আসক্ত, পর্ব -২৩

0
1730

(শেষপর্ব)

পরের দিন সকালেই লাজুক টায়রাকে নিয়ে চলে গেলো মৃনাক্ষী গ্রাম থেকে!
টায়রারও আর কি করার , লাজুকের ঝারির কাছে দাড়াতে না পেরে চুপ চাপ চলে এসছে!
কিন্তু সব থেকে বড় শকড খেলো তো বাড়িতে ফেরার পর! পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে! চারদিকে লাইটিং, বাড়ি ভর্তী গেস্ট!বর্ষা আবিরও এসছে! লাজুকের ছোট চাচা চাচিকে দেখেতো আরো অবাক! আমেরিকা থেকে এরা কবে ফিরলো? লাজুকের ফুপিও এসেছে!
হা করে চারদিক দেখে যাচ্ছে টায়রা! মানে কি এসবের?কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে?
এর মধ্যেই রিমপি রিমি তিতলি নিশু দৌড়ে এলো টায়রার কাছে!
রিমপি মিটমিটিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
— বলেছিলাম না? যাচ্ছিস তো কিন্তু থাকতে আর পারবি কদিন! সেই তো গিয়ে একদিনের মাথাই নিয়ে এলো!
মুখ গোমরা করে তাকালো টায়রা রিমপির দিকে!
পাশ থেকে রিমি তারা দিয়ে বলল,
— আরে এসব আলোচনা পরে করিস, লেট হচ্ছে তো! অলরেডি বিকেল পেরিয়ে গেছে!
— ও হ্যা! সরি সরি! চল টায়রা!
টায়রা রিমপির দিকে অবাক হয়ে জিগ্গেস করলো,
— এসব কি? বাড়ি এমন সাজানো কেন? আর এতো গেস্ট? তোরাই বা কিসের লেট হওয়ার কথা বলছিস? আমার মাথায় কিছু আসছে না!
— আরে রিলেক্স! এক সাথে কত প্রশ্ন করবি আমার মা? কি হচ্ছে সেটা পরেই জানতে পারবি, আগে আমাদের সাথে চল!
— আরে বলবি তো কি হয়েছে?
টায়রাকে কোনো জবাব না দিয়ে সোজা টেনে নিয়ে গেলো উপরে!
সেকেন্ড ঝটকা খেলো টায়রা রুমে ঢুকে! তিনজন মেয়ে বসে আছে রুমে! আর পুরো বিছানায় ড্রেস মেইকআপ, গয়না গাটিতে ভরপুর!
টায়রা অবাক হয়ে দেখছে সব কিছু! এর মধ্যেই সেই মেয়ে গুলো এসে বলল,
— ম্যাম আপনি জলদি শাওয়ার নিয়ে আসুন! লেট হচ্ছে!
টায়রা বোকার মত তাকালো রিমপি রিমিদের দিকে!
— এসব কি হচ্ছে আমাকে কেউ কিছু বলবি কি? আর এরা কারা? আমাকে শাওয়ার কেন নিতে হচ্ছে ? আর…
টায়রাকে থামিয়ে দিয়ে তিতলি বলল,
— অফ যা তুই! যা হচ্ছে দেখে যা! আর ওনারা যা বলছে করতে থাক! এখন যা শাওয়ার নিয়ে আয়! ফাস্ট!
— আরে ভাই আমার কথাটাতো…
টায়রাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তিতলি ওকে ঠেলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো!
বাধ্য টায়রাকে শাওয়ার নিয়েই বেরতে হলো! কিন্তু এসব কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারলো না!
ওয়াশ রুম থেকে বেরতেই মেয়ে গুলো ওকে রেডি করতে শুরু করে দিলো! কেউ চুল শুকতে লাগলো, তো কেউ মুখে ফেইস প্যাক লাগাতে লাগলো! আবার অন্য জন ম্যানিকিওর পেডিকিউর করতে শুরু করলো!
আর পাশে রিমপি রিমি তিতলি নিশু বসে, কিসব গয়না গাটি ড্রেস সিলেক্ট করতে বিজি!
এভাবেই তিন সাড়ে তিন ঘন্টা উবদি টায়রাকে সাজিয়ে অবশেষে সব কম্প্লিট করলো!
আয়নাতে নিজেকে দেখে হতভম্ব টায়রা! তাকে তো পুরো ব্রাইডাল লুকে সাজিয়েছে! এর মানে কি?
এবার পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠছে তার! দ্যাট মিন্স, ও যা ভাবছে তাই নয়তো?
— ইয়া আল্লাহ!
পিছনে রিমির চেচানো তে কেপে উঠলো টায়রা! অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
— কি হয়েছে? আর ইউ অলরাইট রিমি?
রিমি মাথা নাড়ালো! পাশ থেকে তিতলি টায়রার কাছে এসে ঘুরঘুর করে দেখতে দেখতে বলল,
— টায়রা তোকে কি না লাগছে ভাই! আমি তো শেষ! ছেলে হলে এতক্ষনে ভাগিয়ে নিয়ে যেতাম!
— ভাই তো আজ শেষ!
টায়রা শুধু অবাক চোখে দেখেই যাচ্ছে ওদের হাব ভাব! এদিকে তারাও সেজে গুজে রেডি!
— এবার তো বল কি হচ্ছে এসব? তোরাও দেখি সেজেগুজে রেডি! আমার এবার অসহ্য লাগছে কিন্তু!
টায়রার ফেইসে বিরক্তির আভাস দেখতেই হেসে উঠলো সবাই! নিশু টায়রাকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
— তোমার সেদিনের করা বোকামির শাস্তি এটা!
— মানে?
— মানে হচ্ছে আজ তোর আর ভাইয়ের বিয়ে!
কথাটা শোনার পরেই মনে হলো টায়রার মাথার ভেতর সব ফাকা হয়ে গেছে! ভাসছে সে!
হঠাৎ ই হার্ট বিট হাই-স্প্রিডে ছুটতে লাগলো!
কাপা কাপা আওয়াজে বলল,
— বি..বিয়ে মানে? সে..সেতো আরো এক বছর পরে …
তিতলি দুষ্টু হেসে বলল,
— হাহ! সে তো কথা ছিলো! বাট তুমি যে বোকামি করে বাড়ি থেকে চলে গেছিলে! তার কারনেই ভাই তোকে নিতে যাওয়ার আগে এসব কিছু প্লানিং করে গেছিলো!
টায়রার যেনো কোনো কিছু বিশ্বাসই হচ্ছে না, এভাবে হুট করে বিয়ে হচ্ছে তার! যার বিন্দু মাত্র খবর নেই তার কাছে! এরকম সারপ্রাইজ কেউ আগে কখনো পেয়েছে কি না সন্দেহ! তার জীবনে সব কিছুই এমন হুটকরে হয়ে যাচ্ছে যবে থেকে লাজুকের সাথে দেখা হয়েছে তার!
টায়রার এই মুহূর্তে কি করা উচিৎ কি বলা উচিৎ কিছুই মাথা ঢুকছে না! সে চুপ করে বসে আছে! মাথার ভিতরটা জেনো ফাকা সব!
কিছু ভাবতেও পারছে না এই মুহূর্তে !

