ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ৪
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
কাব্য ভার্সিটি থেকে ফেরার পর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার পর কাব্যর ফোনটা বেজে উঠে।কাব্য ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নিশান ফোন করেছে।কাব্য ফোনটা রিসিভ করে বলে উঠে,,,
“রাগ কমছে তোর?নাকি আরো রাগ দেখানোর জন্য এখন ফোন দিলি?”
“তোর সাথে রাগ দেখালে যে তোর কিছু যায় আসে না সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ বুঝে না।তাই ঠিক করেছি তোর সাথে আর রাগ দেখাব না।সব শেষ করে দিব,তোর সাথে বন্ধুত্ব রাখা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।”
“মানেহ!এসব কী বলছিস তুই?বন্ধুত্ব রাখবি না মানে কী এসবের!নিশান আমরা সেই ছোট থেকে বন্ধু আর তুই হঠাৎ এসব কেন বলছিস?”
“হে রাখব না কোন অমানুষের সাথে আমি বন্ধুত্ব রাখতে চাই না।আজকের পর থেকে আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ করবি না তুই।আমি জানতে পেরেছি তুই সাবিহাকে ঠিক কতটা নির্যাতন করেছিস।বাচ্চা মেয়েটাকে ওভাবে না মারলেও পারতি,তোর মধ্যে মনুষ্যত্ব বলতে কিচ্ছু নেই।”
“তুই কী ঐ থার্ড ক্লাস মেয়েটার জন্য আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চাইছিস?”
“অন্যকে থার্ড ক্লাস বলার আগে নিজের ক্লাসের কথা ভেবে নিস।”
কথাটা বলেই নিশান ফোনটা রেখে দেয়,আর কাব্য রাগে ফুঁসছে।
“ছাড়ব না আমি তকে,তোর জন্য আজ আমার বন্ধু আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিয়েছে।এর শোধ আমি নিয়েই ছাড়ব।”
কাব্য কথাটা বলেই গাড়ি নিয়ে গটগটিয়ে বের হয়ে গেলো।
___________________________________
বিছানায় বসে বসে গল্পের বই পড়ছিলাম তখন মা হাতে কিছু ফল নিয়ে রুমে আসে।আমি সেটা দেখে নাক,মুখ কুঁচকে বলে উঠি,,,
“মা তুমি আবারও এসব নিয়ে এসেছো!আমি এসব খাই না জানো তুমি,তারপরও এসব নিয়ে এলে।”
“ফল না খেলে মাইর খাবি,চুপচাপ এসব খা।”
“মা তুমি এখনও আমাকে বকবে!”
“হে বকব,দরকার পড়লে মারবও।তাই বেশি কথা না বলে খা আর খেয়ে তোর বাবার কাছে যা একটু।তোর স্কুল চেন্জ করবে বলছে,সেটা নিয়েই কথা বলবে তোর সাথে।”
আমি মার কথা শুনে ত খুবই অবাক হয়েছি আমি।আমার স্কুল চেন্জ করবে মানে কী?
“মা আমার স্কুল হঠাৎ বাবা চেন্জ করতে চাইছে কেন?”
“সেটা তোর বাবাকে জিজ্ঞেস কর,এখন ফলগুলো সব শেষ কর।”
আমি মুখটা কাচুমাচু করে বলে উঠলাম,,,
“ফলটা কী খেতেই হবে?”
“জি খেতেই হবে,কিন্তু না খেতে চাইলেও সমস্যা নাই তখন মাইর খাওয়াব,তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নে কী করবি!” (ধমকে)
“আচ্ছা খাচ্ছি,তুুমি রান্নাঘরে যাও এবার,কীসের যেন পোড়া গন্ধ আসছে!”
