ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ৩
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
“কী রে তুই এখন এখানে কেন?”(শীলা)
“সাবিহাকে দেখতে এলাম কিন্তু সাবিহা কই যাচ্ছে?”
“বাড়ি যাচ্ছে,মেঘ বলল আজ বাড়িতে নিয়ে যেতে পারব।”
“আচ্ছা,সাবিহা এখন কেমন আছো তুমি?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।”
“আচ্ছা চলো আমি তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে দেই।”
“সাদাফ তার কোন প্রয়োজন নেই,আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি।” (মনির সাহেব)
“আঙ্কেল ত সাবিহা না হয় আমার সাথে আসুক,আপনি আর শীলা আপনার গাড়ি নিয়ে আসুন।আসলে সাবিহার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।” (ইতস্তত করে)
আমার সাথে কথা আছে শুনে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।সাদাফ ভাইয়াও আমার দিকে তাকিয়ে আছে,আপু তখন বলে উঠল,,,
“কীসের কথা তোর সাবিহার সাথে?”
“শীলা তুমি চুপ করো আর সাবিহা যাও সাদাফের সাথে,সাবধানে এসো।”
বাবার কথা শুনে আমি অবাক,একটা ছেলে আমার সাথে কথা বলার জন্য তার সাথে যেতে বলছে আর সেটা বাবা চুপচাপ মেনে নিল।ব্যাপারটা বেশ গন্ডাগোল লাগছে।বাবা কথাটা বলেই সামনে এগিয়ে যায় কিন্তু আপু তখনও দাড়িয়ে সন্দেহ চোখে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সেটা দেখে বাবা ধমকে বলে উঠল,,,
“শীলা তোমাকে আমার সাথে আসতে বলেছি দাড়িয়ে থাকতে বলি নি ওভাবে।”
“জি বাবা আসছি।”
তারপর আপু আর বাবা চলে যায়,আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকালে উনি বলে উঠে,,,
“চলো যাওয়া যাক!”
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে সাদাফ ভাইয়া হাঁটা শুরু করে।আমিও তার পিছন পিছন হাঁটা ধরি।
_________________________________
কাব্য আর তার বন্ধুরা কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে,তখন সেখানে উপস্থিত হয় ডংঙ্গি ইশা।সেটা দেখে কাব্যর বন্ধু নিশান রিয়ানকে কাব্যর আড়ালে বলে উঠে,,,
“দোস্ত দেখ এই ডংঙ্গি আজও তেরো কেজি আটা, ময়দা মেখে আসছে।”
“ভালোই ত হয়েছে রে দোস্ত,আমাদের বন্ধুর আর আটা ময়দা কেনা লাগবে না,এই ডংঙ্গির মুখ থেকে আটা ময়দা দিয়েই লুচি+রুটি বানাতে পারবে।আটা কয়দা কেনার টাকা বেঁচে গেলো কাব্যর।”
নিশান রিয়ানের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে উঠল,,,
“তোর মাথা ছাগল একটা,ছাগলের মত দুইটা সিংই আছে কিন্তু গরুর মত গুতা দিতে পারবি না।কাব্যর সাথে এই ডংঙ্গির বিয়ে হলে কাব্য এই মাইয়ার জন্য আটা ময়দা কিনতে কিনতে ফকির হয়ে যাইব।”
“এভাবে ত ভেবে দেখি নাই রে বন্ধু,বড় লোক দোস্ত আমার ফকির হয়ে যাবে ভাবতেই কিমুন ফিলিং অশান্তি অশান্তি আসিতেছে রে।”
“চুপ কর আর দেখ এই ডংঙ্গি কী বলে!”
তারপর দুজনেই চুপ করে ইশা আর কাব্যর কথা শুনার চেষ্টা করে।কিন্তু অরা শুধু বাবু,সোনাই করে যাচ্ছে যেটা ওদের দুজনের একদমই শয্য হচ্ছে না।সিঙ্গেল হলে যা হয় আরকি,তাই অরা কিছু না বলে চুপচাপ চলে যেতে চাইলেই শুনতে পায়,,,
“বেবি তোমাকে বাড়িতে কেউ কিছু বলে নি ত ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য।”
“মা আর বাবা একটু রাগারাগি করেছে,এমনিতে সব ঠিকই আছে।”
“ওহহ,আর ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটা কেমন আছে?”
