পারবো না ছাড়তে তোকে,সূচনা পর্ব
রোকসানা আক্তার
দরজাটা ঠাস করে ধাক্কা দিয়ে রিধি বলে উঠে,
-আপু?আপু?নিলয় ভাইয়া এসছেন।
আমি অনেকটা আচমকা হয়ে যাই।চোখে-মুখে আমার একটা অপেক্ষার আভা ভেসে আসে।মুঁচকি হেসে বলি,
-সত্যি???
-হ্যাঁ আপু,হ্যাঁ।এবার শুনো??তাড়াতাড়ি সাজুগুজু করে নাও।কুইকলি!!!লেট করো না।ভাইয়া আবার আমাদের নিচে দেখতে না পেলে এখানে চলে আসবেন।
-ওহ,তাইতো!!
এই বলে তাগাদা হয়ে ফেইসওয়াশ,মেছওয়াক খুঁজতে থাকি।
-উফস,রিধি খুঁজে পাচ্ছি না।একটু আমায় হ্যাল্প করতো?
-কী?কী?আপু, বলো??
-শোন,আমি বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুঁয়ে আসছি।তুই মেকআপ এর সবকিছু রেডি করে রাখ।নো লেট,জা্সট গো ডান???
-ওকে আপু।
আমি বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বড় একটা আয়নার সামনে নিজেকে আবিষ্কার করি।রিধি সাজুগুজুর যাবতীয় সব রেডি করে রাখে।এখন শুধু নিজের এই উদ্ভট মুখটাকে প্লাস্টিক করতে বাকি।আহা,আজ যে করেই হোক নিলয় ভাইয়াকে আমার প্রেমের ঝালে ফাঁসাবোই,নাহলে আমার নাম মিথিলা জাহান মুন নয়।হু!!!
এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।কারণ, প্রিয় মানুষটির প্রতি হৃদয় কোণে ভালোবাসার ছন্দ এতটা বছর জমে রেখেছিলাম।
ভালোবাসার কথা বলবো বলবো বলে আজও বলা হয়ে ওঠেনি।আজকে কিন্তু একদম নো জড়তা , নো লজ্জ্বা।এমন একটা মুড নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করি।।
এবার আমাদের পরিচয়টা জেনে নিন।আমি মিথিলা জাহান মুন।আর রিধি আমার আপন ছোট বোন।নিলয় ভাইয়া আমার আপন কাজিন।মানে আমার মায়ের বোনের একমাএ ছেলে।অনলি ছেলে বললে ভুল হবে,হিরো,রোমিও,ক্রাশবয় ইত্যাদি ইত্যাদি সব বলা যায়।উনি এবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হায়ার স্টাডি শেষ করে এসছেন এবং বড় একটা কোম্পানির ডিরেক্টর পদে অফার পেয়েছেন।আই হোপ,জবটা উনার কনফার্ম।
সেই ৮ম শ্রেমী থাকতে উনার প্রেমে আমি হাবুডুবু খেয়ে আসছি।মনে মনে ভালোবাসা/একপাক্ষিক ভালোবাসা যা-ই বলুন।তবে রিয়েলিটি উনি অনলি আমায় কাজিনই ভাবেন।আমাকে কখনো অন্যচোখে দেখেননি বা দেখার প্রয়োজনও বোধ করেননি।এতটাই ইগনোর করেন আমাকে।
সেই ৫ বছর আগে উনার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল। আজ দেশে এসছেন প্রায়ই দশদিন হবে।নিলয় ভাইয়া দেশে ফেরার পর পরই মায়ের মনে ঝড় উঠে গেলো।নিলয় ভাইয়াকে একটু দেখার জন্যে।তাই খালামণিকে বারংবার কল,মেসেজ যে ভাইয়াকে নিয়ে আমাদের একটু বাড়ি আসতে।তাই মায়ের রিকুয়েস্টে খালামণি ভাইয়াকে গিয়ে আজ আমাদের বাড়ি আসলেন।
জানি না,আমার কথা এখন আর উনার মনে আছে কি-না।আই হোপ,নাও থাকতে পারে।কারণ,এখন উনি নতুন মানুষ লাইফে সবকিছুই উনার এখন রঙ্গিন,নতুন। আমার মতো সাধারণ একজন মেয়ে উনার কাছে জাস্ট নাথিং।তারপরও আশা ছাড়ছি না,মনে ফুলী কনফিডেন্স।দেখি,চেষ্টা করে দেখলেতো খারাপ কিছু নয়।
এরই মধ্যে অনেকটা সাজগোছ শেষ করলাম।এখন শুধু চোখে কাজল দেওয়া বাকি।
হুট করে দরজার সামনে কারো উপস্থিত অনুভব করতে পারছি।আমি রিধিকে চোখ ইশারা দিই,
-দেখতো,রিধি? দরজার সামনে কে দাড়িয়ে আছেন??
