পারবো না ছাড়তে তোকে,পর্ব ১৬+১৭

0
1753

পারবো না ছাড়তে তোকে,পর্ব ১৬+১৭
রোকসানা আক্তার
পর্ব-১৬

জেরিন আপুর ভাইয়ার কথাশুনে আমি চুপসে থাকি।উনি আবার হাই তুলতে তুলতে বলেন,
——মিথিলা,তোমার সাথে আমার আজ এইভাবে যে দেখা হবে সত্যি তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল।যাইহোক,বিয়েটা কি রিলেশন করে হয়েছিল নাকি ফ্যামিলি ম্যারেজ?
আমি ছোটস্বর টেনে বলি,
——ফ্যামিলি ম্যারেজ হলে সিলেট আর আসা লাগতো না।
——স্যরি….??
——ন-ন-না মানে…!!
——আচ্ছা আচ্ছা। তবে যাইহোক,তোমার হাসবেন্ডকে দেখে এখন আমার মনে হলো আমি তোমার কোনোদিক দিয়েই যোগ্য ছিলাম না।শুধু বৃথা কষ্ট পেয়ে একপাক্ষিক ভালোবেসে গিয়েছিলাম।
—–এই যে কী যেন আপনার নাম..?উফস,আপনার নামটাই তো মনে পড়ছে না!
—–আমার নাম তোমার মনে থাকবে টা কী করে?কখনো তো মনে করার চেষ্টাই করো নি!
—–প্লিজজ, ভাইয়া,দেখুন??আগে অনেক পাগলামি করেছিলেন তা আমি মেনে নিলাম।কিন্তু এখন আমার হাসবেন্ড আছে।দেখতেই তো পাচ্ছেন!!
আমার হাসবেন্ড যদি এসবের কিছু জানতে পারে তাহলে আমায় ভুল বুঝবে….।আমার সংসারে প্রবলেম হবে,তিলে তিলে গড়ে উঠা সাজানো সংসার যদি ভেঙ্গে যায় আমি মরে যাবো।
আমি আশা করি,এখন আগের ইতি সব ভুলে প্লিজজ আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিন,আমি একটু শান্তি খুঁজছি।আমি এমনিতেই অনেক প্যানিকে আছি তার উপর তাও এত্ত যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারছি না।আপনার সাথে আমার শুধু ভাই-বোনের সম্পর্ক। আমি কখনোই আপনাকে অন্যদৃষ্টিতে দেখি নি এবং অন্যদৃষ্টিতে দেখার ভাবনা মাথায়ই আনি নি।তাই,এখন আমার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।আসি….

এ বলে আমি ড্রয়িং রুমের দিকে তরতর করে চলে আসি।ড্রাইনিং-এ সবাই বসে খাচ্ছেন।জেরিন আপু আমায় দেখামাএই উল্লাসে বলে উঠেন,
—–বললাম-না নীল তোকে?আমার ভাই অনিচ্ছাকে ইচ্ছায় পরিণত করতে পারে?এতটাই আপ্যায়িত ও গেস্টদের প্রতি।

জেরিন আপুর কথায় আমি চোখগুলোকে পিটপিট করে নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকাই।নিলয় ভাইয়াও হেসে হেসে বলেন,
——আমি সাদমান ভাইয়ার(জেরিন আপুর ভাই)কনফিডেন্স দেখেই বুঝেছিলাম।
——হু,সো এখন ট্রিট দে….
——কিসের ট্রিট জেরিন??
—–এই যে ভাবীকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসলো….
—–ওহ আচ্ছা,আচ্ছা…..

সাদমান ভাইয়াও এতক্ষণে ড্রয়িং রুমে চলে আসেন।জেরিন এবং নিলয় ভাইয়ার কথা শুনে দাত কেলিয়ে বলেন,
—–আমি ট্রিট চাই না,অন্যকিছু চাই নিলয়ের থেকে।

এই অন্যকিছু কথাটা শুনেই থতমত খেয়ে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকি।এই লোকটার কথাবার্তা আমার মাথায় ভালো ঠেকছে না।জেরিন আপু হালচোখে তাকিয়ে বলেন
—–কী ব্যাপার?সবাই ট্রিট,খাওয়া নিয়েই ব্যস্ত। ভাবী যে দাড়িয়ে আছে তা তো কেউই খেয়াল করলাম না।ভাবী এসো এসো এখানে বসো।

