অদ্ভুত_সম্মোহনী?♥ PART_10

0
2782

অদ্ভুত_সম্মোহনী?♥
PART_10
#FABIYAH_MOMO?

ব্রিজের উপর শীতল হাওয়া বইছে অনবরত। পূর্নিমার চাদঁ একরাশ মেঘের আড়ালে ঢেকে বসেছে। রাহা নিজের দু’কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা, সাদ এসে হুট করে প্রোপ্রোজ করে বসবে। সাদ পান্জাবীর পকেটে দু’হাত ডুবিয়ে ব্রিজের নিচের দিকে চোখ স্থির করে তাকিয়ে আছে। বাতাসের প্রখরতায় কপালের উপর চুলগুলো আনমনে বসে আছে বহুক্ষন ধরে। দেখতে পুরো মেয়েদের মতো স্টাইল লাগলেও কেনো জানি সাদকে অনেক ‘কিউট এন্ড হ্যান্ডসাম’ ক্যাটাগরির সুন্দর লাগছে। সাদ হালকা কেশে বলে উঠলো,

— রাহা আমাকে কি মেনে নেওয়ার সম্ভব? আমি কি তোমার নরম মনটার একটুখানি অধিকার পেতে পারি? জাস্ট একটুখানি??

রাহা এবার মেঘের আড়ালে ঢেকে থাকা বিমর্ষ চাদঁটার দিকে তাকালো। কঠিন গলায় বলে উঠলো,
— আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না ভাইয়া। আমি আপনাকে হ্যাঁ বা না বলতে চাচ্ছিনা।
রাহার কথায় সাদ সচকিত চোখে রাহার দিকে তাকালো। চাদেঁর স্বল্প আলোয় রাহার মুখে অজানা আশঙ্কার ছোপ বুঝা যাচ্ছে। সেটা কি হতে পারে সাদ বুঝতে পারলো না।

— তোমার যদি সময়ের দরকার হয় তুমি যত খুশি নাও। আমি তোমাকে কোনো রূপ ফোর্স করবো না। না আমি ভবিষ্যতেও করবো। শুধু এটুকু মাথায় রেখো, সাদমান আরাফ কথার উপর কথা ফেলে দেয়না! যা বলে তা করে ছাড়ে।

সাদ পান্জাবীর পকেট থেকে হাত বের করে বাইকের কাছে গিয়ে বাইকে উঠে পড়লো। বাইক স্টার্ট দিতেই রাহা গিয়ে সাদের পিছনে বাইকে চড়ে বসলো। সাদের দুই কাধে দুইহাত রেখে দিতেই সাদ বাইকে স্পিড উঠালো। বাতাসের দোলায় রাহার চুল এসে সাদের মুখে ঝাপটা ফেলছে। সাদ এতে একটুও বিব্রতবোধ করছেনা। বরং ইচ্ছে করেই গাড়ির স্পিড আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ভালো লাগছে রাহার চুলের সুঘ্রাণে মাতোয়ারা হতে। রাহা পুরো রাস্তায় প্রতিক্রিয়াহীন একটা পুতুলের মতো ছিলো। কোনো কথাবার্তা বলেনি সে।সাদ বাইকটা বাড়ির গেটের সামনে থামাতেই রাহা ঝটপট করে নেমে ধীর পায়ে ভেতরে চলে গেলো।

.
.

রাত দশটা। আকাশে কালো মেঘের আনাগোনাতে প্রচুর অন্ধকার হয়ে আছে চারপাশ। চাদেঁর আলো নেই বলতে গেলে আকাশে। আবহাওয়ার পূবার্ভাস অনুযায়ী ঠিক গভীর রাতে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বাসার সবাই বেঘোরে নাক ডেকে এক দফা ঘুম দিলেও রাহার চোখে ঘুমের প্রলেপ নেই একদমই। অনেকবার একাত ওকাত করে নড়চড় করেও ঘুমের আভাস আনতে পারেনি রাহা। তার উপর নাইমার চাচাতো বোনগুলোর শোয়া প্রচুর খারাপ। ঘুমের উপর হাত পা তুলে দেওয়ার বিরাট খারাপ স্বভাব আছে। রাহা বিরক্ত হয়ে উঠে গেলো বিছানা থেকে। খোলা জানালার দিকে চোখ দিয়ে আকাশের পরিস্থিতি বুঝলো এবং রওনা দিলো ছাদের উদ্দেশ্যে বৃষ্টিতে গা ভেজানোর জন্যে।

