অল্প থেকে গল্প?
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:৭
দুম করে টেবিলে বাড়ি পড়লো।টেবিলের ওপর গ্লাস স্ট্যান্ড সহ গ্লাসগুলো কেঁপে উঠলো,সেই সাথে ধক করে উঠলো উপল বুক!অনুর রণমূর্তি ভয়ংকর চেহারা ধারণ করেছে!উপল মনে মনে দোয়া ইউনুস পড়ে নিলো।অনু রাগে ক্ষোভে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—আমি তোর আবার বিয়ে দেবো ছবি!
উপল হাঁ করে তাকিয়ে আছে।ছবির কান ঝাঁ ঝাঁ করছে।বিয়ে বিয়ে খেলা চলছে নাকি?যে যাকে খুশি বিয়ে দিচ্ছে? ও থমথমে গলায় বলল,
—আমি কোন বিয়ে টিয়ে করছি না।
—কেন করবি না?
—তুমি জানো না কেন?
—না জানিনা।তুই বল কেন করবি না?
—আমি বিবাহিত!
—তো?
—তো মানে? একটা বিবাহিত মেয়েকে তুমি আবার বিয়ে দাও কি করে?..আমাদের কি ছাড়াছাড়ি হয়েছে?
—তোরা একসাথে ছিলি কবে যে ছাড়াছাড়ির কথা বলছিস?
ছবি ছলছল চোখে বলল,
—তুমি বুঝতে পারছো না আপু!আমি বিয়ে করতে পারবো না।
—পারবি একশোবার পারবি!শুদ্ধ আবার বিয়ে করতে পারলে তুই পারবি না কেন?
—কেন-টার উত্তর তুমি জানো!
—না জানি না।জানতে চাইও না।আমি শুধু জানি আমার বোন ফেলনা নয়!আমি আজই বাবাকে ফোন করে সব জানাবো।
—তোমার পায়ে পড়ছি আপু তুমি বাবাকে কিছু বলবে না।বাবা শুনলে হার্টফেল করবে।
—তাহলে বল তুই বিয়েতে রাজী?
—রাজী।
ছবি রাগ করে উঠে চলে এলো।যার যেমন খুশি সে তেমনভাবে ওর ডেস্টিনেশন ঠিক করে দিচ্ছে।একবার মা জোর করে শুদ্ধর সাথে ওর বিয়ে দিলো!এখন আবার বোন!সে যেন একটা পুতুল!
ছবি চলে গেলে উপল মিনমিনে গলায় বলল,
—কাজটা কি ঠিক হচ্ছে?
অনু রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকালো।সাথে সাথেই উপল ঢোক গিলে নিজের বলা কথাটা হজম করে নিলো!কি দরকার আগ বাড়িয়ে কথা বলার?
সুমনা অনেক্ষন যাবত রেস্টুরেন্টে বসে আছে।সে অবশ্য একটু তাড়াতাড়ি এসে পড়েছে।নরমালি এসব ক্ষেত্রে ছেলেরা আগে এসে বসে থাকে কিন্তু ওর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উলটো।সুমনা ভেবেছিলো শুদ্ধ বোধহয় একটু তাড়াতাড়ি এসে পড়বে।তাই সে নিজেও তাড়াতাড়ি বেরিয়েছিলো।ওকে অবাক করে দিয়ে শুদ্ধ ঠিক দুটোর দিকেই রেস্টুরেন্টে ঢুকলো।একেবারে জাস্ট টাইম।
সুমনার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।শুদ্ধ ওকে দেখতে পায় নি।ও হাত উঁচু করে ইশারা করতেই হাসিমুখে এগিয়ে এলো।মুগ্ধ হলো সুমনা,আনোয়ারা বেগম যখন উনার ছেলের কথা বলেছিলেন তখন সে মনে মনে মধ্যবয়স্ক,ভুঁড়িওয়ালা,টাক পড়া গুরুগম্ভীর এক প্রফেসরের ছবি কল্পনা করে নিয়েছিলো।তারপর যখন শুদ্ধর ছবি দেখেছিলো রীতিমত শক খেয়েছিলো সুমনা।কিন্তু ছবিতে যেমন দেখেছিলো বাস্তবে তারচেয়ে অনেক বেশি হ্যান্ডসাম শুদ্ধ।বলিউডের কোন হিরো নয়, মিডেলইস্টের মডেলদের মত টকটকে সুন্দর স্বাস্থ্যবান এক যুবক।চেহারা নমনীয়তার কারনে বয়স আন্দাজ করা যাচ্ছে না।তবে লেস দ্যান থার্টি পাক্কা সিউর সে!তাকে মোটেও গুরুগম্ভীর মনে হচ্ছে না।তবুও সুমনার মনের মধ্যে খানিকটা খচখচ করছে।
শুদ্ধ ওর সামনের চেয়ারে বসে মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো,
—দেরী করে ফেললাম নাকি?
