স্বপ্নচারিণী,পর্ব_২৭ (শেষ পর্ব)

0
4187

স্বপ্নচারিণী,পর্ব_২৭ (শেষ পর্ব)
সামান্তা সিমি

বাবা-মা’য়ের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে যূথী।চোখের কোনে নোনা জল।জন্মদাত্রী মা’য়ের চেহারা শত চেষ্টা করেও মনে করতে পারছে না।কিন্তু যে মা তাঁকে লালন-পালন করে অসীম ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছে সেই মা’য়ের হাসিমাখা মুখটা চোখে ভাসছে।কি মিষ্টি ছিল সেই মুখ!

চোখের জল মুছে পেছনে ফিরতেই যূথীর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে নিশান দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে লোকটাকে দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে।গায়ে কালো রঙের শার্ট,পরনে জিন্স।চোখে সানগ্লাস। কালো রঙটা যেন গায়ে ফুটে রয়েছে।এই লোকটি তাঁর বর ভাবতেই মনে একধরনের মাতাল হাওয়া বয়ে যায়।
এই মুহূর্তে যূথীর মা’য়ের বলা কিছু কথা মনে পড়ছে।তাঁর মা’য়ের খুব ইচ্ছে ছিল ভালো একটা ছেলের সাথে তাঁর বিয়ে দেওয়া।দিনরাত আল্লাহর কাছে এটাই দোয়া করত।কিন্তু আল্লাহ তো তাঁর মায়ের সেই আশাটাও পূরণ করে দিয়েছে।মা কি দূরে থেকেও এই খবরটা জানতে পেরেছে?
আজ সকালে হঠাৎ করেই নিশান রেডি হতে বলেছিল।কোথায় নাকি নিয়ে যাবে।যূথী অনেকবার জানার প্রয়াস করেছিল।কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।

গ্রামের রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঢুকতেই যূথী প্রায় কেঁদেই ফেলেছিল।তাহলে এটাই ছিল নিশানের প্ল্যান।আজ কতগুলো মাস পর সে নিজ গ্রামে পা রেখেছে।কৃতজ্ঞতা ভরা চোখে যূথী কিছুক্ষণ নিশানের দিকে তাকিয়ে ছিল।তার বদলে নিশান সুমিষ্ট একটি হাসি উপহার দিয়েছে।

যূথী কাছে আসতেই ফোন থেকে চোখ তুলে নিশান বলল,

“—উঠো গাড়িতে।”

“—এখন কোথায় যাব আমরা?

“—ঢাকা ব্যাক করব।”

যূথী অনুনয়ের ভঙ্গিতে বলল,
“—না না।প্লিজ আরো কয়েক ঘন্টা থাকি।কত্তদিন পর গ্রামে এসেছি বুঝতে পারছেন?আমি কিছুক্ষণ রাস্তায় রাস্তায় হাঁটব তারপর চেনা জানা সবার সাথে দেখা করব।”

“—হোয়্যাট!এই কড়া রোদের মধ্যে তুমি রাস্তায় হেঁটে বেড়াবে! নেভার।এক্ষুনি গাড়িতে উঠো।”

“—এমন করছেন কেনো আপনি?আপনাকে তো আর হাঁটতে বলিনি।আপনি থাকুন এখানে।আমি একাই যাব।”

“—যূথী মার কিন্তু একটাও মাটিতে পরবে না।জলদি উঠো।”

মুখ ভেঙচালো যূথী।শখ কত।তাঁকে নাকি মারবে।এতই সোজা!
“—আমি যাচ্ছি। কিছুক্ষণ ঘুরে-ফিরে আবার চলে আসব।”

নিশান চোখ লাল করে তাকাল।কিন্তু যূথী তা পাত্তা না দিয়ে অলরেডি হাঁটা শুরু করে দিয়েছে।অগত্যা নিশানও যূথীর সাথে গেল।বউকে সে একা কিছুতেই ছাড়বে না।