ছাদের গেটের চাবি নিয়ে গুটিগুটি পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে ছাদের লোহার দরজাটা আস্তে ধীরে খুললো। বিকট শব্দ কোনো হলে বাড়ির সবাই জেগে উঠে চোর টোর ভেবে খুন্তি, লাঠি, জুতা নিয়ে দৌড়াবে তা রাহা জানে। ছাদের রেলিং ধরে বাতাসের শীতলতায় চোখ বন্ধ করতেই রাতের আকাশ ভেদ করে বৃষ্টি ফোট ঝুম আকারে পড়তে লাগলো। বৃষ্টির ঠান্ডা পরশে দু হাত মেলে দিয়ে হাতের মুঠোতে পানি হাতাচ্ছে রাহা। আচ্ছা সাদ ভাইয়া কি সত্যি সত্যি ভালোবাসেন? নাকি মিথ্যে কথার কারসাজি করছেন? সাদ ভাইয়া এক কথার মানুষ। উনি যা বলেন, তা শতভাগ করেন। উনি যদি আমার জায়গায় অন্য কাউকে কথাগুলো বলতো তাহলে ওই মেয়ে অবশ্যই সাদ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ‘ভালোবাসি’ বলতো! সাদ ভাইয়ার মতো একজনকে পেয়ে অবশ্যই নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মেয়ে ভাবতো! উনাকে প্রতিদিন দেখার জন্য, প্রতিদিন ছোঁয়ার জন্য, প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে কাছে টেনে অধিকার খাটানোর জন্য হলেও কোনো ভয়ভীতি কাজ করতো না। যখন ইচ্ছে তখন তাকে দেখার সুযোগ মেলতো। হাত দিয়ে তার চোখের উপর, ঠোঁটের উপর ছুয়ে ছুয়ে দেখা যেতো। তার চুলগুলোতে হাতের পরশ লাগিয়ে প্রতিরাতে স্বপ্ন বুনা যেতো। সাদ ভাইয়া সুন্দর। অনেক সুন্দর…

রাহা আকাশের দিকে মুখ তুলে বৃষ্টির পানিতে সিক্ত হয়ে মুচকি হাসি দিলো। ডান হাতটা বুকের উপর বামদিকে রেখে ঢিপঢিপ আওয়াজ শুনতে পেলো। জোরে জোরে দুটো নিশ্বাস ছেড়ে চোখ খুলে ছাদের রেলিং ছুয়ে ছুয়ে হাটতে নিলে হঠাৎ পেছন থেকে ভেসে আসে ফিসফিসানি আওয়াজ! রাহা থমকে গেলো ! এই শব্দ কোথা থেকে আসছে? সেই হুমকিওয়ালা ব্যক্তি নাকি! রাহা ভয়ে ভয়ে পেছনের দিকে তাকাতেই একজোড়া হাত এসে ওর মুখ ও চোখ জব্দ করে ধরলো। এরপর টানতে টানতে ছাদের এককোনায় নিয়ে গেলো। বৃষ্টি এখনো অটলভাবে পড়ছে। রাহা একদম চুপচুপে ভিজে আছে। সেই সাথে কেউ ওকে জাপটে ধরে মুখ ও চোখ চেপে ছাদের ফ্লোরে বসিয়ে দিয়েছে। রাহা শ্রবন ইন্দ্রিয় খোলা রেখে শুনতে পেলো কারোর এগিয়ে আসা পায়ের আওয়াজ। শব্দটা তীক্ষ্ম হয়ে আসছে খুব। কেউ ছাদে গট গট পায়ে শব্দ করে হাটছে। হাটার আওয়াজ কানে নিতেই রাহার দাপাদাপি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টির ছন্দ পাকানো রিমঝিম শব্দের জন্য ছাদে আসা মানুষটা আর দাপাদাপির শব্দ শুনতে পেলো না। ছাদ থেকে চলে গেলো। রাহার দাপাদাপি মানুষটার যাওয়ার সাথেই থেমে গেলো নিমিষে। হঠাৎ চোখ ও মুখ চেপে ধরা ব্যক্তিটা তার বাধন ঢিলে করে দিলো। রাহা এই সুযোগে এক টানে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দাড়িয়ে পড়তেই ছাদের হলুদ বাতির খাম্বার আলোয় যা দেখতে পেলো তাতে রাহার যেনো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। কালো টিশার্ট এবং ধূসরবর্ণের ট্রাউজার পড়নে বৃষ্টির পানিতে আপাদমস্তক ভিজে আছে সাদ! সাদ উঠে দাড়ালো। বৃষ্টির পানিতে তার চুল আবারো বেহায়ার মতো কপালের উপর সারি বেধে মুখের উপর পানি চুয়ে চুয়ে ঠোটেঁর উপর দিয়ে পড়ছে। সাদ কপালের চুলগুলো হাত দিয়ে পিছনে সরিয়ে বলে উঠলো,

