বিশ মিনিট আগে রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বের করে দিলো,এখন দরদ দেখাতে খাওয়াতে এসেছে!এর জন্য বহুরুপী নামটা পার্ফেক্ট।বিশুদ্ধ বহুরুপী।ওভাবে বের করে দেওয়ার পর দরজায় বসেই শব্দ না করে কাদছিলাম যীনাত আপুর কোলে।একটু পরেই উনি দরজা খুলে দিলেন।তারও চোখমুখ লাল হয়ে আছে।শান্তভাবেই বললেন,
-যীনাত আপু,খাবার আনো।
আপুও কাদছিলো।চোখের পানি মুছে আমাকে ধরে দাড় করিয়ে দৌড়ে চলে গেলো।দু মিনিটে ট্রে ভর্তি খাবার নিয়ে আসলো।আমি তখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছি।শুদ্ধ ট্রে টা নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।কান্না থামিয়ে চোখের পানি মুছলাম।যীনাত আপুর হাত ধরে বললাম,
-চলো আপু।
পিছন থেকে শুদ্ধ হাত ধরে আটকে দিলেন আমাকে।যীনাত আপুকে বললেন,
-তোমাদেরও হয়তো ব্রেকফাস্ট হয়নি ওর নাটকে।যাও খেয়ে নিতে বলো সবাইকে।
তীক্ষ্ম চোখে তাকালাম ওনার দিকে।নাটক করি আমি?পরক্ষনেই মনে হলো নাটকই তো করেছিলাম।চোখ নামিয়ে নিলাম।যীনাত আপু তৃপ্তির হাসি ঝুলিয়ে জলভরা চোখ নিয়েই চলে গেলো।শুদ্ধ আমাকে রুমে এনে বেডে বসিয়ে বললেন,
-গলায় লেগেছে?
-না।
-বেশ।খেয়ে নে এবার।
না বললাম আর তাই বিশ্বাস করলো?কিসের তৈরী এই লোক?অভিমানও বোঝে না।উনি প্লেট এগিয়ে আবারো বললেন,
-খেয়ে নে?
কিছু না বলে পাশ ফিরে বসলাম।
-খাবার হাতে নিয়ে কতোক্ষন বসে থাকবো?
পিছনে তাকিয়ে বিস্মিত না হয়ে পারলাম না।উনি ভাতের লোকমা বানিয়ে খাইয়ে দেওয়ার জন্য হাত তুলে বসে আছেন।খুশি হওয়ার জন্য এটুকো যথেষ্ট ছিলো।তবুও খাবো না।উনিও তো খাননি কিছুই।বললাম,
-খিদে নেই।
-সকাল থেকে কিছুই খাসনি।খিদে আছে।
-আপনি খাননি কেনো?
-মাই উইশ।
-খাবো না আমি।মাই মর্জি।
-জেদ করিস না,রাগ বাড়াস না।
-সিম্পল কথা বোঝেন না কেনো?আপনি খান,আমিও মিসেস খান হয়ে যাবো।আই মিন খেয়ে নেবো।তার আগে খাচ্ছি না।
-চড়িয়ে কান গরম করে দিলেই তোর ঘাড়ও গিলতে শুরু করবে।
গাল এগিয়ে দিয়ে বললাম,
-এই ফর্মুলা ট্রাই করা উচিত।গো আহেড।ঘাড় কিভাবে গেলে তাও আজ আমি দেখবো।যদি তা না হয় মিস্টার!পুরোটা আপনাকে খেতে হবে বলে রাখলাম।
শুদ্ধ হাতের ভাতের লোকমা প্লেটে রেখে আঙুল ঝাড়লেন।হচকিয়ে গেলাম কিছুটা।সত্যিই মার লাগাবেন নাকি?কিন্তু ঘাড় তো কোনোভাবেই খাবার গিলতে পারবে না।শর্তে হেরে খাবারটা তবে উনিই খাবেন।ওয়াহ্ ইনসু,কি লজিক তোর!উনি প্লেটটা সরিয়ে রেখে বিছানা থেকে নেমে গেলেন।আমি পা দুটো গুটিয়ে হাসিমুখে বসলাম।
-খাবি না তুই?
