তোর নামের রোদ্দুর, পর্বঃ২৮

0
1983

#তোর_নামের_রোদ্দুর
পর্বঃ২৮

লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা

ঘুম ভাঙতেই চোখ মেলে শুদ্ধের হাসিমুখটাকে আশা করেছিলাম।কিন্তু না।প্রতিদিনের মতো সে আমার পাশে মাথায় হাত গুজে শুয়ে নেই।নাইবা মুচকি হেসে কপালের বেবি হেয়ার সরিয়ে দিয়ে চুমো এটে দিয়েছেন উনি আজ।ব্যালকনিতে তাকিয়ে দেখলাম ওখানে দাড়িয়ে ট্রাউজারের পকেটে দুহাত গুজে আকাশ দেখছেন শুদ্ধ।ভোরের ঝকঝকে আলোতে গায়ের ছোটহাতা সাদা গেন্জিটা,ফর্সা হাত,কালো চুল পিছন থেকে দেখাটাই একদফা মুগ্ধতা এনে দিলো মন প্রান জুরে।তবুও ছোট একটা শ্বাস বেরিয়ে এলো।দিনটা কি প্রতিদিনের মতো হবে?

উঠে গিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলাম তাকে।পিঠে মাথা ঠেকিয়ে বললাম,

-গুড মর্নিং।

উনি পকেট থেকে দুহাত বের করে আমার হাতের উপর রেখে বললেন,

-মর্নিং।

আরেকটু জরিয়ে ধরে ঘুম জরানো কন্ঠে বললাম,

-আপনার গায়ের এই ঘ্রানটা খুব অদ্ভুত।কেমন কেমন যেনো নেশালো।

…..

-ইউ নো হোয়াট?আই ফিল আপনার পারফিউমটা ছুড়ে এই ব্যালকনি দিয়েই ফেলে দিলে শান্তি লাগতো আমার।কে জানে রাস্তাঘাটে কতোজনের নাকে যায় এই ঘ্রান।

…..

-কফি খাবেন?

উনি সামনে এনে ধরলেন আমাকে।অবাক হয়ে বললেন,

-তুই এখনও এভাবে স্বাভাবিক কিভাবে সিয়া?

-অস্বাভাবিক হওয়ার কি হলো?

-কাল রাতে….

ওনাকে ছেড়ে রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাড়ালাম।দু সেকেন্ড দুরে তাকিয়ে আবারো তার দিক ফিরে বললাম,

-একটা রাত আপনার আমার সম্পর্ককে অস্বাভাবিক করে দেবে?

-কিন্তু কাল রাতটা তো অন্যরকম হতে পারতো।আমি….

জরিয়ে ধরলাম তাকে আবারো।বললাম,

-আপনি কাছাকাছি থাকলে আমার তো সবটাই অন্যরকম।আমি তো চাই সবটাই শুধু আপনিময় হোক।আর হচ্ছেও তো তাই।আপনি এখন আমার কাছে।আমার পাশে।এটাই অনেক।

-জানতে চাইবি না কাল কেনো….

-প্লিজ শুদ্ধ!যে শব্দটা আপনি আমার জন্য ব্যবহার করতে পারেন না সেটা আমার কাছ থেকে কেনো আশা করছেন?এই কেনো কথাটা নাই বা থাকলো আমাদের মাঝে।

-তোকে তোর প্রাপ্য….

-আপনি আমার জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি শুদ্ধ।

উনি নিজেকে ছাড়িয়ে নিলেন।অন্যদিক চোখ ঘুরিয়ে একটু চুপ থেকে বললেন,

-কোনটা বেশি পাপ সিয়া?সত্যিটা লুকানো নাকি মিথ্যা বলা?

