ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ৫

0
2317

ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ৫
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম

সাদাফ এসে দেখে সাবিহা দুইটা ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে,আর তার পাশেই শীলা বসে আছে।সাদাফের খুব রাগ হল,ছেলেদের সাথে এত হেঁসে হেঁসে কথা বলার কী আছে বুঝে না সাদাফ।সাদাফের সাথে কথা বলার সময় ত মুখে এমন হাসিটা থাকে না,তবে কেন অন্য ছেলের সাথে কথা বলার সময় এই হাসি থাকবে?এসব ভেবে সাদাফের খুব রাগ হচ্ছে,তাই সে গটগটিয়ে সাবিহার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

নিশান ভাইয়া আর রিয়ান ভাইয়ার সাথে আমি আর আপু কথা বলছিলাম তখন সেখানে উপস্থিত হয় সাদাফ ভাইয়া।উনাকে দেখে আপু বলে উঠে,,,

“আয় বস এখানে,পরিচিত হ উনারা হলেন,,,

“তোমার না শরীর ভালো না তবে রেস্ট না নিয়ে এখানে বসে কী করছো?”

সাদাফ শীলাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সাবিহাকে গম্ভীর হয়ে কথাটা বলে উঠল।সাদাফের হঠাৎ এমন আচরনে উপস্থিত সবাই অবাক।সাবিহা একবার শীলার দিকে তাকাল,তাকিয়ে দেখে শীলাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।তাই সাবিহা হালকা হেঁসে বলে উঠল,,,

“ভাইয়ারা এসেছে তাই ওদের সাথে কথা বলছিলাম,বসুন না আপনি।”

“কে উনারা?চিনলাম না ত!”

“আরে উনারা হলেন কাব্যর বন্ধু নিশান আর রিয়ান।সাবিহাকে দেখতে এসেছে।আর এটা হচ্ছে সাদাফ আমার ফ্রেন্ড।” (শীলা)

শীলার কথা শুনে নিশান,রিয়ান আর সাদাফ হাত মেলাল।তখন নিশান বলে উঠল,,,

“আমাদের এখন আসতে হবে,একটু কাজ আছে।”

“ভাইয়া এখনই চলে যাবেন?রাতের ডিনারটা করে গেলে হয় না!”

“না বোন,খুব জরুরি একটা কাজ আছে।আমরা এখন আসি,অন্য একদিন আসব।তখন পেট ভরে খেয়ে যাব,আসি এখন আর নিজের খেয়াল রেখো।”

সাবিহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে নিশান আর রিয়ান বেরিয়ে যায়।তখন সাদাফ বলে উঠে,,,

“কাব্য ভাইয়া এমন একটা কাজ করার পরও তোমরা কীভাবে অর ফ্রেন্ডদের এলাও করলে বাড়িতে?”

“সাদাফ দোষ কাব্য করেছে,অর বন্ধুরা করে নি।অরা বরং সাদিয়াকে অনেক স্নেহ করে,আর তাই তারা খবরটা পেয়ে ছুটে এসেছে সাবিহাকে দেখতে।”

“দেখ গিয়ে এর পিছনেও হয়ত ঐ কাব্য আছে,হয়ত কোন নতুন ফন্দি আটতাছে।”

“ভাইয়া সবাইকে এত সন্দেহ করার রোগ আপনার কবে হল?”

“আশেপাশে যা হচ্ছে তাতে সন্দেহ করাটা স্বাভাবিক।”

“অরে আমার গোয়েন্দা পুলিশ আসছে রে,এত গোয়েন্দা গিরি যখন জানিস তখন গোয়েন্দা গিরিটাই কর।পুলিশে জয়েন কর,তাতে করে আমাদের বাংলাদেশ অনেক উপকৃত হবে।”

“শীলা আমি একদমই মজা করছি না,আর না মজা করার মুডে আছি।ভালো লাগছে না এখন এসব,আসছি আমি।”

কথাটা বলেই সাদাফ বের হয়ে গেলো।আর বেচারি শীলা বোকার মত তাকিয়ে রয়েছে সাদাফের যাওয়ার দিকে।শীলা ত একটু মজা করেছে তার জন্য এত রাগ দেখানোর কী হল বুঝতে পারছে না শীলা।আর সাদাফ এখন এখানে কেন এল সেসবও ত জানা হল না তার আগেই রেগে ফায়ার হয়ে চলে গেছে।এসব ভেবে শীলা একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে,আর সাবিহা কাউকে কিছু না বলে গুটিশুটি মেরে সোফায় শুয়ে পড়ে।শরীরটা ভালো লাগছে না,তাই চুপচাপ শুয়ে পড়ে।