বুকভরে জোরে শ্বাস নিল যূথী।মাটির গন্ধ নাকে লাগছে।এ যেন এক অন্যরকম সুখ।
যূথীদের বাড়ির সামনে এসেই সে থমকে দাঁড়িয়ে গেল।চোখের সামনে ভেসে উঠছে হাজারো স্মৃতি।
ভাঙাচোরা বাড়িটার চেহারা এখন আরো দুর্দশাগ্রস্ত।এ জায়গাটার সাথে তাঁর জন্মের সম্পর্ক,নাড়ীর সম্পর্ক।
যূথীর চোখে পানি লক্ষ্য করে নিশান তীব্র গলায় বলল,

“—এরজন্য এসেছো এখানে?দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদার জন্য এসেছো?”

“—কি করব! পুরনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ছে।”

“—যে জিনিস তোমার চোখের জল ঝরায় তা আমি তোমায় মনে করতে দিব না।”

যূথী কিছু বলল না।শুধু কৌতূহল পূর্ণ চোখে তাকিয়ে রইল।এই অদ্ভুত লোকের যত আশ্চর্যজনক কথাবার্তা।



ঢাকা ফিরতে ফিরতে ওঁদের সন্ধ্যা হয়ে গেল।যূথী কিছুটা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।সে কতবার করে বলেছিল গ্রামের পরিচিত মানুষ গুলোর সাথে দেখা করে আসবে।নিশান রাজি হয়নি।এমনকি লতিফা চাচীর বাড়িও যেতে দেয় নি।নিজের খালামণির সাথে তো অন্তত দেখা করা উচিত ছিল।যূথী কিছু বলতে যেতেই বিরাট এক ধমক দিয়ে দিল।এরপর থেকেই সে মুখ কালো করে রেখেছে।

যূথী বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখে ড্রয়িংরুমে একজন মহিলা বসে আছে।পাশেই নীলুফা চৌধুরী। যূথী কখনো এই মহিলাটাকে এ বাড়িতে দেখেনি।
সে মেইন ডোরের সামনে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।মহিলাটার সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না।চেহারায় কেমন কঠোর কঠোর ভাব।মা’য়ের বয়সী মহিলাদের চেহারা এমন হলে একটুও মানায় না।তাঁদের মুখ হবে অসম্ভব কোমলতায় ভরা যাতে দেখলেই শান্তি লাগবে।কিন্তু সোফায় বসা ওই মহিলার মধ্যে এরকম কিছুই নেই।

“—ওমা যূথী! তুমি কখন এলে?আর ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?এসো। ”

যূথী ধীর পায়ে বড়মার কাছে গিয়ে বসল।কঠোর মহিলা এখন যূথীর দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যূথী ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে। মহিলার উদ্দেশ্যটা কি!এমনভাবে তাঁকে পরখ করছে যেন সে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামী।

“—নিশান কোথায় যূথী?সে কি আবার অফিসে গেছে?”

“—না বড়মা! উনি বাগানে আছেন।কে যেন ফোন দিয়েছে।কথা বলছে।”

“—আচ্ছা উনাকে তো তুমি চিনো না।উনি হচ্ছেন নিশানের দূর সম্পর্কের চাচী।অনেকদিন পর বাড়িতে এসেছে।সালাম করো।”

যূথী সালাম করার পরও মহিলার ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হলো না।
এবার নীলুফা চৌধুরী বললেন,
“—মিতা আপা! এ হচ্ছে যূথী।আমাদের নিশানের স্ত্রী। ”

যূথী আড়চোখে নিশানের চাচীর দিকে তাকালো।মহিলার দৃষ্টি আগের চেয়ে আরো কঠিন হয়ে গেছে।
হঠাৎই রূঢ় কন্ঠে বলল,