হঠাৎ তার এমন প্রশ্নে ভেতরটা ভারী হয়ে আসলো।তবুও নিজেকে শক্ত রেখে আবারো তাকে জরিয়ে ধরেই বললাম,

-সত্যিটা লুকাতেই মানুষ মিথ্যে বলে শুদ্ধ।যদি কোনো সত্যি ধ্বংসের কারন হয়,তবে সেটা লুকানোই উচিত।আর যদি কোনো মিথ্যে কারো বিশ্বাসকে,কারো আবেগকে নিয়ে খেলার মতো হয়,তবে তা মহাপাপ।তারচেয়ে বড় পাপ হয়তো হয় না।

শুদ্ধ এবার শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।কিছুক্ষন ওভাবে থেকেই
বললাম,

-অফিস যাবেন না?

-না।

-আমি কলেজ যাবো কিভাবে?

-আজ তুইও কলেজ যাবি না।

মাথা তুলে একনজর তার দিকে তাকালাম।চোখ বন্ধ করে জরিয়ে রয়েছেন আমাকে।ভোরের রোদ খানিকটা মুখে পরেছে তার।একটু হেসে আবারো মুখ গুজলাম তার বুকে।আর যাই হোক,এ মানুষটাকে কেনো বলা সাজে না আমার।না এখন কলেজ যাওয়ার কারন জানতে,না কাল রাতে একটা ফোন কলে তার আচরনের পরিবর্তনের কারন জানতে।

.
গত রাতে কল আসার পর শুদ্ধ কিছুটা বিরক্তি নিয়েই রিসিভ করেন ওটা।একটু দুরে দাড়িয়ে বললেন,

-হ্যাঁ বলো।

ওপাশের কথায় ধীরে ধীরে চেহারা বদলে যেতে লাগলো তার।দাতে দাত চেপে শেষে ডু ইট বলে ফোনটা ছুড়ে মারলেন উনি।পাশের সেন্টার টেবিলে লাথি মেরে দুহাতে মাথার চুল উল্টে ধরে সোফায় বসে পরলেন।চুপচাপ সেন্টার টেবিলে থাকা গোলাপগুলোকে মেঝেতে পরে থাকতে দেখলাম কিছুক্ষন।উঠে গিয়ে শুদ্ধর কাধে হাত রাখতেই উনি চমকে উঠে উপরে তাকালেন।কোমড় জরিয়ে ধরে দিশেহারার মতো করে বললেন,

-বিশ্বাস কর সিয়া,আমার কোনো দোষ নেই।তোর শুদ্ধকে প্লিজ ভুল বুঝিস না তুই।দুরে ঠেলে দিস না।প্লিজ ছেড়ে যাস না আমাকে।সহ্য করতে পারবো না।মরে যাবো আমি।মরেই যাবো!

-এমন কেনো করছেন আপনি?আমি আছি তো!এই দেখুন,আপনার সিয়া আপনার কাছেই আছে।

-আমারো তোকে হারাতে পারবো না সিয়া।কোনো কিছুর বিনিময়েই না।

-আর আমি হারাবোও না।সবকিছুর বিনিময়েও আপনাকে ছাড়া থাকা অসম্ভব আমার।

উনি আরো জাপটে ধরলেন আমাকে।তাকে এনে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।বুকের উপর মাথা রেখে বললাম,

-কেনো এভাবে বলছেন আপনি শুদ্ধ?আমি কখনও আপনাকে ছেড়ে যাবো না।আপনি চলে যেতে বললেও যাবো না।ঠিক ততক্ষন আপনার কাছে থাকবো যতক্ষন অবদি মৃত্….

শুদ্ধ তার বুক থেকে সরিয়ে ছিটকে বিছানায় ফেলে দিলেন আমাকে।মুখ চেপে ধরলেন আমার।রক্তবর্ন চোখে তাকিয়ে চেচিয়ে বললেন,

-চুপ!একদম চুপ!মরার কথা আরেকবার বললে তোকে মেরে নিজেও মরে যাবো বলে রাখলাম সিয়া।তোর জন্যই তো আমি বেচে আছি।বিশ্বাস কর,তুই ছাড়া এই শুদ্ধ আজ কোথায় থাকতো কেউ জানতো না।

শেষের কথাগুলো অসহায়ের মতো করে বললেন উনি।ওনার হাত সরিয়ে শান্তভাবে বললাম,

-আজ এসব না বললেই নয়?