আমি চেয়ার টেনে খেতে বসি।জেরিন আপুর মা আমায় খাবার বেড়ে দিচ্ছেন।খাবার বেড়ে দেওয়ার সময় আমি উনার দিকে একনজরে তাকাই।উনার কপালের চামড়া ভাঁজ করা।মুখটা কালো করে চোখগুলো কুঁচকে রেখেছেন।হয়তো,আমি এখানে আসাতে উনি তেমন খুশি হোননি।তাছাড়া,আমি এ বাসায় আসার পরও উনি আমার সাথে তেমন কথাও বলেননি।যাইহোক,তা মুহুর্তে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে খাওয়ায় মনোযোগ দিই।
কোনোমতে খাওয়াটা শেষ করে মুখটা মুছতে মুছতে রুমের দিকে তড়িঘড়ি চলে আসি।শাড়িটা বড্ড বেমানান। সারাদিন আজ এই পিছলা শাড়িটাই পড়া ছিল।তাই এটা এখন চ্যান্জ করাও জরুরী।আর একটু সময় যদি এটা আরো শরীরে এঁটে রাখি,তাহলে মারা পড়তে হবে।সোফার কাছে গিয়ে শপিং ব্যাগগুলোর মুখ এক এক করে খুলতে থাকি।হঠাৎ রুমে কারো পায়ের শব্দ শুনে চমকে যাই।
—–কি ব্যাপার,মিথি??তুমি এত্ত ভয় পাচ্ছ কেন?এরজন্যে আবার চমকানো লাগে?আর তোমার রুমে আমি ছাড়া কে আসতে পারে,বলো??
—–নাহ মানে,হঠাৎ কোনোকিছুতে মনোযোগ পড়লে অন্যজিনিস মস্তিষ্কে ঢুকলে আমি ভয় পেয়ে যাই।বুঝি না এটা আমার কোন অভ্যেস।আচ্ছা যাইহোক,একটা ড্রেস চোজ করে দিন?এত্তগুলা ড্রেস! আমি বুঝতেছি না সবগুলোর মধ্যে কোনটা পড়বো!প্লিজজ প্লিজজ,,, আপনি একটু চোজ করে দিন??….

উনি আমার কাছে এসে ড্রেসগুলো এক এক করে দেখতে থাকেন।আর অনেকক্ষণ অব্দি কিছু ভেবে বলেন,
——যে ড্রেসগুলো কিনেছি সবগুলোই আমার রূপসীকে বেশ মানাবে….।তবে…আচ্ছা এই ড্রেস টা পড়ো!
—–নীল কালারের টা??
—–হু।সবকিছু রেখে নীল কালার কেন??
—–কারণ আমি প্রতিটা মুহূর্তে তোমার সর্বাঙ্গে বিরাজমান থাকতে চাই।প্রতিটি সেকেন্ডের জন্যে তোমার মনের অতল গভীরে এই নীল শব্দটিই রাখতে চাই।।আমার মিথি ইজ অনলি নীলের।সেটা প্রাণী অথবা কোনো বস্তু।।

উনার কথায় আমি খিলখিলিয়ে হেসে দিইই।উনি আমার হাসির দিকে নিবু দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছেন।উনার চোখের মায়াবী জাদু আমার হৃদয়ে নাচন ধরে দেয়।
——দাড়িয়ে আছো যে??যাও??
—–আচ্ছা যাচ্ছি।
এ বলে ড্রেসটি হাতে তুলে নিয়ে। মাথা ঘুরিয়ে দরজার সামনে আসতেই নিলয় ভাইয়া উদ্দেশ্য করে বলে উঠি,
—–আমার নীল কোনো বস্তু,ব্যক্তির সাথে তুলনীয় নয়।সে অনলি নীল।আর নীল মানেই নীল।আমি এর কোনো অর্থ খুঁজছি না।তার প্রতি আমার হৃদয়ে ভালোবাসা উচ্চ শিখরে।

এ বলে তাড়াতাড়ি লজ্জায় বাথরুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ি।জানিনা উনি পেছন থেকে কি ভাবলেন।
ড্রেসটা চ্যান্জ করেই বাথরুম থেকে বের হই।নিলয় ভাইয়া বিছানার উপর ঠেসে বসে বই পড়ছেন।আমি অনেকটা অবাক হয়ে যাই উনার বইপড়ার আগ্রহ দেখে।গলা খেচকি দিয়ে বলি,
—–আপনিও বই পড়া পছন্দ করেন??
—-হু।করি।

উনার সাথে কথার মাঝে আমার মাথাটা ভীষণ ঘুরতে থাকে।আমি মাথায় হাত রাখতেই উনি খেয়াল করে বলে উঠেন,
—–মিথি,এনিথিং রং??

