তোর নামের রোদ্দুর,পর্ব-১৭

0
1926

শুদ্ধর বুকের মাঝে গুটিয়ে শুয়ে আছি।চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গেছে আমার।এই লোকটা ডিনারের সময় আমার আব্বুকে বলেছে আমার ক্লাস নাকি খুব তাড়াতাড়িই শুরু হবে,শেহনাজ মন্জিল দুমাসের আগে যেতে দেবে না।আমি তো কিছু বলার অবস্থাতে নেই তার আগে থেকেই।ছ সেকেন্ডের ঘটনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।তবুও যেটুকো বলার জন্য হতভম্বের মতো মাথা তুলেছিলাম,শুদ্ধর চোখ দেখেই আর কিছু বলা হয়ে ওঠেনি।চুপচাপ ছিলাম।
শুদ্ধ বাবাকেও বলেছেন,” আব্বু কাল থেকে আমি অফিস জয়েন করবো।তোমার সাথেই বেরোবো আমি।” আম্মুকে বলেছেন,” আম্মু তোমার থেরাপিটা কাল থেকে আবারো শুরু করবে,স্পেশালিস্ট আমিই ডেকে দেবো।আর সিয়া তো আছেই।”

তার ডাক,কথায় ডাইনিং টেবিলে একদফা শব্দহীন আম্ফান বয়ে গেলো।আমার মতো বাকিসবও আটকে ছিলো অনেকটা সময়।সবাইকে স্বাভাবিক করতে বাবা আয়ান ভাইয়ার কথা বললে উনি স্বাভাবিকভাবে বলেছেন আয়ান ভাইয়া নাকি কিছুদিন অন্য কাজে ব্যস্ত থাকবেন,তাই সবটা উনিই সামলাবেন।কিন্তু আমি যতোদুর জানি আয়ান ভাইয়া যথেষ্ট অফিসের কাজের প্রতি সেন্সিটিভ,তাই ব্যাপারটাতে একটু ঘটকা লাগলো।তবুও ছ সেকেন্ডের তুলনায় এটা কিছুই না ভেবে আবারো সেদিকেই মনোযোগ দিলাম।

রাত কতোটা হয়েছে তার হিসেব নেই।ঘুমানো বাদ দিয়ে চোখ পিটপিট করছি শুধু।একদম আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে রেখে শুদ্ধ আমার চুলে মুখ গুজে রয়েছেন।হাচি পাচ্ছে না ওনার?এভাবে কেনো ধরে আছেন উনি আমাকে?তখন ওসব কি ছিলো?আর ছ সেকেন্ড?সেটা কি ছিলো?মনে পরতেই গা ঝাকি‌ দিয়ে উঠলো আমার।শুদ্ধ ঘুমো ঘুমো গলায় বললেন,

-ঘুমোতে দে বউ!কাল সকালে অফিস যাবো।এভাবে কাপতে থাকলে পাগল হয়ে পাগলামি করে বসবো কিন্তু!

পাগলামির বাদ আছে কোনো?তার এই অদ্ভুত ব্যবহারে আমিও পাগল হয়ে যাচ্ছি রীতিমতো।কোনোমতে মাথা তুলে বললাম,

-আ্ আপনার ক্ কি হয়েছে শুদ্ধ?

উনি আমার কপালে ঠোট ছোয়ালেন।কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নামিয়ে নিলাম আবারো।শুদ্ধ চোখ বন্ধ রেখেই বললেন,

-এখনো ছেলে,মেয়ে,কিছুই হয়নি।নেহাত বউটা ছোট।নইলে এতোদিনে রুমে ক্রিকেট টিম থাকতো।

কিছু না বুঝে তার দিকে তাকালাম।একটুপরেই কথাটা বুঝে উঠতেই চোখ বড়বড় হয়ে গেলো আমার।কি বলে এসব?কেনো বলে?আল্লাহ্!কি থেকে কি হয়ে গেলো?এতো শক কই রাখবো আমি?এই বিস্ময় কাটাতে কয়েকজন্ম পার হয়ে যাবে আমার।ভয়ে কান্না পাচ্ছে।কাদোকাদোভাবেই বললাম,

-আজ তো আপনি ড্রিংকও করেন নি।বিশ্বাস করুন,কাল জ্বরের ওষুধই খাইয়েছিলাম আপনাকে আমি।তাহলে হলোটা কি আপনার?

