আসক্ত, পর্ব -৭

0
1317

আসক্ত?
জান্নাত
পর্ব : ৭

গাল ফুলিয়ে বসে আছে টায়রা নিজের রুমে! শপিং মল থেকে ফেরার পথে বেশ ঝারি খেতে হয়েছে লাজুকের থেকে! তাও ঐ ছেলেটার জন্য!
টায়রা চুপচাপ সব সহ্য করলেও মনে মনে সেই ছেলেটাকে হাজারও গালি দিয়েছে! তার জন্যই তো আজ এত্তো গুলো বকা খেতে হলো তাকে!

কতক্ষণ গাল ফুলিয়ে বসে থাকার পর উঠে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে! সোজা শাওয়ার নিয়েই বেরলো ওয়াশরুম থেকে! ঠান্ডা পানিতে শাওয়ার নেওয়ার ফলে কাপুনি উঠে গেছে তার!
বিছানার দিকে নজর দিতেই দেখলো একটা প্যাকেট! শপিং এর প্যাকেট তো সব ও উঠিয়ে রেখেছে, এটা এলো কই থেকে?

চুল গুলো মুছতে মুছতে বিছানা থেকে প্যাকেট টা নিয়ে খুলে দেখতেই টায়রার মুখ হা হয়ে গেলো!
এটা তো সেই শপিং মলে দেখা কালো লেহেঙ্গা টা! কিন্তু কে আনলো?

ড্রেসটা খুলতেই একটা কাগজ পেলো,কিছু লেখা আছে তাতে!
” পছন্দের কোনো জিনিস কখনো সেক্রিফাইস করতে নেই ”

লেখাটা পরতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো টায়রার! এটা লাজুকের হ্যান্ডরাইটিং! ও যে তখন লেহেঙ্গা টায় মগ্ন ছিলো সেটা তাহলে দেখেছে সে!

ড্রেসটা তুলে বুকের সাথে চেপে জরিয়ে নিলো, কেনো জানা নেই! তবে খুব খুশি খুশি লাগছে! এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে!

ড্রইং রুম ভর্তি শাড়ি জুইলারিতে! এগুলো ছেলে পক্ষ থেকে পাঠিয়ে দিয়েছে বর্ষার জন্য! আর সেগুলো দেখছে বাকিরা!

গয়না গুলো দেখতে দেখতে টায়রা বললো,
– দিদুন দেখেছে গয়না গুলোর কি সুন্দর ডিজাইন! বর্ষা দি কে দারুন মানাবে!

টায়রার কথায় মুচকি হাসলো মোর্শেদা ! পাশ থেকে তিতলি বললো,
– ঠিক বলেছিস, আমার কিন্তু শাড়ি গুলো বেশ পছন্দ হয়েছে! বিশেষ করে বিয়ের লেহেঙ্গাটা!

– দিদুন আমি কিন্তু হলুদে শাড়ি পরবো,,,আর বিয়েতেও!

টায়রার কথায় মোর্শেদা হেসে জবাব দিলো,
– সেতো ভালো কথা, কিন্তু পুতুল তুমি সামলাতে পারবে তো শাড়ি?

মোর্শেদার কথার পরিপেক্ষে বর্ষা বললো,
– কেনো পারবে না দিদুন? টায়রা কি আর ছোট আছে নাকি! বড় হয়ে গেছে এখন ও! তাই না টায়রা?

টায়রা হেসে উপর নিচে মাথা নাড়ালো!
রিমপি বললো,
– হ্যা তাহলে তো এখন টায়রাকে বিয়ে দেওয়াই যায় তাই না! বর্ষা দি তোমার বিয়ের পর টায়রার বিয়ে দিবো আমরা! ছেলে তো ঠিকই আছে তাই না!

রিমপির কথা শুনে মুচকি হাসলো বর্ষা, বাকি সবাইও হাসতে লাগলো!

টায়রা অবাক হয়ে জিগ্গেস করলো,
– ছেলে ঠিক আছে মানে?

টায়রার কথায় সাজিদা বললো,
– আম্মাজান সেটা পরেই জানতে পারবে! এখন এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে!

বোকার মত টায়রা তাকিয়ে দেখছে সবাইকে! কেমন মিটমিট হাসছে! টায়রার মনে হচ্ছে এমন কোনো কাহিনী আছে যেটা সে বাদে সবাই জানে!
আর সবাই তাকে নিজে মজা করছে!

রিমি বললো,
– টায়রা ভাই নাকি তোকে আজ একটা আই ফোন কিনে দিয়েছে?

– হুমমম!

তিতলি বললো,
– দিতেই পারে, টায়রাকে দিবে না তো কাকে দেবে বল?