এ বলে উনি বইটা পাশে রেখে বিছানা থেকে নেমে যান।আর আমার পাশে এসে আমার ঘাড়ে হাত রাখেন এটা জানার জন্যে যে “আমার শরীর আদৌ কি ঠিক আছে?”…

আমি মাথা নেড়ে “না” বলি।কিন্তু “না” বলেও শান্তি নেই।মাথাটা যেনো আরো বেশি ঘুরঘুর করছে।মুহূর্তেই বমি বমি ভাব হতে থাকে।ভাব হওয়ার সাথে সাথেই একমিনিট ও আর দেরী হয়নি,ওয়াক ওয়াক শব্দে বমির সব কাঁচড়া নিলয় ভাইয়ার বুকের উপর ছিটকে পড়ে।উনি আমায় শক্ত করে ধরেন যাতে আমি ফ্লোরের উপর না পড়ে যাইই।তারপরও আমার বমি থামছে না।ক্রমাগত বমির কাঁচড়া উনার পুরো শরীরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে।আমার জ্ঞানটাও ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে।আমার মাথায় যেনো কোনো হুঁশ নেইই।
প্রায়ই ১ ঘন্টা পর আমি নিজেকে বিছানার উপর আবিষ্কার করি।চোখখুলে তাকাতেই সামনে জেরিন,জেরিন আপুর মা,ডাক্তার আর নিলয় ভাইয়াকে দেখতে পাইই।
জেরিন আপু হুট করে বলে উঠেন,
—-কংগ্রাচুলেশনস, ভাবী….?
জেরিন আপু ভাবভঙ্গি ফুরফুরে মনে হচ্ছে।তার কারণও বুঝতেছি না।আর,ডাক্তার কি যেন ওষুধের নমা লিখছেন এবং নিলয় ভাইয়াকে সবটা জ্ঞাপিত করছেন।

জেরিন আপু আবার বলে উঠেন,
—-ভাবী তুমি মা হতে যাচ্ছো…।এবার তোমার নীলকে বলো তাড়াতাড়ি মিষ্টি আনতে আমাদের জন্যে…

ডাক্তার ওষুধের সব বুঝিয়ে সুঝিয়ে ব্যাগটা হাতে নিয়ে প্রস্থান করেন।একে একে সবাই।সবাই চলে যাওয়ার পর নিলয় ভাইয়া রুমের দরজাটা অফ করে দেন।আর বেতালে নাচানাচি আরম্ভ করে দেন।
—-দেখছো, কত্ত খুশির সংবাদ।!!আমি হতে যাচ্ছি!!আর তুমি কি যে-ন…?
উনি শতানীর ছলে ন্যাঁকা করে বলেন।মুহুর্তেই আমি লজ্জায় লাল হয়ে উঠি ।মাথাটা কাঁত করে অন্যদিক তাকিয়ে থাকি,এখন উনার চোখে-চোখ রাখার ওই সাহসটুকু বোধহয় আমার নেই।উনি বুঝতে পেরে মুঁচকি হেসে দিয়ে একটা জাজিম মোড়া টেনে আমার পাশে এসে বসেন,মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,
—-মিথি,আমি আজ অনেক খুশি।”বাবা”–নামক শব্দটা শুনা মাএই মনের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি অনুভব হয়।সত্যি কি আমি বাবা হতে যাচ্ছি??

আমি কিছু না বলে মনে মনে হাসি।কিন্তু বুকের বামপাশে কেন জানি একটা শূন্যতা অনুভূত হচ্ছে।এখন কি একটা যেন আমার পাশে নেইই।”বাবা”–শব্দটা যেন আমার বাবাকে স্মরণ করে দিচ্ছে।ভীষণ মনে পড়ছে বাবার কথা।বাব এই সংবাদটা শুনলে কত যে খুশি হতেন!!আজ বিধাতার কাছে আচ্ছামত বিচার দিতে ইচ্ছে হয়।এমন একটা খুশির দিনে আমাকে কেন আপন মানুষগুলো থেকে দূরে রাখলে?কিভাবে পারলে তুমি!আমার কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে।বুকের ব্যথাটা যেন আরো চিনচিনিয়ে বাড়ছে।