উনি আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।বললেন,

-এইসব চিন্তা করেও তুই কোনো কুল কিনারা খুজে পাবি না সিয়া।শুদ্ধ তোর সিলেবাসের বাইরে।ইনফ্যাক্ট সবার সিলেবাসেরই বাইরে।না ঘুমোলে শুধুশুধু চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরবে।আর তখন বাসার মেয়েপার্টি তোকে কি কি শোনাবে তা তো তোর ধারনার বাইরে থাকার কথা না।সো,ঘুমা।

ঘুম কি আসবে?তবে কথাগুলো তো সত্য।যেমন ওনাকে বোঝার চেষ্টা করা মানে আমার স্নায়ুতন্ত্রের উপর অত্যাচার,তেমন মেয়েপার্টির কথার আন্দাজ কিছুটা বিকেলেই পেয়েছি আমি।শুদ্ধ এতোটাই জরিয়ে রেখেছেন আমাকে যে ওনার বুকে নাকটা লেগে আছে একদম।কেমন যেনো নেশালো একটা ঘ্রান।এ নেশা কি আমার জন্য?সহ্য করতে পারবো তো?জোর করেই চোখ বন্ধ করে নিলাম।

.
সকাল হয়েছে টের পাচ্ছি।তবুও চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না।একদম মৃদ্যু কোনো হাওয়া চোখমুখ ছুয়ে দিতেই আরো আরাম করে গা এলিয়ে দিয়ে শুয়ে পরলাম।কিন্তু সাধের চুলগুলো হঠাৎ চোখে পরলো।একরাশ বিরক্তি নিয়ে চোখ বন্ধ রেখে সেগুলো সরিয়ে দিতে যাচ্ছিলাম।আমার আগেই কোনো এক হাত আলতোভাবে চুলগুলো সরিয়ে দিলো কপাল থেকে।ভালোলাগলেও কিছু একটা মনে করে তৎক্ষনাৎ চোখ মেলে তাকালাম।

শুদ্ধ একদম বরাবর আমার দিকে পাশ ফিরে শুয়ে।মাথার নিচে একহাত দিয়ে কিঞ্চিত উচিয়ে রেখেছেন মাথাটা।ঠোটে হাসি ঝুলিয়ে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।ওভাবে থেকেই বলে উঠলেন,

-গুড মর্নিং শ্যামাপাখি।

আমি একপ্রকার লাফিয়েই উঠে বসলাম।উনিও উঠে বসে বললেন,

-গুড মর্নিং বললে কি কোনো অংশ খোয়া যায়?

জোর করে হেসে বললাম,

-ম্ মর্নিং।

শুদ্ধ আরো কিছুটা এগিয়ে বসলেন আমার দিকে।কানে গোজা চুল সামনে এনে দিয়ে বললেন,

-এগুলো তোকে জ্বালায় তাইনা?বিশ্বাস কর,এগুলো আমাকে বারবার তোর কাছে আসতে বাধ্য করে আর…

আবার রাতের মতো ভুলভাল বলছেন উনি।যদি সেরকম কিছু করে ফেলেন?নাহ্!সহ্য করতে পারবো না।মরে যাবো।এই লোকটা এভাবে কেনো কাছে আসছে আমার?কি হয়েছে তাও বলছে না।তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে দাড়ালাম।শুদ্ধ ঠোট টিপে হেসে বললেন,

-যা,গোসল করে আয়।

-হুম।ওয়েট!হোয়াট?গ্ গোসল মানে?

