তোর নামের রোদ্দুর,পর্ব-৬

0
1638

-বিয়ের দুটো দিন না যেতেই মেয়েটা তোর অত্যাচারে সুইসাইড করতে বসলো শুদ্ধ?এতোটা জঘন্য হয়ে গেছিস তুই?অতোটুকো মেয়েকেও বোঝার চেষ্টা করলি না?

ড্রাইভ করছিলো শুদ্ধ।যদিও ইনসিয়াকে বলে আসা কথাগুলো এখন বাস্তবায়ন সম্ভব না ওর পক্ষে।বাসা ছেড়ে চলে যেতে পারবে না ও এই মুহুর্তে।তাই ঠিক করেছিলো বাসার বাইরে থেকে কিছুটা ভয় দেখাবে ও ইনসিয়াকে।মেয়েটাকে সামনে পেয়ে রাগের বশে বেশ কয়েকবার আঘাত করে ফেলেছে।এ নিয়ে ওর মনও ক্ষতবিক্ষত।ওই বা কি করবে?নিজেকে সামলানোর যতই চেষ্টা করছে,মেয়েটা আরো বেশি করে ওর মায়ায় জরিয়ে নিচ্ছে ওকে।কিছুটা সময় দুরে থেকে নিজেকে শান্ত করতে‌ চেয়েছিলো তাই।

কিন্তু মোবাইলের ওপাশ থেকে‌ বলা মামীর কথা শুনে ওর পৃথিবী থেমে গেলো।গাড়িতে ব্রেক লাগিয়ে থম মেরে রইলো ও।বিয়ের আগেরদিন ইনসিয়ার বোন ইরাম এভাবেই খবর দিয়েছিলো ওকে।সেদিন বিয়েটা হচ্ছিলো বলে দরজা লাগিয়েছিলো।আজ?আজ আবার কি করলো ও রাগ দেখিয়ে চলে এসেছে বলে?ও তো এখন বলছে ডিভোর্স চায় না।কোনো খারাপ কিছু করে ফেলেনি তো?সেদিন না হয় বাবার কথা ভেবেছিলো।আজ কোনো পিছুটান আছে কি ওর?পাগল পাগল লাগছে শুদ্ধের।হাত পা কাপছে।মামী আবারো বললো,

-কিরে?বুঝিস নি কি বললাম?ইনসিয়া সকাল থেকে রুমের বাইরে বেরোয়নি।দরজা লক করে রেখেছে।এখন আমরা দরজা ধাক্কাচ্ছি,ভেতর থেকে ওর কোনো রেসপন্স নেই।তুই বুঝতে পারছিস শুদ্ধ?তোর মা,যীনাত কেউই কথা বলার অবস্থায় নেই।তোর বাবাও অফিসের জন্য বেরিয়ে গেছেন।তাকে জানানো হয়নি এখনো।আর এখানের…

কোনো কথা কানে যায়নি আর শুদ্ধর।ইনসিয়া দরজা খুলছে না শুনেই মোবাইলটা হাত থেকে পরে গেছে ওর।শক্ত হয়ে বসে আছে,তবে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।মাথা চেপে ধরলো ও।কেউ একজন গাড়ির কাচে বাড়ি মেরে বললো,

-কিবে?মাঝরাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়ে রেখেছিস কেনো?

শুদ্ধ রক্তচক্ষু করে তাকালো তার দিকে।লোকটা ওর তাকানো দেখেই ভয় পেয়ে দুপা পিছিয়ে গেলো।তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার পথ ধরলো শুদ্ধ।

——————?

রুমের মধ্যে গোলাপ হাতে বসে আছি।ব্যালকনিতে আজ সকালেই দুটো গোলাপ ফুটেছিলো।তার একটা ইচ্ছে করেই ছিড়েছি।পানি দিতে যাওয়ার সময় কাটা লেগেছিলো ওতে।ভাই,তুই আমাকে সহ্য না করলে আমি তোকে সহ্য করবো কেনো?ইনসিয়া টিট ফর ট্যাট থিওরিতে বিশ্বাসী।যার এপ্লাই আজ শুদ্ধ আর ওর বাগানের গোলাপ,দুটোর উপরই হবে,হচ্ছে।

