ভালবেসে রাখব কাছে পর্বঃ৭(ধামাকা পর্ব?)
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
হিয়ার অনেক জোড়াজুড়িতে রেডি হয়ে নিচে নামলাম।নিচে নামার পর আমি খুব অবাক হলাম,কারন সাদাফ ভাইয়া,বাবা আর কাব্য ভাইয়া ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে আছে।কাব্য ভাইয়া আমার সাথে দেখা করতে চাইছে কিন্তু সাদাফ ভাইয়া আসতে দিতে চাচ্ছে না।সেটা দেখে আমি জিজ্ঞেস করে উঠি,,,
“কী হয়েছে এখানে?আর কাব্য ভাইকে আটকাচ্ছেন কেন সাদাফ ভাইয়া?
আমার কথাশুনে সবাই আমার দিকে তাকায়।আর কাব্য ভাইয়া দৌড়ে আমার কাছে এসে আমার হাত তার হাতের মুঠোয় নিয়ে অস্থির হয়ে বলে উঠল,,,
“আমি কীভাবে তোর কাছে সাহায্য চাইব বুঝতে পারছি না।তোর সাথে আমি এতদিন যা করেছি সেসব একদমই ঠিক করি নি আমি।তোর সাথে অনেক বাজে আচরন করেছি,তোর গায়ে হাত তুলেছি তুই আমাকে ক্ষমা করে দে।তোর পায়ে পড়ি আমি,তুই আমাকে ক্ষমা করে আমার ভালবাসার মানুষটাকে বাঁচা।”
কাব্য ভাইয়ার কথা শুনে আমি একটুও অবাক হই নি।উনি আমার কাছে ক্ষমা চাইছে এটা হওয়ারই ছিল।আর উনি কাকে বাঁচানোর কথা বলছে?যে কী না উনাকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে তাকে?
“আপনি কী বলতে চাইছেন সেটা বুঝিয়ে বললে সুবিধা হত!”
আমার কথাশুনে কাব্য ভাইয়া কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠল,,,
“ইইইশা,ইশার এক্সিডেন্ট হয়েছে।অঅনেক খারাপ অবস্থা,O Negative রক্ত লাগবে।অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি,তাই তোর কাছে এসেছি রে।তোর ত O Negative রক্ত প্লিজ ইইশা কে বাঁচা।”
“কাব্য সাবিহা কোন রক্ত দিবে না,সাবিহা এখনও সুস্থ নয়,তুমি অন্য কোথাও চেষ্টা করতে পারো।আর সাবিহা সুস্থ থাকলেও আমি সাবিহাকে রক্ত দিতে দিব না,তুমি এখন আসতে পারো।”
“প্লিজ ফুপা এমন করো না,একটু দয়াকরো।সাবিহা তুই রক্ত দিয়ে দয়াকরে দুইটা জীবন বাঁচা।ইশার কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচব না,প্লিজ সাবিহা তুই কিছু একটা কর।”
কাব্য ভাইয়ের এত আকুলতা দেখে আমার হাসি পাচ্ছে।একটু পরে ত এই আকুলতা ঘৃনাতে পরিনত হবে।
“কাব্য ভাই আপনি আজ আপনার ভালবাসার মানুষটার জন্য যতটা অনুরোধ,অস্থিরতা দেখাচ্ছেন সেদিন সাবিহার পরিবারের লোকজনও ঠিক এভাবে আপনার কাছে অস্থির হয়ে অনুরোধ করেছিল তাদের মেয়েকে ছেড়ে দিতে।কিন্তু আপনি ছাড়েন নি,পশুর মত অত্যাচার করেছিলেন সেদিন।আর আপনি আজ কীভাবে নিজের স্বার্থের জন্য এখানে এসে দাঁড়িয়েছেন?”
“সাদাফ প্লিজ একটু দয়াকরো,আগে আমার ইশাকে বাঁচাও তারপর তোমরা আমাকে যা শাস্তি দিবে সবটা মাথা পেতে নিব।এখন প্লিজ ইশাকে বাঁচাও,সাবিহাকে বলো না আমার সাথে যেতে।”
“আপনি কার জন্য এত আকুলতা দেখাচ্ছেন যে কী না নাটক করে হসপিটালের বেডে পড়ে আছে তার জন্য!”
আমার কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক।কিন্তু কাব্য ভাই রেগে বলে উঠল,,,
“সাবিহা ইশাকে নিয়ে একটা বাজে কথাও বলবি না তুই,একটা মেয়ে হসপিটালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে আর তুই কী না এসব বলছিস।রক্ত দিবি না সেটা স্পষ্ট করে বললেই হয়।”
“এখন আমি বাজে কথা বলছি আপনার মনে হচ্ছে।কিন্তু কিছুক্ষণ পর আপনি কী করবেন সেটাই ভাবছি আমি!”