চোখের কোটরে পানি জমতেই নিলয় ভাইয়া বুঝে ফেলেন।আমার মুখটা টেনে উনার দিকে নিয়ে আসেন।আর উনার মুখটা আমার মুখের উপর মিলিয়ে অজস্র চোখের পানি নিয়ে বলেন,
—মিথি,আমি জানি তুমি কেন কান্না করছো!!আমারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে সবার জন্যে।কিন্তু আমরা বৈঠাহীন।কূল ছাড়া বৈঠাহীন নদীর মাঝখানে নৌকায় ভাসছি!চাইলেও আমাদের পক্ষে এই মুহূর্তে কিছুই করা সম্ভব নয়।।
এভাবে দুজনার মান-অভিমান সবটা চলে।নিলয় ভাইয়ার একটা ফোন আসতেই উনি বেলকনির দিকে চলে যান।

আমি আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠে বসি।আর ফ্লোরের দিকে তাকাতে থাকি।কারণ,এই স্থানেই কিছুক্ষণ আগে আমি বমি করেছিলাম।কিন্তু এখানে তো একদম ক্লিন এখন!কে পরিষ্কার করলো। এ ভেবেই বেলকনির দিকে নজর দিই। চোখগুলো ওখানে রাখতেই নিলয় ভাইয়ার চোখাচোখি পড়ে যাই।উনি ভ্রু নাচিয়ে বলেন,
—-মিথি,কিছু ভাবছো??
—-না-মানে এখানে যে বমির কাঁচড়া ছিল সেগুলো কোথায় এখন?

উনি অামার দিকে অবাক দৃষ্টি দিয়ে বলেন,
—-সে-কি! সেগুলো কি খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস নাকি?
—-য়ু-হু তা নয়!
—-তাহলে…??
আমি কিছু একটা ভেবেই উনার দিকে তাকাই।উনি টি-গেন্জিটা চ্যান্জ করে এখন পাতলা একটা ব্লাক গেন্জি পড়েছেন।আমার বুঝতে আর সমস্যা হয়নি সবটা যে উনিই করেছেন।মনের খুশিতে দু’চোখ বেয়ে গড়াগড়িয়ে আমার অশ্রু পড়তে থাকে।উনি এবার ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে বলে উঠেন,
—-আরেহ,পাগলী যে আবার কাঁদছে!

আমি কান্না বন্ধ করে বলি,
—-আপনি একটা খারাপ মানুষ!কে বলেছে আমার বমি পরিষ্কার করতে??আমিতো এখন সুস্থ,আমি কি পরিষ্কার করতে পারতাম না??

উনি আমার কথাশুনে খিলখিল করে হেসে উঠেন।
—বোকা মেয়ে কোথাকার কার,,হিহিহি…
উনার ভঙ্গিমা ধেখে আমি তড়িঘড়ি বিছানা থেকে খালি পায়ে নেমে পড়ি।আর প্রবল বাতাসের মতো উনাকে দু’হাত দিয়ে ঝাপসে আঁকড়ে ধরি।জানি না,এই আঁকড়ে ধরাটা কেমন ভালোবাসার অনুভূতি,ভালোবাসার পরিসীমা।উনার সাথে আমার ভালোবাসার পরিসীমা আজ-অব্দি আমার অজানা!!!

পারবো না ছাড়তে তোকে
পর্ব-১৭
রোকসানা আক্তার

পরেরদিন সকালে,

আমি ঘুম থেকে উঠে বেসিন থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে হাতে নিয়ে বেলকনিতে যাইই।নিলয় ভাইয়ার এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি।উনি নিমজ্জে ঘুমচ্ছেন।
বেলকনির রেলিং হাত রেখে নিচের দিকে তাকাতেই সাদমান ভাইয়ার দিকে নজর পড়ে।উনি হিম হিম ভোর সকালে এক্সারসাইজ করছেন।আর বার বার আমাদের বেলকনির দিকে নজর দিচ্ছেন।এক ঝাটকায় আমায় দেখে ফেলতেই আমি তাড়াতাড়ি দেয়ালে পিছনে লুকিয়ে পড়ি।

আর বুকে থুতু দিয়ে রুমের দিকে চলে আসি।তারপর রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে আসতেই জেরিন আপুর মায়ের কর্কশ গলার কন্ঠ ভেসে আসে।উনি বোধহয় জেরিন আপুর সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ খেপে বসছেন।আমি বিষয়টি ভালোভাবে ক্লিয়ার হওয়ার জন্যে আর একটু সামনে এগিয়ে কান পেতে রাখি।
উনি খরখর গলায় বলেন,
—–এই মেয়েকে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বিদেয় কর।আমি ওর আর মুখ দেখতে চাইই না!
—–মা দেখ,দোষ তোমার ছেলের! আমি এখানে মিথিলার কোনো দোষ দেখছি না।কেউ ভালো না বাসলে,তাকে জোর করা যায়য় না!আর এমুহূর্তে ওরা আমাদের গেস্ট, ওদের সাথে বিনে কারণে খারাপ বিহেভের কোনো মানে হয় না।তাছাড়া,অনেক আগের কথা এখন তুলে কোনো লাভ নেইই।
আর তোমার যদি এখন এ বাড়িতে না ভালো লাগে,তাহলে নানুর বাড়ি গিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারো।

