৩৩
,
,
ওনি কথাগুলো বলে আর সেখানে বসলেন না….. দপদপ করে পা ফেলে বেরিয়ে গেলেন…… সে রাতে আম্মু ফিরলেন বেশ দেরি করে….. ঘড়ির কাটার হিসেবে না দেখলেও বেশ বুঝতে পারছিলাম…… পড়ার রুমটা রান্নাঘর থেকে অনেকটা বা পাশে….. আম্মু কিছুক্ষণ রুমের দরজায় দাড়িয়ে ছিলেন…… কিন্তু আমাকে কিছু বলেন নি….. আমিও কিছু বলি নি….. কেন যেনো চুপ থাকতে ভালো লাগছে…… আম্মু চলে গেলেন…… যম ঠাকুর আর সেঘরে এলেন না….. কেমন যেনো ভোতা ভোতা লাগছে সব কিছু….. তবে এতোদিনের সংসার নামক রঙিন চশমা টা একেবারে ঝড়ঝড় করে ভেঙে গেছে…… বাস্তবে যে আবেগ আর কল্পনা গুলো নিতান্তই তুচ্ছ তা একেবারে বেশ বুঝতে পারছি …… কতো কি ভাবতাম আগে….. হাসি পায় কেন!! সেসব মনে করে!!! আমার তো এখান হাসার কথা না……অনেকটা সময় ধরেই ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছি….. বইয়ের পাতা গুলো বাতাসে ওড়ছে….. ওলট পালট হচ্ছে….. আমি নির্বিকার ভাবে প্যারালাইজড এর রোগীর মতন দেখে যাচ্ছি….. আর বারবার ওনার কথা গুলো আওড়াচ্ছি….. আম্মু ফের চেচামেচি করছে….. কিন্তু এবার দুপুরের চাইতেও বেশি….. চায়ের কাপটা ধুতে ভুলে গিয়েছিলাম এর জন্যই কি!!! আমি ভীত পায়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালাম…… অনেকটা সময় ধরে বসে থাকার কারণে পায়ে একেবারে ঝিঝি ধরে গেছে….. কিন্তু আম্মুর চেচামেচি থামছে না……
,
,
,
——— বাবু আমি এখানে থাকবো না…… তুই আমাকে গ্রামে রেখে আয়…..তারপর তর বউ যা খুশি না হয় করবে…..ও আমার কথা মোটেও শুনছে না বাবু….. সেই সকালে ঘুম থেকে ওঠে দুটো বিস্কুট খেয়েছে সারাদিন গেছে তার আর খাবার কোন খবর নেই….. বাসায় দেরিতে এসেছে বলে বকেছি খুব তাই বলে সে না খেয়ে রাগ করে বইয়ের সামনে বসে আছে…. ওকে আদর করি বলে কি শাসন করার কোন অধিকার নাই আমার…. তুই খেতে বস আমি নিয়ে আসছি ওরে….. শাসনের দেখেছেটা কি ও…. আজকে তো শুধু বকেছি কথা না শুনলে আমি মাইর দিতেও পিছপা হবো না…….
,
,
,
আম্মু রাগে ফোসফাস করতে করতে একপ্রকার হুমকি ধামকি দিয়েই আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিলেন……. ওনি তখন টেবিলেই বসা ছিলেন….. প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছিলেন……. আম্মু আমাকে তার পাশে বসিয়ে বকে ধমকে খাওয়ালেন……. খাবার দেখেই খুদাটা জেগে গেলো যেনো….. বেশ অনেকটা খেয়েছি….. বেসিনে হাত ধুতে গিয়ে গরগর করে সব বমি করে ঢেলে দিয়েছি….. কি জানি হয়তো অপমানের ভাত পেটে সইলো না……আমার বমি দেখে আম্মু আবার বকা শুরু করলেন
,
,
,
——— কর কর আরও বমি কর….. সারাদিন না খেয়ে থাক আরো…. পেটে পিত্তি পড়ে যাক….. দেখলি তো কেমন গ্যাস্ট্রিকের জোর দিয়েছে….. কয় দিনে চোখেমুখের কি হাল করেছিস….. তুই ঘুমাতে যা….. তোকে দেখলেই আমার রাগে কান্না পাচ্ছে….. যা হাত ধুয়ে যা শিগ্রি…..