তিতলির কথায় মুখ টিপি হাসছে সবাই! এবার সত্যিই টায়রার অসহ্য লাগছে! এরা সবাই এমন কেনো করছে যেনো কোনো কমিডি শো চলছে, আর টায়রা হলো শো এর মুল বিষয়!
বিচ্ছিরি মেজাজ নিয়ে উঠে গেলো ওখান থেকে সে!
সোজা নিজের রুমে!

লাজুক ফাইল দেখতে ব্যাস্ত, আর তার পাশেই ফোনটা কন্টিনিউজলি বেজে যাচ্ছে এক ঘন্টা জাবত!
স্কৃনে সোনিয়া নামটা দেখতেই বিষস্বাদে মেজাজ ভোরে গেলো লাজুকের! প্রচন্ড রকমের বেহায়া মেয়ে সে! এত কিছু বলার পরেও বার বার ফোন করা থামায়নি!
মেজাজ তার সপ্তম আসমানে এখন!

ফোনটা নিয়ে রিসিভ করতেই চেচিয়ে বলে উঠলো,
– প্রবলেম কি তোমার? কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছো! তোমাকে একটা কথা বললে বুঝতে পারো না, বার বার ডিসটার্ভ কেনো করছো?

উপাশ থেকে আওয়াজ এলো,
– এমন কেনো করছো লাজুক আমার সাথে? আমি কি এমন করেছি বলো? আই লাভ ইউ লাজুক, প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে নেও তোমার লাইফে!

নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়টা শ্বাস ফেললো!

– প্রচন্ড বেহায়া মেয়ে তুমি! তুমি আমার লাইফে ছিলে কবে যে আবার ফিরিয়ে আনার কথা বলছো?

– লাজুক কি বলছো তুমি এসব, তোমার আর আমার রিলেশন কতটা ডিপ ছিলো সেটা কি তুমি জানো না? তার পরও একথা কি করে বলতে পারো?

– শোনো সোনিয়া তুমি আমার লাইফের প্রথম মেয়ে ছিলে না যে আমার বেড পার্টনার হয়েছো! আমাদের মধ্যে কোনো রিলেশনই ছিলো না, আমার সাথে থেকেছো তুমি নিজের ইচ্ছায়, আর যার পরিবর্তে পর্যাপ্ত টাকা পেয়েছো! তাই বার বার সেই কথা গুলো বলে আমায় ডিস্টার্ভ করা বন্ধ কর!
যা ছিলো তা আরো দুই বছর আগে! আমার লাইফে এখন আর তোমাদের মত কারোর কোনো জায়গা নেই!

কথা গুলো বলেই ফোন কেটে দিলো লাজুক! প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে এই মেয়েটার উপর! এত বেহায়া মেয়ে এর আগে কখনো দেখেনি সে!
অসহ্য লাগছে সব এখন! ফাইলটা ছুরে বিছানায় ফেলে দিলো! চেয়ারে চোখ বন্ধ করে গা এলিয়ে দিলো!

– আসবো?

টায়রার আওয়াজ পেতেই চোখ খুললো লাজুক দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো হাতে সুপের বাটি হাতে দাড়িয়ে আছে!

– আসো!

ধীর পায়ে এগিয়ে এলো লাজুকের সামনে! স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাজুক টায়রার দিকে! মনের অস্থিরতা গুলো ধীরে ধীরে মিইয়ে যাচ্ছে ! এ কোন চাওয়ায় আসক্ত লাজুক, যা ধীরে ধীরে তাকে সম্পূর্ণ ভাবে গ্রাস করে শুষে নিচ্ছে!

– আপনার সুপ!
খাবারটা টেবিলের উপর রেখে, ফের চলে যেতে নিলো টায়রা!

লাজুকের ভারী আওয়াজে থেমে গেলো সে!
– আমি কি যেতে বলেছি?

লাজুকের দিকে ফিরে মাথা নাড়ালো!
– তাহলে যাচ্ছিলে কেনো?

– ঐ এমনিই!

– এদিকে আসো!

লাজুকের কথায় চোখ তুলে তাকালো টায়রা তার দিকে!
– কি বলেছি আমি?

টায়রা এগিয়ে লাজুকের সামনে গিয়ে দাড়ালো! তার বুক ধুকধুক করছে! লাজুকের চাহনি যেনো কেমন অদ্ভুত লাগছে তার!

– সুপটা খাইয়ে দেও!

অবাক টায়রা লাজুকের মুখের দিকে তাকিয়ে, কি বললো সে, ভুল শুনেছে না কি?
– কি..কিছু বললেন?

ফাইল গুলো ফের উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে জবাব দিলো!
– বাটিটা তোলো আর খাইয়ে দেও আমায়! কাজ করছি আমি!

– আ..আমি পারবো না!আ..আপনি নিজে খেয়ে নিন!

