস্ট্যান্ট ফ্রেশ ভাইটামিন দেই….. যেই বলা সেই কাজ…… চেপে ধরে ধুম করে চুমু খেয়ে নিচ্ছে….. রাতের বেলায় ও সেই আগের মতোই পেচিয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে……কিছু বললেই ওনার সেই বিখ্যাত উক্তি ছাড়বেন
,
,
,
——— তোমার যদি লাথি দেবার ইচ্ছা থাকে এমনিই দু চারটে দাও কিন্তু ঘুমের ঘোরে দানবীয় লাথি আমি নিতে পারবো না….. আর এভাবে ঘুমালে সমস্যা টা কি!! বউদের এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো টা হচ্ছে জামাইগত অধিকার….. আমি আমার অধিকার বুঝে নিচ্ছি….. সো কিপ ইয়োর মাউথ শাট….
,
,
,
এসব বলার পর আর কারই বা কি বলার থাকে……… আমি ও কিছু বলি না…..কি বলবো তাই খুজে পাই না….. তবে ওনার এই জড়িয়ে ধরাটাও আজকাল আমার বড্ড ভালো লাগে……. সারাক্ষণ ইচ্ছে করে ওনাকে নিয়েই ভাবি…..ওনার আশেপাশে থাকি…… পড়াশোনা করতেও ভালো লাগে না…… কেনো করবো পড়াশোনা!!! কই বিয়ে হয়েছে স্বামী সোহাগি হবো, বাচ্চাকাচ্চা বড় করবো….. ছেলেমেয়েদের লেখা পড়া শিখানোর মতোন তো পড়াশোনা পাড়ি নাকি!!!! কিন্তু তা আর যম ঠাকুরের জন্য হচ্ছে না….. কলেজের সব খবরাখবর স্যার রা নিজের মনে করে ওনার কানে দিয়ে দেন…… এখন তো বান্ধবীরআও বাঘা স্যারের বাঘিনী বউ বলে ক্ষেপায়….. তবে ওনার নতুন চাকরি হওয়াতে আমার একটা সুবিধে হয়েছে কলেজের পর চুটিয়ে আড্ডা দিতে পারি….. আগেতো রোবটের মতোন ওনার সাথে চলে আসতে হতো আফসোস করতে করতে…… বন্ধবীরাতো তখন ওনাকে দেখলেই আইলো আইলো বলে ভো দৌড়…… এমনও হয়েছে ওদের সাথে মাঝে মাঝে বসতে চাইলে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যেতো আর বলতো….
,
,
,
——— দেখ তুইল্লা তুই যে বাঘা স্যারের বউ ভুলে গেছিস!!! তরে আড্ডাতে নিলে আমাদের আতঙ্কে থাকা লাগে কখন না আবার ওঠে দৌড়ান লাগে….. দেখ ওইদিন দৌড় দিতে গয়ে হাটু ছুলে কি অবস্থা হইছে তার চেয়ে বরং তুই বাড়ি যা…. স্যার আইতেছে…..
,
,
,
তখন খুব মন খারাপ হতো….. খুব ইচ্ছা করতো ওদের সাথে একটু বসি কিন্তু ভয়ে তো মুখ দিয়ে কথাই বের হইতো না…. তবে আজকাল আমার বেশ স্বাধীনতা হয়েছে…. কলেজের পর চুটিয়ে আড্ডা দিয়ে তারপর ওনার ভাড়া করা রিক্সায় বাড়ি ফিরি….. আর আড্ডার সময় টাতে আশেপাশে মামা ভাড়া নেয়….. কিন্তু আজকে একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছি….. আসার পর থেকেই আম্মু তুলোধুনো করে যাচ্ছে…..