-জ্বী না।ঘাড়কে গেলান,নইলে নিজে খাওয়ার জন্য রেডি হন।সোজা হিসাব।
বা হাতে ডানহাতের শার্টের হাতাটা গুটাতে লাগলেন উনি।ওটা নিচে নেমে এসেছিলো কিছুটা।হুট করেই কোলে তুলে নিলেন উনি আমাকে।চমকে উঠে ওনার গলা জরিয়ে ধরে চেচিয়ে উঠলাম,
-আরেহ?এটা কোনো কথা?এটা তো ম্যাথমেটিকস্ ছেড়ে অন্যকিছুর মধ্যে চলে গেলো!
চোখ পাকিয়ে তাকালেন উনি আমার দিকে।এবার ভয় পেয়েছি।চুপ করে মাথা নামিয়ে রইলাম।ব্যালকনিতে এসে একদম কিনারায় দাড়িয়ে শান্তভাবে বললেন,
-এবার বল।ফেলে দি তোকে?
আমি হা করে তার দিকে তাকালাম।ঘাড় ঘুরিয়ে একবার নিচে তাকিয়েই কলিজা শুকিয়ে গেলো।মাটির দিকে তাকাতেই শিউরে উঠলাম।ওনার গলা আরো ভালোমতো জরিয়ে ধরে বললাম,
-ন্ না প্লিজ!মরে যাবো!
-মরার মতো করে ফেলবো না তোকে।এখান থেকে পরলে জাস্ট হাত পা ভাঙবে।তারপর তোর লাফানো বন্ধ হবে।রুমে বসে শুয়ে শুয়ে অসহায়ের মতো আমাকে বাইরে যেতে দেখবি।এইসব ফালতু থ্রেট দিতে পারবি না।আর আমারও তোকে নিয়ে এতো ঝামেলা পোহাতে হবে না।রাগও উঠবে না।বাসার সবই ঠিক করে ফেলবে তোকে।সিম্পল ক্যালকুলেশন।টোটালি ম্যাথ।
একদম স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো বললেন উনি।আমি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি।দুদিন আমিই ভয় দেখালাম,আজ লোকটা এতোদিক ভেবে শেষমেষ আমাকেই উল্টো থ্রেট দিলো?
-ঠিক এভাবেই হা করে খাবার সাবাড় করবি।গট ইট?
আমি চুপ করে আছি।রাগ না দেখিয়ে এভাবে কথা বলছেন উনি।শুদ্ধ কিছুটা হাত আলগা করে আমাকে ফেলে দেওয়ার ভঙ্গিমায় নাড়ালো।জাপটে ধরলাম তাকে।উনি বিরক্তি নিয়ে বললেন,
-যে কয়দিন আছিস,তোকে তোর ভাষাতেই বুঝাতে হবে বুঝলাম।এবার বল,ঘাড় গেলে কি না?
ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে মাথা উপরেনিচে নামালাম।শুদ্ধ রুমে এনে বিছানায় নামিয়ে দিলেন আমাকে।তারপর খাইয়ে দিতে লাগলেন।একটা কথাও বলিনি আর।খাওয়াতে খাওয়াতেই উনি বললেন,
-সন্ধ্যায় আয়ান আসবে।
-কে আয়ান?
-আমার ফ্রেন্ড।জামান গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিং অফিসার।
-ওহ্!
-আয়ানের সামনে উল্টাপাল্টা কিছু বলবি না।
বাবু হয়ে বসে হাসিমুখে বললাম,
-তারমানে বলছেন একবারে আদার্শ গোপি বাহু ক্যারেক্টর?
-মানে?
ধুরু!এ তো সিরিয়ালও দেখেনা।চিনবে কোথ্থেকে?বললাম,
-মানে ওনাকে দেখাবো আমরা হ্যাপি ম্যারিড কাপল তাইতো?