-ইংরেজিতে শাওয়ার।

-এখন কেনো?দুপুরে গরম তখন…

শুদ্ধ বিছানা থেকে নেমে আমার দিকে এগুতে এগুতে বললেন,

-ইউ নিড কজ?

একদৌড়ে কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে লক করে দিলাম।হাপিয়ে গেছি।গলা শুকিয়ে গেছে আমার।বাড়াবাড়ি করছেন কেনো উনি?কি চাই ওনার?

গোসল শেষে ওয়াশরুমের দরজা অর্ধেক খুলে উকিঝুকি দিয়ে দেখলাম শুদ্ধ রুমে নেই।গেলো কই?যেখানে খুশি যাক।এই অদ্ভুত আচরন নিতে পারছি না আমি।একটা শ্বাস নিয়ে আস্তেধীরে আয়নার সামনে দাড়ালাম।সবে চুলে পেচানো টাওয়েলটা খুলেছি,কেউ একজন পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো আমাকে।চিৎকার দেওয়ার আগেই একহাতে মুখে চেপে ধরে বললো,

-ইটস্ মি।

শুদ্ধ!তারমানে এভাবে ভয় দেখিয়েই উনি আমাকে মেরে ফেলার ধান্দায় আছেন।তারপর আজাদ ম্যানশন থেকে বের করে দিবেন উনি আমাকে।আয়নার তার বাকা হাসিটা দেখে চোখ সরিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর কিছুটা চেষ্টা করলাম।শুদ্ধ আরো শক্তভাবে আমাকে জরিয়ে কাধে তার থুতনি ঠেকিয়ে বললেন,

-আচ্ছা বউ!এতো পালাই পালাই করছিস কেনো তুই বলতো?

-ক্ কিসের পালাই?

-ভয় পাচ্ছিস?

-ক্ কেনো?আপনি কি বাঘ?নাকি ভাল্লুক?যে খেয়ে নেবেন আমাকে,আর আমি ভয় পাবো!

-সেটা তো তুই বলতে পারবি আমি কি।তবে হ্যাঁ,খেয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা…

চোখ বড়বড় করে আয়নাতেই তাকালাম তার দিকে।শুদ্ধ একটু হেসে আমার গলায় নাক ঘষতে শুরু করলেন।আবারো সেই অস্বস্তিকর অবস্থা।উনি কি বোঝেন না,এভাবে ওনার কাছে আসাতে এলোমেলো হয়ে যাই আমি।চোখ খিচে বন্ধ করে থেকে হাত মুঠো করে নিজেকে সামলাচ্ছি।মনে হচ্ছে উনি ছেড়ে দিলেই আমি পরে যাবো।শুদ্ধ ফিসফিসিয়ে বললেন,

-এই ভেজা চুল!পাগল হয়ে যাই আমি শ্যামাপাখি!জাস্ট মেকস্ মি ম্যাড!

একটুপরেই শুদ্ধ আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে দাড়ালেন।একপলক তার দিকে তাকিয়ে একছুটে মাহির রুমে এসে ধপ করে বিছানায় বসে পরলাম ।লোকটা সত্যিই পাগল হয়ে গেছে!বিছানায় বসে হাপাচ্ছি।যীনাত আপু রুমে নেই।মাহি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।আমাকে হাপাতে দেখে তোয়ালেটা বিছানায় ছুড়ে পাশে বসে বললো,

-কি হয়েছে ইনসিয়া ভাবি?হাপাচ্ছো কেনো এভাবে?

….

-কি হলো?বলবে তো!

-তোমার শুদ্ধ ভাইয়া পাগল হয়ে গেছে মাহি।

-হোয়াট?কিসব বলছো তুমি?কালরাতেই তো ফুপা,ফুপির সাথে কতো ভালো করে কথা বললো।তোমাকে কিছু বলেছে?