“সাবিহা তুমি এসব কী বলছো,কিছুই ত বুঝতে পারছি না।”
“সাবিহা তুই স্পষ্ট করে বল কেন এসব বলছিস।আর ইশা নাটক করছে মানে কী?”
“বাবা একটু অপেক্ষা করো,তোমার মেয়ের জামাইকে আসতে দেও তারপর সবটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
“সাবিহা এখন মজা করার সময় নয়,একটা মিনিট দেরি করলেও যেকোন সময় যা কিছু হয়ে যেতে পারে।একটু দয়াকর আমার উপর,চল না আমার সাথে।”
“সাবিহা কোন মজা করছে না,মজা করছে তোর গার্লফ্রেন্ড নামের ডাইনিটা।”
মেঘের কথাশুনে সবাই দরজার দিকে তাকালে দেখতে পায় মেঘ আর শীলা দাঁড়িয়ে আছে।আর মেঘের হাতে কাগজ।কাব্য সময় নষ্ট না করে মেঘের কাছে গিয়ে বলে উঠে,,,
“ভাইয়া প্লিজ এভাবে বলিস না,তুই একটু বল না সাবিহাকে রক্ত দিতে।নয়ত ইশা বাঁচবে না,মরে যাবে ইশা।আর ইশার কিছু হয়ে গেলে আমিও বাঁচব না প্লিজ ভাইয়া কিছু একটা কর।”
“হুম অবশ্যই কিছু ত করবই,কিন্তু তার আগে এই কাগজগুলো আর এই ভিডিওটা দেখে নে।তারপর যা করার করব আমরা।”
কথাটা বলেই মেঘ তার হাতের কাগজ আর শীলার ফোনটা হাতে দেয় কাব্যর।কাব্য সেটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে কী আছে ঐ কাগজে।অনেকটা সময় নিয়ে কাব্য এসব দেখে,আর সবটা দেখে কাব্যর হাত থেকে কাগজ আর ফোনটা হাত থেকে পড়ে যায়।কাব্য হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে পড়ে।সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে কাব্যর,এমনটা না হলেও পারত।এভাবে কেন সবটা ধ্বংস হয়ে গেলো কেন ইশা এভাবে তার সাথে গেম খেলল।কাব্যর এই অবস্থা দেখে মেঘও কাব্যর পাশে বসে কাব্যর কাঁধে হাত দেয় আর কাব্য মেঘকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।সেটা দেখে সাবিহা ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে সাদাফের কাছে গিয়ে বলে উঠে,,,
“ভাইয়া চলুন যাওয়া যাক,আপনি ত বলেছিলেন আধা ঘন্টার মধ্যে বের হবেন তাড়াতাড়ি চলুন।”
এমন মুহূর্তে সাবিহার এরকম কথায় সাদাফ খুব অবাক হয় একে ত কাব্য কাঁদছে,কিন্তু কেন কাঁদছে সেটা অরা কেউ জানে না।আর ইশাকে নিয়েই বা অরা কী বলছে সেটাও বুঝতে পারছে না তার উপর সাবিহা এখন তাড়া দিচ্ছে বের হওয়ার জন্য।সবটা সাদাফের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে,আরেকটু হলেই বেচারা জ্ঞান হারাবে।সাদাফকে কিছু বলতে না দেখে সাবিহা বলে উঠল,,,
“আপনি কী যাবেন?বাকি আমি গিয়ে চেন্জ করে ফেলব!”
সাদাফ নিজেকে সামলে বলে উঠল,,,
“সাবিহা কী হয়েছে একটু বুঝিয়ে বলো,আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।কাব্য ভাইয়া এভাবে কাঁদছে কেন?কী আছে ঐ ফোনে আর কাগজে?”