______________________________________

কাব্য একটা নির্জন জায়গায় এসে গাড়ি থামায়,কাব্য গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা দূরে এসে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে বলে উঠে,,,

“সব ধ্বংস করে দিব আমি,সাবিহা তকে আমি ছাড়ব না।তোর কত বড় সাহস আমার গায়ে হাত তুলিস তুই,তোর ঐ হাত যদি আমি না ভেঙ্গেছি ত আমার নামও কাব্য নয়।আজ আমি যতটা একা হয়েছি ঠিক ততটাই একা করে দিব তকে।আমার ভালো থাকার সমস্ত কারন তুই কেড়ে নিয়েছিস তকে ত আমি ছাড়ব না।”

এভাবে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর কাব্য নিজের গাড়িতে গিয়ে বসে।আর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ২৩+ কল এসেছে ইশার ফোন থেকে।কাব্য সঙ্গে সঙ্গে কল ব্যাক করল,কয়েকবার রিং হওয়ার পর ইশা কল ধরল।আর সাথে সাথে ইশা রেগে বলে উঠল,,,

“এখন কল দেয়ার সময় হয়েছে তোমার?এখন কল না দিলেও পারতে,বিকালে শপিং করানোর নাম করে কোন দুনিয়ায় চলে গেছো?”

কাব্যর এমনিতেই মেজাজ খারাপ তার উপর এই ডংঙ্গি রাগ দেখাচ্ছে।কাব্যর খুব রাগ হচ্ছে কিন্তু কাব্য তার রাগটা কন্ট্রোল করে ইশাকে বলে উঠল,,,

“সরি আসলে একটু বিজি ছিলাম।”

“কী এমন কাজ করছিলা যে এতটাই বিজি ছিলা আমার ফোনটাই ধরতে পারো নি?”

“আরেকটা মেয়ের সাথে ছিলাম,তার জন্য বিজি ছিলাম।আর কিছু বলবি তুই?”(ধমকে)

ইশা এবার ন্যাকা কান্না করে বলে উঠল,,,

” বেবি তুমি আমাকে তুই করে বলতে পারলে!আমাকে ধমক দিতে পারলে তুমি!যাও আর,,,

ইশা আর কিছু বলার আগেই কাব্য ফোনটা কেটে বন্ধ করে দেয়।কাব্যর এসব কিছুই ভালো লাগছে না,কাব্য এবার তার সমস্ত রাগ ঝাড়ে তার গাড়ির উপর।খুব স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে কাব্য,মনে হচ্ছে আধা ঘন্টার পথ পাঁচ মিনিটেই শেষ করে ফেলবে।

অন্যদিকে ইশা ভাবছে হঠাৎ হলো কী এই ছেলের,যে ছেলে ইশা বলতে পাগল আর আজ তার সাথে এমন করল কেন?তবে কী ইশার প্রতি কাব্যর ভালবাসা কমে গেলো?না না এমন হলে ত চলবে না,তবে ত সোনার ডিম পারা হাসঁ হাত ছাড়া হয়ে যাবে।যেটা ইশা চাইছে না,তাই মনে মনে শয়তানি ফন্দি আটা শুরু করে দেয়।কীভাবে কাব্যকে নিজের পায়ের কাছে এনে ফেলা যায় সে ফন্দি।

_______________________________________

সাদাফ বাড়িতে এসে মুখটা কালো করে ড্রয়িং রুমে বসে আছে।সাদাফকে এভাবে বসে থাকতে দেখে সাদাফের মা তার পাশে বসে বলে উঠে,,,

“কী হয়েছে এভাবে বসে আছিস কেন?”

“মা আমি বিয়ে করব।”

“মানেহ?” (অবাক হয়ে)

“মানে হল আমি বিয়ে করব,তুমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলো।”

“হঠাৎ এই কথা কেন বলছিস সাদাফ?সাবিহার ত এখনও বিয়ের বয়স হয় নি আর তুই ত বলেছিলি তোর প্রতি সাবিহার মনে ফিলিংস হলে তারপর বিয়ে করবি।কিন্তু এখন হঠাৎ এ কথা কেন বলছিস বুঝিয়ে বল আমাকে?”