—নাহ।আমি একটু তাড়াতাড়ি এসে পড়েছিলাম।
—তাড়াতাড়ি?
—হ্যাঁ।আমি ভেবেছিলাম আপনি বোধহয় তাড়াতাড়ি এসে বসে থাকবেন তাই।
শুদ্ধ আবারও সেই মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
—তাহলে তো আমার আগে আসা উচিৎ ছিলো।আপনার মত এমন সুন্দরীকে অপেক্ষা করিয়ে রাখা নিশ্চই ঘোরতর অপরাধ।অনুগ্রহপূর্বক অপরাধ মার্জনা করুন।
সুমনার হাসতে হাসতে বললো,
—করতে পারি যদি আর কখনো আমাকে সুন্দরী বলে লজ্জা না দেন।
—ওকে!দেন প্লিজ ফরগিভ মি মিস সুমনা,দ্যা হরিবল লেডি!
—নাইস জোক!
—থ্যাংক ইউ!
সুমনা আরো কিছু বলতে চাইছিলো এমন সময় ওয়েটার এসে গেলো ওর্ডার নেওয়ার জন্য।শুদ্ধ মেন্যুটা সুমনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
—ওর্ডার করুন।আমি কোন রিস্ক নিতে চাইছি না।আমার পছন্দ খুব একটা ভালো না।
সুমনা ওকে একঝলক দেখে মেন্যু কার্ডটা এগিয়ে নিলো।দুটো কোল্ড কফি অর্ডার করলো সে।
শুদ্ধ ভ্রু কুঁচকে বলল,
—লাঞ্চ আওয়ারে অনলি কফি?আর ইউ অন আ ডায়েট?
—না।আমি লাঞ্চ করে এসেছি!
—মাই ব্যাড লাক!আমি আপনার সাথে করবো ভেবে লাঞ্চ করি নি।
সুমনা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,
—রিয়েলি?..সরি!আমার জন্য আপনার লাঞ্চ করাও হলো না।দেরী করিয়ে দিলাম!আসলে আমি টেনশনে কিছু খেতে পারি না।তাই আগেভাগেই খেয়ে এসেছি!
—ইট’স ওকে।আই ওয়াজ জাস্ট জোকিং!আমার ক্লাস দেড়টায় শেষ হয়েছে।আমি সচরাচর এই সময়েই লাঞ্চ করি! তা টেনশনটা কি নিয়ে ছিলো?
—আপনার সাথে দেখা করা নিয়ে।
—ইজ ইট?
—হুম! ইংল্যান্ড থেকে এমডি করে আসা প্রফেসর তার এটিচিউড কেমন হবে ভেবে খানিকটা টেনশনে ছিলাম।
—এখন?
সুমনা হাসলো।দ্যাট মিনস ‘নট আ লিটল বিট!”
ওয়েটার কফি নিয়ে এলে সুমনা বলল,
—এটা নিয়ে যান!আমরা লাঞ্চ করবো!
ওয়েটার বিনীত ভঙ্গিতে বলল,
—ম্যাম আমরা ওর্ডার অনুযায়ী সার্ভিস দিয়েছি।ফেরত পাঠালে বিল পে করতে হবে।
—জানি আমি।আপনি লাঞ্চের অর্ডার নিন।
শুদ্ধ এজ এক্সপেক্টেড হাসি হেসে বলল,
—সো নাইস অফ ইউ!আই হ্যাভ সো মাচ এপিটাইট!