কথা শেষ করে জেরিন আপু কিচেনে চলে যান।আমার মাথায় এখন একটা ভাবনাই ঘুরপাক খাচ্ছে।তাহলে,জেরিন আপু বোধহয় এখন জেনেছেন “আমিই ওই মেয়েটি যে তার ভাইয়ার লাইফের কাল ছিলাম!”

এসব ভাবতে ভাবতে পেছন ঘুরে পা বাড়াতে হুট করেই নিলয় ভাইয়ার শরীরের সাথে ধাক্কা খাই।
—-এত্ত বেখেয়ালি চললে হবে??পরে তো এক্সিডেন্ট ঘটাবে।

আমি নিলয় ভাইয়ার কথায় চমকে উঠি।উনার দিকে চোখের পলক ফেলে মাথা নাড়ি।উনি আমার বামহাতটা চেপে ধরে ড্রাইনিং নিয়ে চলেন,
—-চলো,এখন ব্রেকফাস্টটা শেষ করে আমরা সবাই মিলে আজ ঘুরতে বের হবো।
আমি কিছু বলার আগেই উনি আমায় চেয়ারে বসিয়ে দেন।আন্টি অভিমানী মুঁচকি হেসে নাস্তার প্লেট এগিয়ে দেন।আর জেরিন আপু চায়ের লিকার এনে টেবিলের উপর রাখেন।আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
—-আমাদের সিলেটি চা খেয়ে দেখতে পারিস নিলয়।তাও আমি নিজে বানিয়েছি।কী ভাবি?চা’টা খাবে তো?
—-আপনি যেহেতু বানিয়েছেন। অবশ্য না খেয়ে আর পারি না।।
—–আচ্ছা,ওয়েট কাপে ঠেলে দিচ্ছি।

জেরিন আপু তিনকাপে চা ঢেলে আমাদের দিকে দু’কাপ এবং নিজে এককাপ নিয়ে চেয়ারের উপর বসে পড়েন।সাদমান ভাইয়ার এক্সারসাইজ শেষ করে এরইমধ্যে বাসায় ঢোকেন।
—-হায়, গুড মর্নিং,অল!
—-গুড মর্নিং।নাস্তা করতে বসছি,তাড়াতাড়ি আসুন।(নিলয়
—-ওয়েট।জাস্ট টু মিনিট!!টু বি ফ্রেশ।

এ বলে সাদমান ভাইয়া শিষ বাজাতে বাজাতে উপরে চলে যান।জেরিন আপু চায়ে একচুমুক দিয়ে বলেন,
—-ভাবি,আজ কিন্তু আমরা লালখাল যাচ্ছি। ওকে??
—-নাহ,আসলে আমার শরীরটা খুব খারাপ,তারপরও দেখি যেতে পারি কি’না।
—-য়ু-হু,নো এক্সকিউজ! তুমি যাবে,যাবে!ব্যাস এটুকুই।আর যদি শরীর বেশি খারাপ করে তাহলে আমি তোমায় কোলে তুলে নিয়ে যাবো।ওকে?

আমি আর কিছু না বলে নিলয় ভাইয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার খাবারে মনোযোগ দিই।
আমার খাওয়াটা শেষ হলেই সাদমান ভাইয়া অপোজিটে চেয়ার টেনে বসেন।আমি হেটে এসে রুমের দিকে আর না ঢুকে সোঁজা ছাদের উপরে চলে আসি।মিষ্টি মিষ্টি এ সকালটা মনভরে দেখতে থাকি।বাহ,চারদিকে পাখিদের কী সুন্দর কলকল ধ্বনি,বাতাসে হালকা পাতাগুলো নড়ছে,তাদের নড়নে হিম প্রবাহ ভেসে আসছে।
প্রকৃতির এই আমেজে নিজেকে হারিয়ে ফেলি মুহূর্তে।
পেছনে কারো খেচকির আওয়াজ শুনে ঘাড় ঘুরে তাকাই।সাদমান ভাইয়া সিগারেট ধোঁয়া নাঁক-মুখ দিয়ে বের করে আমার কাছেই আসছেন।আমি হালচোখে তাকিয়ে ভাবতে থাকি “উনার সেই আগের অভ্যেসগুলো এখনো যায় নি.”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচান।আমি আর কিছু না বলে মাথা ঘুরিয়ে ছাদের রেলিং ধরে খোলাকাশ দেখার ভান করি।
উনিও আমার পাশে দাড়িয়ে রেলিং হাত ধরে আবারও সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়েন।আমার নাকে-মুখে ধোঁয়া ঢুকে যায়।খনখনে কাশতে থাকি।অনেক কষ্টে কাশি থামিয়ে বলে উঠি,
—-আপনি এ অভ্যেসগুলো এখনো ছাড়েননি?