“মা আমার মনে হচ্ছে সাবিহাকে আমি হারিয়ে ফেলব।আমি জানি সাবিহার মনে আমার জন্য কোন ফিলিংস নেই।এতদিন সেটা মেনে নিলেও এখন মেনে নিতে পারছি না।ভয় হচ্ছে খুব,আমি কিছুতেই সাবিহাকে আমার ভালবাসাটা বুঝাতে পারছি না।তুমি প্লিজ আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলো।বিয়েটা না হলেও এনগেজমেন্ট করে রাখলাম,তাতে করে আমি একটু নিশ্চিন্ত হতে পারব।তারপর যখন সাবিহা বিয়ের উপযুক্ত হবে তখন না হয় বিয়েটা হল।”

“সাদাফ এতে করে হীতে বিপরীত হয়ে যাবে,সাবিহা কিছুতেই সবটা এত সহজে মেনে নিবে না।তুই নিজেকে একটু সময় দে,আর ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর।হার না মেনে সাবিহাকে তোর ভালবাসাটা বুঝা।হার মানা মানেই হেরে যাওয়া তাই হার না মেনে এগিয়ে যা,সফলতা একদিন আসবেই।”

“মা তুমি প্লিজ এখন এসব বলো না,তুমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলো তারপর বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”

“আমার ছেলেটা বিয়ে পাগল হয়ে গেছে,কেউ আমার ছেলের জন্য পাবনায় একটা সিট বুকিং করো।”

“মা তুমিও মজা করছো?”

“ত কী করব?তুই কী বুঝতে পারছিস না এখনের পরিস্থিতিটা উপযুক্ত নয় তোর আর সাবিহার বিয়ের।সাবিহা কদিন হল একটা ধাক্কা খেয়েছে সেটা সামলে উঠার আগেই তুই আবার আরেকটা ধাক্কা দিবি তখন মেয়েটার কী অবস্থা হবে বুঝতে পারছিস?এত অস্থির না হয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাব কী করা যায়?আর সাবিহা ত তোরই,সেটা তুইও জানিস আমরাও জানি।”

কথাটা বলেই সাদাফের মা চলে যায় আর সাদাফ কিছুতেই নিজের মনকে বুঝাতে পারছে না সাবিহা তার।সাদাফের খালি মনে হচ্ছে সাবিহাকে হারিয়ে ফেলবে।এতদিন সাবিহা কাব্যর কাছে ভালবাসার দাবী করেছে তখন যে মনের ভিতর কী হত সেটা সাদাফই জানে।কিন্তু তখন নিজেকে শান্ত রেখেছে এটা ভেবে যে সাবিহা সাদাফের।
সাদাফ কিছু একটা ভেবে দৌড়ে তার রুমে চলে আসে।আর এসে ড্রয়ারে কিছু একটা খুঁজছে,একটু খুজার পরই পেয়ে যায়।সেটা দেখে সাদাফের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুঁটে।আর সাদাফ মনে মনে বলে উঠে,,,

“তুমি হয়ত আমাকে বিয়ে করতে চাইবে না,কিন্তু আমিও তোমাকে আমি ছাড়া অন্য কারো বউ হতে দিব না।ভালবেসে আমার কাছে রাখব,অন্য কারো হতে দিব না।”

_____________________________________

গাড়িতে বসে আছি আমি,পাশেই বাবা বসে আছে।দৃষ্টি আমার বাইরের দিকে,মাঝে কেটে গেছে কয়েকদিন।আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ,আর আজ যাচ্ছি নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য।নতুন স্কুলে ভর্তি হব,নিজেকে নতুন রূপে গড়ব ভেবেই আনন্দ লাগছে।কিন্তু এই আনন্দের মাঝেও কিছু খারাপ লাগা কাজ করছে।হিয়াকে খুব মিস করছি আজকে,কতদিন ধরে দেখা হয় না হিয়াটার সাথে।হঠাৎ চোখ আটকে যায় একটা জায়গায়,ইশা আপু এখানে কী করছে?আর ইশা আপুর সাথেই বা কে আছে ওটা?আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে ওখানে কী হচ্ছে তাই বাবাকে বললাম গাড়ি থামাতে।বাবাও কথামত ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করল,,,

“কী হয়েছে?”

“বাবা দেখো ইশা আপু একটা ছেলের সাথে।”

“ত কী হয়েছে?”

“কিছু না,তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি।”

“এক পাও গাড়ি থেকে নিচে নামবে না।চুপচাপ বসে থাকো এই মেয়ের জন্য তোমার সাথে কী হয়েছে আশা করি সেটা ভুলে যাও নি।”

কথাটা বলেই বাবা ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে,আমিও আর কিছু না বলে চুপ করে বসে আছি।

#চলবে…

(রাতে ১০-১১ টায় আরেকটা পার্ট দিব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here