“—তোমার ছেলের বউ তোমাকে এখনো বড়মা কেনো ডাকছে নীলুফা?শ্বাশুড়িকে তো বড়মা ডাকতে শুনিনি কখনো।”

নীলুফা চৌধুরী আমতাআমতা করে বলল,
“—আসলে আপা অনেকদিনের অভ্যাস তো।এটা সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে।”

“—সবই বুঝলাম নীলুফা। তবে আমি আশা করেছিলাম নিশানের বউ নিশানের মতই হবে।তোমাদের পরিবারে তো সবাই ফর্সা।সেই তুলনায় এই মেয়ে তো ভিন্ন।মেয়েটার বুদ্ধি বেশ ভালোই।প্ল্যান খাটিয়ে এ বাড়ির বড় বউয়ের আসনে বসে গেছে। ”

যূথী মাথা নিচু করে ফেলল।সে আগে থেকেই বুঝেছিল এই মহিলা বেশি সুবিধার না।মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে তাঁকে।শেষের কথাটায় খুব আঘাত পেয়েছে সে।ঠোঁট চেপে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।কেউ চোখের জল দেখে ফেললে খুবই লজ্জার ব্যপার হবে।

নীলুফা চৌধুরী’র মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। তাঁর বাড়িতে এসে কেউ তাঁর ছেলের বউকে অপমান করে যাবে এটা তিনি মানতে পারছেন না।তিনি কিছু বলতে নিবেন তখনই নিশানের ভারী গলা শোনা গেল।

“—যূথী যদি প্ল্যান করে বাড়ির বউ হয়ে থাকে তাহলে তাই।আপনার তো এতে কোনো সমস্যা নেই।সমালোচনা করে কি লাভ হচ্ছে আপনার?কেউ সেলারি দেয় আপনাকে?আমার বউ ফর্সা নাকি কালো এটা নিয়েও ভাবতে হবে না।যূথীকে আমি ভালোবাসি। আমার কাছে এটাই সত্যি। ওঁর হাত ধরেই আমি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই।আপনি তো আপনার ছেলের জন্য ফর্সা বউ এনেছেন।সে তো আপনাকে দু পয়সারও দাম দেয় না।অন্যেরটা না দেখে নিজের চরকায় তেল দিন।আপনিও খুশি আমরাও খুশি।”

মিতা রাহমান তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।এত অপমান জনক কথা আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারে নি তাঁকে।তিনি ভুলটা কি বলেছেন?যা ঠিক মনে হয়েছে সেটাই ওঁদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

“—তুমি আমার সাথে অভদ্রের মত ব্যবহার করছো নিশান!কিসের এত দেমাগ তোমাদের?টাকার গরম দেখাও?টাকা আমােদরও কিছু কম নেই।এখানে আমি আর এক মুহূর্তও থাকব না।”

নিশান সহজ গলায় বলল,
“—আমার বউকে অপমান করে এমনিতেই অনেক অন্যায় করে ফেলেছেন। আমিই আপনাকে চলে যেতে বলতাম।এখন যেহেতু নিজে থেকেই যেতে চাইছেন সেটা খুবই ভালো কথা।আর আসবেন না কখনো আমাদের বাড়িতে। ”

মিতা রাহমানের মুখ রাগে থমথম করছে।আর কিছু না বলে গটগট করে বেরিয়ে গেলেন।

“—তুমি এখানে বসে আছো কেনো!যাও রুমে যাও।”

নিশানের ধমকে কিছুটা কেঁপে উঠল যূথী।সে কি দোষ করল বুঝতে পারছে না।
চোখের কোণা দিয়ে একবার নিশানের দিকে তাকিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠে গেল।



রাতে নিশান রুমে এসে দেখে যূথী শুকনো মুখে বসে আছে।
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“—কি হয়েছে?”