শুদ্ধ স্থিরভাবে সোজা হয়ে শুয়ে পরলেন।চোখ বন্ধ করে বললেন,

-তোকে অনেক কথা বলার আছে সিয়া।

আবারো তাকে জরিয়ে ধরে বললাম,

-থাক বলতে হবে না।

-সিয়া!

-হ্যাঁ।আমি ব্যাখা চাইনা আপনার।শুধু ভালোবাসবেন।তাতেই হবে।

-তোর জানতে ইচ্ছে করে না আমার গত তিনবছর এমন বিহেভিয়ারের কারন?

-আমি তো তিনবছর আপনার জীবনে ছিলাম না শুদ্ধ।আমি তো এখনকার শুদ্ধকে চিনি।যে পাগলের মতো ভালোবাসে আমাকে।তিনবছর যারা আপনার সাথে ছিলো,তারাও এখন এই আপনাকে নিয়ে খুশি।তারা যখন আপনার অতীতকে জানতে চায় না,আমি কেনো?

-হ্যাঁ।এই পরিবর্তনের কারন তুই।তবুও,তোর মনে হয় না অতীতের সেই কালো ছায়া আমাদের বর্তমানকে বিষিয়ে দিতে পারে?

-না।পারবে না।আপনি আছেন তো।আপনার ভালোবাসা আছে তো।আমার জীবন এখন শুধুই এই সুবাসে ছেয়ে থাকবে।অতীতের কোনো কালো ছায়ায় নয়।আপনি তা আসতেই দেবেন না।আমি জানি।

দুহাতে জরিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন শুদ্ধ আমাকে।কপালে ঠোট ছুইয়ে বললেন,

-হ্যাঁ।কোনো অতীতকে আমি আমাদের মাঝে আসতে দেবো না সিয়া।আসতে দেবো না।

.
-তোকে আম্মু ডাকছে।

শুদ্ধকে ছেড়ে দাড়ালাম।এভাবে জরিয়ে আছি যে ডাকটা কানেই আসে নি আমার।উনি একটু হেসে বললেন,

-আম্মু রুমে আসে নি।

-অব্ তো কি?ডাকছে।যাই।

চলে আসছিলাম।উনি পেছন থেকে হাত টেনে কাছে নিলেন আমাকে।চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে বললেন,

-ডাকে নি।এমনি বলছি।এখনই ডাকবেও না।লাফিয়ে চলে যাওয়ার সময় ভাববি না একটু?ছাড়া পেলেই হয়েছে।

ঠোট টিপে হাসলাম।উনি ভ্রুকুচকে বললেন,

-ওভাবে হাসছিস কেনো?

-কারন আমার বরমশাই বড্ড চালাক।খালি আমাকে বোকা বানানোর ধান্দা খোজে।তবুও লাভ হলো না।এবার সত্যিই আম্মু ডেকেছে।

-হুহ!একদমই না।

-ইনসু!

আম্মুর গলার আওয়াজে শুদ্ধ চমকে উঠলেন।হাত আলগা পেতেই সরে দাড়িয়ে জোরে হেসে দিলাম আমি।উনি আবারো একটানে কাছে টেনে নিয়ে চুল কানে গুজে দিয়ে বললেন,

-হাসার সময় এদের সামনে আসার লজিকটা বুঝি না।শ্যামাপাখির এই চুলগুলো বড্ড অবাধ্য।পাগল করে দেয়।

এক চিলতে হাসি ফুটলো ঠোটে।মাথা নিচু করে বললাম,

-বেধে নিচ্ছি।

-বেধে দিচ্ছি।

বিস্ময় নিয়ে তাকালাম তার দিকে।আমি হতভম্ভ হয়ে দাড়ানো অবস্থাতেই উনি এগিয়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি আনলেন।টেনে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজেই বেধে দিলেন চুলগুলো।আড়চোখে তাকেই দেখছিলাম।কাজ শেষে উনি বললেন,

-চল হয়ে গেছে।এবার যা।

ধ্যান ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলাম।মাঝেমাঝে লোকটা বড্ড অদ্ভুত,বড্ড অচেনা।

—————-?