উনি উন্মাদ মন নিয়ে আকাশের প্রাণে তাকিয়েই জবাব তুলেন।
—যে অভ্যেসগুলোর কারণে প্রিয় মানুষটি আমায় ভালোবাসতে পারে নি।সো,সে অভ্যেসগুলো পরিবর্তন করে কি লাভ টা হবে,শুনি??

আমি আর কোন কথা না বলে চলে আসতে চাইলেই উনি সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে দু’হাত দিয়ে বাঁধা প্রদান করেন।
আমি উনাকে এড়িয়ে আসতে চাইলেই নিলয় ভাইয়ার তা চোখে পড়ে!উনি চোখগুলো কপালের দিকে তুলে কিছু একটা ভেবে আবার নিচের দিকে ফিরে যান।মুহূর্তেই আমার মনে ঝং ধরে।নিলয় ভাইয়া উল্টাপাল্টা কিছু ভাবলেন নাতো?হে আল্লাহ,রক্ষা করো,রক্ষা করো।
এ বলে দুয়া,দরুদ পড়ি আর বুকে থুথু মারি।
তড়িঘড়ি রুমের দিকে চলে আসি।নিলয় ভাইয়া বিছানর উপর বসে ফ্লোরের দিকে স্থীরচাহনি দিয়ে আছেন।এ দেখে আমার বুকের মধ্যে ধুকধুক শব্দের করছে।থরথর শরীর নিয়ে উনার পাশে গিয়ে বসি।উনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠেন,
—-ছাদে যাওয়ার কী এমন দরকার ছিল?
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠি,
—-আ-আ-সলে রুমের মধ্যে ভালো লাগছিল না তাই ছাদে গেলাম।আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিল…..

উনি চোখদুটো সরু করে ভ্রু কুঁচকান। আর নিঃশ্বাস ফেলে বলেন,
—–কী বলবে,বলো।
—-আগে বলুন, আপনি আমায় অবিশ্বাস করেন না’তো?

উনি আমার দু’চোখের দিকে আবারও স্বচক্ষে তাকান।আমি চোখের পাতা আলতো নিচে দিকে টেনে আনি।উনি তা দেখে মুঁচকি হাসেন,আর বলেন,
—-আচ্ছা, বলো।অবিশ্বাস করি না তোমায়…

আমার চোখে-মুখে হাসির আভা ভেসে উঠে।হাঁক ছেড়ে উনাকে সাদমান ভাইয়ার ব্যাপারে সবটা বিষয় ক্লিয়ার করার প্রস্তুত গ্রহণ করি, যাতে আমায় কখনো উনি ভুল না বুঝেন।
—–আমি যখন ইন্টার ১ম বর্ষ থেকে ২য় বর্ষে উঠি।তখন ঢাবির একটা ভাইয়ার কাছে রোজ একাউন্টিং কোচিং করতে যেতাম।ভার্সিটির শেষ মাথায় উনার একটা কোচিং সেন্টার ছিলো।সেখানে প্রায় দু’শো শতাধিক পোলাপান কোচিং এর জন্যে যেতো।আমাদের কলেজের অনেক স্টুডেন্টরাই যেত।
একদিন আমি কোচিং শেষে পথিমধ্যে বাসের জন্যে ওয়েট করতেছি।আর,আমাদের বাসা থেকে ঢাবির দূরত্ব ১০ টাকার বাসভাড়া। হুট করে একজন লোক আমর পাশে এসপ দাড়ায়।আর গদগা গলায় বলতে থাকে,
—-তুমি কি আমার বন্ধু তাহমিদের কাছে কোচিং করো?

