আসক্ত,পর্ব-২

0
1501

মাটির চুলোয় ভাত রান্না হচ্ছে, আর টায়রা ছোট ছোট লাকরি নিয়ে চুলোও ঠেলে দিচ্ছে!
উঠোনেই বসে কথা বলছে আহান, লাজুক আর তার মা সাজিদা!

তাদের দিকে টায়রা কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার চুলোয় জাল ঠেলাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলো!
টায়রার মা রান্না ঘরে ঢুকেই টায়রাকে দেখে বললো,
– যা তারাতারি গোসল করে আয়! এক সাথে খেতে বসবি!

মায়ের কথায় ঘাড় নেরে চলে গেলো পুকুর ঘাটে গোসল করতে!
শীতের দিন, পানি দেখলেও শরীর কাপনি দিয়ে ওঠে! কিভাবে নামবে এই পানিতে?

ঘাটে বসে পুকুরের পানিতে পা ডোবাচ্ছে, আবার সাথে সাথে উঠিয়ে নিচ্ছে! চকচকে রোদ পুকুর ঘাটে তাও যেনো শীত লাগছে!

অনেক সাহস নিয়ে গলার ওড়নাটা খুলে পাশে রেখে, দম বন্ধ করে ইয়া আল্লাহ বলে চোখ খিচে লাফ দিয়ে পরলো পানিতে! ঠান্ডায় কুকড়ে গেলো একদম! চোখ খুলে বড়বড় করে চেচিয়ে উঠলো!
– উহহহহহ! আল্লাহ গো বাচাও!

সাতরে তারা তারি ঘাটের কাছে এসে আবার একটা ডুব দিয়ে কোমড় সমান পানিতে উঠে দাড়ালো! রোদের তাপটা গায়ে পরাতে ভালো লাগছে! এতক্ষন মনে হচ্ছিলো জমে বরফ হয়ে গেছে!

নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সাদা কামিজটা গায়ের সাথে চিপকে আটো সাটো হয়ে গেছে! শরীর হালকা কাপছে! তারা তারি ওঠা দরকার পানি থেকে! ওঠার প্রস্তুতি নিয়ে ঘাটের উপরের দিকে তাকাতেই দেখলো ঘাটের সামনে লাজুক দাড়িয়ে! তার শীতল চাহনী টায়রার দিকে!

লাজুকে দেখতেই লজ্জায় যাই যাই অবস্থায় পরলো টায়রা! লাজুকের চোখের চাহনি দেখতেই পুরো শরীর শিরশির করে উঠছে! লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে টায়রা!

আবার চোখ তুলে লাজুকের দিকে তাকাতেই দেখলো টায়রার থেকে চোখ সরিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো!
স্থির ভাবে দাড়িয়ে রইলো টায়রা কিছুক্ষণ ! আচ্ছা ওর বুক কেনো কাপছে?
________________
সেদিনের মত লাজুক আর সাজিদা চলে গেলেও, এর পর প্রাই সে আসতো মৃনাক্ষী গ্রামে!
কখনো আহানকে তার অষুধ খরচ দিতো, কখনো সবার জন্য জামা-কাপর নিয়ে আসতো!
এরকমন নানান বিষয়ে সে এসেছে এখানে! কিন্তু সব সময়ের ন্যায় সে কখনোই টায়রার সাথে হাসি মুখে কথা বলেনি! শুধু শান্ত দৃষ্টিতে এক পলক দেখে চলে যেতো!

এভাবেই দিন পার হতে লাগলো, আর টায়রারও এসএসসি পরিক্ষার সময় এসে গেলো!
এই এক বছরে তার মধ্যে আরো ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে! শরীর মন সব দিক থেকেই যেনো তর তর করে বেরে উঠছে সে!

এর সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে কিশরী মনের নতুন অনুভূতির আকুলতাও!
অনেক নাম না যানা অনুভূতি সে ভীরেছে তার কাছে! যার মানে সে খুজে পায় না!

ধীরে ধীরে টায়রার এসএসসি পরিক্ষা শেষ হলো! আর এলো সেই দিন যেই দিনের পর তার পুরো জীবনের মোড় পালটে গেলো!

আহানের কাছে টায়রার জন্য ভালো একটা বিয়ের প্রস্তাব আসে! ছেলে ভালো, তার আর্থিক অবস্থা ভালো! এই সব বিবেচনা করে সে রাজি হয়ে যায় তার নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দিতে!