শুদ্ধর কথাবার্তা বাচনভঙ্গি সুমনার বেশ পছন্দ হয়েছে।সহজ সাবলীল!কোথাও কোন কৃত্রিমতা নেই।যদিও এইটুকু সময়ে কাউকে ভালোভাবে চেনার মত যথেষ্ট না।তবুও শুদ্ধকে বিশ্বাস করতে ওর কোন আপত্তি নেই!
লাঞ্চ শেষে শুদ্ধ সুমনা দুজনেই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো।আনোয়ারা বেগম ঠিকই বলে ছিলেন মেয়েটা রুপে গুনে আসলেই অনন্যা।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে সুমনা বলল,
—শুধুমাত্র আপনার সাথে দেখা করার জন্য ঢাকায় আসা।কাল বা পরশু ফিরে যাবো।
—এসে কি বুঝলেন?
—বলা যাবে না।হাইলি কনফিডেনসিয়াল!
শুদ্ধ হাসছে।সুমনা অবাক হয়ে বললো,
—হাসছেন যে?
—এই যে আমার জন্য আপনাকে কষ্ট করে চিটাগাং থেকে ঢাকা আসতে হলো তাই।
সুমনা অভিমানি ভঙ্গিতে বললো,
—আপনি তো ভীষণ অদ্ভুত।
—কেন বলুন তো?
— একটা মেয়ে আপনার জন্য কষ্ট করে চিটাগাং থেকে ঢাকা এসেছে কোথায় আপনার লজ্জিত হওয়ার কথা আপনি হাসছেন।
শুদ্ধ আবারও হেসে ফেললো সুমনার কথা শুনে।তারপর চোখেমুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বললো,
–যুগ বদলেছে।আগে ছেলেরা মেয়ে দেখতে যেত।এখন মেয়েরা ছেলে দেখতে আসে!ধরে নিন আপনি আমাকে দেখতে এসেছেন।
—আই এম ইম্প্রেসড্!
—দ্যান টেল মি দ্যা হাইলি কনফিডেনসিয়াল থিং!
সুমনা চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,
—নটি বয়!
শুদ্ধ হেসে উঠে বলল,
—ওকে! লেট’স গো!
শুদ্ধর হাসিতে আলাদা একটা জাদু আছে।কিন্তু সুন্দর করে হাসে সে।সুমনা অভিভূতের মত চেয়ে রইলো! আর কোন চিন্তা রইলো নেই।নিশ্চিতভাবে শুদ্ধকে বিশ্বাস করতে পারে সে!
ওকে ভাবতে দেখে শুদ্ধ ওর চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,
—আপনি কি আছেন?
—হু?
—কোথায় আছেন?
সুমনার ঘোর ভাংলো।লজ্জিত হাসি হেসে বলল,
—বলুন!
—চিটাগাং যাওয়ার আগে আপনি কি একবার আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?আসলে আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিলো।আপনার সুযোগ সময় মত বললেই হবে।
সুমনা বিনয়ী ভঙ্গিতে হেসে বলল,
—কেন শুধুশুধু লজ্জা দিচ্ছেন বলুন তো।আপনার সৌজন্যবোধ সত্যিই খুব বেশি।এইদুইদিন আমি পুরো ফ্রি!এট এন্যি টাইম আমরা দেখা করতে পারি!আসলে চিটাগাং যাওয়ার আগে আমারও একবার আপনার সাথে দেখা করা জরুরী ছিলো।আপনার সময় হবে কি না সেইজন্য বলতে পারছিলাম না।
—ঠিক আছে।আপনি সময় বের করে আমাকে জানাবেন, আমি চলে আসবো।তবে কাইন্ডলি একটু আগে জানিয়ে রাখবেন!
—ঠিক আছে।
আজকে সুমনার সাথে সেকেন্ড মিটিং ছিলো শুদ্ধর। রাতে খেতে আনোয়ারা বেগম শুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
—সুমনাকে তোর কেমন লেগেছে?
ঠুস করে চামচের আওয়াজ হলো।অন্য কেউ না বুঝলেও এই আওয়াজের রহস্য উপলের জানা।
শুদ্ধ খেতে খেতে বললো,
–ভালো।
–আমি সামনের মাসেই তোদের বিয়েটা সেরে ফেলতে চাই।সুমনার রেজাল্ট বের হলে আবার ইন্টার্নি শুরু হবে।তাই ওর বাবা চাইছেন ইন্টার্নির আগেই বিয়ের ঝামেলা সেরে ফেলতে।আমারও আপত্তি নেই। তুই কি বলিস?আমি তোর সাথে আলাপ করবো বলে ওদেরকে পাকাপোক্ত কিছু বলি নি!