,
,
,
নলের মুখটা খুলে দিয়ে বেসিন পরিষ্কার করে নিজেও মুখ হাত ধুয়ে নিলাম….. রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না….. পড়ার রুমেই চলে আসলাম……. জানালা অফ করে দিয়ে চেয়ার টেনেই বসে পড়লাম গা ছেড়ে চোখ বুঝে …… চোখ খুলে নিজেকে পড়ার রুমের চেয়ারেই খুজে পেলাম…. প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও পরে আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে গেলো…… কয়টা বাজে দেখার জন্য ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখলাম যম ঠাকুর হাটুর উপর দুহাতের মুঠোয় কপাল ঠেকিয়ে রেখেছেন…… একি মাত্র ছয়টা বাজে…. ওনিই বা এই সময় এখানে কি করছেন……. সেখান থেকে চলে আসার সময় টেবিলের সাথে ধাক্কা খাই….. ধাক্কার আওয়াজে ওনি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন…… ওনার সেই লাল লাল চোখগুলোর ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে চোখাচোখি হয়ে গেলো….. আমি আবার পড়ার ঘরে চলে এলাম….. ডায়নিং থেকে হাত মুখ ধুয়ে এখানে সেখানে ঘুড়াঘুড়ি করছি কিন্তু রুমে যাচ্ছি না….. এদিকে ফুলি খালাও চলে এলেন…. কাজ না পেয়ে ওনার আশেপাশে ঘুরঘুর করছি….. আম্মু এখনো হেটে ফেরেনি……
,
,
,
যম ঠাকুর একেবারে রেডি হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন ব্যাগ হাতে…… টেবিলে বসতেই আমি রান্নাঘরে চলে গেলাম….. ততক্ষণে আম্মু ও চলে এসেছেন…… ফুলি খালা ওনাকে নাস্তা বেড়ে দিলেন…… আম্মু হা-পা ধুয়ে আসতে আসতেই ওনি খেয়ে উঠে গেলো…… আমি তখন রান্নাঘরের দরজার আড়ালে দাড়িয়ে…… ওনি আম্মুকে আসছি বলে একবার ঘরের দিকে যেতে নিয়েও ফিরে গেলেন…….
,
,
,
ওনি যাবার পর আমি রুমে গিয়ে গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলাম…… সোফার উপর কিছু ধুয়া কাপড় ছিলো সেগুলো ভাজ করে আলমিরাতে তুলে রেখে বিছানার চাদরটা পালটে বিনে রেখে পড়ার ঘর থেকে বই খাতা একেবারে গুছিয়ে ডায়নিং এ চলে এলাম….. আম্মু সবে মাত্র বসেছেন….. ফুলি খালা আসার সময় অনেকগুলো পিঠা নিয়ে এসেছেন…… সেখান থেকে বেশ কয়েকটা পিঠে খেয়ে নিলাম….. তাই নাস্তা না করাতে আম্মুও কিছুই বললেন না….. ওঠে গিয়ে একটা বোতলে সরবত ঢেলে নিয়ে আসলেন আর তার সাথে একটা কেকের প্যাকেট…….
,
,
,
——— টুকি…. যখন খুদা পাবে খেয়ে নিবি……কেকটা একেবারে তাজা….. সকালে যেদিকে হাটতে যাই সেদিকে একলোক সকালে নিয়ে বসে এসব….. তর মাকেও কিনে দিয়েছি…..আসার সময় তোর জন্য ও নিয়ে এসেছি….. প্যাকেট টা যদি ফেরত আসে দেখিস কি করি….. বলেই আম্মু আমার কপালে চুমু খেলেন….. কালকে খুব বকেছিরে মা….. রাগ করিস না….. আম্মুতো বুড়া হয়ে গেছি তাই কি করতে কি করে ফেলি…..এর পর থেকে তুই যদি কথা না শুনিস আর বকবো না….. একেবারে মাইর লাগাবো……
,
,
,
আম্মু এমন ভাবে কথাটা বললেন একেবারে খিলখিল করে হেসে দিলাম…..আমার হাসি দেখে আম্মু ও হেসে দিলেন….. আম্মুকে জড়িয়ে ধরে আসছি বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলাম…..
,
,
,
,
চলবে
লেখনিতে: চৈত্র রায়