তোর নামের রোদ্দুর,পর্ব-২

0
2003

বাসর ঘর নামক ফুলে সাজানো ঘরটা তছনছ হয়ে আছে।একগাদা সাদা ফুলের ঝোলনা সহ লাল গোলাপের পাপড়ি বিছানো বেডশিটটা মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।শুভ্র দেয়ালে আটকানো রজনীগন্ধার স্টিক আর গোলাপগুলোও বাদ নেই,যতোদুর হাতের ধরাছোয়ার মধ্যে সবটুকো ফ্লোরে পরে আছে।জানালার সাদা আর একদম হালকা গোলাপি রঙের রঙিন পর্দাটাও নিজের জায়গা ছেড়ে মাটিতে আছড়ে পরেছে।টেবিলের উপরের একসারি বই বাদে কলমদানি,একটা ফটোফ্রেম উল্টে মাটিতে পরে আছে।পাশের ড্রেসিং টেবিলের আয়নার কাচ চুর্নবিচুর্ন হয়ে রয়েছে।যেনো এই ঘরে কোনো ঘুর্নিঝড় সবেমাত্র তান্ডব চালিয়ে গেছে।রুমের মালিক যেনো সবকিছুর জায়গা মাটিতে করে দিয়ে বেশ স্বস্তি পেয়েছেন।

ঘরের সবটা দেখে শুদ্ধ ভাইয়ার রাগের পরিমাপ করতে অসুবিধা হলো না আমার।হয়তো আজ আমাকেও এমন কোনো ঝড়ের মুখোমুখি হতে হবে।হয়তো কেনো বলছি?এটাই ঘটবে।উনি কবুল বলতে নিষেধ করেছিলেন আমাকে।কিন্তু বিয়েটা হয়ে গেছে।আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি পিছন থেকে বলে উঠলেন,

-হেডেক হচ্ছে?

পিছন ফিরলাম।চোখমুখের অবস্থা মোটেও ভালো না তার।

-কানে শুনিস না?

-না।হচ্ছে না মাথাব্যথা।

তাকে একটা শ্বাস নিতে দেখলাম।পরের দু সেকেন্ডে কি ঘটেছে নিজেও জানিনা।আমার পিঠটা দেয়ালে আটকানো।দুহাতের কব্জি ধরে দেয়ালে আটকে দিয়ে সামনের মানুষটা জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।সে যে রাগ নিবারনের চেষ্টা করছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি। হাতের কব্জিতে শক্ত বাধনের দিকে তাকালাম।সেটা দেখে আরেকদফা হৃদপিন্ডটা তার কাজ ভুলে গিয়ে স্তব্ধ করে দিলো আমাকে।আমার চোখ তার হাতের তালুর পিঠে আবদ্ধ।কেটে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে ওখান থেকে।শুদ্ধ ভাইয়া হুংকার ছেড়ে বললো,

-বিয়েটা কেনো করলি তুই?

শ্বাস আমারো দ্রুত চলছে।ভয়ে কাপতে কাপতে তার চোখের দিকে তাকালাম।লালবর্ন হয়ে আছে নাক চোখ তার।আরেকবার তার হাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,

-আ্ আপনার হাত….

উনি একটানে পিছনদিকে ঘুরিয়ে একহাত মুচড়ে ধরলেন আমার।আরেকহাত আগের মতোই তার মুষ্ঠিতে আবদ্ধ।আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে শুদ্ধ ভাইয়া বললেন,

-ডাক্তার হোস নি তুই এখনো!কেয়ার দেখাতে আসবি না একদম!চলে যাসনি কেনো বিয়ের ওখান থেকে তুই?বলেছিলাম না পালাতে?

এবার আরো বেশি ব্যথা পাচ্ছি।চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো।যে কান্নাটা বাবাবাসা ছেড়ে আসার সময় বেরোই নি তা এই মানুষটার খারাপ ব্যবহারে বেরোতে লাগলো।ব্যথায় কুকড়ে উঠে বললাম,

-লাগছে আমার।প্লিজ!ছাড়ুন!