-না।উল্টোটা আর সত্যিটাই।দেখ সিয়া,আয়ানের সামনে একদম কাছে ঘেষবি না আমার।আমার ভালো বন্ধু,শুধু দেখতে চেয়েছে তোকে তাই এই।নইলে…
-নইলে বউকে অন্য কাউকে দেখতে দিবেন না?
-নইলে আমার তোকে নিয়ে লাফানোর সময় নেই।
-রিয়েলি?
উনি চুপ রইলেন।মুচকি হেসে বললাম,
-বাসার সবই তো জানে আপনি কেমন লোক,আই মিন আমাদের সম্পর্ক কেমন।একটা বাইরের লোককেও….
-আয়ান কোনো বাইরের লোক না।হি ইজ মাই বেস্টফ্রেন্ড।
-হুহ!বেস্টফ্রেন্ডের সামনে শো অফ করবেন যে আপনার বউ নিয়ে ভালো নেই আপনি।যাতে নতুন আরেকটা মুরগী ধরে দিতে পারে তাইনা?
-হোয়াট?
-ঝাল!
উনি পানি এগিয়ে দিলেন সাথে সাথে।কোনো ঝাল লাগেনি,তবুও পানি কিছুটা খেয়ে বললাম,
-ঠিকাছে।তাকেও বুঝিয়ে দেবো তার বন্ধু একটা এংরি বার্ড।খালি রাগারাগি করে আমার সাথে।
কথাটা বলে সরু চোখে তাকে পর্যবেক্ষন করলাম।রিয়্যাক্ট আশা করেছিলাম।উনি ভাত মাখাতে মাখাতে সেদিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বলেন,
-গুড।
স্ট্রেন্জ!রাগ নিয়ে রাগার মতো করে রাগীপক্ষি বললাম,রাগলো না?বাজাতে হচ্ছে…!
-বাট আই হ্যাভ আ কন্ডিশন!
উনি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললেন,
-হোয়া…?না।শুনবো না তোর ফালতু শর্ত।তুই আবারো আমাকে আবোলতাবোল…
-রাইট ইউ আর।কিন্তু শুনতে তো হবেই আপনাকে।নইলে আমিও শুনবো না আপনার কথা।
একটা শ্বাস ফেলে শুদ্ধ বিরক্তি নিয়ে তাকালেন আমার দিকে।মেকি হেসে বললাম,
-হি হি,আপনি টুক করে এই খাবারটুক খেয়ে নিন।আর প্রমিজ করুন তিনবেলা ডাইনিংয়ে বসে সবার সাথে খাবার খাবেন।তারপর আপনি যা বলবেন তাই হবে।অর…(ঘাড়টা চুলকে বললাম)
-অর?
-আপনার ফ্রেন্ডের সামনে গলা জড়িয়ে ধরবো।আগে তো আপনার কথার বিপরীতটা করবো,তারপর আপনি যা করেন দেখা যাবে।
দাতে দাত চেপে উনি বললেন,
-শুদ্ধ বাসায় খায় না এটা সবাই জানে।তুই….
-তোহ্?খান না এখন থেকে খাবেন।নইলে কিন্তু আপনার ওই ডায়ান ফ্রেন্ড,থুরি আয়ান না কি যেনো নাম?হোয়াটএভার!তার সামনে আপনার বউয়ের মতো বিহেভ করবো!
কথাটা বলে আমি তামিমা স্পেশাল হাসি দিয়ে বসে রইলাম।শুদ্ধ রাগী গলায় বললেন,
-হা কর!
-উহুম।অনেকটা খেয়েছি।ওটুকো আপনি খান।এন্ড এন্ড এন্ড!সবার সাথে বসে খাবেন এরপর থেকে।মেক দ্যাট প্রমিজ।
-সীমা পার করছিস তুই!
-ওনলি ফর ইউ!