দুটো দিন কেটে গেছে।না শুদ্ধ নিজে অফিসে গিয়েছেন,না আমি কলেজে।লান্চ শেষে রুমে এসে দেখি শুদ্ধ ল্যাপটপে ডুবে আছেন।কেমন যেনো দম বন্ধ লাগছে বাসায়।সবে শুদ্ধকে বলতে যাবো চলুন বাইরে যাই ঘুরে আসি,আমার ফোন বেজে উঠলো।শুদ্ধর কাছেই থাকায় উনি হাতে নিয়ে নাম্বারটা দেখে আমাকে দিলেন।এ দু দিনে তার এই জিনিসটা চোখে পরেছে আমার।এই ফোন বাজলেই উনি কিছুটা হলেও আতকে ওঠেন।কল রিসিভ করলাম,

-কিরে?খোজ খবর নেওয়াটাও কি এখন বন্ধ করে দিবি নাকি?

-না মানে তমু,আসলে হয়েছে কি…

-কি হয়েছে?নাম্বারটা পাল্টেছিস,বাকিরা হোয়াটস্ অ্যাপে খুজে পাচ্ছে না তোকে।ভাগ্যিস শুদ্ধ ভাইয়া আমাকে জানিয়েছিলেন।

আকাশ থেকে পরলাম।নাম্বার পাল্টানো?আমি কখন নাম্বার পাল্টালাম?আর শুদ্ধ আমার নাম্বার তমশাকে কখন জানালেন?কিভাবে জানালেন?বাকি সবার নাম্বার সেইভ নেই আমার কাছে।কিন্তু ওদের তো দিয়েছিলাম নাম্বার।তাহলে ঘটনাটা কি ঘটলো?আড়চোখে দেখলাম শুদ্ধ আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন।

-আচ্ছা তমু,তুই এক কাজ কর,দু দিনের নোটসগুলোর ছবি পাঠিয়ে দে আমাকে।আর যেদিন কলেজ যাই,জানাবো তোকে।

-কিন্তু….

ফোনটা কেটে দিলাম।কেনো যেনো মনে হচ্ছে শুদ্ধই আমাকে না জানিয়ে সিম পাল্টে দিয়েছেন আমার ফোনের।সবার নাম্বারও সেইভ করে দিয়েছেন ঠিকমতো।আব্বু,যীনাত আপু,মৌনতা কল করেছিলো।কই কিছু বললো না তো ওরা।কেনো?শুদ্ধ মানা করেছেন?কিন্তু কেনো?হঠাৎ সিম বদলানোরই বা কি দরকার পরলো তার?

-ইনসু!

আম্মু ডেকেছে।বেরিয়ে আসবো শুদ্ধ বলে উঠলেন,

-কি বললো তমশা?

-ও্ ওই কলেজ যাইনি তো,পড়া কতোদুর হয়েছে এইসব টুকিটাকি জানাচ্ছিলো।

-ও।

দরজার কাছে আসতেই আবারো তার ডাক।

-সিয়া!

-কিছু বলবেন?

-আমি যা করি সেটা সবার ভালোর জন্য করি।এটুকো বিশ্বাস আছে তো তোর আমার উপর?

-নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি আপনাকে।

-আমার না বলা কথাগুলোকে নিয়ে ভুল বুঝবি না তো কোনোদিন?

