তোর ছায়ার সঙ্গি হব_২,পর্ব ১৭

0
3495

তোর ছায়ার সঙ্গি হব_২,পর্ব ১৭
লেখক-এ রহমান

দুইদিন পর ঈশা আর ইভান ফিরেই দেখে ইভানদের বাড়িতে অনেক মেহমান। কিছু বুঝে উঠার আগেই সীমানা এসে ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বলল
–কেমন আছিস?

ঈশা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
–ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? আর কখন এসেছ?

–তার আগে বল তুই কোথায় ছিলি?

দুষ্টুমির সুরে সীমানা কথাটা বলতেই ঈশা একটু লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নামিয়ে নিলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
–হানিমুনে গিয়েছিলাম!

ইভানের আওয়াজ শুনে দুজনি সেদিকে ঘুরে তাকায়। ইভান ঈশার পাশে এসে দাড়ায়। ইভানের এমন কথা শুনে ঈশা আরও লজ্জা পায়। চলে যেতে নিলেই ইভান হাত ধরে ফেলে। ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে ইভানের দিকে তাকায়। ইভান হাত টেনে একদম কাছে এনে কোমর ধরে জড়িয়ে নিয়ে সীমানার দিকে তাকিয়ে বলে
–তারপর তুই কোথা থেকে উদয় হলি?

সীমানা আশে পাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখল। তারপর মুখটা কাছে এনে ফিস ফিস করে বলল
–বিয়ে করতে এসেছি।

ঈশা অবাক চোখে তাকাল। কি মেয়ে রে বাবা! একটুও লজ্জা নেই। নিজের বিয়ের কথা এভাবে বলছে। ভাবনার মাঝেই ইভান অবাক হয়ে বলল
–বিয়ে মানে? খুলে বল।

সীমানা দাত কেলিয়ে হাসল। কানের পাশে চুল গুঁজে দিয়ে বলল
–বিয়ের ডেট ফিক্স হয়েছে। তিনদিন পর।

–কি বলিস? এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানিনা।

অবাক হয়ে বলল ইভান। ঈশারও একি অবস্থা। সীমানা দুষ্টুমি করে বলল
–তুমি তো হানিমুনে গিয়েছিলে তাই আর ডিস্টার্ব করিনি। সবাই একি কথাই বলছিল যে আসলে তারপর বলবে। আমরা কাল এসেছি। আসলে সবাই চাচ্ছিল তাড়াতাড়ি বিয়েটা হয়ে যাক। ঘরোয়া ভাবেই হবে তাই আর দেরি করে কি লাভ।

–তাই তো তুইও আর দেরি না করে চলে এলি বিয়ে করতে।

সীমানা একটু লজ্জা পেলো। ইভান হালকা দুষ্টুমির সুরে বলল
–থাক এখন আর লজ্জা পেতে হবে না। চলেই তো এসেছ বিয়ে করতে। লজ্জা করে আর কি লাভ।

সীমানা ইভানের কথার সাথে সুর মিলিয়ে বলল
–বিয়ে করতে চলে এসেছি। তাই বলে তো আর লজ্জা ফেলে আসিনি। কিছুটা সাথে নিয়ে এসেছি।

ইভান হাসল। তারপর বলল
–ইলহাম কোথায়?

–অফিসে।

–আমি কয়দিন ছুটিতে থাকায় বেচারার উপরে চাপ পড়ে গেছে। আচ্ছা তোদের বিয়ের পর আমি সব দায়িত্ত সামলে নিবো আর তোদেরকে হানিমুনে পাঠিয়ে দিবো।

ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল
–যা ফ্রেশ হয়ে আয়।

ঈশা সবার সাথে দেখা করে কিছুক্ষন কথা বলে উপরে চলে গেলো। ইভানও সবার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে ঘরে গেলো। ঘরে ঢুকে দেখে ঈশা বারান্দায় নিচে বসে কিছু একটা খুজছে। ইভান সেখানে গিয়ে বসলো। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে কিছুই বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো
–কি খুজছিস?

ঈশা ঘুরে তাকায়। বিরক্তি নিয়ে আবারো নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে
–আমার কানের একটা দুল খুজে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে এখানে পড়েছে।

ইভান হাসল। ঈশা খুব বিরক্ত হল। বিরক্ত নিয়ে বলল
–হাসছ কেন?

ইভান ভালো করে বসে পড়লো। ঈশাকেও হাত ধরে বসিয়ে দিলো। সামনের চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল
–আমাকে না বলে অজথা কেন খুজছিস?

–তোমাকে বললে তুমি খুজে দিতে?

ইভান আবারো হাসল। ঈশার একটু কাছে গিয়ে বলল
–তুই তো নিজেই জানিস না কোথায় হারিয়েছিস।

–সে জন্যই তো খুজছিলাম।

–যেখানে হারিয়েছিস সেখানে ছাড়া অন্য জায়গায় খুজলে কিভাবে পাবি?