“আপনি এসব নিয়ে গবেষণা করতে থাকুন আমি গেলাম রুমে।”
কথাটা বলেই সাবিহা ঘরে চলে যায়,আর সবাই অবাক চোখে সাবিহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন একটা মুহূর্তে সাবিহার এমন গা ছাড়া ভাব দেখে সাদাফ আর সাবিহার বাবা বিরক্ত।তারা এবার শীলাকে জিজ্ঞেস করে উঠল কী হয়েছে?তখন শীলা বলে উঠল,,,
“ইশা মেয়েটা ভালো নয় বাবা,সে তার বয়ফ্রেন্ড রক্তিম দুজন মিলে বড়লোক ছেলে মেয়েদের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নানা রকমের কারসাজি করে টাকা নেয়।আজই ত এক্সিডেন্টের মিথ্যা নাটক করে কাব্য ভাইয়ের থেকে আঠারো লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়েছে।আর এসবের সাথে অনেকেই যুক্ত,যে হসপিটালে ইশাকে ভর্তি করা হয়েছে সেটাও ইশার চক্রান্ত।হসপিটালেও ইশার লোক আছে,তাই মিথ্যা অপারেশনের নাম করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে।”
“কিন্তু তোরা এসব কীভাবে জানলি?”
“বাবা আমি এসবের কিছুই জানতাম না,কয়দিন আগে সাবিহা আমাকে বলেছিল স্কুলে ভর্তি হতে যাওয়ার সময় কোন ছেলের সাথে নাকি ইশাকে দেখেছে।ত আমি সেটা মেঘের সাথে শেয়ার করার পর মেঘ জানায় ইশা মেয়েটা ভালো না।মেঘের পরিচিত একজনের কাছ থেকেও নাকি প্রেমের নামে মিথ্যা নাটক করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে।আর তার জন্য মেঘ ইশাকে দেখতে পারে না আর মেঘ কাব্য ভাইকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু বুঝে নি।উনি ভালবাসায় অন্ধ হয়ে ছিল।আর মেঘের কাছে কোন প্রমানও ছিল না তাই মেঘ অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছিল প্রমান যোগাড় করতে,তার জন্য লোকও লাগায় ইশার পিছনে লোক লাগিয়ে ইশার বয়ফ্রেন্ড রক্তিমের খোঁজ পাই,আর আজকের চক্রান্তের কথা জানতে পারি।কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে,ইশা টাকা নিয়ে পালিয়েছে।আর তার প্রমান ঐ ফোনে আর কাগজে আছে।”
সবটা শুনে সাদাফ আর মনির সাহেব অবাকের চরম সীমানায়।মেয়েটা খারাপ ছিল এটা অরা জানত কিন্তু এতটা যে খারাপ হবে সেটা বুঝতে পারে নি।কাব্য এখনও মেঘকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
______________________________________
সাবিহা আর তার পরিবার আজ একসাথে শপিং করতে বেরিয়েছে।আর কয়দিন পরেই মেঘ আর শীলার বিয়ে,সবাই আসলেও কাব্য আসে নি।ইশা টাকা নিয়ে পালিয়েছে আজ তেরো দিন,এই তেরো দিনে কাব্য না কারো সাথে কথা বলেছে আর না ঘর থেকে বেরিয়েছে।নিজেকে একদম ঘুটিয়ে নিয়েছে,কিন্তু এসবের মাঝেও কাব্য সাবিহার সাথে দেখা করতে চেয়েছে কিন্তু সাবিহা দেখা করে নি।সাবিহা এখন তার দৈনন্দিন জীবনে খুব খুশি,তার বেস্ট ফ্রেন্ড হিয়াও তার সাথে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে।আর সাবিহা তার এক তরফা ভালবাসা নামক পেরা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে পেরেছে।নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছে আর তায়কোয়ান্দো শিখছে,এতে সাবিহা আগে থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।
সাবিহার খুব পানির তেষ্টা লাগে তাই সে তার বাবাকে বলে যায় পানি কিনতে কিন্তু পানির দোকানে পৌছানোর আগেই কেউ সাবিহার মুখটা রুমাল দিয়ে চেপে ধরে।এমন একটা জায়গায় আছে সাবিহা যেখানে আশেপাশে কোন লোকজনও নেই।সাবিহা ছোটার চেষ্টা করছে কিন্তু ছুটতে পারছে না,একটা সময় ধস্তাধস্তি করতে করতে সাবিহা জ্ঞান হারায়।
#চলবে…
(বিদ্র ১ঃ কেছা লাগা ধামাকা??আর আমার পাঠক পাঠিকারা যে এতটা জিনিয়াস তা গত পর্বের কমেন্ট পড়ে বুঝতে পারলাম।অনেকেই বুঝতে পেরেছে ইশার পর্দা ফাঁস করব আজ,তাঁদেরকে ধন্যপাতা?)
(বিদ্র ২ঃ সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকো আগামী সমস্ত পর্বের জন্য,কারন গল্পের মোড় ঘুরতে চলেছে।সবার কাঙ্ক্ষিত ঘটনাটা খুব শীঘ্রই ঘটতে চলেছে।
আর সবাইকে পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা?)