,
,
,
——— টুকি তুই কিন্তু বড্ড বার বেড়েছিস….. তুই রোজ কলেজ থেকে দেরি করে ফেরিস…. কিন্তু আমি তকে কিচ্ছুটি বলি নি…. তাই বলে আজ তুই এতো দেরি করে ফিরবি!!!! তোর সকালের খাওয়া কই!!! দুপুরে কি খাইছিস!!! হ্যা!!! বাবু ঠিক বলে তোকে লাই দিয়ে আমি অসভ্য করে ফেলেছি…..পড়াশোনা নাই কিছু নাই সে গায়ে হাওয়া দিয়ে বেড়াবে….. এই কি খেয়েছিস দুপুরে হ্যা!!
,
,
——— ক্যান্টিনে শিঙারা খেয়েছি
,
,
——— কি বললি তুই….. এই খাওয়ায় তোর আজ বেলা চারটে!!!! আজকে বাবু আসুক তোর বিচার যদি না দিছি…. দেখিস!!! তোর জন্য দজ্জাল শ্বাশুড়িই ঠিক আছে….. সারাদিন কাজ করে পড়তি তাহলে ঠিকই তর সব ঠিক থাকতো….. কিচ্ছু তো করা লাগে না……
,
,
,
কেন যেনো আম্মুর কথা গুলা খুব মনে গেথে গেছে….. ওনি আমাকে শত আদর করা স্বত্তেও ওনার এই কথাগুলো আমি কোনভাবেই হালকা ভাবে নিতে পারছি না…. আর দাড়ালাম না…..রুমে ঢুকে বোরকা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম…. বিছানা টা বড্ড টানছে….. আম্মু এখনো চেচামেচি করছে….. মানুষ টা এমনি….. ওনার স্নেহের যেমন কোন কমতি নেই তেমনি শাষণের ও….. ভুল টা আমিই করেছি….. সব ব্যাপারে এমন গা ছাড়া স্বভাব উচিত নয় এতো দিন সেটা চিন্তা করলে ও এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি…… অপরাধবোধ আর আম্মুর বলা কথা গুলো বারবার মনে বাজছে….. দেরি না করে রান্নাঘরে চলে গেলাম….. যানি রান্নার সব কাজ ফুলি খালা সামলে যান……. চৌবাচ্চায় দুপুরের কতোগুলো বাসন রাখা ছিলো….. দেরি না করে মাজতে বসে গেলাম সেগুলো…. কলের পানি আর বাসনের আওয়াজে আম্মু কিছুক্ষণ রান্নাঘরের দরজায় দাড়িয়ে থেকে চলে গেলেন…… হয়তো আমার এখন কাজ করায় খুব রেগে আছেন……. ভাবছেন ওনার কথায় হয়তো রাগ করেছি….. ফের চেচামেচি জুড়ে দিয়েছেন…….
,
,
,
রান্নাঘরের বাসন মাজা শেষ করে বের হবার সময় দেখি আম্মু টেবিলে উপর খাবারের থালাটা বেরে রাখলেন…. একবার আমার দিকে তাকিয়ে তারপর চলে গেলেন…..প্রতিদিনকার রুটিনের মতো বিকেলে আম্মু রেডি হয়ে হাটতে চলে গেলেন…… ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে….. কেন যেনো আর খুদা লাগছে না….. মনে হচ্ছে বিছানায় শুতে পারলেই চলবে….. মেইন দরজা লক করে বেডরুমে এসে শুয়ে পড়লাম….. বেশ আরাম লাগা সত্ত্বেও চোখে কোন ঘুম নেই….. বিকালের সিগ্ধ আলো টা আমার খুব পছন্দের…… ইচ্ছে করছে বাইরে গিয়ে বসি কিন্তু বল পাচ্ছি না……. মন খারাপ টা যেনো সমস্ত শক্তি কে গ্রাস করেছে…..বিছানায় খানিকটা সময় এপাশ ওপাশ করতে করতেই যম ঠাকুর চলে এলেন…….