বোর হয়ে বসে থাকার চেয়ে লাক ট্রাই করে নিলেই পারি!এভাবে আর কতক্ষন?গোলাপটার একটা পাপড়ি ছিড়লাম।এটা ছিলো শুদ্ধ আধা ঘন্টার মধ্যে আসবেন।আরেকটা ছিড়লাম।এটা ছিলো আধাঘন্টার পর আসবেন।আসবেন না এই অপশন রাখিই নি।জানি না এসে থাকতে পারবেন না উনি।বিয়ের আগেরদিনই তার নমুনা দেখা শেষ আমার।

বাইরের মামীর গলায় ঢোল বাজানো পর্ব শেষ বুঝলাম।নড়েচড়ে বসলাম কিছুটা।এবার তুফান আসবে।বেডে রাখা স্লিপিং পিলস্ এর পুরো পাতার দিকে একনজর তাকালাম।আন্দাজ করে উঠতে পারছি না,এক্সাক্টলি কয়টা খেলে ” ডাক্তার আসার পূর্বেই রোগীটির জ্ঞান ফিরলো ” ঘটনা ঘটানো সম্ভব।ঠোট কামড়ে কিছুক্ষন ভেবে একটা খেয়ে বাকিগুলো ছাড়িয়ে বারান্দা দিয়ে নিচে ফেলে দিলাম।নেহাত অজ্ঞান হওয়ার এক্টিংটা পারিনা।পারলে এটাও খেতাম না।

সাড়ে আট মিনিট কেটে গেছে ঘুমের খবর নাই।এ কি ওষুধ?বাকিগুলো তো সব ফেলে দিলাম।এটা কাজ করে না কেনো?মনে পরলো পরীক্ষার আগে রাত জেগে পরতাম,অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো।রেজাল্ট পরে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতাম।কম পাওয়ারের গুলো কাজে দেয়নি কোনোবারই।আহম্মকের মতো ওষুধের খালি পাতাটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।লোয়েস্ট ডোজের ওইটা।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম চৌদ্দ মিনিট।গোলাপ ফুলের লাস্ট পাপড়িটাতে ছিলো আধাঘন্টা পর আসবেন শুদ্ধ।হতাশ হয়ে জোরে শ্বাস ফেলে সবে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি।বাইরে থেকে শব্দ এলো,

-সিয়া!!!

একলাফে বেড ছেড়ে উঠে দাড়ালাম আমি।এর আগে এতোজোরে কোনো মানুষের গলা শুনেছি বলে মনে পরেনা আমার।এটা শুদ্ধর কন্ঠ।ভয়ে চাদর টেনে গুটিয়ে আবারো বিছানায় শুয়ে পরলাম।শুদ্ধ দরজা ধাক্কাচ্ছে,সেটা দেখে আমার হার্টবিট লাফাচ্ছে।এই বুঝি দরজাটা ভেঙে যায়।এতো সাধের রুম আমার,মায়া পরে গেছে,দরজাটাও কতো সুন্দর!ভাঙলে কেমন হবে?নতুন দরজা যদি আমার মনের মতো না হয়?রুমের সাথে মানানসই না হয়?

না না!দরজা ভাঙতে দেওয়া চলবে না।কিন্তু খুলতে গেলে তো বাঘের থাবায় পরবো!কি করি?কি করি?
আইডিয়া!
আস্তেধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে রুমের চাবি নিয়ে দরজার নিচ দিয়ে বাইরে বের করে দিলাম।দরজার কাছে গিয়েই মনে হচ্ছিলো এই বুঝি ধরাম করে আমার মাথার উপর ভেঙে পরলো ওটা।মোবাইলটা নিয়ে যীনাত আপুকে ম্যাসেজ করলাম,

‘আফামনি,শান্ত হন।আমি ঠিকাছি।এই এই এই!খবরদার!চিল্লায়েন না আবার!?আপনের ভাইরে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়া দরজা খুলতে বলেন।দেখেন পায়ের নিচে পইরা আছে ওইটা।আমার এতো সাধের দরজা যেনো না ভাঙে বলে রাখলাম? ‘

এখনো থামেনি শুদ্ধের দরজা ধাক্কানো।দরজা ধাক্কাচ্ছেন আর বলছেন সিয়া দরজা খোল।তারমানে যীনাত আপু ম্যাসেজ দেখেইনি।শুদ্ধের ডাক,দরজায় শব্দ এতো চেচামেচিতে ম্যাসেজের শব্দই হয়তো কানে যায়নি তার।বাধ্য হয়ে মিসড্ কল দিলাম ওর ফোনে।