তৎক্ষনাৎ হাত ছেড়ে দিলেন শুদ্ধ ভাইয়া।কিছুটা পিছিয়ে হাত মুঠো করে বুকে চেপে ধরলাম।চোখ দিয়ে পানি পরছে,তাকে যেনো কেউ অনুমতি দিয়েছে সবটা উজার করে কাদতে।কিন্তু আমিতো দেইনি।আমিতো জানতাম এই মানুষটা কেমন।সব জেনেই এ বাসায় এসেছি আমি।তাহলে এই বৃথা কান্না কি আমাকে মানায়?চোখ মুছে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম।শুদ্ধ ভাইয়া কিছুটা সময় অপরাধীর মতো দাড়িয়ে থেকে ঠান্ডা গলায় বললেন,

-খুব লেগেছে?

……

-বলেছিলাম তোকে বিয়ে না করতে।কেনো কবুল বললি তুই?কেনো নিজেকে আমার মতো একজনের সাথে জড়ালি?

ওনার গলার আওয়াজে এবার কিছুটা সাহস হলো আমার।এভাবে ভয় পেয়ে থাকলে আজীবন তার পায়ের নিচে পরে থাকতে হবে।কিন্তু আমিতো নিজের পায়ে দাড়াতে চাই।মাথা উচু করে বাচতে চাই।সাহস করেই বললাম,

-এই কেনোর উত্তরটা আপনার কাছে আর কতোবার দেবো বলতে পারেন?এইবার যদি আমি বলি,আপনি কেনো চুপচাপ ভদ্র ছেলের মতো কবুল বলেই উঠে আসলেন?কেনো বিয়েটা না করে চলে যাননি?

-আমার আর তোর সিচুয়েশন এক না।

-এক না?হ্যাঁ।আসলেই এক না।আপনি যেখানে চান বাবার পয়সায় দুনিয়া জয় করতে,সেখানে আমি চেয়েছিলাম আমার বাবাকে ভালো দেখতে।সিচুয়েশন এক হবে কিভাবে?

শুদ্ধ ভাইয়া একপলক আমার দিকে তাকালেন।তারপর এদিক ওদিক কিছু খুজতে লাগলেন।যা দেখে আবারো ভয় হলো আমার।কিছু না পেয়ে রাগে টেবিলের সামনের চেয়ারটা লাথি মেরে টেনে গায়ের শেরওয়ানিটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মারলেন।ভয়টা আবারো বেড়ে গেছে আমার।একপা দু পা করে পেছোতে পেছোতে কোনো এক ওয়ারড্রোবের সাথে আটকে গেলাম।শুদ্ধ ভাইয়া আমার দিকে এগোতে গিয়েও আবার মাথা ধরে বেডে বসে গেলেন।নিচদিক মাথা করে আছেন উনি।মিনিট পাচেক রুমে পিনপতন নিরবতা,যা আমার ভয়কে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।উনি কিছুক্ষন পর ওভাবে থেকেই বললেন,

-বিয়েটাকে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যা!

কেনো জানি না ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।বিয়ের এই পর্ব সত্যিই চাইনি আমি,তবে তার কথায় এমন কেনো লাগছে যেনো সে নিজহাতে ধরে আমার ভেতরটা টুকরো টুকরো করে কাটছে?নিজেকে বোঝালাম,দুর্বল হওয়া যাবে না এর সামনে।আর এই লোকটা তো আমার যোগ্যই না।খুব খারাপ একটা লোক সে।এতোদিন শুনতাম,এ দুদিনে দেখেও নিয়েছি।এর সাথে থাকা অসম্ভব।তাই শক্ত গলাতেই বললাম,

-দুঃস্বপ্ন?হ্যাঁ,দুঃস্বপ্নই বটে।কিন্তু দুঃস্বপ্ন ভাবলে তো পিছু করবে,আজীবন কুড়ে কুড়ে খাবে আমাকে এই ঘটনা।বাচবো কি করে আমি?কি করে থাকবো আপনার সাথে?আমি এটাকে মুছে ফেলতে চাই,চিরমুক্তি চাই এটা থেকে।আই ওয়ান্ট ডিভোর্স!আপনার মতো কারো সাথে আমার থাকা সম্ভব না।