পাশ ফিরে বসে রাগ নিয়ে খেতে লাগলেন উনি।আমি একটু অবাক হলাম।বন্ধুকে দেখাবে বউ নিয়ে সুখি নেই,এজন্য বাসায় খাওয়ার কথাটা মেনে নিলো।আজব না বিষয়টা?যাই হোক,বাসায় খাবেন,এটাই ঢের।গালে হাত দিয়ে বসে থেকে দেখে চলেছি আমার এটো কিভাবে খাচ্ছেন উনি।এখন কিছু বললে ওনার খাওয়াটাই হবে না আর,তাই চুপচাপই রইলাম।খাওয়া শেষ করে আবারো রুম থেকে টেনে বের করে দিলেন আমাকে।আর সেই এক ডায়লগ,দুরে থাক।একদিন বাসায় আছে,তবুও তার কাছে থাকা যাবে না।কে জানে রুমে থাকলে তার কি সমস্যা!
—————?
সারাটা সকাল কাটলো আমার রুমের বাইরে।যীনাত আপু আর মাহি একরুমে রয়েছে।ওদের কাছেই ছিলাম।শুদ্ধ বাইরে থাকলে কি করেন জানিনা।কিন্তু বাসায় একা রুমে দরজা বন্ধ করে রয়েছেন উনি বিষয়টা হজম হচ্ছে না আমার।অনেক দরজা ধাক্কেছি।কিন্তু উনি দরজা খোলেন নি।
সেজোমাকে বলেছিলাম তার ছেলে খেয়েছে কিছুটা।সে সেটুকো শুনেই খুশিতে গদগদ।
লান্চের সময় সবাই ডাইনিংয়ে বসে ছিলাম।চেয়ারে বসেই লুকিয়ে চুরিয়ে দাতে নখ কাটছি।কেউ দেখলে হাইজিনের ফালুদা।আচ্ছা,উনি কি আসবেন?রুম থেকে বের করে দেওয়ার সময় শুদ্ধ মুখে প্রমিজ বলেছিলেন,হাত ছুয়ে প্রমিজ আদায় করাইনি।গায়ে তুলবেন ওই প্রমিজ উনি?সবাই সবার মতো কথা বলছে।বাবা অফিসে,সেজোমা মামীর সাথে তদারকি করছে।যীনাত আপু পাশে চেয়ার থেকে ফিসফিসয়ে বললো,
-তোর হাত বেধে দেবো ইনসু!কি বাজে স্বভাব বানিয়েছিস তুই!
দাত কেলিয়ে বললাম,
-আমার এ বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না।
আপু চোখ রাঙালো।ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে বাকি সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম হা করে আমার পেছনদিক তাকিয়ে আছে সব।ওদের চোখ অনুসরন করে ঘাড় ঘুরিয়ে যা দেখলাম তাতে আমারো মুখ হা হয়ে গেছে।শুদ্ধ এদিকেই আসছেন।যীনাত আপু আমার দিকে তাকালেই ভাব নিয়ে বিশ্বজয়ের হাসি দিলাম।
শুদ্ধ চুপচাপ এসে নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে খেতে লাগলেন।ইতিমধ্যে সবার প্লেটেও আসমা খালা খাবার বেড়ে দিয়েছে।সে নিজেও এতোটা চমকে গেছে,সিফাত ভাইয়ার প্লেটে ভাত বাড়ছেন তো বাড়ছেই,থামার নাম নেই।সেজোমা শুধু নিরবে কাদছে আর আচলে চোখ মুচছে।সে কান্না যে কতোটা আনন্দের অনুধাবন হলো আমার।শুদ্ধ খেতে খেতেই বললেন,
-সিয়া!খেয়ে নে।
ধ্যান ভাঙলো সবার।স্বাভাবিক হতেই সিফাত ভাইয়া তার প্লেটের ভাত দেখে আসমা খালার দিকে কটমটিয়ে তাকালো।সে নিজের ভুল সংশোধনে ব্যস্ত হয়ে পরলো।কোনোরুপ টু শব্দ না করে সবাই খেতে লাগলো।খাওয়া শেষ করেই হনহন করে শুদ্ধ রুমে চলে গেলেন।সেজোমা এবার জোরে কেদে দিয়ে বললো,
-আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নেই নি।ইনসু রে,বেচে থাক মা।বেচে থাক।এভাবেই আমার সংসারকে ভরিয়ে দে তুই।
উঠে গিয়ে তার কোলে মাথা রেখে বললাম,
-সব ঠিক হয়ে যাবে আম্মু।কেদোনা তুমি।
সেজোমা চোখের পানি মুছে বললো,
-হ্যাঁ,হ্যাঁ।কাদা যাবে না আর।এই?তোরাও আর অবাক হবি না একদম,ইমোশনালও হবি না।স্বাভবিক বিহেভ করবি শুদ্ধর সাথে।
মাথা নেড়ে সায় দিলো সবাই।হাসিমুখে সবাই লান্চ শেষ করলো।লান্চ করে আমি রুমের দিকে পা বাড়ালাম।ভেবেছিলাম এবার রুমে ঢুকতে পারবো।গিয়ে দেখি তখনো দরজা লক।হতাশা নিয়ে আবারো মাহির রুমে ঢুকলাম।ওখানে যীনাত আপু,মাহি,তাপসী আপু,সীমা ভাবি একসাথে বসে।বেশ খুশিখুশি লাগছিলো ওদের।আমাকে যেতে দেখেই তাপসি আপু বললো,
-এসেছিস?
-হুম।
-আবার লাগিয়েছে দরজা?
-হুম।
-এখনো খোলেনি?
-হুম।
-কি বলেছে?
-হুম।
কি থেকে কি বলছি কিছুই জানিনা।সীমা ভাবি এগিয়ে এসে আমার কাধ ধরে বললো,
-ইনসিয়া,মন খারাপ করো না।শুদ্ধ দরজা খুলে দেবে একটু পরই।তোমাকে নিয়ে একটু বেশিই সেন্সিটিভ তো,দরজা লক করেছো শুনে বেশ রাগ হয়েছে।একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে।
আমাকে নিয়ে সেন্সিটিভ!কথাটা শুনেই একদফা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেলো মনে।এ কথায় কি আদৌও অবিশ্বাসের কোনো জায়গা আছে?
তাপসী আপু বললো,
-আজ কতোদিন পর যে শুদ্ধ বাসায় ব্রেকফাস্ট লান্চ করলো,হিসেব নেই।ইনসু তো কামালই কার দিয়া!
-শুনলাম,ইনসিয়াকে নাকি খাইয়ে দেয় শুদ্ধ?
সীমা ভাবির কথায় মাথা নিচু করে নিলাম।মাহি বললো,
-ওই দেখোনা!ইনসিয়া ভাবি তো এইটুকো শুনেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।ইনসিয়া ভাবি?তুমি এটা জানো তো?শুদ্ধ ভাইয়া কিন্তু আজ সবার সামনে কোলেও নিয়েছিলো তোমাকে!
ওর কথায় আরো অস্বস্তি শুরু হয়ে গেলো।এভাবে বলার কি আছে?তখন তো অসুস্থ্য ভেবে কোলে নিয়েছিলো।কিন্তু কিছুক্ষন আগে?যে কারনেই হোক।ইশ্!এই প্রথম কোনো ছেলে এভাবে কাছে এসেছে আমার।সে সময়টতে কিছু মনে না হলেও,এখন তীব্র লজ্জা লজ্জা লাগছে।কাল রাতে তো উনি আমাকে জড়িয়েও ধরেছিলেন।নাকি আমিই?চুপচাপ দাড়িয়ে চেহারা লুকাতে এদিক ওদিক করতে লাগলাম।যীনাত আপু আমাকে ধরে বিছানায় বসালো।থুতনি ধরে বললো,
-কিরে ইনসু?তোকে তো বাচ্চা মেয়ে ভেবেছিলাম।এভাবে লজ্জা পাচ্ছিস কি ভেবে?