ইনসিয়ার কল দেখে উৎফুল্ল হয়ে সবাইকে বলতে যাচ্ছিলো যীনাত।কিন্তু ম্যাসেজটা দেখে চুপ করে যায় ও।খুব কষ্টে হাসি আটকে রেখে নিচ থেকে চাবিটা তুলে শুদ্ধের হাতে দেয় ও।দরজা ততক্ষনে অর্ধভঙ্গ।চাবিটা কেড়ে নিয়ে কোনোমতে দরজা খুলে হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো শুদ্ধসহ বাকি সবাই।

চোখ খিচে বন্ধ করে রয়েছি আর মনে মনে আল্লাহর নাম নিচ্ছি।পানি ছিটনোর আগে যেনো চোখ না খোলে।ওষুধটাও আমার সাথে কোন জমনের শত্রুতা দেখাচ্ছে কে জানে!এবার তো কাজ কর মেরি মা!শুদ্ধ ছুটে এসে দুহাত জরিয়ে ধরলেন আমাকে।স্বাভাবিকভাবে চোখটা বন্ধ করে রইলাম।শুদ্ধ ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে পাগলের মতো বলে চলেছেন,

-সিয়া!সিয়া চোখ খোল!চোখ খোল না!কি হয়েছে তোর?কথা বলছিস না কেনো তুই?সিয়া!প্লিজ চোখ খোল!কথা বল!নইলে সব শেষ করে দেবো আমি!চোখ খোল ড্যামিট!!!

অস্থির হয়ে উঠেছেন উনি।ইচ্ছা করলো চোখ মেলে তার চেহারাটা দেখি।কিন্তু ওই যে!শুদ্ধের তোপ!ধরা পরলেই খবর আছে আমি জানি।স্বজ্ঞানে চোখ বন্ধ করে রাখার চেয়ে কঠিন কাজটা বোধহয় আর কিছুই নেই।সেজোমাও ব্যস্ত হয়ে পরেছে বুঝতে পারছি।তবে যীনাত আপুর আওয়াজ নেই।হয়তো সেজোমাকে সামলাচ্ছে।মাহি বললো,

-শুদ্ধ ভাইয়া,ঝগড়া হয়েছে তোমাদের?সিয়া ভাবি গোলাপ এভাবে ছিড়েছে কেনো?এ্ এখানে ঘুমের ওষুধের পুরো পাতা খালি!

উনি চেচিয়ে বললেন,

-জানিনা!ডাক্তার কই?সিয়া!সিয়া ওঠ!তাকা আমার দিকে।যাবো না আমি।কোথাও যাবো না।ওঠ সিয়া!

পরমুহুর্তেই হাওয়ায় ভাসতে লাগলাম।বুঝলাম উনি কোলে তুলে নিয়েছেন আমাকে।যীনাত আপু বললো,

-শুদ্ধ কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস ওকে?

-সামনে দাড়াচ্ছো কেনো?হসপিটালে নিয়ে যাবো ওকে!স্টে আউট অফ মাই ওয়ে!

সেরেছে।এবার কি হবে?আপুউউউ!বাচাও!হসপিটাল মানেই সোজা মর্গ।ধরা পরেছি,তো মরেছি।এ ডাক কি কানে পৌছাবে তোমার?ও যীনাত আপুউউউ,তুমি শুনতে কি পাও?

-শ্ শুদ্ধ,পানির ছিটিয়ে দিলেই ঠিক…

-গেট আউট অফ হেয়ার!

শুদ্ধ হাটা লাগালেন।উপায়ন্তর না দেখে কেশে উঠলাম।উনি কি বুঝে একটু দাড়ালেন। তাড়াহুড়ো করে বেডে শুইয়ে দিলেন আবারো আমাকে।যীনাত আপু,বইন আমার!দেখো না পাশের তাকেই গ্লাস ভর্তি পানি।তাড়াতাড়ি পানি মারো মুখে আমার।নইলে ধরা পরলে ওই পানিতেই চুবিয়ে মারবে তোমার ভাই আমাকে!বাচাও আপু!

তৎক্ষনাৎ চোখেমুখে পানির ঝাপটা পড়লো।লাফিয়ে উঠে বসলাম আমি।শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখলাম পাশেই বসে আমার।লোকটা ঘেমে একাকার।সাদা শার্টের উপরের বোতামটা খোলা,ঠিক নিচের দুটো বোতাম এলোমেলোভাবে লাগানো।ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।বুঝলাম অভারএক্টিং হয়ে গেছে।চেহারায় মলিনতা এনে চোখ বন্ধ করে আবারো নুইয়ে গিয়ে তার বুকে পরলাম আমি।সেজোমা কেদে কেদে বললো,

-ইনসু!তুই ঠিক আছিস মা?