-বলেছে?উনি কাল আমাকে ছ সেকেন্ডধরে…

-ছ সেকেন্ডধরে কি?

কিছু না বলে উসখুস করতে লাগলাম।মাহি এগিয়ে বসে আমার চুলে হাত দিয়ে বললো,

-এমা?ভেজা কেনো?

অসহায়ভাবে ওর দিকে তাকালাম।ও ঠোট টিপে হাসি আটকাতে ব্যস্ত।

-দ্ দেখো মাহি,ত্ তুমি যা ভাবছো তা একদমই না।এমনি জাস্ট…

-কিরে ইনসু?ওভাবে দৌড় লাগালি কেনো তুই এ রুমের দিক?নিচ থেকে দেখে মনে হলো মিলখা সিং কে বাস্তবে দেখলাম।কি হয়েছে?

যীনাত আপু এসেছে।আমি উঠে ওর দিকে এগিয়ে বললাম,

-আপু তোমার ভাই…

ইতিমধ্যে দেখলাম মাহি আর যীনাত আপুর মধ্যে চোখেচোখে ভাব বিনিময় শেষ।আমার কথায় বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নাই আপুরও।মাহির কথা বুঝতে ব্যস্ত সে।কথা থামিয়ে আপুর হাত ঝাকিয়ে বললাম,

-আপু!শোনো!আমি বলছি,তোমার ভ্…

-সিয়া!

শুদ্ধ ডাক লাগিয়েছেন।করুনভাবে দুটোর দিকে তাকালাম।যীনাত আপু একটু হেসে সাইডে দাড়িয়ে আবার চোখ পাকিয়ে আঙুল দিয়ে বেরিয়ে যেতে বললো।মাহি ঠোট উচিয়ে দুবার চুমোর মতো দেখিয়ে ঘাড় নাড়িয়ে বুঝালো যাও যাও।চুপচাপ বেরিয়ে এলাম ওই রুম থেকে।কিছু বলার মুখ রাখেননি শুদ্ধ আমার!

গুটিগুটি পায়ে রুমে ঢুকেই শুদ্ধকে দেখে একটু থেমে গেলাম।চুলগুলো ভেজা,কালো প্যান্ট,নীল শার্টটার পিছনে কিছুটা ইন করা,বাকিটুক বেরিয়েই আছে,বড় হাতাটা এলোমেলো,কলারটাও ঠিকমতো ভাজ করেননি উনি।লোকটা টাই বাধতে অস্থির হয়ে পরেছে তবুও বাধতে পারছে না।আমি এসেছি তা টের পেয়ে উনি বললেন,

-রুমে থাকিস না কেনো তুই?আব্বু খুব পান্চুয়াল।লেইট হলে আবার ফেলেই না চলে যায়।এখনই বেরোবো আমি।আর তুই…

উনি টাই ঘুরাতে ঘুরাতে এইসব বলছেন।এখনই বেরোবেন?এভাবে নাকি অফিস যাবেন উনি!হাসি পাচ্ছিলো প্রচুর।পেরে না উঠে ফিক করে হেসেই দিলাম।শুদ্ধ ঘুরে উঠে ভ্রুকুচকে তাকালেন আমার দিকে।হাসি থেমে গেলো আমার।উনি টাই ছেড়ে এগোতে লাগলেন আমার দিকে।আর কতোটুক আসলে দৌড় লাগাবো তাই ভাবছি।এরমধ্যেই হাত ধরে ফেললেন উনি আমার।ভয়ে মাথা ফাকা ফাকা লাগছে এবার।লোকটা যা তা করতে পারে এখন।তাকে দেখে হেসেছি।শুদ্ধ এগিয়ে এনে আমাকে আয়নার সামনের মোড়া দেখিয়ে বললেন,