এর মধ্যেই রুমে বর্ষা, সাজিদা, মোর্শেদা সাথে লাজুকের ফুপি, চাচি আরো কিছু মেয়ে এলো!
বর্ষা টায়রাকে দেখেই মিষ্টি হেসে ওর পাশে গিয়ে বসলো!
— বাহ! বউ সাজে তো তোকে চমৎকার লাগছে! ভাইয়ের তো মাথা ঘুরে যাবে!
টায়রা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বর্ষার দিকে! সে যে কি বলবে বুঝতে পারছে না! এমন একটা পরিস্থিতিতে আছে সে যে এখন কাদতে ইচ্ছা করছে! এমনও কি কেউ করে নাকি? তার বিয়ে অথচ তাকে কেউ কিছু জানালো পর্যন্ত!
সাজিদা এগিয়ে এসে টায়রার কপালে চুমু খেয়ে বলল,
— মাশাল্লাহ্! পুতুল বউ লাগছে একদম! এসব হুট করেই ঠিক করে ফেলেছে লাজুক! তাই কোনো আয়োজনও করতে পারিনি! গায়ে হলুদটাও মিস হয়ে গেলো! মন খারাপ করিস না! গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান রিসিভশনের দিন করবো!
এবার টায়রা মুখ খুললো, ধীর কন্ঠে সাজিদাকে বলল,
— ফুল মা এভাবে হুট করে বিয়ে ঠিক করা কি খুব দরকার ছিলো? সব কিছু কেমন অদ্ভুত লাগছে আমার!
তখনই লাজুকের আওয়াজ পেতেই সবাই দরজার দিকে তাকালো!
— দরকার ছিলো কি না ছিলো সেটা তোমার ঐ ছোট্ট মাথা দিয়ে না ভাবলেও চলবে! চুপ চাপ যা হচ্ছে দেখে যাও!
লাজুকের কথা শুনতেই হেসে উঠলো সবাই! টায়রা সরু দৃষ্টিতে লাজুকের দিকে তাকাতেই চোখ মেরে দিলো সে! অবাক হয়ে মুখটা হালকা হা হয়ে গেলো টায়রার! সাথে সাথে আবার চোখ নামিয়ে নিলো!
বর্ষা জিগ্গেস করলো,
— ভাই তুই এখানে কেনো এলি? তোর তো নিচে থাকার কথা!
— বিয়েটা আমার হচ্ছে দি! তাই এটা তো ইউনিক স্টাইলেই হবে! আই মিন আমার স্টাইলে!
রিমি চেচিয়ে উঠে বলল,
— রাইট ভাই!
লাজুক টায়রার কাছে এগিয়ে এসে হুট করেই কোলে তুলে নিলো ওকে!
টায়রা ভরকে গিয়ে ব্যালেন্স রাখার জন্য তারাতারি লাজুকের গলা জরিয়ে ধরলো!
টায়রা লাজুকের থেকে নিজেকে ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বলল,
— আরে আরে এটা কি করছেন? লজ্জা করে না সবার সামনে এমন করতে? ছাড়ুন আমায়!
টায়রার কথা শুনে বাকা হাসলো লাজুক! কোনো জবাব না দিয়ে সোজা হেটে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে!
পেছন থেকে চেচিয়ে উঠলো তিতলি আর বাকিরা! বড়রা সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগলো!