রিধি আমার আমার ইশারায় দরজার দিকে মুখ করে তাকাতেই হা হয়ে থাকে।রিধির মুখটা যেন বেদম প্রহর,কোনো রকম টু শব্দ করছে না।
-কিরে,কে আসছে??বলছিস না কেন???
রিধি মুখটা হা করেই দরজার দিকে আমাকে ইঙ্গিত করে।আমি ওর ইঙ্গিত অনুসরণ করে দরজায় চোখ রাখতেই চোখগুলো আমার খাঁড়া হয়ে যায়।
হতভম্বতার সহিত হনহন দাঁড়িয়ে যাই।
কারণ,সামনে নিলয় ভাইয়া এবং নিলয় ভাইয়ার কোমরে হাত রেখে একটি মেয়ে উনার পাশে দাড়িয়ে আছে।
মেয়েটির পড়নে একটি লম্বা গাউন,পায়ে হিল কেটস,চুলগুলো লাল,মুখটি ধবধবে সাদা,লম্বায় ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি হবে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে কোনো বিদেশিনী হবেন।
উনি আমাদের দেখে মুঁচকি হেঁসে দেন,আর আমাদের সম্ভাষণ করে বলেন,
-Hi, i am Angila,i came from England. That’s what a surprise!! I know well,you are cousin of Niloy.
-yeh,yeh.Please, come in my room?
নিলয় ভাইয়া আমাদের দিকে তাকিয়ে বলেন,
-কেমন আছিস,তোরা??রিধি…আর কি যেন তোর নাম?উফস মনে পড়ছে না।
আমি প্রায় অবাকের চরম পর্যায়ে ভাইয়া যে আমার নাম মনে করতে পারছে না।কি আর করা,পরে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলি,
-জ্বী,আমার নাম মিথিলা।
-ওহ!! হ্যাঁ-হ্যাঁ, এবার মনে পড়ছে।যাইহোক,মা তোদের জন্যে নিচে অপেক্ষা করছেন।এখন আর রুমে যাবো না।বসার রুমে আয়।
এ বলে উনি বিদেশিনীকে নিয়ে চলে যান।আমি বিছানার উপর বেখেয়ালীভাবে বসে পড়ি।আর দু’চোখের কোটরে বিন্দু বিন্দু লোনা পানি জমা হতে থাকে।মনের অজান্তেই কেন জানি অস্থিরতা অনুভব হচ্ছে, মনটা যেন বিষণ্নতায় ছুঁয়ে যাচ্ছে।
পাশ থেকে রিধি বলে উঠে,
-আপু,ভাইয়াকে এখন আর দেখে বুঝাই যাচ্ছে না ভাইয়া যে একজন বাঙ্গালী।তবে,ভাইয়াকে ওই এলিজা সিস্টারের সাথে বেশ মানিয়েছে।
ভাইয়ার চুলগুলোও লাল,মুখটা ধবধবে সাদা।বাহ,একদম যেন ফরেনার!তবে,এলিজা ভাইয়ার অনলি ফ্রেন্ড নাকি গার্লফ্রেন্ড!আর উনি যেভাবে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছেন!! মাই গডড!!