–ভালো করেছো।আগামী মাসে আমার তেমন কোন ঝামেলা নেই।
–তুই না বললি মেডিকেল ক্যাম্প আছে?
–ওটা পিছিয়েছে।এর পরের মাসে হবে।
–তাহলে তো ভালোই হলো।
অনু চেঁচিয়ে কিছু একটা বলতে নিচ্ছিলো,ছবি ওর হাত চেপে ধরে থামিয়ে দেয়।
উপল আনোয়ারা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,
–বিয়ে কি ঢাকাতে হচ্ছে?নাকি চিটাগাং?
–চিটাগাং এই হবে।ঢাকাতে হলে ওদের অসুবিধে হয়ে যাবে।তাছাড়া আমাদের আত্মীয় স্বজন বেশিরভাগই চিটাগাং থাকে।
–না আমার ছুটি নিতে হবে তো তাই।
–ছুটি একটু বাড়িয়ে নিবি।ওখানের সব গোছগাছ তো তোকেই সামলাতে হবে।
–ঠিক আছে।
অনেকদিন পর ডিনার সেরে ছাদে বসে হাওয়া খাচ্ছে দুইভাই।রাত্রিবেলা সাধারণত একপার্টমেন্টের ছাদ খোলা থাকে না।দারোয়ানের কাছ থেকে চাবি নিয়ে শুদ্ধ ছাদের তালা খুলেছে।পুরো ছাদজুড়ে বাতাসের শোঁশোঁ আওয়াজ হচ্ছে।মাথার ওপরে মস্তবড় চাঁদ!নিচে ব্যস্ত নগরী!তার সাথে যুক্ত হয়েছে ঠান্ডা বাতাসের শীতশীত অনুভূতি!শুদ্ধ ট্রাউজারের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ালো।
উপল উদাস কন্ঠে বলল,
—শুদ্ধ?
—বলো ভাইয়া!
—এখন বাংলা কি মাস জানিস?
—জানি!
উপল প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো।
—ফাল্গুন মাস!
—তুই বাংলা মাসের হিসেবও রাখিস?
—না।গতকাল মেয়েরা সবাই হলুদ শাড়ি পরে ক্লাস করতে এসেছিলো।জিজ্ঞেস করলাম,”কি ব্যাপার তোমরা সবাই শাড়ি পরেছো কেন?” তখন ওরাই আমাকে জানালো গতকাল পহেলা ফাল্গুন ছিলো।
উপল ছাদের এমাথা-ওমাথা হাঁটছে।শুদ্ধ পকেট থেকে ফোন বের করে ফেইসবুকে ঢুকলো।
অনেকক্ষন হাঁটাহাটির পর উপল হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
—তুই কি আদৌ সুমনাকে বিয়ে করবি?
—না ভাইয়া আমি বিয়েটা করছি না।
চমকালো না উপল।শুদ্ধ যে এমন কিছু ভাবতে পারে সেটা ওর জানা আছে।
—তাহলে? এসবের মানে কি?
—উপায় নেই।
—ক্লিয়ার করে বল!
—ওকে!..ধরো আমি যদি এখন মাকে গিয়ে বলি আমি বিয়ে করবো না, মা কি করবে?আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবে!
—তাহলে?
—এমন কিছু করতে হবে যাতে বিয়েটাও না হয়।মায়েরও কিছু করার না থাকে!
—কি করবি তুই? বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাবি?
—পালাবো কেন?
—তো কি করবি?
—শেষ মুহূর্তে বিয়েটা ক্যান্সেল করে দেবো।
—কিন্তু সুমনা?
—সে অন্য একজনের কাছে কমিটেড।চাপে পড়ে বিয়েতে রাজী হয়েছে!
—তাহলে শেষ মুহূর্তে ক্যান্সেল করার দরকার কি?মাকে বললেই তো হয়।অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে এমন মেয়ের সাথে মা নিশ্চই তোর বিয়ে দিতে চাইবে না?