“জানি না আমি।” (বিরক্ত হয়ে)
“বেবি তুমি আমার কথায় বিরক্ত হলে,যাও আর কথাই বলব না।” (ডং করে)
“আরে জান রাগ করো না প্লিজ,আমি তোমার কথায় বিরক্ত হই নি বিরক্ত হয়েছি ঐ মেয়েটার কথা মনে করে।তুমি প্লিজ রাগ করো না জান।”
“ঠিক আছে রাগ করব না কিন্তু আমাকে আজ শপিং করে দিতে হবে কিন্তু।”(হেঁসে)
” ওকে আমার জান যা বলবে তাই হবে।এখন দেখি ত আমার জানের হাতটা কেমন আছে!”
তারপর কাব্য ইশার হাতটা দেখে হাতে একটা চুমু দিয়ে বলল,,,
“সেরে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।”
“হুম বেবি,লাভ ইউ?।”
“লাভ ইউ টু।”
“আচ্ছা বেবি আমি একটু আসি,পার্লারে যাব।বিকালে ত শপিং করতে হবে তার জন্য একটু সাজুগুজু করে আসি।”
“আচ্ছা জান আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি চলো।”
“না না আমি একাই যেতে পারব।”
“sure.”
“হুম বেবি sure,এখন আমি আসি।”
“সাবধানে যেও।”
“ওকে বেবি।”
তারপর ডংঙ্গি ডং করতে করতে চলে যায়,আর কাব্য ইশার যাওয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে অর বন্ধুদের দিকে তাকালে দেখতে পায় তারা অর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।সেটা দেখে কাব্য ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,,,
“what?”
“তুই সাবিহার সাথে আবার কী করেছিস কাব্য?” (রিয়ান গম্ভীর হয়ে)
“তরাও এখন মা-বাবার মত শুরু করিস না প্লিজ।এসব নেকামি আর ভালো লাগছে না।” (বিরক্ত হয়ে)
“তুই একটু বেশিই বারাবাড়ি করছিস,বাচ্চা একটা মেয়ে,এখনও পৃথিবীটা ভালো করে চিনে উঠতে পারে নি।আবেগ হোক বা সত্যি ভালাবাসা হোক মেয়েটার বয়সই বা কী এখন!সারাক্ষণ তোর পিছন পিছন ঘুরে ভালবাসি ভালবাসি বলে,আর তুই সাবিহার সাথে কত খারাপ আচরনই না করিস।এমন খারাপ আচরন না করে ঠান্ডা মাথায় একটু বুঝালেও ত পারিস তা না করে তোর ঐ ডংঙ্গি গার্লফ্রেন্ডের কথায় নাচস।আর ছোট বড় সব কারনে সাবিহার সাথে খারাপ আচরন করিস।এত অন্যায় আল্লাহ সইবে না,তোর কর্মফল তুই ঠিকই পাবি।”
নিশান খুব রেগেই কথাগুলো বলে,তারপর সেখানে আর দাঁড়ায় না।নিশানের পিছন পিছন রিয়ানও চলে যায়,কারন তারা সবই জানে আর এটাও জানে যে কাব্য সাবিহার সাথে কেমন আচরন করে।
আর কাব্য নিশানের বলা কথাগুলো মন দিয়ে শুনেছে।তার মধ্যে কাব্যর একটা কথা খুব মনে ধরেছে,ঠান্ডা মাথায় বুঝানোর বিষয়টা।কিন্তু কাব্য ত তেমন কিছুই করে নি,ভালো করে বুঝালে হয়ত আজকের পরিস্থিতিটা অন্য রকম হত।
পরক্ষণেই কাব্য আবার ভাবে যে সে এসব কী ভাবছে!এত স্টুপিট মার্কা কথা তার মনে কীভাবে আসতে পারে?এসব ভেবে কাব্য নিশানের কথাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেয়।
________________________________
শীলা গাল ফুলিয়ে গাড়িতে বসে আছে আর তার পাশেই বসে আছে মনির সাহেব।শীলা বারবার জানতে চাইছে তার বাবা তখন কেন সাবিহাকে চুপচাপ সাদাফের সাথে যেতে দিল।কেন কিছু বলল না উনি সাদাফকে!কিন্তু যতবারই জানতে চেয়েছে ততবারই মনির সাহেব ধমক দিয়ে শীলাকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।তাই সে গাল ফুলিয়ে বসে আছে,সেটা মনির সাহেব দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে।এখন রাগ না দেখালে মেয়েটা তার মাথা খারাপ করে ফেলবে সবটা জানতে চাওয়ার জন্য।যেটা এখন উনি জানাতে চাইছে না, তাই চুপচাপ বসে ফোন টিপছেন উনি।
★★অন্যদিকে সাদাফ গাড়িটা একটা পার্কের সামনে দাঁড় করায়।হঠাৎ গাড়ি থামানোতে আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি একটা পার্কের সামনে আছি আমরা।আমি সেটা দেখে সাদাফ ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালে উনি নামতে ইশারা করে।
“এখানে নামব কেন?আমাদের ত বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল!”