ওর হাত সরিয়ে একটু স্বাভবিকভাবে বলার চেষ্টা করলাম,
-ত্ তো এখনো বাচ্চাটাই আছি।আর লজ্জার কি দেখলে তোমরা বলোতো?ওমন কিছুই না।
চারজনই একসাথে বলে উঠলো,
-কেমন কিছু না?
চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম ওদের দিকে।ওরা জোরে হাসতে লাগলো।এরপর কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম সবাই মিলে।মন ভালো হয়ে গেলো কিছুটা আমার।এজন্যই ছোটবেলা থেকেই ফ্যামিলি গ্যাদারিং ভালোবাসি আমি।সব কথার মধ্যে যীনাত আপু কিছুটা ইতস্তত বললো,
-ইনসু?পরশু তোদের বৌভাত।সেজোমামা চান এ বাসায় অনুষ্ঠান হোক।এজন্য কাউকেই যেতে দেননি এখনো।কিন্তু তোর আর শুদ্ধের কথা ভেবে…ই্ ইনসু,ত্ তুই কি চাস?
সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।একটু সিরিয়াস লুক দেখালাম ওদের।এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে জোরে হতাশার শ্বাস ফেললো ওরা।ঠোট টিপে হেসে বললাম,
-বৌভাত রিসেপশনেও আমার লেহেঙ্গা চাই!লেহেঙ্গা পরবো!
ওদের সবার চোখ চকচক করে উঠলো।সীমা ভাবি বললো,
-তারমানে তুমি…
-হুম।আমি চাই এই প্রোগ্রাম হোক।
যীনাত আপু বললো,
-আ্ আর ইউ শিওর ইনসু?শুদ্ধ কিন্তু চায়না তোদের বিয়ে নিয়ে আর কোনো…
-বিয়েটা কি ওনার একার হয়েছে নাকি?বিয়েটা তো আমারো হয়েছে।আর আমি চাই অনুষ্ঠান হোক।বিয়েতে তো ব্রাইডাল ডান্স হয়নি,তো তা বৌভাতে উশুল করে নেবো।আর রইলো কথা তোমার ভাইয়ের?ও ঠিক ম্যানেজ করে নেবো!
যীনাত আপু আমার চুলে টেনে দিয়ে বললো,
-হ্যাঁ,বুচি ম্যানেজ করে নিবে!আরে,এজন্য তো শুদ্ধের বাসায় থাকা জরুরি!ও তো বাসায়ই থাকে না।আজ নেহাত তোর পাগলামিতে….
কথা তো ভুল বলেনি।শর্ত তো দিলাম বাসা ছেড়ে না যেতে।অফিসে যায় না,দৈনিক কোথায় বেরোয় কে জানে?এখন বাসায় আটকে দেবো কিভাবে?
-ভুল বলোনি যীনাত আপু।একে বাসায় আটকানো জরুরি।কোথায় যায়,কেনোই বা যায়?
মাহি বললো,
-ইনসিয়া ভাবি,তুমি তো জিনিয়াস!তুমি ঠিক আটকাতে পারবে শুদ্ধ ভাইয়াকে।
-কিভাবে?
-আইডিয়া ভাবো।
-বলবো যে বৌভাতের দিন বেরোতে নেই?
-লে!এটা বললে তখন তখনই বেরিয়ে যাবে।
-ঠিকই তো।তাহলে?
সীমা ভাবি বললো,
-মেয়েটাকে এভাবে ফোর্স করছিস তুই মাহি যেনো ও মাথায় আইডিয়ার দোকান নিয়ে বসেছে।শুদ্ধকে আটকানোর জন্য বলে চলেছিস,এইটা ভালো না ভাবি।সেইম ডিজাইনের মধ্যে পিংক কালারের আইডিয়া দেখাও।
ওরা হাসলো।আমি তখনো ভাবছি।একসময় তুড়ি মেরে বলে উঠলাম,আইডিয়া!
সবাই আমার দিকে মনোযোগ দিলো।মাহি উৎসাহ নিয়ে বললো,
-কি প্লান করলে?