আমি লোকটির কথাশুনে একনজর উনার দিকে তাকিয়ে কোনোরকম ভ্রুক্ষেপ না করে আবার বাসের দিকে মনোযোগ দিই।লোকটি রেসপন্স না পাওয়ায় গলায় একটা খিচকি টানে এবং আবারও বলে উঠে,
—হেই,আপু?ডু ইউ গেট টু হ্যায়ার মি?
আমি নাক-মুখে তীর্যক ভাব এনে বলি,
—স্যরি,ব্রো!আমি আপনাকে চিনি না।সো,আপনার সাথে কথা বলতে এ মুহূর্তে আমি বাধ্য নই।
—আমার নাম সাদমান জয়। আমি তোমার তাহমিদ ভাইয়ার ক্লাসমেট।পারলে,আমার ব্যাপারে তাহমিদ থেকেও জেনে নিতে পারো।যেহেতু,তুমি আমায় চেনো না।
—-আপনার আর কিছু বলার আছে??
উনি যেই কিছু বলতে যাবেন,ওমনি আমার বাস চলে আসে।আমি এই আপদ থেকে বাঁচতে তড়িঘড়ি বাসে উঠে বসি।
তার পরদিন থেকে,আমি প্রায়শই সাদমান ভাইকে আমার পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করতে দেখি।পরে,অতিষ্ট হয়ে তাহমিদ ভাইকে সবটা জানাই।ঘনি রাগে গজগজ করে বলেন,
—-ওর থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকো।কারণ,ও ভার্সিটির অনেক মেয়ের সাথেই এমন বিহেভ করে।তাছাড়া, ভার্সিটির সবাই বলে—ও মদ,গাজা,ইয়াবায় যুক্ত থাকার কারণে মাথা অনেকটা হ্যান্ডেলের অভাবে এরকম অসদাচরণ আচরণ করছে।
আমি সেদিন ভাইয়ার কথাশুনে আতঙ্কে পড়ে যাইই।পরে ডিসিশন নিই এখানে আর কোচিং করতে আসবো না।সিদ্ধান্তের উপরই ওখানে কোচিং করা ছেড়ে দিই।

তারপর থেকে কয়েকটা দিন ভালোই কাটে।একদিন কলেজে বান্ধবীদের থেকে ট্রিট খুঁজতে খুঁজতে গেইট থেকে হই।আর গেইট থেকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে একজন লোক আমার হাত টেনে ধরে।তাকিয়ে দেখি সাদমান ভাই!!
আমি যতটা-না অবাক,ততটাই হতভম্ব।কলেজের সব ছেলেমেয়ে এভাবে আমার হাত ধরে রাখার দিকে তাকিয়ে রইল এবং সমালোচনার জোয়ারে সবাই ভাসতে থাকলো।
আমি লজ্জা,রাগে, ঘৃণায় উনার গালে ঠাস ঠাস করে দু’টো থাপ্পড় বসিয়ে দিই।আমি জানি,উনি আমার অনেক সিনিয়র।তারপরও আমি এই কাজটি করতে দ্বিধাবোধ করিনি।সবার সামনে জোরে জোরে শব্দ করে বলি,
—ইউ বাস্টেড!লজ্জা-সরম নেই?যখন-তখন মেয়ে মানুষকে স্পর্শ করা এটা কোনধরনের অসভ্যতা!মা-বাবা কি শিক্ষার ঘাটতি রেখেছে?যদি শিক্ষার ঘাটতি থাকে তাহলে আমার থেকে শিখে নিয়,অসভ্য কোথাকার!!

কথাশেষ করেই ওখান থেকে আমি বাসায় চলে আসি।মা-বাবাকেও এসব ব্যাপারে আর কিছু বলিনি,নাহলে উনারা উল্টো ভাবতে পারেন।ওদিন উনাকে থাপ্পড় দেওয়ায় আমি সারাটা রাত ঘুমতে পারি নি।বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে থাকি।সাদমান ভাইকে কেন জানি আমার খুব ঘৃণা লাগতো!উনার চলাফেরা উসকো-খুসকো স্বভাবের ছিল।ভার্সিটি পড়ুয়া কোনো ছেলে বলে উবাকে মনে হতোনা,মনে হতো কোনো এক বখাটে!!
পরেরদিন,কলেজ যাওয়ার জন্যে আবার প্রস্তুত হই।কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ড্রাইনিং আসতেই একজন অপরিচিত মহিলাকে দেখতে পাই।অপরিচিত মহিলা সোফার উপর বসে আমার মায়ের সাথে কথা বলতেছেন।আমাকে মহিলা দেখামাএই বলে উঠেন,
—-এই আপনার মেয়ে মিথিলা?
—-জ্বী।
মা আমার দিকে তাকিয়ে আদেশ করেন,
—-মিথি উনাকে সালাম করো।
আমি ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যাই।কারণ,এই মহিলা আজ-অব্দি আমি কোথাও দেখিনি।তাহলে চেনা নেই,জানা নেই মানুষকে না বুঝে কোন খাতিরে সম্মান প্রদর্শন করবো?মনের মাঝে অহংকার চেপে রেখে সদরে পা রাখতেই মহিলা পেছন থেকে বলে উঠেন,
—-মা,সাদমানকে চেন?আমি সাদমানের মা।
আমি সাদমান ভাইয়ার মায়ের দিকে আর না তাকিয়ে পূর্বদৃষ্টিতেই বলি,
—–আপনি আসতে পারেন, আন্টি। কারণ,আপনি এখন যে প্রস্তাবে এসছেন আমি ও প্রস্তাবে রাজি নই।আমি কোনো বখাটে ছেলেকে ভালোও বাসতে পারবো না এবং বিয়েও করতে পারবো না।আই হোপ,এখন কলেজে যেতে পারি।
—-মা দেখ,আমার ছেলে তোমায় অনেক ভালোবাসে।ভুলবাল জীবনও একদিন গুছিয়ে যায়।জীবনে সব মানুষেরই ভুলএুটি থাকে।কোনো মানুষই পরিপূর্ণ ১০০% পরিশুদ্ধ নয়। প্লিজজ মা,একটু বুঝার চেষ্ট করো।
—-,স্যরি আন্টি,আমায় ক্ষমা করবেন।