“কানের নিচে দুইটা দিব,বোকা পাইছত আমাকে।আমি এখান থেকে যাই আর ফলগুলো ফেলে দিস।আর আমি চুলায় কিছু বসিয়েও আসি নি তাই নাটক না করে চুপচাপ খা।”
আমি মার কথা শুনে চুপচাপ গাল ফুলিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।অনেক কষ্ট ফলগুলো শেষ করলাম,তারপর মাকে একটা ভেংচি দিয়ে বাবার রুমের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।
বাবার রুমে গিয়ে দেখি বাবা ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।আমি চুপচাপ খাটে গিয়ে বসি,আর বাবার কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করি।একটু পর বাবার কথা শেষ হলে বাবা বলে উঠে,,,
“দুপুরের খাবার খেয়েছিস?”
“হে বাবা খেয়েছি।”
“ঔষধ খেয়েছিস?”
“আরে বাবা হে সব খেয়েছি,এখন বলো ত তুমি হঠাৎ আমার স্কুল নিয়ে কেন পড়লে?আর দেড় মাস পর আমার এসএসসি পরীক্ষা এখন স্কুল চেন্জ করা মানে নির্ঘাত পরীক্ষায় চশমা পাব।”
“আমি তোর ভালোর জন্যই স্কুল চেন্জ করতে চাইছি।”
“বাবা একটু বুঝিয়ে বলো।”
“মানে হল তোর এই স্কুলে তায়কোয়ন্দো শেখানো হয় না তাই তোর সুবিধার জন্য স্কুল চেন্জ করছি, যেখানে তায়কোয়ন্দো শেখানো হয়।বুঝতে পেরেছিস এবার আমি কেন স্কুল চেন্জ করব!”
“আমার সুইট বাবাটা কত্ত ভালো।ধন্যবাদ বাবা আমার তায়কোয়ন্দো শেখার ব্যাপারটা এতটা গুরুত্ব দেয়ার জন্য।”
বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,বাবাও আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে দিল।
“আমাকে ত কেউ ভালইবাসে না,আমাকে কেউ আদরও করে না,আমায় সত্যি সত্যি কুড়িয়ে পাইছে মনে হচ্ছে এখন!”
শীলা ঘরে ডুকতে ডুকতে গাল ফুলিয়ে কথাটা বলল।সেটা দেখে আমি বাবাকে ছেড়ে আপুকে জ্বালানোর জন্য বলে উঠলাম,,,
“মনে হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না,তোমাকে ত সত্যি সত্যি কুড়িয়ে পাইছে তাই না বাবা!”
“বাবা তোমার ছোট মেয়েকে কিছু বলো,নয়ত আমি কিন্তু অরে মেরে আলুর বর্তা বানাব।”
“সে গুড়ে বালি,তুমি আলুর বর্তা বানানোর জন্য পেয়াঁজ,মরিচ কাটতে থাকো আমি আর বাবা ততক্ষণে বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”
“পেয়াঁজ মরিচ কাটব আমি তাই না,দাঁড়া তকে দেখাচ্ছি মজা।”
কথাটা বলেই শীলা সাবিহাকে তাড়া করে, সাবিহাও দেয় ভো দৌড়,সেটা দেখে মনির সাহেব তৃপ্তির হাসি হাসে।শীলার বিয়ের পর হয়ত সবকিছু অন্য রকম হয়ে যাবে।এরকম দৃশ্য আবার কবে চোখে ধরা দেয় ঠিক নেই।কেন যে মেয়েদের বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে চলে যেতে হয়?এসব ভেবে মনির সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
কলিং বেলের আওয়াজে দুইবোন শান্ত হয়ে দাঁড়ায় আর সাবিহা যায় দরজা খুলতে আর শীলাও পিছন পিছন যায় কে এসেছে দেখার জন্য।সাবিহা দরজা খুলে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে।কাব্যর চোখ,মুখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে,দেখে বুঝাই যাচ্ছে খুব রেগে আছে।কিন্তু সাবিহা সেসবে পাত্তা না দিয়ে দরজা থেকে সরে আসতে নিলেই শক্ত হাতের চর পড়ে সাবিহার গালে।সাবিহা গালে হাত দিয়ে কাব্যর দিকে রেগে তাকায়,কাব্য কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই সাবিহা কাব্যর গালে ঠাস,ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।আর রেগে বলে উঠে,,,
“সবকিছুর একটা লিমিট থাকে,কিন্তু তুই সে লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস।তুই মানুষ নামের একটা অমানুষ,তোর ত সাহস কম নয়।আমার বাড়িতে এসে আমার গায়েই হাত তুলিস!সেদিন মেরেছিস কিছু বলি নি বলে কী ভেবেছিস আজও কিছু বলব না।যা ইচ্ছে তাই করতে পারবি আমার সাথে?আমি কী তোর খাই না পড়ি যে আমার গায়ে হাত তুলিস তুই!আমার বাবা মা ছোট থেকে এতটুকু বড় করেছে তারা কখনও আমার গায়ে হাত তুলে নি আর তুই কোন অধিকারে আমার গায়ে হাত তুললি?”