-এটার উপর উঠে দাড়া।

কপাল কুচকে তাকিয়ে আছি তার দিকে।উনি চোখ পাকিয়ে আবারো ইশারা করলেন।তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালাম।উনি আমার হাতদুটো উপরে তুলে ধরে একটা বাকা হাসি দিতেই বুঝলাম কান ধরতে হবে আমাকে।আরেহ্!এটা কোনো ব্যাপারই না।এমন শাস্তি ইনসিয়ার বা হাত কা খেল।দাত কেলিয়ে দুকান ধরতে যাবো,উনি বাধা দিয়ে বললেন,

-তোর চটজলদি ডাক্তার হওয়া প্রয়োজন সিয়া।

-ক্ কেনো?

-তোর কারনে যে লোকগুলো শাস্তি পায় তাদের হসপিটাল বিলটা দেওয়া থেকে বাচতাম আরকি।

বিস্ময় নিয়ে বললাম,

-মানে?

-মানে এই যে আলিফটা যদি কাল অজ্ঞান হয়ে যেতো?ডক্টর তো আমারই দেখানো লাগতো তাইনা?আবার সেদিন তোর হাতে আমার নামটা দেখেও যারা যারা হেসেছিলো,ওদের সবাইকে বিরিয়ানি ট্রিট দিয়েছিলাম।বেচারারা যে ঝাল খেতে পারে না কে জানতো।কয়েকটা হসপিটালাইজড্ ছিলো দু দিন।

আমি তব্দা মেরে দাড়িয়ে রইলাম।একে আসলেই সাইকো বলা যায়।সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন উনি।শুদ্ধ হাতদুটো তার কলারে দিয়ে বললেন,

-ওসব ছাড়!এদিকে ফোকাস কর।

আমি তখনও তার দিকে তাকিয়ে।ওসব ছাড়?ছাড়ার মতো কিছু?এতোটা পাগলামি?এসব তো অন্যায়!

-এই টাই বাধা দেখে হেসেছিলি না?আজ থেকে এর দায়িত্ব তোর।

আবারো তার স্বাভাবিক কথা।নিস্পলক দৃষ্টি বিনিময় হলো কিছুটা সময়।মানুষটা ঠিক সেভাবেই বিহেভ করছে যেমনটা সবাই চায়।সবাই?আমি চাইনা?আমি চাইনা উনি কাছে আসুক আমার?ভালোবাসুক তার শ্যামাপাখিকে?শুদ্ধ দুহাতে বুকের বা পাশটা চেপে ধরে বললেন,

-ওভাবে দেখিস না বউ!লাগে!

চোখ সরিয়ে টাই বাধতে মনোযোগ দিলাম।জানি না এর এই অতিরিক্ত ভালোমানুষির ভবিষ্যৎ কি!!!

——————-?

জ্ঞানটা ফিরতেই চোখ খুলতে না পেরে আগে চারপাশটা অনুভব করতে লাগলো আয়ান।ও চেয়ারে বসা।মুখ বাদে হাত,পা,চোখ,সবই বাধা।কিন্তু ও এভাবে কেনো?কোথায়?কিভাবে এলো?আস্তে আস্তে মনে করার চেষ্টা করলো সবটা।মুনিয়ার কাছ থেকে ফেরার সময় গাড়িতে উঠতেই কেউ ব্যাকসিট থেকে মুখ চেপে ধরে ওর।গায়ের জোর খাটিয়েছিলো যতোটা সম্ভব।কিন্তু পেরে ওঠেনি।পিছনে কে ছিলো সেটা অবদি দেখে উঠতে পারেনি আয়ান।ক্রমশ শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে ওর।তারপর আর কিছু মনে নেই।এরপর নিজেকে ওভাবে আবিস্কার করলো ও।তারমানে কেউ ওকে ইচ্ছা করে ধরে নিয়ে এসেছে ওকে।কিন্তু কে?ওর চেচিয়ে উঠলো,

-শুদ্ধ!!!