এ বলে ধপাস ধপাস করে পা ফেলে বাহিরের দিকে চলে আসি।তারপর থেকে উনাদের আর দেখতে পাইনি।শহরের অলিগলিতে কোথাও পাইনি।।
নিলয় ভাইয়া আমার সবগুলো কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন।আর দীর্ঘশ্বাস টানেন।

অপর প্রান্ত থেকে দু’হাত ভাঁজ করা জেরিন আপু সবটা শুনতে পান।উনি ধ্যানেমগ্ন কন্ঠে বলে উঠেন,
—-তারপরের কাহিনী আমি বলবো?

এ বলে আমাদের দিকে আস্তে আস্তে এগোন।
—-আপু তোমরা কোথায় ছিলে পরে??
—ভাবী,তোমাদের ওদিন বললাম না?আমরা জন্মভূমির টানে ঢাকার ফ্ল্যাট বিক্রি করে এখানে চলে এসছি ওটা একপ্রকার মিথ্যে কথা ছিল।কারণ,ঢাকার ফ্ল্যাট এ কারণে বিক্রি করেছে যাতে ভাইয়া ওই শহরের সবটুকু মায়া ভুলে আবার নিজের মতো করে বাঁচতে শিখে।ভাবী তুমি জানো?সাদমান ভাইয়া তোমার জন্যে কতটা ডিপ্রেসড ছিলেন?আমি জানি না এখন আমার ওই ক্ষমতা আছে কি না তোমাকপ বুঝানোর।জাস্ট এটাই সত্যি ভাবী,ভাইয়া তোমাকে সত্যিই অনেকটা বেশিই ভালোবাসতো।পাগল,পাগল অবস্থা যাকে বলে।যাইহোক,ভালোবাসা কখনো জোর করে হয়না।তাইই,সে ভেবে ভাইয়া নিজেকে কন্ট্রোল এনেছেন।অনেক কষ্টে ভাবী,অনেক কষ্টে। একবছর হয়েছে ভাইয়া ব্যাংকে জয়েন করলেন।তারপর থেকেই অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছেন।আই হোপ,এখন অনেকটা ভালো আছেন।আর হ্যাঁ,ভাইয়াকে ভাইয়ার একটা কলিগ অনেক ভালোবাসে।আমরা তার সাথে ভাইয়াকে বিয়ে করানোর চিন্তা-ভাবনায় আছি।তোমার উপর আমাদের কারো কোনো ক্ষোভ নেই।মানুষ মাএই ভুল–এ বাক্যটি রাইট!সো মানতেই হবে।তুমি জাস্ট আমার ভাইয়ার জন্যে দোয়া করো।আর নীল?তুই ভাবীকে একদম ভুল বুঝবি না,হুম?ভাবী কিন্তু খাঁটি পিউর।দেখছিস না আমার ভাই ভাবীকে পটাতে পারে নি?সো,এমন বউকে সন্দেহ না করে বুঝার ট্রাই করবি।দেখবি অলওয়েজ ভালো থাকতে পারবি।

—-তোর মতো একটা চিকু বান্ধবী থাকতে আমাদের আর কিছু লাগে না।
—আবার চিকু??!!
—স্যরি দোস।এবারের জন্যে মাফ করে দে?
—দূর পাগল,আমিও তো মজা করে বলেছি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here