এখন অনলি কনফিউজড, কনফিউজড!!!
-জানি না,রিধি!
-আপু,জানতে হবে।চলো,খালামণির সাথে গিয়ে দেখা করে আসি।
-তুই যা রিধি!আমার এই মুহূর্তে মন চাচ্ছে না।
রিধিও বুঝতে পারছে এখন আমার মনটা ভালো নেই।তাই আর কিছু না বলে মাথা হেলিয়ে চলে যায়।
রিধি রুম থেকে চলে যাওয়ার পর হাতের নিচে লেগে থাকা বিছানার চাদর মুচড়ে ধরি।
মনচায়,রুমের সব জিনিসপত্র একে একে ফ্লোরের উপর আঘাত করে আগুনের পুলকিত মনটা শান্ত করতে।
মনকে কোনোমতে মানাতে পারছি না।রাগে-ক্ষোভে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়াই,আর আস্তে আস্তে আয়নার সামনে নিজেকে দেখে নিই।বুকফাটা কান্না আসছে আমার।মুখের এই সাঁজ,পড়া এই নীল শাড়ি আজ কারজন্যে??
শাড়িটা একদম ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করতে ইচ্ছে হচ্ছে।যেই ভাবা সেই কাজ,হাত দিয়ে খামচে পুরো শাড়ি খুলতে যাবো,ওমনি দরজার পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,
-Excuse me,তুই এখনো রুমে কি করছিস,মিথিলা??
আমি তড়িঘড়ি চোখের পানি মুছে নিয়ে পেছন ফিরে তাকাই।তাকিয়ে দেখি নিলয় ভাইয়া!!।অনেকটা অপ্রস্তুত বোধ নিয়ে বলি,
-ম-ম-মানে??বুঝি ন….
-আগে তোর শাড়ির আঁচল ঠিক কর!!
এতক্ষণ পর আমার হুঁশ হয়!আমিযে তখন শাড়ির আঁচল অর্ধেক সামনে থেকে সরিয়ে নিয়েছি,তাড়াতাড়ি আঁচলটা সামনে এঁটে নিই।লজ্জ্বায় কাচুমাচু খেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি।
-এত্ত লজ্জ্বা পেতে হবে না।মা তোকে ডাকছেন!
এ বলে উনি শতানী হাসির চলে স্থান ত্যাগ করেন।আর আমি সং এর মতো খাঁড়া!!!মন চায় মাটির সঙ্গে মিশে যেতে।হায়,আল্লাহ!!লজ্জ্বায় এখন উনাকে কিভাবে মুখ দেখাবো!!!
শরীরটা অনেকক্ষণ অব্দি ঝিমঝিম করতে থাকে।
তবে,খালামণি অনেকদিন পর আমাদের বাড়ি আসছেন,এখন দেখা না করলে খারাপ দেখাবে।উপায়ন্তর না পেয়ে মনস্থির করি খালামণির সাথে দেখা করবই।।
আয়নার সামনে গিয়ে অগোছালো চুল,শাড়ি,মুখের মেকআপ ঠিক করে নিই।।তারপর রুম থেকে বেরিয়ে উনাদের সামনে আসি,তাও মাথাটা নিচু করে।।
মা,খালামণি আমায় দেখে মুঁচকি হেঁসে দেন।।
খালামণি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেন,
-কিরে,মিথিলা??আমরা তোদের বাসায় আসছি বিধায় কি লুকিয়ে গেছিস??চিন্তা করিস না তোদের পাতিল খালি করবো না।হিহিহি…
সবাই হিহিহি করে হেসে দেয়।আমি থতমত খেয়ে যাই কি থেকে কি বলবো মাথায় আসছে না।আবার চোখতুলে তাকাতেও পারছি না লজ্জ্বায়।হয়তো, এখন নিলয় ভাইয়া আমার দিকে তীর্যকদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তাই।
চলবে….