-আরে আরে রিল্যাক্স মিস্টার চৌধুরী!রিল্যাক্স!

আয়ান গলার আওয়াজটা বোঝার চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো না।তবে এটা বুঝেছে মানুষটা কন্ঠস্বর লুকাতে মুখ বেধে কথা বলছে।চেচিয়েই বললো,

-কে তুই?আমাকে এভাবে ধরে এনেছিস কেনো?

-একটারও উত্তর দেবোনা মিস্টার চৌধুরী।জ্ঞানটা ফিরেছে যেহেতু,একটা কাজ করে দিন আপনি আমার।

-তুই শুদ্ধ!আমি জানি।

-আরেহ্ ইয়ার!কি দুনিয়া।যে লোকটা আপনাকে বেস্টফ্রেন্ড ভাবে,আপনি তাকেই নিজের কিডন্যাপার ভাবছেন?যেখানে নিজেই কিনা তাকে পেছন থেকে আঘাত করার কথা ভেবেছিলেন।ফিলস্ সো স্যাড ফর মিস্টার শুদ্ধ!

আয়ান দাতে দাত চেপে বললো,

-তুই কে সেইটা বল!কি চাস কি তুই?

-আপাতত কি চাই‌ সেটা শুনুন।আপনার মা এরমধ্যে বারোবার কল করেছিলো।তাকে একটু কাইন্ডলি বলুন আপনি অফিসিয়াল কাজে বাইরে আছেন।ব্যস্ত থাকবেন।একটু যেনো কম ফোন করে আপনাকে।আর হ্যাঁ,কবে ফিরতে পারবেন তার কোনো হদিশ নেই।তাই যেনো চিন্তা না করে।বুঝেছেন মিস্টার চৌধুরী?

-আমি জানি।তুই শুদ্ধই!সামনে আসছিস না কেনো?

আয়ানের চোখের বাধনটা একটানে খুলে দিলো লোকটা।সারা শরীর ঢাকা তার।চেহারায় মাস্ক।আয়ান আপাদমস্তক দেখে বুঝলো এ শুদ্ধ নয়।তবে এই অবয়বটাও ওর চেনা।লোকটা আমারো ওর চোখ বেধে দিলো।আয়ান বললো,

-কে তুই?

-আগেই বলেছি বলবো না।যাই হোক,আপনি কি কথা বলবেন?

আয়ান মাথা দুলালো।লোকটা বললো,

-ওহ্!ইউ হ্যাভ আ রিমাইন্ডার।আপনার মতো চৌধুরী হাউজে আপনার মা,আর হসপিটালের দুশো ছয় নম্বর কেবিনে থাকা আপনার বোন মুনিয়া দুজনেই আমার কাস্টাডিতেই বলা চলে।সো বি কেয়ারফুল হোয়েন ইউ টক উইথ ইউর মম!

আয়ান দমে গেলো।মুনিয়ার খবর কেউ জানে না।এমনকি একবাসাতে থেকে,এতো সাহায্য নিয়েও অশোককেও জানায় নি ও।তবে এ কে?তিনদিন হলো মুনিয়ার ভালো রেসপন্সে ডাক্তার সবে ওর থাইরয়েড অপারেশনের জন্য সাহস পাচ্ছে।হয়তো তারপর মুনিয়া কথা বলতে পারবে।শুদ্ধের ফাইলের কপি‌ জোগার করতে ওর একদিনও সময় লাগতো না।মুনিয়ার কেসে যে হ্যান্ডেল করেছিলো,একই অফিসারকে দিয়ে শুদ্ধকে ভয় দেখিয়েছিলো‌ও।তারই গায়ে হাত তুলেছিলো শুদ্ধ।দুটো ফাইলই ওই একজন দিতে পারতো।কিন্তু এবারতো সবটা ওর হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।শুদ্ধ নয়।তবে কে এই লোক?

চলবে…

মিথিলা মাশরেকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here