শুদ্ধ ভাইয়া রোবটের মতো মাথা তুলে তাকালেন আমার দিকে।চোখজোড়া ছলছল করছে।কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন উনি।কিছু বলছিলো ওই চোখদুটো।কিন্তু আমি তো পরতে চাইনা তার চোখের ভাষা।চোখ সরিয়ে নিলাম।উনি উঠে দাড়িয়ে এগিয়ে আসলেন আমার দিকে।কাচুমাচু হয়ে যতোটা সম্ভব গুটিয়ে দাড়ালাম।উনি বললেন,

-পেয়ে যাবি।

ওনার স্পষ্ট উত্তরে আবারো এক ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেলো ভেতরটাতে।উনি আমার দিকে ঝুকে বললেন,

-আচ্ছা বলতো,কি কি জানিস তুই আমার ব্যাপারে?

-ক্ কিছু কিছু না।

-বল!

আবারো ধমক।একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,

-আ্ আপনি খ্ খুব খ্ খারাপ একটা মানুষ।

উনি বিছানার দিকে চলে গেলেন।আমি একটা জোরে শ্বাস নিলাম।হাফ ছেড়ে বাচলাম যেনো।শুদ্ধ ভাইয়া পায়ের উপর পা তুলে বিছানায় বসলেন।ডানহাতের আঙুল দেখতে দেখতে বললেন,

-আমি যে খারাপ মানুষ তা কি কি বৈশিষ্ট্যে বিচার করলি গুনে গুনে সবটা বলবি।নইলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।এন্ড ট্রাস্ট মি,আমি খুব খারাপ মানুষ।

শ্বাস থেমে গেলো আমার।এবার কি বলবো?ওনার কাছে ওনাকে নিয়েই কি করে খারাপ কথা বলবো?মাত্রাতিরিক্ত সাহস দেখিয়েছি তা বেশ বুঝতে পারছি।জিভ দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে বললাম,

-শুদ্ধ ভাই…

-টপিকের বাইরে কথা বলবি তো…আমি কিন্তু খারাপ মানুষ!

ভাবলেশহীনভাবে তার উত্তর।কিন্তু ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে আমার।উনি আবারো বললেন,

-বল।

নিচদিক তাকিয়ে ঘোমটার ওড়না আঙুলে প্যাচাতে লাগলাম।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে উনি চেচিয়ে বলে উঠলেন,

-বল কি জানিস আমাকে নিয়ে!

লোকটা দাড়িয়ে গেছে।আমার গায়ের লোমও দাড়িয়ে গেছে সাথে।ধমক শুনে গরগর করে বলতে লাগলাম,

-আ্ আপনি পড়াশোনা শেষ করে কাকুর ব্যবসায় হেল্প না করে উল্টো কাকুর টাকা ওড়ান,সিগারেট খান,ড্রিংকও করেন,আ্ আর…

-আর?

-আ্ আপনি জ্ জেলেও ছিলেন।

কথাগুলো বলে শরীর ছেড়ে দিলাম আমি।আজ আর রক্ষে নেই।ভয় পাওয়ার জন্য আর কি কারন লাগে?বাঘের খাচায় ঢুকে তাকেই অভুক্ত বাঘ বলে গালি দেওয়ার মতোই কাহিনী বাধিয়েছি তা আমি জানি।কিছু সময় পরও সে বাঘের গর্জন না শুনে মাথা উচু করে তাকিয়ে দেখি সে বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি কি বিরক্তির কিছু বললাম?আমাকে মাথা তুলতে দেখেই শুদ্ধ ভাইয়া বললেন,

-ব্যস?এটুকোই?

চোখ বেশ অনেকটা প্রসারিত হলো আমার।এগুলো এটুকো ছিলো?শুদ্ধ ভাইয়া এগিয়ে আসলেন আমার দিকে।পিছিয়ে যাচ্ছিলাম,উনি আমার নাকে পরা নথ ধরে বললেন,

-এতোসব গয়না কে দিয়েছে?

খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে ভ্রুকুচকে তাকালাম তার দিকে।উনি নাকের নথ থেকে হাত সরিয়ে আমার হাত উচিয়ে তাতে থাকা চুড়িগুলো পরখ করতে করতে বললেন,

-সব সোনার!নিশ্চয়ই এ বাসা থেকে দিয়েছে?

নিচদিক তাকিয়ে আস্তে করে বললাম,

-জানি না।

-তা জানবি কেনো?খোল!খোল এসব!সবগুলো এই বাসার গয়না।খোল!

কথাগুলো বলেই উনি টানাটানি করে চুড়ি খোলা শুরু করে দিলেন।নিরব দর্শকের মতো দেখে যাচ্ছি আর অবাক হচ্ছি।শুদ্ধ ভাইয়া মাথার উপরে থাকা মুকুটের মতো গয়নাসহ ওড়নার ঘোমটাও সরিয়ে দিলেন।বেশ লম্বা হওয়ায় আমার মাথার উপরিভাগ দেখে গয়না খোলা তার জন্য কোনো ব্যাপার না।কিন্তু তার চেহারার ভাব বুঝতে আমাকেই মাথা উচু করে ঘাড় ব্যথা বানিয়ে তাকিয়ে দেখতে হলো।

-ওভাবে কি দেখছিস?লিলিপুট কোথাকার!দেখিসনি জীবনে?

মাথা নামিয়ে নিলাম।গয়নাগুলো পাশের তাকে রেখে আমার পিছনে গিয়ে দাড়ালেন উনি।কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।কিন্তু ভয়টা কমেছে।সরে আসার জন্য পা বাড়াতেই গলার গয়না ফাসের মতো আটকে গেলো গলায়।বুঝলাম পিছনের মানুষটা গয়নার সুতো ধরে রেখেছে।খুক করে কেশে সুতোয় ঢিল দিতে একটু পেছোলাম।

-এক পা নড়বি না।

আদেশের নড়চড় হলে কপালে দুঃখ আছে বুঝলাম।বিনা স্পর্শে সবগুলো গয়না গা থেকে খুলে দিলেন শুদ্ধ ভাইয়া।কোথথেকে আনা জামা সামনে ধরে বললেন,

-যা ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করে আয়।

এতো ভালো‌ ব্যবহার?এর পরের পরিনতি কি?চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকাতেই তার চোখ পাকানো দেখে নিজের চোখ নামিয়ে নিলাম।গুটিগুটি পায়ে ওয়াশরুমে গিয়ে চেন্জ করে বাইরে বেরোতেই উনি বললেন,

-এ বাসায় যতোদিন আছিস তোর এইসব গোলজামা,চুড়িদার এই এইসবই পরে থাকবি।কারো কথায় খবরদার যদি শাড়ি পরেছিস তো!

এ বাসায় যতোদিন আছি!এ কথাটাও কোথাও লাগলো।মুখে কিছু না বলে ঘাড় নেড়ে সম্মতি বোঝালাম।

-এতোদিন শুনেছিস,আজ দেখে নে।আমি আসলেই খারাপ লোক।

কথাটা বলে পাশের এক ড্রয়ার থেকে কাচের বড় একটা বোতল নিয়ে ঢকঢক করে খেতে শুরু করে দিলেন শুদ্ধ ভাইয়া।অবাক হয়ে শুধু দেখছি।লোকটা এমন কেনো?কি প্রয়োজন আছে এসবের?উনি কোথা থেকে সিগারেটও বের করলেন।লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে ধোয়া উড়িয়ে আমার সামনেই খাওয়া শুরু করে দিলেন।

শুদ্ধ ভাইয়া একবার সিগারেট মুখে পুরছেন,তো একবার বোতল।আর সাথে সাথে তিক্ত চেহারা করছেন।যেনো কতো বিদঘুটে স্বাদ ওগুলোর।দুবার কাশিও হয়েছে তার।যদি এসবে অভ্যস্তই হন তবে ওমন রিয়্যাক্টের কারন বুঝলাম না আমি।আমার কাছ থেকে শুনেই বা এসব খেতে লাগলেন কেনো উনি?কি দরকার আমার কাছে এটা প্রমান করার যে এসব করেন উনি?কি দরকার নিজেকে আমার সামনে আরো ছোট করার?