“আরো একটা কথাও ছিল যে তোমার সাথে আমার কিছু কথাও আছে।”
“ত কী হয়েছে?”
“কী হয়েছে মানে,নামো গাড়ি থেকে।”(ধমকে)
আমি চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম,তারপর চুপচাপ একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম।সাদাফ ভাইয়া একটা দোকান থেকে দুইটা আইসক্রিম নিয়ে আমার পাশে বসলেন।আর একটা আইসক্রিম আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।আমি ভ্রু কুঁচকে উনাকে বলে উঠলাম,,,
” আমাদের কী আইসক্রিম খাওয়ার কথাও ছিল?”
“না ছিল না,আর ছিল না বলে কী আইসক্রিম খাবে না নাকি?”
“না খাব না আমি,আপনার যা বলার সেটা তাড়াতাড়ি বলুন,আমি বাড়িতে যাব।”
“বাড়িতে ত যাবেই,আইসক্রিম টা নাও তারপর দুজন খেতে খেতে কথা বলি না হয়!”
আমি আর কিছু না বলে উনার হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম,তারপর উনি বলতে শুরু করলেন,,,
“কালকের আচরনের জন্য আমি দুঃখিত,আমার ওভাবে তোমার সাথে রাগ দেখানোটা ঠিক হয় নি।আসলে তোমাকে ওভাবে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি নি।আর কাব্য ভাইয়ার উপরেও খুব রাগ হয়েছিল তাই রাগ দেখিয়ে ফেলেছি।এমনিতেই তোমার শরীরের এ অবস্থা তার উপর আমি রাগ দেখিয়ে একদমই ঠিক করি নি।আর এটা ভেবে গতকাল রাতে আমি ঘুমাতেও পারি নি।তাই সকাল হতে না হতেই ছুটে চলে এসেছি।”
“এটাই কী আপনার বলার ছিল?”
“হুম,I am sorry for everything”
“It’s ok,,,এবার চলুন বাড়িতে ফেরা যাক।”
“শুধু It’s ok,আর এখনই বাড়ি ফিরে যাবে?একটু বসি না হয় দুজনে,একটু সময় কাটাই এখানে!”
“আর কী বলব?আপনার কথা বলার ছিল কথা বলা হয়ে গেছে,সরি বলার ছিল বলেছেন।আমি তার উওরও দিয়েছি ত আর কী বলব ভাইয়া?আর আমার ভালো লাগছে না আমি এখনই বাড়ি ফিরব।”
“আচ্ছা ঠিক আছে চলো ফেরা যাক।”
উনি কিছুটা মন খারাপ করে কথাটা বললেন।কিন্তু আমি সেসবে পাত্তা দিলাম না।এখন এসব নিয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না।তাই আর কিছু না বলে হাঁটা শুরু করলাম গাড়ির দিকে।অতঃপর গাড়ির কাছে এসে গাড়িতে বসে চললাম বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
#চলবে…
(এত এত ভালবাসা পেয়ে আর রাগ করে থাকতে পারলাম না।রাগ গলে ফুচকা হয়ে গেছে?,তাই দিয়ে দিলাম আরেকটা পার্ট।এবার আমি ঘুমাই?,,,হক্কলরে Gd night?)