আস্তে করে মাথা উপরনিচে নাড়লাম।

-ইনসিয়া ভাবি?তুমি এভাবে..

মাহিকে থামিয়ে শুদ্ধ গম্ভীরভাবে বললেন,

-সবাই যাও!

-শুদ্ধ,ইনসু…

যীনাত আপুর দিকে তীক্ষ্মচোখে তাকালেন শুদ্ধ।ও একটু ভরকে গেলো।আমার দিকে মুখ করলেন উনি।ভাসাভাসা চোখে মাথা তুলে আমিও তাকালাম তার দিকে।ওনার চাওনিতে বিরক্তি।আমাকে জরিয়ে রাখা হাত ছাড়িয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন উনি।উঠে ব্যালকনির দিকে গিয়ে পকেটে হাত গুজে দাড়ালেন।সেজোমা কাদতে কাদতেই বললো,

-তুই জানিস কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?

-কেনো?আ্ আমি তো ঠিক আছি।

-ঠিক আছিস?এই,এই ওষুধের পাতা খালি কেনো?

-আসলে…

-কেনো?স্লিপিং পিলস্ খেতে হবে কেনো তোকে ইনসু?তোর কিছু হয়ে গেলে তোর বাবাকে কি জবাব দিতাম আমি?

-আচ্ছা,শান্ত হও।তোমার ছেলে না খেয়ে বেরোয়,আমার তো ক্ষুধা লাগে নাকি?তাই ভাবলাম ঘুমিয়ে থাকলে হয়তো ক্ষুধা লাগবে না।

-তাই বলে এভাবে…

যীনাত আপু সেজোমাকে ইশারায় শান্ত হতে বললো।সেজোমা কান্না থামিয়ে বললো,

-সকালে কিছুই খাসনি।আমি খাবার পাঠাচ্ছি।

উঠে বসে বললাম,

-নাআআআ!

-না মানে?এই তো বললি খিধে পেয়েছে!

বালিশে হেলান দিয়ে বললাম,

-ন্ না ম্ মানে আমি আসছি নিচে।ডাইনিংয়েই খাবো।রুমে খাবার পাঠাতে হবে না।

-কিন্তু…

-প্লিজ!

সেজোমা বুঝলো ভয় পেয়েছি আমি।যীনাত আপু একবার আমার দিকে,একবার শুদ্ধর দিকে তাকিয়ে ঘাড় নেড়ে বোঝালো ‘ মেয়ে তোমার খবর আছে ‘ অসহায় মুখ করে সবার দিকে তাকালাম।বাবা বাদে বাসার সবাই এখানে।যীনাত আপু,মাহি,ওর আম্মু,আরেক চাচাতো ভাই সিফাত ভাইয়া,ওর বউ সিমা ভাবি,তাপসী আপু,ওর বর ইশান ভাইয়া।ওদের ছোট ছেলে তাইয়্যিবটা হয়তো ভয় পেয়ে গেছে।তাপসী আপুর কোমড় জরিয়ে রেখে মুখ লুকিয়ে আছে।আসমা খালাও বাদ যায়নি।রুমে ছুটে এসেছে।

সবাই কিছুক্ষন টুকটাক একথা সেকথা বললো আমার সাথে।এরপর আস্তে আস্তে বেরিয়ে যেতে লাগলো সবাই রুম থেকে।আমার ভয়টার মাত্রাও বাড়তে থাকলো তার সাথে।যীনাত আপু ইশারায় বুঝালো ওর সাথেই যেতে।একনজর শুদ্ধের দিকে তাকালাম।ওভাবেই পকেটে হাত গুজে বাইরের দিকে তাকিয়ে উনি।গুটিগুটি পায়ে আপুর সাথেই পা বাড়ালাম।সবাই বেরিয়েছে।রুমে আমি যীনাত আপু আর শুদ্ধ।আমি আগে বেরোতে গেলেই আমার হাত ধরে যীনাত আপুর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন,

-তুমি যাও।

-শুদ…

-যাও!