কিছু না বলে বাকা হাসলাম।আমার হাসি দেখে যীনাত আপু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-বেচারা শুদ্ধ!
কথা বলছিলাম আমরা।এরমধ্যে আসমা খালা পাকোড়া নিয়ে আসলো।আমাকে খাওয়ার জন্য বেশ জোরাজোরি করেছে ওরা,নেইনি।গলা দিয়ে নামবে না উনি খাননি বলে।খেতে খেতে তাপসী আপু বললো,
-হয়েছে।আড্ডার দিন শেষ,গানবাজনার বাংলাদেশ,থুরি আজাদ ম্যানশন।সীমা,গান ধরো।
-তোমার যতো উদ্ভট আবদার।এখানে আমাকেই পেলে?যীনাত,ইনসিয়া,মাহি ছোটরা গাক না।আমরা ভাই ম্যারেড পোলাপাইন!
-তো?বিয়ে করলে গলা বসে যায় বুঝি?
মাহির কথায় আরেকদফা হাসলো সবাই।জোর করায় সীমা ভাবি ‘ ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় ‘ গানটা গাইলো।মাহিও ‘ মিলে হো তুম হামকো ‘ গানটা গাইলো।এ নিয়ে ওকেও পচালাম সবাই।মিলে হ্যায় কন তুমকো!যীনাত আপু বললো,
-এবার ইনসু,তোর পালা।
-গাইতেই হবে?
ইশান ভাইয়া তায়্যিবকে কোলে করে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-অবশ্যই।নতুন বউয়ের গান শোনার রেওয়াজটা আমাদের পরদাদার কাল থেকে হয়ে আসছে।
তাপসী আপু বলে উঠলো,
-তাই নাকি?কই আমাকে তো বলোনি কখনো!আর কি নাম তোমার পরদাদার?
ইশান ভাইয়া সবে বেডে বসেছিলেন।থতমত খেয়ে গেলেন উনি।আমাকে ফিসফিসিয়ে বললেন,
-বাচাও বোন।গানটা ধরে টপিকটা ঘেটে দাও।
আমি ফিক করে হেসে দিলাম।মাহি বললো,
-শুরু করো ইনসিয়া ভাবি।আর হ্যাঁ,গানটা অবশ্যই শুদ্ধ ভাইয়াকে ডেডিকেট করে গাইবে।
-তাকে ডেডিকেট করে মানে?
-মানে “তাকে” দেখে তোমার যে গান মনে আসে।প্লিজ কুছ কুছ হোতা হ্যায় গানটা ধরো।আমরা চিরসিঙ্গেল গুলোও তো এর কিছু এক্সপেরিয়েন্স শুনে অভিজ্ঞতা বাড়াই।
সবাই হেসে সায় দিলো ওর কথায়।শুদ্ধকে ডেডিকেট করে গান!উঠে দাড়িয়ে বাকা হেসে উঠে দাড়িয়ে গাইতে লাগলাম,
‘ আতি হ্যায় ও এয়সে চালকে
যেসে জান্নাত মে রেহতি হ্যায়,
দেখতি হ্যায় সাবকো এয়সে
যেসে সাবকো ও সেহতি হ্যায়।
পার গুসসে মে যাব আয়ে
অর আখে ও দিখলায়ে,
লাড়তে লাড়তে
কাভি ভি না মুসকায়ে…
মাই দিল গোজ…
রুমের মধ্যে ঘুরে ঘুরে গান গাইছিলাম।রাগী লুক,হাটার স্টাইল,তাকানোর ভঙিমা সবকিছু দিয়ে একটু আধটু শুদ্ধের নকলও করে ফেলেছি।ওরা সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে বিছানায়।এটুকো গাইতে গাইতে যেইনা পিছন ফিরেছি,দরজার সামনে রেগে হাত মুঠো করে দাড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে গানের সব তাল গুলিয়ে ফেললাম।ঠোট উল্টে ন্যাকিস্বরে কেদেই ফেললাম,
-এ্যাঁআআআআআ!!!
#চলবে…
লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা