এক পশলা বৃষ্টি আর সে, পর্ব – 27

0
947

৪৭
,
,
,
দুতলার সবটা জুড়েই আমাদের সাজানো গোছানো সংসার…… এতো গুলো রুম আমাদের প্রয়োজন নেই স্বত্তেও ওনি ভাড়ায় দিতে রানি নন…… ওনার মতে ভাড়িটিয়া আর বাড়িওয়ালার মধ্যে একটা লিমিটেড লাইন থাকা প্রয়োজন….. তাতে করে সম্পর্ক ভালো থাকে….. আর তাছাড়া প্রাইভেসি বলেও একটা ব্যাপার আছে….. যার যার রুমে থাকবে এতে করে যে কি প্রাইভেসি ক্ষুন্ন হবে তা আমি বুঝে পাই না….. আম্মুর আর আমাদের লিভিং রুম ছাড়াও আরও দুটো লিভিং রুম রয়েছে…. তারউপর স্টাডিরুম….. একটা রুম তো মাস কাবারি বাজার আর প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রে ভরপুর…… অবশ্য দুতলার ফ্ল্যাট টা এমন ভাবে প্ল্যান করে করা হয়েছে যে আলাদাকরে ভাড়াটিয়া দিতে গেলে ওয়াল ভেঙে দরজা করে দিতে হবে…… সবচেয়ে বড় কথা আমার প্রয়াত শ্বশুর তার সব ছেলেদের কথা ভেবেই এই দুতলার রুম গুলো বানিয়েছেন…… আর সেজন্যই বিশেষ করে যমঠাকুর ভাড়াটিয়া দিতে রাজি নন….. যদিও ব্যাপার টা আম্মুর থেকেই জানা…..
,
,
,
নিচ তলায় দুখানা কমার্শিয়াল ইউনিট করা হয়েছে বাড়ি ভাড়ার জন্য৷৷ …… তারই একটাতে নতুন ভাড়াটিয়া উঠেছে দুদিন হলো…… হাজবেন্ড ওয়াইফ আর তাদের একবছরের একটা ছোট্ট ছেলে…… ছেলেটা এতো সুইট ঠিক তার মায়ের মতোই নাদুসনুদুস….. গাল দুটো দেখলেই আমার রসগোল্লার কথা মনে পড়ে…..যদিও ওর নাম ওসামা….. আগে ওনারা ফরিদপুর থাকতেন।।।।। ওবামার বাবা সরকারি চাকরির বদলি হয়েই এখানে আসা তাদের……… ওসামার মা টা ভিষণ মিশুকে…… মাঝে মাঝে ওসামাকে দিয়ে যায় ওনার গোছল করার টাইমে……
,
,
,
বাচ্চাটা যেমন আদুরে তেমন মিশুকে…… দুই তিন দিনেই কেমন মিশে গেছে আমার সাথে আর আম্মুর সাথে….. ফুলি খালাকে দেখলেই কেমন চটে যায়…. ছোট ছোট দাত দিয়ে ওনার আঙুল টেনে নিয়ে কামড় বসায়…..ফুলি খালা যখন জোর করে কোলে নিতে চায় তখন ওসামা চিল্লাতে চিল্লাতে হিসু করে দেয়….. ছেলেটা ফুলি খালাকে জ্বালাতে ভীষণ রকমের পছন্দ করে….. খালা যখন তার উপর খুব বিরক্ত হয় তখন তার কি খিলখিল করে হাসি….. মাথায় হালকা হালকা চুল….. খুব সুন্দর ছাটে কাটা…..দেখলেই মনে হয় খেয়ে ফেলি ওকে….. আমি তো ওকে রসগোল্লাই ডাকি….. যখন বলি রসগোল্লা টা কইরে….. তখন একদমে হামাগুড়ি দিয়ে আমার উপর জাপটে পড়ে……. মাঝেমধ্যে ওড়না দিয়ে ওসামাকে সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দেই…… আম্মু একটু একটু করে রাগ করে আর আমি হাসি।।।।। ওসামা এক হাতে নিজের শাড়ির আঁচল ধরে আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে…… যখন আমাদের হাসতে দেখে তখন সেও তাল মিলিয়ে আমাদের সাথে হাসতে থাকে….. বাচ্চাদের হাসি যে এতো স্নিগ্ধ আর নির্মল দেখলেই যেনো হৃদয় জুড়িয়ে যায়…….. এর মধ্যে একদিন ওসামা সাহেব ঘুমিয়ে আমাদের রুমের বিছানা ভিজিয়ে দিয়ে গেছেন…… বেছে বেছে ওনার জায়গা টাই সে ভিজিয়েছে……
,
,
,
সন্ধ্যের দিকেই ওনি চলে এলেন অফিস থেকে….. আমি তখন আম্মুর কাছে বসে ড্র‍য়িং রুমে বকুনি খাচ্ছিলাম পড়ার জন্য….. ওনাকে দেখে আম্মু অটোমেটিক চুপ হয়ে গেলেন….. আমাদের এমন হঠাৎ করে চুপ হয়ে যাওয়ায় ওনি অদ্ভুত দৃষ্টি ফেলে আমাদের দেখতে দেখতে রুমে চলে গেলেন…..
,
,
,
——— তুলিইইইই এক গ্লাস পানি নিয়ে আসোতো……
,
,
,
রুমে ঢুকতেই দেখি ওনি আয়নার সামনে দাড়িয়ে শার্টের বোতাম খুলছেন এক হাতে…… আমার হাত থেকে পানি টা নিয়ে একদমে শেষ করে গ্লাস ফেরত দিয়ে খুব বিরক্ত হয়ে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কয়েকবার দেখলেন…..
,
,
,
——— শাড়ি পড়ছো না কেনো এখন?
,
,
——— ইচ্ছে করে না পড়তে…কেনো?
,
,
——— বউ বউ লাগে না একদম….. মনে হয় স্কুল পড়োয়া পিচ্ছি একটা বাসায় ঘুড়াফেরা করছে….
,
,
———- তাই নাকি বেশ ভালো তো…… আর তাছাড়া আম্মুও বলেছে বাসায় এইসব পড়াই যায়…..
,
,
——— তার মানে এখন থেকে তুমি এই বাচ্চাদের পোশাক পড়বা???
,
,
——— আমি খুব সুন্দর করে হেসে তাকে হ্যা বলে দিলাম……
,
,
,
ব্যাস ওতেই শুরু হয়ে গেলো……. বিয়ের পর নাকি মেয়েদের শাড়ি পড়া মেন্ডাটরি…… সব শেষে ঠিক করলাম রাতে শুধু পরবো…. উম্মম তাতেও তার চলবে না…. সে সারাদিন অফিস করে বাসায় থাকেই রাত টুকো শাড়ি আমাকে রাতেই পড়তে হবে…… কি আর করার…. মেনে নিলাম….. যতই বিরক্ত লাগোক না কেন…. কেন যেনো ওনার এই আবদারটা খুব ভালো লাগছিলো আমার….…কেমন যেনো একটা অনুভূতি…. ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না……. রাতে শুতে গিয়ে ওনি প্রায় চেচিয়ে উঠলেন….. ওনার জায়গায় ভেজা ভাবটা বুঝতে পেরে….. তার পর সব খুলে বললাম….. ওসামাকে ওনি দেখলেও তার যে এই বাসায় আনাগোনা সেটা জানতেন না….. রাতে ওনার সাথে ওসামাকে নিয়ে সেদিন অনেক কথা হলো….. যদিও এটাকে একতরফা বকবকানি বলা চলে….. আমি আমার মতো কথায় মগ্ন আর ওনি আমাতে…..
,
,
,
ওসামার মা বাবা বাজার করতে যাবে বলে এক বিকালে তাকে আমার কাছে রেখে গেলেন….. আম্মু তখন সবে মাত্র হাটতে বের হয়েছে…..বই নিয়ে বসে ছিলাম সবে…. ওমনিই ওসামার আগমন…..ব্যাস আর কি লাগে…. ওসামাকে নিয়ে চলে এলাম আমার রুমে….. আম্মু কে দিয়ে আমার এক পুরাতন ওরনার ফ্রক বানিয়েছিলাম অনেক বলে কয়ে……. কেন যেনো ওসামাকে মেয়ে সাজাতে আমার খুব ভালো লাগতো….. ওর চেহারাটা ওর মায়ের মুখের আদলেই কিনা….. যদিও আম্মু আমাকে পই পই করে বারণ করেছিলেন ওর মায়ের সামনে যেনো এসব না করি….. কারণ সবাই এক রুচি বা মনমানসিকতার নাও হতে পারে……ফাকা পেয়েই নিজের ইচ্ছে-পূরণ যাকে বলে…..
,
,
,
ব্যাস ওকে খাটের মাঝখানে বসিয়ে ফ্রক টা পাড়িয়ে দিয়ে সুন্দর করে ঝুটি করে দিলাম দুইটা…. তারপর কাজল দিয়ে সুন্দর করে কপালে টিকা দিলাম…… লাল ফ্রকে একেবারে ছেলে টাকে পরীর মতো লাগছে….. রসগোল্লা টা যদি মেয়ে হতো না…. ওফফফ….. ওকে নিয়েই দুষ্টুমি করতে করতে আম্মু চলে এলেন।।।।। রসগোল্লা টাকে দেখে আম্মুর সে কি হাসি….. আম্নু এটাসেটা বলে আল্লাদ করছে আর সে ও হাসিতে মেতে উঠছে……সন্ধ্যের দিকে ওনিও চলে এলেন….. ওসামাকে কোলে নিয়েই আমি দরজা খুলে দিলাম….. ওনি কিছুটা ভিমড়ি খেলেন মনে হলো…… কিন্তু মুখে কিছু বললেন না…… রুমে গিয়ে ফের ডাকতে শুরু করলেন…..
,
,
,
——— তুলিইইইই এক গ্লাস পানি নিয়ে আসোতো…..
,
,
,
আমি ওসামাকে কোলে করেই ওনার জন্য পানি নিয়ে গেলাম…… ওনি ততক্ষণে কাপড় পালটে ফ্রেশ হয়ে এলেন।।।।। আমার সামনে এসে দাড়াতেই ওসামা বড়সড় চোখ করে খুব মনোযোগ দিয়ে ওনাকে দেখছে….কোলে চড়ার ধান্দা আর কি……
,
,
,
——— দেখেন তো আমাদের কেমন লাগছে.?
,
,
——— লাইক কদু নিয়েছে লাউকে….নিজের জান নিয়েই ঠিক মতন চলতে পারে না….. দাও ওকে আমার কাছে দাও….. কখন যেনো আবার ফেলে দাও তার ঠিক নাই…..আসেন প্রিন্সেস আপনি আমার কাছে আসেন….
,
,
,
বলেই ওসামাকে আমার থেকে টেনে নিয়ে গেলেন…. ওনার কথায় কিছুটা আহত হলেও এইভেবে হাসি পাচ্ছিলো যে ছেলের লেবাস টাই আমি চেঞ্জ করে ফেলেছি……ওসামাকে কোলে নিয়ে ওনি ও আল্লাদে মেতে উঠলেন….. কিছুক্ষণ পর দেখি ওনি ওসাকে একহাতে কোলে নিয়ে আরেক হাতে ওর ভেজা প্যান্ট নিয়ে ঘড়ে ঢুকছেন…… নিশ্চিত কোলে করেছে হিসু পাজিটা…..
,
,
,
——— তুলিইইইই তুমি ওকে এভাবে মেয়ে সাজালা কেন!!! ভাগ্যিস হিসু করলো নইলেতো আমি ওরে আজীবন মেয়েই ভাবতাম…..
,
,
,
চলবে

লেখনিতে: চৈত্র রায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here