সিগারেটের ধোয়ায় কাশি উঠে গেছে আমারও।ওড়নায় নাক মুখ চেপে ধরলাম।শুদ্ধ ভাইয়া একপলক আমার দিকে তাকিয়ে সিগারেটটা মাটিতে ফেলে পায়ে পিষে আবারো ড্রিংক করতে লাগলেন।বোতল শেষ করে টলতে টলতে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পরলেন।বিরবির করে বললেন,

-আমি খারাপ লোক,খুব খারাপ লোক!কাছে আসিস না আমার!চলে যা আমার কাছ থেকে!চলে যা আমার জীবন থেকে!কেনো নিজের সাথে এভাবে জড়িয়ে নিলি?কেনো আমাকে এভাবে দুর….

বাকিটা আর বলতে পারেননি উনি।ঘুমিয়ে গেছেন হয়তো।এইতো বিবাহিত জীবনের শুরু আমার।কোথায় চেয়েছিলাম জীবটাকে নিজের মতো করে সাজাবো,সেখানে জড়িয়ে গেলাম ওনার মতো একজনের সাথে!নিজের ভাগ্যের উপর আরেকবার উপহাস করে বালিশ নিয়ে মেঝেতে ঘুমাবো বলে পা বাড়ালাম।ঘুম কি হবে?নয় মেঝেতে শুয়ে শুয়ে অশ্রুবিসর্জনই দেবো।নাটক ছাড়া কিছুই না এ জীবন।মানতেই হবে।শুদ্ধ ভাইয়া হাত ধরে আটকে দিলেন আমাকে।।বললেন,

-ঠিক বুঝেছিস।দুরে থাকবি আমার থেকে।আসবি না কাছে একদম!

কথাটা বলে টেনে বিছানায় ফেলে দিলেন আমাকে।মাথার নিচের বালিশ কানের উপর দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরলেন উনি।দুরে থাকবি বলে পাশে শোয়ানোর বিষয়টা আজব লাগলো।অবশ্য মানুষটাই আজব।উঠে গেলে ঝামেলা করবে কি?এটা ভেবে যেইনা নামার জন্য পাশ ফিরতে যাবো শুদ্ধ ভাইয়া বলে উঠলেন,

-নাটক না করে বিছানাতেই ঘুমা।তবে সোস্যাল ডিসটেন্স রেখে।দুটো কথার একটু এদিক ওদিক হলে…

কথা পুরোটা শেষ করেন নি উনি।আমি বুঝে নিয়েছি।এমন কেনো উনি?ধমকাবেন,আবার গলা নামিয়েও কথা বলবেন।দুরে থাকতে বলে নিজেই কাছে চলে আসবেন।কষ্ট দেবেন,পরমুহুর্তেই একগাদা যত্ম দেখাতে চলে আসেন।এই সম্পর্কটার ভবিষ্যৎ কি?আর কি,ডিভোর্স দিয়ে দেবেন উনি আমাকে।বলেই তো দিয়েছেন।কোথায় যাবো আমি তারপর?শেহনাজ মন্জিলে তো নয়ই?তাহলে?এতো ভাবিস না ইনসু।তুই এখন মেডিকেল স্টুডেন্ট।হোস্টেলে চলে যাবি।কিন্তু ভর্তির ফর্মালিটিজ তো এখনো শেষ হয়নি।আদৌও শেষ করতে পারবো তো?মেডিকেল প্রাঙ্গনে পা ফেলার সৌভাগ্য হবে কি আমার?

————-?

পুরোনো একটা ডায়রি হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে বিনব্যাগে বসে চন্দ্রবিলাশে মত্ত্ব আয়ান।আয়ান চৌধুরী।শুদ্ধর ব্যাচমেট,বেস্টফ্রেন্ড আর শুদ্ধর বাবা আসাদুজ্জামান আজাদের ডানহাত।পরিবার বলতে শুধু মা আর ছোটবোন মুনিয়া।সারাদিন ব্যস্ত থাকলেও,এ সময়টা একান্তই ওর।ডায়রীর পাতায় পাতায় শ্যামাপাখি সম্মোধনে লেখা প্রতিটা কথার মাঝে প্রতিদিন ডুব দেয় সে।আজও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।আচমকাই দরজায় দুবার নক পরায় রাগী স্বরে বললো,

-কে?