এভাবেই হুট করে বিয়ে হয়ে গেলো টায়রা! এখনও যেনো সব টা স্বপ্ন লাগছে তার! এভাবে যে তার বিয়ে হবে সেটা স্বপ্নেও ভাবেনিও!
চারদিকটা নজর ঘুরিয়ে দেখে নিলো! সে এখন লাজুকের রুমে তার সাজানো খাটে বসে!
যেই রুমটাতে আসতে এক সময় ভয় পেতো টায়রা, আজ থেকে তাকে সেখানে থাকতে হবে!আর সেই রাগি মানুষ টার সাথে সংসার করতে হবে! ভাবতেই কেমন অদ্ভুত ভালো লাগা ছেয়ে যাচ্ছে পুরো শরীর মন জুরে!
দেওয়ালে টাঙানো লাজুকের ছবির দিক তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, আজ থেকে এই মানুষ টা শুধু তার!
দরজায় কারোর আশার আওয়াজ পেতেই সেদিকে তাকালো টায়রা! লাজুক ঢুকছে রুমে, গোল্ডেন কালারের শেরওয়ানীতে পুরো চার্মিক লাগছে আজ!
লাজুক বিছানার কাছে আসতেই টায়রা দ্রুতো বিছানা থেকে নেমে লাজুক কে সালাম করলো!
অবাক চোখে তাকিয়ে লাজুক টায়রার দিকে! আর তার সামনেই মাথা নিচু করে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে টায়রা!
— এটা করতে কে শিখিয়ে দিয়েছে?
লাজুকের আওয়াজে তার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে জবাব দিলো টায়রা,
— দি..দিদুন বলেছে! আপনি রুমে এলেই যেনো আগে সালাম করি!
— আচ্ছা? তো আর কি কি করতে শিখিয়েছে?
টায়রা লাজুকের কথা শুনে তার চোখের দিক তাকাতেই দেখলো চোখে মুখে দুষ্টুমির হাসি! কি মিন করছে লাজুক তা বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো টায়রা!
টায়রার লজ্জাবতী মুখ দেখে বাকা হাসলো লাজুক, এগিয়ে গেলো টায়রার কাছে!
দু হাতে টায়রার মুখটা তুলে কপালে একটা চুমু খেয়ে নিলো!
— আমার পিচ্চি বউ!
লাজুকের মুখে আমার বউ কথাটা শুনতেই এক ভালো লাগা ছেয়ে গেলো মনে! আজ থেকে সে লাজুকের বউ?
তৎক্ষণাৎ টায়রাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো লাজুক! নিজেও তার পাশে বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো টায়রার মুখের দিকে!
লাজুকের এমন তাকানো থেকে টায়রা জিগ্গেস করলো,
— এভাবে কি দেখছে?
টায়রার কথার জবাবে লাজুক টায়রাকে টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে নিলো!
— দেখছি!
— কি?
— এই যে আমার পিচ্চিটা আজ সম্পূর্ণ আমার হয়ে গেছে!
মুচকি হেসে টায়রা দু হাতে টাইট করে লাজুক কে জরিয়ে ধরে তার বুকে মুখ গুজে নিলো!
লাজুকের বুকে মুখ রাখা অবস্থাই টায়রা আস্থে করে বলল,
— ভালোবাসি! খুব খুব ভালোবাসি আমার রাগি জমরাজ কে!
টায়রার মুখে এই শব্দটা শুনতেই যেনো লাজুকের বুকের মধ্যে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো!
টায়রার মুখ টা তুলে নিজের সামনে নিয়ে আলতো করে ওর ঠোটের মাঝে ঠোট চেপে ধরলো লাজুক!
নিজের আসক্তি মেটাতে লাগলো আজ সে!
ভালোবাসার আসক্তি গুলো এমনই হয়! এই আসক্তি শুধু ভালোবাসার মানুষটাই মেটাতে পারে আর কেউ না!
লাজুক তার তীব্র আসক্তিতে ক্রমশ আসক্ত করে তুলছে টায়রাকে!

~~~~~~~~ সমাপ্ত ~~~~~~
জান্নাত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here