আহানের শারীরিক অবস্থা ভালো না, সংসার ঠিক ভাবে চলে না!মেয়ের পড়ালেখার খরচ চালাতে হীমসীম খেতে হয়! তাই সে টায়রার বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যায়!
আর ছোট্টো টায়রা বাবার উপরে কোনো কথা বলতে না পেরে রাজি হয়ে যায় বিয়ে তে!

কিন্তু বিয়ের তিন দিন আগেই লাজুক সাজিদার কাছে জানতে পারে টায়রার বিয়ের কথা! আর তৎক্ষনাক গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে!

টায়রাদের বাড়িতে এসে সোজা টায়রার হাত ধরে নিয়ে যায় তার বাবা মার কাছে!
তাদের শুধু একটা কথাই বলে ছিলো!
– আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি!

কথাটা বলে কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে, টায়রাকে সেভাবেই টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে চলে গেলো মৃনাক্ষী গ্রাম থেকে!

তারপর থেকে টায়রা এখানেই থাকে লাজুকদের বাড়িতে! এখন সে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠবে! আর তার সমবয়সি এখানে আছে রিমপি-রিমি, লাজুকের বড় চাচার দুই জমজ মেয়ে! তারা বর্তমানে আমেরিকায় সেটেল, কিন্তু মেয়েদের এখান থেকে নিতে পারেনি! তেমনি তিতলি, নিশু লাজুকের দুই ফুপির মেয়ে, তারাও এখানেই থাকে! এরা সবাই প্রাই সমবয়সিই, কিছু মাসের ব্যবধান এদের মধ্যে!

বাড়ি মাতিয়ে রাখে এই পাচজন! এই বাড়ি সদস্য আরো একজন আছে সে হলো লাজুকের বড় বোন বর্ষা! অত্ত্বন্ত ঠান্ডা মেজাজের, আর বুদ্ধি মতি মেয়ে! এখনো বিয়ে করেনি, করো একজনের অপেক্ষায় সে আজও!
______________
সবাই খাবার খেতে ব্যাস্ত!যে যার মতনখেয়ে যাচ্ছে, শুধু দুটো মানুষ ছাড়া!
ভ্রু কুচকে লাজুক তাকিয়ে আছে টায়রার দিকে! আর টায়রা ভয়ে ভয়ে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও খাচ্ছে!

একটু আগে যখন রিমি ডাকতে গিয়েছিলো খাবার খেতে, ইচ্ছে না থাকায় না করে দিয়েছিলো সে!
তারই দুমিনিট পরই লাজুকের ভয়ংকর চিৎকারে ধরফরিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং এ হুমরি খেয়ে পরেছিলো!

এই রকমটা প্রাই হয় ওর সাথে! দিনের মধ্যে আনলিমিটেড ঝারি, চোখ রাঙানি হজম করতে হয় টায়রাকে! আর কখনো কখনো চর থাপ্পোরও!

থাপ্পরের কথা মাথায় আসতেই তার বা হাতটা অটোমেটিং বা গালে চলে গেলো!..
এর ফল সরুপ আবার ঝারি লাজিকের!
– গাল থেকে হাত নামাও!

তারা তারি গাল থেকে হাত নামিয়ে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো টায়রা! আর ওকে দেখে মিটমিট করে হাসছে লাজুকের কাজিনরা!

– এহেম, এহেম!
গলা খাকারি দিয়ে ছেলেকে কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিলো শাহেদ! টেবিলের সবার নজর আপাদত তার দিকে! কিন্তু সেই তো কাচুমাচু করছে, কি থেকে কি বলবে ভেবে?
পাশ থেকে সাজিদা স্বামীকে খোচা মেরে কথাটা বলতে বলছে!
সাহস করে কিছু বলার আগেই থেমে গেলো!

– যদি আবার আমার বিয়ে নিয়ে কিছু বলার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে এখানেই থেমে যান!

সবার নজর শাহেদের থেকে সরিয়ে লাজুকের দিকে গেলো! যে আপাদতো খাবার খেতে ব্যাস্ত!

ছেলের কথা শুনে মুখ চুপষে গেলো শাহেদের!
– এ কেমন কথা লাজুক? তোমার বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে! আজ নয়তো কাল বিয়ে করতেই হবে তাই নয় কি?