-বলা কথাগুলো নিয়ে আজীবন পার করে দিতে পারবো শুদ্ধ।সেগুলোই আমার জীবনের বেচে থাকার অবলম্বন।

এটুকো বলেই বেরিয়ে আসলাম।তার এসব প্রশ্নে ভয় করে আমার।মনে হয় এই বুঝি কোনো উত্তাল ঢেউয়ে বালির বাধের মতো সবটা ভেঙে গুড়িয়ে যাবে।নিচে এসে দেখলাম ড্রয়িংরুমের সোফায় মাহির বাবা বসে।সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলাম।আম্মু বললো উনি নাকি মাহিকে নিয়ে যেতে এসেছেন,ওর বাসায় যাওয়া নাকি আর্জেন্ট।মনটা খারাপ হয়ে গেলো আরো।হুট করে এভাবে চলে যাবে মেয়েটা?ওখানে আশেপাশে মাহিকে না দেখে উঠে ওর রুমে চলে আসলাম।দুহাতে হাটু জরিয়ে বেডে বসে রয়েছে ও।পাশেই লাগেজ গোছানো ওর।এগিয়ে গিয়ে কাধে হাত রাখতেই ও আমাকে জরিয়ে ধরে হুহু করে কেদে দিলো।ব্যস্ত হয়ে পাশে বসে ওকে জরিয়ে ধরে বললাম,

-কি হয়েছে মাহি?এভাবে কাদছো কেনো?কি হয়েছে তোমার?কেই কিছু বলেছে?কাদছো কেনো তুমি?

-ইনসিয়া ভাবি….

-হ্যাঁ বলো?কি হয়েছে?

-আব্বু…আব্বু আমাকে….

-হ্যাঁ?মামা তোমাকে কি?

ও আরো জোরে কাদতে লাগলো।আমি চোখ মুছে দিয়ে বললাম শান্ত হতে।বেশ অনেকটা সময় পর একটু থামলো ও।

-কি হয়েছে মাহি?

মাহি ফুপাতে ফুপাতে বললো,

-আব্বু আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে ইনসিয়া ভাবি।

-কিহ্?

-হ্যাঁ ইনসিয়া ভাবি।

-কিন্তু তোমার বয়স কম মাহি।আর পড়াশোনাও তো শেষ করো নি।

-ফুপির কাছে আব্বুকে বলতে শুনলাম ছেলের জব ভালো।আমাকে পড়াশোনাও করাবে।আপাতত এনগেইজড্ করিয়ে রাখবে,হয়তো কয়েকবছর পর বিয়ে।

-ও।তাহলে তো ভালোই।কাদছো কেনো তুমি তবে?দেখেছো ছেলেটাকে?পছন্দ হয়নি তোমার?

-না দেখিনি।দেখতেও চাই না।ভাবি,এ বিয়ে আমি করতে পারবো না।

-কিন্তু কেনো?সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।

-ভাবি,অন্য কাউকে পছন্দ করতে শুরু করেছি আমি।

-কি?

-হ্যাঁ ভাবি।সেদিন শুদ্ধ ভাইয়ার ফ্রেন্ড এসেছিলো না?আয়ান চৌধুরী।তাকে দেখার পর থেকে অন্য কোনো কিছুতে মন লাগাতে পারছি না আমি।তারপর আর একটাবারও দেখি নি তাকে,তবুও মন থেকে সরাতে পারছি না।তোমার বৌভাত,শুদ্ধ ভাইয়ার রিইউনিয়ন সবখানে এই চোরা চোখ তাকে খুজেছে।লাভ অর এট্রাক্টশন প্রশ্নে নিজেকে পাগল করে রেখেছি এতোগুলো দিন।উত্তরে শুধু এটুকোই পেয়েছি তাকে দেখতে পেলেই শান্তি লাগবে।তার আগে নয়।আমি কি করবো ইনসিয়া ভাবি?