যূথী কোনো উত্তর দিল না।এমন ভাব করছে যেন রুমে কেউই নেই।উঠে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেল।

“—আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি যূথী! কিছু বলছো না কেনো।”
যূথী এবার কিছুটা রাগী গলায় বলল,
“—আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার।যখন তখন আমাকে ধমকাবেন,বকবেন।কি পেয়েছেন আপনি!ওই সময় বড়মার সামনেও ধমক দিয়েছেন আমায়।”

“—তো!”

“—তো মানে?আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে এক্কেবারে নির্দোষ আপনি।কিছুই করেননি।শুনে রাখুন আমি আর কখনো আপনার সাথে কথা বলব না।আপনিও বলতে আসবেন না।”

“—তাই!”

নিশান যূথীর হাত টেনে কাছে নিয়ে আসলো।যূথী ছটফট করছে ছাড়া পাওয়ার জন্য। কিন্তু লাভ হচ্ছে না।হঠাৎ করেই নিশান যূথীর গলায় একটা কামড় বসিয়ে দিল।

“—আহ্! কি করছেন!ছাড়ুন আমাকে।”

“—আমার সাথে কথা না বললে এটা ননস্টপ চলতেই থাকবে।রাজি আছো?”

কথা বলতে বলতে নিশান আরো কয়েকটা কামড় বসিয়ে দিল।যূথী হড়বড় করে বলে উঠল।
“—আচ্ছা আচ্ছা কথা বলব আমি।এবার তো ছাড়ুন।চামড়া ছিড়ে ফেলবেন নাকি!”

মুচকি হেসে নিশান বলল,
“—বুদ্ধিমতী মেয়ে।”

“—আপনি আমার সাথে রাগ করতে পারবেন আর আমি করলেই দোষ?রাগ উঠলে তো আপনার চোখের দিকেই তাকানো যায় না।এমন মনে হয় যেন কাঁচা চিবিয়ে খাবেন।আমি এই নিয়ে কিছু বলি আপনাকে?তাহলে আমার সাথে এরকম জুলুম করেন কেনো?আমার কি একটুও রাগ করার অধিকার নেই?”

ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠল নিশান।
“—না নেই।তোমার সাথে যা ইচ্ছা করব।রাগলে ধমকাবো,মাথা গরম হলে বকব।তবে যতটুকু রাগ দেখাব তার থেকেও বেশি ভালোবাসবো।আর তোমার কাজ হচ্ছে আমি রাগলে আদর দিয়ে সেই রাগ ভাঙিয়ে দেওয়া।গট ইট?”

“—বয়েই গেছে আমার।হুহ্!

যূথী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গলার দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠল।কেমন লাল লাল দাগ হয়ে আছে।
“—এই আপনি কি করলেন এটা?আর একটু হলে তো রক্তক্ষরণ হয়ে যেত।শুধু শুধু কি আর আপনাকে রাক্ষস বলি?”

নিশান পেছনে দাঁড়িয়ে যূথীকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল।নিমিষেই শান্ত হয়ে গেল যূথী।এতক্ষণের রাগ গুলো যেন কোথায় গায়েব হয়ে গেছে।
যূথীর কানের কাছে নিশান ফিসফিস করে বলল,

“—ভালোবাসি যূথী।”

যূথীর মুখে প্রশস্ত হাসির রেখা দেখা গেল।
“—আমিও ভালোবাসি। খুব খুব।

__________________________

কেটে গেছে অনেকগুলো দিন।একটা বছর।সবকিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।হাসি আনন্দে খুব ভালোই কাটছে যূথীর সময়গুলো।তবে নিশান আগের মতই আছে।যখন রাগ উঠে তখন ভয়ে যূথীকে তটস্থ থাকতে হয়।কারণ ঘরের বাইরে কাউকে কিছু না বললেও ঘরের ভেতরে এসে সব রাগ তাঁর উপরেই ঝাড়ে।আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশানের মেজাজ ঠিক হয়ে যায়।সেই মুহূর্তে যূথী আরো ভয়ে থাকে।কারণ তখন নিশান বিভিন্ন বাহানায় জ্বালিয়ে মারে তাঁকে।

আজ যূথীর সবচেয়ে আনন্দের দিন।বিকেল থেকেই রুমে বসে আছে।মনে প্রচন্ড উত্তেজনা কাজ করছে।কিভাবে সে ওই মানুষটার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে?কিভাবে কথাটা বলবে!কথাটা শোনার পর লোকটার মুখের এক্সপ্রেশনটা কেমন হবে?অন্তত এর জন্য হলেও কথাটা যূথীকে বলতেই হবে।
হঠাৎই রুমে নীলিমার আগমন।তাঁর চেহারা আনন্দে ঝলমল করছে।

“—যূথী! বাড়ির সবাই খুব খুশি।বিশেষ করে বড় আব্বুর উত্তেজনা দেখার মত।তুমি ভাইয়াকে খবরটা জানিয়েছো?”

“—না।”

“—এখনো জানাও নি! বড়মা বলেছে তুমি নিজে ভাইয়াকে ফোন দিতে।দেখবে ভাইয়া সবকিছু ফেলে বাড়িতে ছুটে আসবে।”

যূথী লজ্জিত হয়ে বলল,
“—নীলিমা আমি চাইছি খবরটা তোমার ভাইয়াকে সরাসরি বলব।একান্তে,নিরিবিলিতে! ”

“—বাহ্! দারুণ প্ল্যান করেছো তো।দাঁড়াও আমি সবাইকে বলে আসি কেউ যেন ভাইয়াকে আগে থেকে কিছু না বলে।”


রাত প্রায় নয়টার দিকে বাড়ি ফিরল নিশান। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবাই তাঁকে দেখে নিচুস্বরে হাসছে।নিশান দেখেও না দেখার ভান করে উপরে চলে গেল।

রুমে ঢুকতেই দেখে চারদিক অন্ধকারে ঘিরে আছে।ব্যাপার কি! যূথী কি রুমে নেই?নিচেও তো দেখল না।
বারান্দা থেকে কিছু একটার আওয়াজ পেতেই নিশান সেখানে গেল।

“—তুমি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছো কেনো যূথী?”

যূথী কোনো উত্তর না দিয়ে নিশানের হাত ধরে কাছে নিয়ে আসলো।
“—চুপ কেনো?”

নিশানের চোখে চোখ রেখে যূথী বলে উঠল,
“—আমাদের ভালোবাসা’র অংশ পৃথিবীতে আসতে চলেছে নিশান।আপনি বাবা হবেন আর আমি মা।”

স্তব্ধ হয়ে গেছে নিশান।কি বলবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
দূরের লাইটের আলোয় যূথী দেখতে পেল নিশানের চোখে জল চিকচিক করছে।মৃদু হাসল যূথী।সে জানে এটা নিশানের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। তাই আবার বলল,
“—আপনি বাবা হবেন নিশান।”

নিশান যূথীকে শক্ত করে বুৃকে জড়িয়ে নিল।তাঁর মন চাইছে এই মেয়েটাকে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলতে।

“—তুমি জানো না যূথী এই মুহূর্তে আমার মনে কি চলছে।বাকি মানুষদের মত আমি খুশি আনন্দের বর্ণনা দিতে পারি না।শুধু এটুকুই বলব আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা আজ তুমি দিলে।তুমি কিচ্ছু চিন্তা করবে না।একদম ভয় পাবে না। আমি আছি তোমার সাথে।সবসময় থাকব।”

“—আপনি আমার পাশে থাকলে আমি কখনোই ভয় পাই না।সারাজীবন আমাকে এমনভাবেই ভালোবাসবেন প্লিজ।আপনি ছাড়া আমি অচল।”

নিশান ঘোরলাগা কন্ঠে বলল,

“—আমার স্বপনচারিনী! ”

যূথী মুচকি হেসে নিশানকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরল।
__________________________
(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here