ভ্রূ কুচকে টায়রার দিকে তাকালো লাজুক! তারপর ঝারি মেরে বললো,
– আর একবার যদি বলতে হয় তাহলে সারা রাত গার্ডেনে বসিয়ে রাখবো!

– দিদ..দিচ্ছি !
ভয়ে ভয়ে তারাতারি বাটি তুলে লাজুক কে খাইয়ে দিতে লাগলো!

টায়রার হাত কাপছে, সাথে পুরো শরীর ! প্রচন্ড রকম অস্থির অস্থির লাগছে তার!

____________
প্রতি দিনের মত আজও টায়রা কফি নিয়ে গেলো লাজুকের রুমে! টায়রাকে আসতে দেখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে গভীর ভাবে দেখে নিলো!

বা হাতে পেট চেপে ধরে আছে, চোখ মুখ খিচে রেখেছে! মুখ দেখেই ওর অসহ্য যন্ত্রনাটা বোঝা যাচ্ছে ! ধীর পায়ে হেটে লাজুকের সামনে এসে দাড়ালো!

টায়রার থেকে কফির মগটা নিয়ে ভ্রূ কুচকে জিগ্গেস করলো,
– কি হয়েছে? তুমি কি অসুস্থ ?

ডানে বামে মাথা নাড়ালো টায়রা!

লাজুক ধমক দিয়ে বললো,
– মিথ্যে বলছো কেনো? দেখেই তো বোঝা যাচ্ছে অসুস্থ! কি হয়েছে, কি সমস্যা?

চুপ করে মাথা নিচু করে রাখলো টায়রা! লাজুকের আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে!
মগটা রেখে দাড়িয়ে সোজা টায়রাকে কোলে তুলে নিলো! হতবাক টায়রা ভুত দেখার মত চমকে আছে! সেদিকে তোয়াক্কা না করে!
টায়রাকে সোজা তার রুমে নিয়ে বিছানায় আধ শোয়া করে বসিয়ে দিয়ে তখনই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!

একটু পরে একটা হট ব্যাগ নিয়ে এলো সাথে করে!
টায়রার হাতে একটা পেইন কিলার দিয়ে বললো,
– এটা খেয়ে নেও! ব্যাথা কমে জাবে!

কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই খেয়ে নিলো টায়রা!

– পেটে ব্যাথা হচ্ছে কাউ কে বলেছিলে?

মাথা নাড়িয়ে না বললো টায়রা!

– ঠাটিয়ে দুটো চড় মারবো বেয়াদপ! [ কেপে উঠলো লাজুকের ধমকে ] বলনি কেনো কাউ কে? খুব বড় হয়ে গেছো তাই না! পাকনামো করা হচ্ছে!

ভয়ে গুটিয়ে টায়রা মাথা নিচু করে আছে! তার আত্মা লাফাচ্ছে লাজুলের ধমকে! এতো কেনো ধমকায় তাকে? কবে না জানি আত্মাটা লাফালাফি বন্ধ করে একে বারে পগার পার হয়ে যায়!

হট ব্যাগটা নিয়ে টায়রার পাশে বসে বললো,
– টিশার্ট টা উপরে তোলো!

চোখ গুলো বেরিয়ে আসার উপক্রম হল টায়রার কি বলছে এসব! টিশার্ট তুলবে মানে?
– কি বলছি শুনতে পাওনি?

– আ..আমি করে নিন..নিচ্ছি! আপনি যায..যান!

লাজুকের ভারী আওয়াজ,
– যা বলছি কর!

ভিতু ফেইস নিয়ে ডানে বামে মাথা নাড়ালো টায়রা! লাজুক বিরক্তি লুক নিয়ে নিজেই টিশার্ট উপরে তোলার জন্য হাত বারাতেই, টায়রা দু হাতে টিশার্ট টেনে ধরলো!

-পি..প্লিজ না, এমনটা করবেন প্লিজ!

তীক্ষন দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাজুক টায়রার দিকে! মাথা নিচু করে আছে টায়রা! লাজুকের মুখের দিকে তাকালো না আর সে!
হট ব্যাগটা নিয়ে টায়রার টিশার্টের উপর দিয়েই পেটের নিচে সেক দিতে লাগলো! লজ্জায় গুটিয়ে আছে টায়রা!

ব্যাগটা টায়রার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– এটা দিয়ে সেক দেও আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি! আর দুধ পাঠাচ্ছি খেয়ে নেবে, নয়তো থাপ্পড়িয়ে গাল লাল করে দিবো!

ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো টায়রা! এই লোকটাকে বুঝতে পারে না সে! যত্নও নিবে কিন্তু তাও ধমকে ধমকে ! এতোটুকু শরীরে এতো অত্যাচার কি সহ্য হয় নাকি!

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here