খেতে খেতেই শান্ত কন্ঠে জবাব তার,
– যখন আমার বিয়ে করার সময় আসবে তখন আমি নিজেই জানিয়ে দিবো!এই বিষয় নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন সবাই!

টায়রা খাওয়া ছেরে লাজুকের দিকে তাকিয়ে! ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,
– না খেয়ে এদিকে কি দেখছো?

সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেললো টায়রা, তারপর দেখা যাবে বাকি সবার উপর রাগ সব ওর উপর ঝারবে লাজুক!

এতক্ষন চুপ করে বসে ছোট ভাইয়ের কথা শুনছিলো বর্ষা, এবার সে মুখ খুললো!
– এ কেমন কথা ভাই? তুই আমাদের এক মাত্র ভাই, তোর বিয়ে নিয়ে আমাদের কত চিন্তা ভাবনা, কত প্লানিং আর তুই এই কথা বলছিস!

বর্ষার কথায় সায় দিলো তিতলি,নিশু,রিমপি,রিমি! শুধু টায়রা বাদে!

– হ্যা তো? আমি তো বলিনি বিয়ে করবো না! তাই তোদের প্লানিং নষ্ট হওয়ারও কোনো কারন নেই!
এর পর এই ব্যাপারে আর কিছু শুনতে চাই না আমি!

কথাটা বলে চলে গেলো ওখান থেকে!
ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে শাহেদ বললো,
– কি ছেলে হয়েছে, বাপের কথাও কোনো তোয়াক্কা নেই!
__________________
টায়রা ব্রেক ফাস্ট করতে রুম থেকে বেরতেই সামনে পরলো লাজুকের! অদ্ভুত ভাবে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বোলাচ্ছে!

লাজুকের তাকানো দেকে মাথা নিচু করে নিলো টায়রা!

– এসব কি পরেছো তুমি?

নিজের দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে লাজুকের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কেনো কি হয়েছে?

– তুমি কি বাচ্চা মেয়ে যে এই রকম ছোট্ট প্যান্ট আর টিশার্ট পরে ঘুরে বেরাচ্ছো?

– আপনি নিজেই তো বলেন আমি পিচ্চি! তো সমস্যা কই?

টায়রাকে একটা ধমক দিতে গিয়েও থেমে গেলো, রাগটাকে কন্ট্রোল করে বলল,
– আমি পিচ্চি বলি তাই বলে এই সব ড্রেস পরে ঘুরবে?

ঠোট উল্টে জবাব দিলো,
– কেনো নিশু তিতলি,রিমপি,রিমি ওরাও তো সব সময় এমন ড্রেস পরে, ওদের তো কিছু বলেন না!

কিছু একটা বলতে যেয়েও থেমে গেলো লাজুক!
– ওরা পরলেও তুমি পরবে না! আর একদম ওড়না ছাড়া আর শর্ট কোনো ড্রেস পরে যেনো বাইরে বেরতে না দেখি!

গাল ফুলিয়ে মাথা নাড়লো টায়রা! লাজুক কিছুটা সময় ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ব্রেকফাস্ট করতে এসো!

কথাটা বলে লাজুক শিরি বেয়ে নিচে যেতে লাগলো, সাথে টায়রাও!

ব্রেক ফাস্টের পর লাজুক চলে যেতেই টায়রাকে ঘীরে ধরলো, রিমপি রিমি তিতলি নিশু!

টায়রাকে গাল ফুলিয়ে থাকতে দেখে, নিশু জিগ্গেস করলো,
– আচ্ছা ভাই দেখলাম তোকে কি যেনো বলছে! কি বললো রে?

কাদো কাদো ফেইসে তাকালো টায়রা ওদের দিকে,
– আমাকে ধমকালো যেনো এমন ড্রেস আর না পরি!

টায়রার কথা শুনে হাসিতে ফেটে পরলো সবাই!

হাসি থামিয়ে সিরিয়াস মুখ করে চিন্তিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো তিতলি!
– আচ্ছা ভাই তো সব সময় আমাদের তুই তুই করে বলে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ কখনো শুনেছিস টায়রাকে তুই করে বলতে?

তিতলির কথায় মাথা নেড়ে না বললো সবাই!

– কেনো বলে না?

ঠোট উলটে জবাব দিলো,
– কি জানি!

To be continue……
Shuchona Zannat…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here