— সাহস দেখি কম না! এতো রাতে ছাদে কি করতে এসেছো! বৃষ্টিতে ভিজে কি হাল করেছো নিজের রাহা! হোয়াটস দিস! আন্সার দাও!

রাহা ভীতু গলায় তোতলাতে তোতলাতে বলে উঠলো,
— ববৃষ্টি ভাললো ললাগে…ভিভিজতে এসেছি..

সাদ দ্রুত এগিয়ে এসে রাহার দুইবাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো,
— ঠাটিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে করছে! রাতের বেলা কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে ছাদে আসে? ভিতরে ভয়ডর নেই? জাস্ট আজব হয়ে গেলাম !
রাহা কাচুমাচু করে চোখ নিচু করে ফেললো। সাদ রাহার বাহু ছেড়ে দিলো। আলতো হাতে রাহার হাত ছুয়ে ছুয়ে কাধের উপর দিয়ে গালের উপর হাতটা রাখলো। রাহা কেপে উঠলো। শরীর কাপার সাথে ঠোঁটজোড়াও কাপছে রাহার। সাদ ঘোর দৃষ্টিতে রাহার ঠোঁট দুটো দেখছিলো। গালের উপর হাতটা ধীরে ধীরে ঠোটের উপর ঘুরাতে লাগলো সাদ। রাহার ভেতরে তখন চন্ঞ্চল মনটা ছুটাছুটি করে কাপছে। রাহার ইচ্ছে করছিলো এক দৌড় দিয়ে সাদের কাছ থেকে পালাতে। সাদ দু’গালে হাত রেখে রাহার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাহার অর্ন্তআত্মা পাখির মতো ছটছট করছে। ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে সে। সাদ রাহার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোটটা ছোয়ানোর চিন্তা করলেও পরক্ষনে সে থুতনি চুমু বসিয়ে বুকে শক্ত করে চেপে ধরে। রাহার চুলে হাত ডুবিয়ে, ঘাড়ে আরেকহাত দিয়ে চেপে ধরে নিজের সাথে। সাদ বুকে চেপে ধরতেই রাহা ধ্বকধ্বক পরিচিত শব্দটা শুনতে পেলো। রাহার মাথায় হাত বুলিয়ে সাদ চোখ বন্ধ রেখে বলে উঠলো,

— শান্ত হও। এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার ছোঁয়া তোমার খারাপ লাগলে তুমি বুকে চুপ হয়ে থাকতে না।

রাহা সাদের কথায় নড়েচড়ে উঠলে সাদ রাহাকে বুক থেকে উঠিয়ে থুতনি উচু করে ধরে। বৃষ্টির পানি রাহার শ্যামবতী মায়া সুন্দর মুখটার আরো সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। সাদ রাহার কোমরে হাত রেখে এক টানে নিজের কাছে আনলো। রাহা মনে মনে অনেক কিছু বললেও মুখ ফুটে কিছু বলার সুযোগ পেলো না। সাদ আরেক হাত দিয়ে রাহার মাথায় হাত রেখে নিজের মুখের কাছে এনে নাকে নাক ছোয়ালো। রাহার সমস্ত শরীরে রক্ত সন্ঞ্চালন বেগতিক হারে টগবগ করছে। হঠাৎ সাদ রাহার কপালে ঠোঁট বসাতে যাবে কারোর পদ ধ্বনি ফের আসতে লাগলো কানে…..কেউ ছাদের দিকে পায়ে শব্দ করে এগিয়ে আসছে…

-চলবে

-Fabiyah_Momo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here