ওনার আওয়াজে দুজনে আতকে উঠলাম।আমি যে কাপছি তা টের পাচ্ছি।যীনাত আপু বাইরে গিয়ে রুমের দিকে মুখ করেই কাদোকাদোভাবে তাকিয়ে রইলো।ঠাস করে ওর মুখের উপর রুমের দরজা আটকে দিলেন শুদ্ধ।ঝাড়া মেরে হাত ছাড়িয়ে রুমের মধ্যে দাড় করালেন উনি আমাকে।

ডানহাত দিয়ে বা হাতের কব্জি কচলাচ্ছি।বেশ অনেকটা সময় পর চোরের মতো শুদ্ধের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ফর্সা মুখটা টুকটুকে লাল হয়ে আছে।কপালের রগগুলো ফুটে উঠেছে।হাত মুঠো ওনার আর চোয়াল শক্ত।চোখদুটো যেনো জ্বালিয়ে দেবে সব।বুঝলাম প্রচন্ড রেগে আছেন উনি।মেকি হেসে বললাম,

-ইয়ে,আসলে,ক্ষুধা ভুলে থাকার জন্য…

উনি ছুটে এসে গলা টিপে দেয়ালে আটকে ধরলেন আমাকে।শ্বাস আটকে যাচ্ছে আমার।উনি রাগ নিয়ে চেচিয়ে বললেন,

-মিথ্যেবাদী!আমাকে ফেরাতে মরে যাওয়ার নাটক করছিলি তুই?মরার খুব শখ তোর?

কাপতে কাপতে গলায় রাখা তার হাতে দুহাত রাখলাম আমি।আরেকটু চাপ দিয়ে ধরে তার চোখে চোখ রেখে খুব কষ্টে বললাম,

-ম্ মেরে ফেলুন না।

ওনার হাত আলগা হয়ে আসলো।শ্বাস স্বাভবিক হলো আমার।তবুও আরো জোরে ওনার হাত চেপে ধরে বললাম,

-আপনার হাতে মরতে চাই।প্লিজ।মেরে ফেলুন।

একঝটকায় হাত সরিয়ে নিলেন উনি।চোখ সরিয়ে অন্যদিক তাকালেন।শান্ত চোখে তাকালাম তার দিকে,অশান্ত মনটা লুকাতে ব্যস্ত উনি।সামনে দাড়িয়ে বললাম,

-ভয় পেয়েছিলেন?

…..

-তা কি ঠিক করলেন?চলে যাবেন না?

……

-ভাবুন।ভেবে দেখুন।আপনি চলে গেলে আজকের ঘটনা খুব বাজেভাবে রিপিট হতে পারে।শেহনাজ মন্জিল যাবোনা আমি।এ বাসায় থাকার সম্পর্কের সুতোটা তো আপনি।আপনি নেই,কোন সম্পর্কের জোরে থাকবো আমি এখানে?আর যাবো তো কোথায় যাবো?তাই পরপা….

উনি আচমকাই আমার দুগালে হাত রাখলেন।কথা থেমে গেলো আমার। কপালে কপাল ঠেকিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে আছেন।চোখ বন্ধ হয়েনিজেও ফ্রিজড্ হয়ে আছি।চেয়েছিলাম তাকিয়ে তার চোখের ভাষা পরতে।পারিনি।উনি কাতর স্বরে বললেন,

-এমনটা কেনো করিস তুই সিয়া? কেনো করিস তুই এমন?কি পাস এভাবে কষ্ট দিয়ে আমাকে?এই শুদ্ধর কি শুধু কষ্টটাই প্রাপ্য?এতোটাই খারাপ আমি?নাকি এতোটাই অভাগা,যে সব থেকেও কিছুই নেই আমার।কি দোষ আমার বলতে পারিস?কি দোষ করেছি আমি?

চোখ খুললাম আমি।তার বন্ধ চোখের জল গাল বেয়ে পরছে।কিছু বলার আগেই উনি হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দিলেন আমাকে।এতোটুকো দেরি না করে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন।ভেতর থেকে রাগী আওয়াজেই বললেন,

-একা থাকতে চাই।জ্বালাস না।

কোনো কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে পরলাম।যীনাত আপু ছুটে এসে বুকে জরিয়ে ধরলো আমাকে।শ্বাস আটকে বসে আছি।মাথার সব স্নায়ুতন্তু শুধু জানান দিচ্ছে,আসলেই তো?কি দোষ আপনার?কেনো সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন নিজেকে?আমার কষ্টেই বা এতোটা মরিয়া হয়ে ওঠেন আপনি?দুজনের মাঝে তো আপনি নিজেই আড়স্টতার দেয়াল টেনে দিয়েছেন।তবে এভাবেই বা কেনো বললেন যেনো কতোদিন ধরে আমিই কষ্ট দিয়ে চলেছি আপনাকে?কেনো?

#চলবে…

লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here