তব্দা মেরে বসে রইলাম।কি বলছে টা কি মেয়েটা?পাগল হয়ে গেছে নাকি?কিসব বলছে এগুলো?আয়ান ভাইয়া?ওনাকে মাত্র একবার দেখেছে ও।আমার ব্যক্তিগত মতবাদে ভালোবাসা বুঝতে চাওয়ার বয়সটাও হয়নি আমার,ওর দুজনেরই।কিন্তু যেখানে আমিই শুদ্ধর মাঝে আটকে গেছি ওকেই বা কি বলবো?তবুও গুরুজন হিসেবে উপদেশবানী তো দিতেই হবে।বুঝানোর চেষ্টা করতেই হবে।মোহে পরেছে ও।

-দ্ দেখো মাহি।তুমি ভুল ভাবছো।এসব কোনো ভালোবাসা নয়।ভালোলাগা।

-তাহলে ওনাকে দেখার জন্য এতোটা ব্যস্ত কেনো আমি?

-একদিন দেখেছো,ভালো লেগেছে,তাই আবার…

-অন্য কাউকে মানতে কেনো পারছি না?

-একই কারনে মাহি।জাস্ট ভালোলাগা।

-কেনো?ভালোবাসা নয় কেনো?

-মাহি তোমার বয়স…

-বয়স?তাহলে তোমার বয়স ইনসিয়া ভাবি?শুদ্ধ ভাইয়ার প্রতি তোমার অনুভুতি?

আটকে গেলাম।এই মেয়েটাকে কি করে বুঝাই?কি বলে বুঝাই?ও তো সত্যিই পাগলামি করছে।

-দেখো মাহি,শুদ্ধর বিষয়টা আলাদা।আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।আর তোমার শুদ্ধ ভাইয়া অনেক আগে থেকেই….

-হ্যাঁ।শুদ্ধ ভাইয়া!ভাবি,তুমি শুদ্ধ ভাইয়াকে বলো না।তার সাথে যেনো কথা বলে।আব্বু কোনোমতেই ওনাকে রিজেক্ট করবে না আমি জানি।তুমি শুধু…

-মাহি!পাগল হয়ে গেছো তুমি?

-জানি না।আ্ আমি কিছু জানি না।আমি অন্য কাউকে বিয়ে করবো না।দ্যাটস্ ইট।পারবো না আমি।মরে যাবো।

-কি বলছো টা কি এসব তুমি মাহি?

মাহি সোজা হয়ে উঠে দাড়ালো।লাগেজের হাতল ধরে চোখ মুছে কড়া গলায় বললো,

-ঠিকই বলছি।আজ অবদি যা চেয়েছি আব্বু সব দিয়েছে।আমার জীবনের এতোবড় সিদ্ধান্ত একা নিতে পারেন না উনি।তোমার মতো নই আমি যে বাবা যার সাথে খুশি তার সাথেই বলবে বিয়ে করে নিতে আর মুখ বুজে সবটা মেনে নেবো।এই বিয়েটা করবো না আমি।আয়ানকে পাই বা না পাই সেটা পরের কথা।

দুম করে দরজা লাগিয়ে লাগেজ নিয়েই ও চলে গেলো।কিছুক্ষন দম মেরে বসে থেকে পিছন পিছন দৌড়ে আসলাম।নিচে এসে দেখি সবাই ওখানেই।মামা জানালেন দুদিন পর মাহির এনগেইজমেন্ট করাবেন।ভয় শুরু হলো আমার।কিন্তু মাহিকে চুপচাপই দেখলাম।স্বাভাবিকভাবে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মামার সাথে বেরিয়ে গেলো ও।এবার কি?কি করবো আমি?এই মেয়েটাই বা কি করতে চলেছে?শুদ্ধকে বলবো?উনি কিভাবে রিয়্যাক্ট করবেন?

নানা চিন্তায় রাত পার করেছি।একদিকে শুদ্ধর কিছু হয়েছে টের পাচ্ছি,অন্যদিকে মাহির পাগলামো।কোনদিকে যাবো?কি করবো?শুদ্ধকে বললে উনি মাহির দিক ভাববেন নাকি মামার সিদ্ধান্ত?মাহিরই বা কোন দিক,মাত্র একদিনের দেখায় কোনো ভালোবাসা হয়?কিভাবে সম্ভব?মেয়েটাও এমন করছে যেনো কেউ এসে ব্রেইনওয়াশ করে দিয়ে গেছে ওর।

-এতো কি ভাবছিস?