-স্যার,আমি অশোক।

-কি চাই?এসময় বিরক্ত করার সাহস কি করে হলো তোমার?

-স্ সরি স্যার,আ্ আসলে বিষয়টা ম্যামকে নিয়ে।

আয়ান উঠে এসে দরজা খুলে‌ দিলো।আর যাই হোক,ওকে নিয়ে কেউ মজা করার সাহস পাবে না।নিজে সে মানুষটার কাছে যেতে পারেনি তো কি,লোক লাগিয়ে খবর নেবে সবসময়।বললো,

-কি হয়েছে?

-আ্ আসলে স্যার…

-হেয়ালি করো না অশোক!

অশোক কাপাকাপা গলায় বললো,

-স্ স্যার ম্ ম্যামের আজ বিয়ে হয়ে গেছে।

ঝুলিয়ে রাখা হাতে ডায়রিটা শক্ত করে ধরলো আয়ান।এভাবে এতোবড় খবর শুনতে হবে তা ওর কল্পনাতেও ছিলো না।খালি হাতে অশোকের কালো সুটের কলার ধরে বললো,

-আই উইল কিল ইউ!

-স্ স্যার,প্লিজ!প্লিজ স্যার!ছেড়ে দিন আমাকে।ব্ বিয়েটা একদমই হুট করে হয়ে গেছে।আর একদম ঘরোয়া ভাবে।শেহনাজ মন্জিলে এরআগে কোনো বিয়ে এতোটা স্তব্ধতা নিয়ে হয়নি।কেউই জানতে পারি নি আমরা।স্যার,আই থিংক শুদ্ধ স্যার জেনে গেছেন যে আপনি…

আয়ান সর্বশক্তিতে অশোকের নাক বরাবর ঘুষি লাগিয়ে দিলো।মুখ থুবরে অশোক মাটিতে গিয়ে পরলো একদম।নাক দিয়ে ঘলঘলিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে ওর।সেদিকে খেয়াল নেই ওর নিজেরও।আয়ানের চোখের রক্তিম রং দেখে নিজেরটা ভুলে গেছে ও।আয়ান ঘরে থাকা কাচের সেন্টার টেবিলের ফুলদানিটা আগে মাটিতে ছুড়লো,তারপর লাথি মেরে টেবিলটাও ভেঙে গুড়িয়ে দিলো।রাগে ফুসতে ফুসতে চেচিয়ে বলতে লাগলো,

-তুমি শুধু আমার হবে ইনসিয়া।এই আয়ানের।শুদ্ধ যেভাবে কেড়ে নিয়েছে আমার প্রাপ্য,আমার প্রিয়জন।আমিও কেড়ে নেবো ওর থেকে ওর সবটা।শেষ করে দেবো ওকে।শেষ করে দেবো।এটা আমি খুব ভালোমতোই জানি,বিয়েটা শুদ্ধ স্বেচ্ছায় করেনি।মেনে নেয়নি ও তোমাকে।আজ না হয় কাল দুরে সরিয়ে দেবে ও তোমাকে।আর ঠিক তখনি তুমি আমার হবে।কারন তুমিও চাওনি এই বয়ে হোক।চাইতে পারোই না।আর পাঁচটা ফ্যামিলি মেম্বারসদের মতো তোমার মনে শুদ্ধের জন্য যে ঘৃনার বিষাক্ত প্রবাহ বইছে,তা অমৃত হতে দেবো না আমি।শেহনাজ মন্জিলে যাইনি তো কি?আজাদ ম্যানশনে তো যেতেই পারি। শুদ্ধ,ইটস্ হাই টাইম!তোর আরেকটা ধ্বংসের জন্য তৈরি হ।আসছি আমি ইনসিয়া।গেট রেডি টু বি মাইন!ওনলি মাইন!!!

#চলবে….

লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here