ঈশা একটা বিরক্তিকর শ্বাস ছাড়ল। একটু রাগ করেই বলল
–তোমার শুধু শুধু হেয়ালি!

ইভান ঈশাকে কোলে বসিয়ে নিলো। গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল
–আমি তোর বিষয়ে কখনও হেয়ালি করেছি? অবশ্য তুই তো এসব বুঝিস না।

ঈশার মন খারাপ হল। ইভান কে সরিয়ে দিয়ে বলল
–তাহলে আমার কানের দুল কোথায়?

ইভান পকেট থেকে বের করে ঈশার সামনে ধরল। ঈশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সেদিকে তাকিয়েই বলল
–তুমি লুকিয়ে রেখেছ?

ইভান রাগ হল। রাগ করেই বলল
–এটার সাথে কি আমি রোমাঞ্চ করবো?

ঈশা এমন কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তবুও স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–তাহলে তোমার কাছে কিভাবে গেলো?

ইভান ঈশার আরও কাছে এলো। মুখে ফু দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিলো। এক হাতে গলায় স্লাইড করতে করতে বলল
–কাল রাতে যখন তুই আমার মাঝেই হারিয়ে গিয়েছিলি তখন সেটা বিছানায় পড়ে গিয়েছিলো। আর আমি সেটা সকাল বেলা খুজে পাই। নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলাম পরে দিবো বলে। এতো কিছুর মাঝে মাথাতেই ছিল না। তোর খোজা দেখে মাত্র মনে পড়লো।

ঈশা চোখ নামিয়ে নিলো। কিছু বলল না। ইভান তাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
–তুই যে আমার কাছেও লজ্জায় মরে যাস। এতো লজ্জা কই থেকে আসে জান?

ঈশা ইভানের বুকে মাথা রাখল। ইভান হেসে তাকে জড়িয়ে নিলো।

————–
ঈশা আর ইভান একসাথে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। সামনে তাকাতেই ইভানের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই আরমান এসে ইভান কে জড়িয়ে ধরে বলল
–কতদিন পর তোর সাথে দেখা হল বলতো!

ইভানের রাগ হলেও সে এই মুহুর্তে সেটা দেখতে চায়না। বিষয়টা খারাপ হয়ে যাবে। আর বাড়িতেও এখন একটা উৎসব মুখর পরিবশ যেটা নষ্ট হয়ে যাবে। অনিচ্ছাকৃত ভাবে হেসে আরমান কে জড়িয়ে ধরে বলল
–সত্যিই তাই। তোকে অনেক মিস করেছি।

ইভান কে ছেড়ে দিয়ে ঈশার সামনে দাড়িয়ে বলল
–আমি কিন্তু তোমার উপরে রাগ করেছি।

ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
–কেন ভাইয়া?

–তুমি বাসায় আসলে না কেন?

ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কারণটা সে এখন আরমান কে কিভাবে বলবে। ইভান ঈশার দিকে তাকাল। একটু হেসে ঈশাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলল
–আসলে আমরা দুজন একটু বেড়াতে গিয়েছিলাম। বিয়েটা নিয়ে তো তুই সবি জানিস। তাই ভাবলাম নিজেদের মতো একটু সময় কাটাই।

ইভানের কথা শুনে আরমানের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেলো। আরও বেশী রেগে গেলো ইভান আর ঈশাকে একসাথে এভাবে দেখে। ইভানের চেহারায় তার খুশির রেশ বেশ স্পষ্ট। সেটা আরমানের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিলো। ইভানের দিকে তাকাতেই সে বাকা হেসে তার দিকে তাকাল। ইরা এসে ঈশার হাত ধরে টানতে টানতে বলল
–আপু আসো তো আমরা কালার সিলেক্ট করতে পারছিনা।

বলেই টেনে নিয়ে গেলো। ইভান আরমানের দিকে তাকাল। হেসে বলল
–কি মন খারাপ হয়ে গেলো? আফসোস হচ্ছে? তোর মন খারাপ আমি একদম সহ্য করতে পারিনা।

ইভানের কথা গুলো আরমানের রাগ আরও বাড়িয়ে দিলো। দাতে দাত চেপে বলল
–ভাবিস না আমি দমে যাব। বলেছি যখন তোকে ভালো থাকতে দিবনা তখন দিবনা। আমি এতো সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্র না মনে রাখিস।

ইভান শব্দ করে হাসল। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
–ঈশা আমার প্রেমে এতটাই পাগল যে তুই ওকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবি না। কোনভাবেই না। চেষ্টা করে দেখতে পারিস।

বলেই ইভান বাকা হেসে চলে গেলো। আর কোন কথা বাড়াল না। ইভানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আরমান বলল
–আলাদা তো করবই। যদি কিছু করতে না পারি তাহলে তোর জানকেই সরিয়ে দিবো। তবুও আমি তোকে ভালো থাকতে দিবো না। কখনই না।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here