শুদ্ধর দিকে তাকালাম।মনোযোগ দিয়ে কিছু কাগজপত্র দেখছেন।নিজে বানিয়ে আনা কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বললাম,

-কিছু না।আসলে কলেজ যাই না তো,তাই কিছুটা একঘেয়েমি লাগছে।

উনি চোখ তুলে তাকালেন আমার দিকে।মগটা হাতে নিয়ে আবারো টেবিলে রেখে দিলেন।উঠে দাড়িয়ে কিছু একটা ভেবে আমার একগালে হাত রেখে বললেন,

-চল রেডি হ!

চোখ চকচক করে উঠলো আমার।বাইরে গেলে হয়তো মাহির ব্যাপারটা গুছিয়ে বলার সাহস হবে আমার।উনি হাসিমুখে কাবার্ড থেকে একটা কফি রঙের শার্ট বের করে আমার জন্য প্রায় কাছাকাছি রঙের একটা জামা বের করে দিলেন।চেন্জ করে বেরিয়ে দেখি শার্টের হাতা গুটাচ্ছেন উনি।আয়নায় গিয়ে চুল ঠিক করছিলাম।শুদ্ধর ফোন বাজলে উনি তা রিসিভ করে বারান্দায় চলে গেলেন কথা বলতে।কথা শেষেই ছুটে এসে উচ্ছ্বাসের সাথে বললেন,

-সব ঠিক হয়ে যাবে সিয়া।আমি ফিরে এসে সবটা বলবো তোকে।আসছি!

উনি বেরিয়ে গেলেন।দু ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পরলো।আমাকে রেখে চলে গেলেন এই অভিমানে নয়।সে রাতের পর আজই তার চেহারায় ওটুকো খুশির ঝিলিক দেখেছি তাই।সবে পরা কানের দুলটা খুলতে যাচ্ছিলাম।ড্রেসিং টেবিলে সামনেই রাখা ফোনে ম্যাসেজ আসলো ঠিক তখনই।তমশার কোনো আর্জেন্ট ম্যাসেজ কি না চেক করতে ওপেন করলাম ম্যাসেজটা।আননোন নাম্বার।তাতে লেখা,

“ইনসিয়া,তোমার ভালো চাই।শুদ্ধর কিছু জরুরি বিষয় জানো না তুমি।তবে এটা নিশ্চয়ই জানো আর পাঁচটা স্বাভাবিক স্বামীদের মতো নয় ও।ওকে জানা দরকার তোমার।সেগুলোর কারন জানা দরকার তোমার।এতেই সবার মঙ্গল।নইলে বিপদটাও সবার।যদি চাও সবটা ঠিক হয়ে যাক,আশা করবো নিচের ঠিকানাটায় চলে আসবে।আবারো বলছি,কথাগুলো না জানলে তোমারই ক্ষতি হবে।বিশ্বাসঘাতকতার মতো মৃত্যুযন্ত্রনা কুড়ে কুড়ে খাবে তোমাকে।সবটা জানতে চাইলে,চলে এসো।অপেক্ষায় থাকবো।

-তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী”

ম্যাসেজের আগামাথা বুঝি নি।কিন্তু এটা বুঝেছি এই লোক চেনে আমাদের।সবটা জানেন।কে?আমাকে কি জানাতে চায় সে?হ্যাঁ।হয়তো আছে কিছু আমার অগোচরে।কিন্তু শুদ্ধ তো বললেন ফিরে এসে সবটা জানাবেন।তবে তার কাছে কেনো জানতে যাবো আমি?যাবো না।কিন্তু সত্যিই কি শুদ্ধ আজ সবটা বলবেন আমাকে?সত্যিটা বলবেন?বলবেন তো?

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here