সাবিহার কথা শুনে কাব্য আর শীলা খুব অবাক হয়।কারন যে মেয়ে কাব্য বলতে পাগল ছিল সে মেয়ে আজ এভাবে কাব্যকে তুই তুকারি করে কথা বলছে।শুধু তাই নয় থাপ্পড়ও মেরেছে।সাবিহা আবারও বলে উঠে,,,
“এবার থেকে আমার গায়ে হাত তোলার আগে এই থাপ্পড়ের কথা মনে করে নিস।আমাকে তুই একটা দিবি আমি তকে তার ডাবল ফিরিয়ে দিব।বেরিয়ে যা এই বাড়ি থেকে,তোর মুখের দিকে তাকাতেও ঘৃনা হচ্ছে আমার।”
কাব্য আর কিছু না বলে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বের হয়ে যায়,আর সাবিহা সদর দরজা আটকিয়ে হাঁটু মুড়ে নিচে বসে পড়ে।সাবিহার চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।সেটা দেখে শীলা সাবিহাকে জড়িয়ে ধরে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“সাবিহা কাঁদিস না,বাবা আর মা এসব জানতে পারলে আবার ঝামেলা হবে,তুই প্লিজ শান্ত হ।”
“আপু আমি আজ কাব্য ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছি।কিন্তু আপু বিশ্বাস করো আমি এমনটা চাই নি,আমি ভালবেসে উনার পাশে থাকতে চেয়েছি কিন্তু উনি আমাকে এসব করতে বাধ্য করেছে।আমি ত উনাকে ভালবেসে ছিলাম,কিন্তু উনি আমাকে তার বিনিময়ে আঘাত ছাড়া আর কিছুই করে নি।তাই আজ আমাকে এতটা খারাপ হতে হলো।সেদিনের মারের পর থেকে উনার কথা মনে হলেই শরীরের প্রতিটা আঘাত আমার মনে করিয়ে দেয় যে উনি ঠিক কীভাবে আমাকে ক্ষত বিক্ষত করেছে।আর সেখানে উনি আজ আমার সামনে এসে আমার গায়ে আবারও হাত তুলেছে।তাই রাগটা আর কন্ট্রোল করতে পারি নি,আপু আমি কী ভুল করেছি?”
“না বোন তুই কোন ভুল করিস নি,যা করেছিস একদম ঠিক করেছিস।কাব্যর মত ছেলের সাথে এমনটাই করতে হয়।তুই এসব ভেবে নিজেকে আর কষ্ট দিস না,কাব্য তার কর্মফল ঠিকই পাবে।”
“উনার কর্মফল ত উনি পাবেই,আর আমি নিজে উনাকে তার পাপের শাস্তি দিব।”
________________________________
সাদাফ শীলাকে এক নাগাড়ে ফোন দিয়েই যাচ্ছে সাবিহার খোঁজ নেয়ার জন্য কিন্তু কেউ ফোন ধরছে না।সাদাফের মাথায় নানা ধরনের খারাপ কথা ঘুরপাক খাচ্ছে?।সাদাফ আর কিছু ভাবতে পারছে না তাই আর কিছু না ভেবেই ছুটে চলল সাবিহাকে দেখার জন্য।কিন্তু গিয়ে যা দেখে তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তত ছিল না সাদাফ।
#চলবে…
(গল্পটা আমি রাত ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে পোস্ট করব)