,
,
,
রোজকার মতোই গলার টাইয়ের নট দরজা থেকে খুলতে খুলতে রুমে চলে গেলেন….. বিছানায় কয়েকটা ফাইল রেখে….. একে একে হাতের ঘড়ি, ওয়ালেট টেবিলের উপর খুলে রাখলেন….. ঘামে ভেজা মেরুন শার্ট টা হ্যাঙারে ঝুলিয়ে লুঙ্গি নিয়ে প্যান্ট চেঞ্জ করতে লাগলেন…… মানুষ টাকে সব পোশাকেই কি দারুণ মানায়….. কিছুটা দ্বীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে….. পানি নিয়ে আসতে আসতে দেখি ওনি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছেন……. হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে তারপর পানিটা শেষ করলেন……. বিকেলে সাধারণত ওনার আদা চা খাবার অভ্যেস আছে তাই চুলায় চা চড়িয়ে দিলাম…… খুদা লাগছিলো বলে দুটো বিস্কুট মুখে দিয়ে পানি খেয়ে তারপর চা নিয়ে গেলাম……ওনি চা শেষ করেই আমাকে পড়তে বসিয়েছেন……
,
,
,
——— এই চ্যাপ্টার টা শেষ করতে বলেছিলাম….. করেছো!!!?
,
,
———………………
,
,
——— কি হলো!!
,
,
——— আ…স…. লে
,
,
——— কলেজ থেকে বাসায় কখন এসেছো!!!
,
,
———………….
,
,
——— কয়টা ক্লাস হয়েছে আজকে!!?
,
,
——— ———
,
,
——— তুমি যখন এন্সার দিবে না বলেই ঠিক করেছো তাহলে আমিই দেই দেখো মিলে কিনা!!!
,
,
——— কলেজ গিয়েছো ১১ টায়….. সেখানে সব গুলো ফ্রেন্ডস মিলে ক্লাস বাঙ্ক করে নিজেদের মতন করে ঘুড়েছো….. আড্ডা দিয়েছো…..যাকে এক কথায় বলে টোটো গিরি করা….. তারপর আমারই ঠিক করে দেওয়া রিক্সা দিয়ে ঠিক চারটে দশ মিনিটে বাড়ি ঢুকেছো….. আই হোপ কোন কিছু আমি মিস করি নি….. ইজ ইট!!
,
,
,
আমি কোন উত্তর দিলাম না…. কি দিবো…প্রতিটি কথাই যে অক্ষরে অক্ষরে সত্য….. আর তাছাড়া আমার কথা বলার ও কোন ইচ্ছে করতেছে না….. কেমন যেনো একটা গা ছাড়া ভাব…. অবিশ্বাস্য রকম ভাবে আমার যম ঠাকুর কে ও ভয় করছে না…… আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ওনি একেবারে রেগে ঘেমে বোম হয়ে আমাকে চেয়ার থেকে টেনে তুলে দিলেন……
,
,
,
——— তোমাকে আমি বসে বসে খাওয়ানোর জন্য আনি নাই….. না এনেছি আমার বাড়ির ঝি গিরি করাতে….. পড়াশোনা না করে টোটো গিরি করতে ও আনি নাই….. টাকা পয়সা কামাই এতো সোজা না….. তবে অন্যের ঘারে বসে বসে খাওয়া খুব সোজা…… আমার পয়সার মায়া এবং কদর দুটোই আছে….. তাই পড়াশোনা করে চাকরি করে সংসারে কন্ট্রিবিউট করবে এবং নিজেকে স্বাবলম্বী করবে….. অন্যের ঘারে বসে খাবার চিন্তা বাদ দাও….. এইটা তোমার বাপের বাড়ি না যে নো চিন্তা ডু ফুর্তি…… আমাকে দেখো আর নিজেকে দেখো….. আজকে আমি কামাই করছি বলে আর তুমি আমার উপর নির্ভরশীল বলে অনায়াসে মুখ ঝামটা দিতে আমার দুবার ও ভাবতে হচ্ছে না…..নিজের পয়সা আর নিজস্ব ইনকাম কতটা প্রয়োজন একটু মোটা মাথাটা খাটিয়ে ভেবো….. শুধু তিনবেলা গো গ্রাসে গেলা আর ঘুম দিয়েই জীবন চলে না……
,
,
,
,
চলবে

লেখনিতে: চৈত্র রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here