—না চাইবে না।কিন্তু একজনকে নিষেধ করে দিলে মা আরেকজন জোগাড় করে ফেলবে।
—মা কিন্তু তোর উপর ভীষণ ক্ষেপে যাবে।
—একটু ক্ষেপবে হয়ত।তবে মা খুবই নরম মনের মানুষ!ছবি মায়ের সাথে যথেষ্ট খারাপ ব্যবহার করেছে।তাই মা রাগের বশে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।মা যদি সত্যিই চাইতো আমি আবার বিয়ে করি তাহলে মা লুকিয়ে চুরিয়েই সুমনার সাথে আমার বিয়ে দিতে পারতো।মা কিন্তু তা করেনি!তারমানে?
উপল হাঁ করে তাকিয়ে বলল,
—তাহলে কি করতে চাইছিস তুই?
—ছবিকে বোঝাতে চাই সম্পর্ক জিনিসটা কোন সস্তা ব্যাপার নয়।আমি বা সে চাইলেই এই ভেঙ্গে দিতে পারি না।যখন ইচ্ছে জটিল করলাম,যখন ইচ্ছে সহজ করতে চাইলাম এমন নয়।ওকে বুঝতে হবে একটা সম্পর্ক জটিল করে ফেলার পরে চাইলেই তা সহজ করা যায় না!তারজন্য কষ্ট করতে হয়।আই ওয়ান্ট টু টিচ হার আ লেসন।
—ও না বুঝে তখন ডিভোর্স চেয়েছিলো তো এখন আর ডিভোর্স চাইছে না?
— আমি জানি,ও এখন ডিভোর্স চাইছে না।ভবিষ্যতেও যাতে না চাইতে পারে তার ব্যবস্থাই করছি। তালাক বা ডিভোর্স হচ্ছে একমাত্র হালাল কাজ যেটা আল্লাহতালা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন।কিন্তু এখানকার সময়ে কথায় কথায় ডিভোর্স একটা ফিল্মডম হয়ে গেছে।ছবির কথাই ধরো, ক্লাস সেভের বাচ্চা মেয়ে আমার কাছে কি না ডিভোর্স চায়? বিয়ে মানে কি?এর মর্যাদা কতটুকু সেটা না জানলেও ডিভোর্স কি সেটা জেনে গেছে।আশ্চর্য না?
—তাই বলে তোকে বিয়ে করতে হবে?
—আমি তো বিয়ে করছি না ভাইয়া!আমি ছবির আর আমার সম্পর্কটাকে গাঢ় করতে চাইছি।ছবি এখনো কল্পনার জগতে বাস করছে।ওর ধারনা ওর ডিভোর্স চাওয়া,মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করা,আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা এগুলো কোন গুরুতর অপরাধ নয়।একটাই অজুহাত ও তখন ছোট ছিলো।কিন্তু ছোট হোক বড় হোক সে তো অন্যায় করেছে? ওকে তো সেটা বুঝতে হবে? আমি সবকিছু ভুলে ওকে মেনে নিলাম,কিন্তু লাভ কি হবে?আমাদের সম্পর্কের বাঁধনটা তো আলগাই থেকে যাবে?মা? মা আমার জন্য হয়ত ওকে মেনে নেবে কিন্তু মনে মনে ওকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে না!আমি চাই ছবি নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে আমাদের সম্পর্কের হাল ধরুক!আমি ওকে সর্বাত্মক সাহায্য করবো!
উপল বিমোহিত হয়ে ভাইয়ের কথা শুনছে।সে নিজেও কখনো তার আর অনু সম্পর্কটা নিয়ে এভাবে ভাবে নি। সম্পর্কের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করে নি।শুদ্ধর কাছ থেকে অনেককিছু শেখার আছে ওর।শুদ্ধ একটুখানি হেসে বলল,
—আমি অনেক ভেবে চিন্তে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভাইয়া।ছবিকে আমি আমার মতন করে গড়ে তুলবো!ওর যেমন আমাকে চাই,আমারও তো ওকে চাই!ফিলিংসটা তো দরকার?যেদিন আমার মনে হবে হ্যাঁ আমি ওকে চাই!সেদিন আমি ওকে কাছে টেনে নেবো।
—কিন্তু তোর ভাবী তো ওর জন্যে পাত্র খুঁজছে?
শুদ্ধ হাটতে হাটতে ছাদের একপাশে চলে গেলো।
—তোমার কি মনে হয় ছবি বিয়েতে রাজী হবে?
—না
—কেন?
—কারন ও তোদের বিয়েটা মেনে নিয়েছে!
—সেজন্যই তো আমি দেখতে চাই আমাদের বিয়েটা টিকিয়ে রাখার জন্য সে কতটুক পর্যন্ত যেতে পারে!
—আর যদি না পারে? তুই কোনদিন ওকে স্বীকার করবি না?
—কেন নেবো না?আমি মনে প্রাণে স্বীকার করি ছবি আমার স্ত্রী।আইনত এবং বৈধ স্ত্রী!কিন্তু কাছে টেনে নেওয়াটা কি চাইলেই পারা যায় না? মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কি করে তাকে কাছে টেনে নেবো।তবুও স্ত্রী হিসেবে সে যদি আমার কাছে তার অধিকার দাবী করে আমি সেটা পূরণ করবো।তারজন্যে অবশ্যই ওকে চাইতে হবে।
সুমনার সাথে দেখা করার দুদিন বাদে শুদ্ধ কাজ শেষ করে বাসায় এসে অবাক হয়ে গেলো।পুরো ঘরভর্তি মেহমান।রান্নাবান্নার আয়োজন হচ্ছে।শুদ্ধ রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলল,
—এসব কি ভাবী?
—এসে গেছো তুমি?
—হ্যাঁ।আজকে হাফ ডিউটি।
—ভালো হয়েছে তুমি এসেছো।
—কিন্তু বাসায় এত মেহমান কি উপলক্ষে?
—ছবিকে দেখতে এসেছে।
—মানে?
—ছেলের নিজের ব্যাবসা।ওত আহামরি কিছু নেই কিন্তু নির্ঝঞ্ঝাট ফ্যামিলি।
শুদ্ধ আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কমপক্ষে পঞ্চাশ জনের মত মেহমান হবে।তারসাথে বাচ্চাকাচ্চা তো আছেই।ওদের চিৎকার চেঁচামেচিতে শুদ্ধর কানের তালা ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা।উপলকে দিয়ে মেহমানদারি করানো হচ্ছে।কাচুমাচু চেহারা নিয়ে উপল ওদের সাথে বসে আছে।
শুদ্ধ ঠোঁট চেপে বললো,
—এটা নির্ঝঞ্ঝাট ফ্যামিলি?
অনু ওর কথা শুনে হেসে ফেললো।তারপর হাসতে হাসতেই বললো,
—আরে না।ওরা তো অনুষ্ঠান উপলক্ষে এসেছে।
শুদ্ধ চশমাটা একটু উপরে ঠেলে দিয়ে বললো,
—ছবি কোথায়?
—রেডি হচ্ছে।
শুদ্ধ আর কিছু না বলে নিজের ঘরে দিকে চলে গেলো।সবে একটা বই নিয়ে বসেছে এমন সময় ছবির গলা শুনে কিছুটা অবাক হলো।
—আসবো?
—এসো।
ছবি ভেতরে ঢুকে ছলছল চোখে বললো,
—আমাকে কেমন লাগছে?
টুকটুকে লাল রংয়ের একটা শাড়ি পরানো হয়েছে ছবিকে।সেই সাথে হালকা সাজ। শাড়ি পরায় ছবিকে একটু বড় লাগছে।শুদ্ধ দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
—কি চাই?
ছবি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।শুদ্ধ ওকে এভাবে কাঁদতে দেখে হাতের বইটা রেখে উঠে এলো।
ওর হাতদুটো ট্রাউজারের পকেটে।ছবির মুখোমুখি ঝুঁকে নরম গলায় বললো,
—কাঁদছো কেন?
—আপনি জানেন না?
—উহু!
—আমি আসি।সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।ছবি বেরিয়ে যেতে নিলেই শুদ্ধ আবার ডাক দিল।পাশের টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে ছবির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
—চোখ মোছো।আমি বিয়েটা করছি না।সো কান্নার কিছু নেই!
.
.
চলবে