তোমাতেই পূর্ণ আমি ❤,পর্বঃ০৫

0
3398

তোমাতেই পূর্ণ আমি ❤,পর্বঃ০৫
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

মিনি এতোদিন ধরে এই বাড়িতে আছে অথচ বাড়িটাই ঘুরে দেখা হয়নি।তাই ঠিক করেছে আজ বাড়িটা ঘুরে দেখবে।বাড়িটা ঘুরে দেখতে দেখতে মিনি সকালের কথা ভাবতে লাগলো।স্পর্শের গায়ে পানি ফেলার পর স্পর্শ রেগে খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ে। গটগট করে রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়।মিনি ভয়ে আর রুমের দিকে পা বাড়ায়নি।রুমে গেলেই স্পর্শ সমস্ত রাগ মিনির উপর ঝাড়বে।

বাড়িটা ঘুরে দেখে এবার গেলো বাগানে।বাগানের এক পাশে নানা রকমের ফুলের গাছ। অন্য পাশে ছোট একটা গোল টেবিল সাথে চেয়ার।মিনি গাছের ফুল গুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে।দেখতে দেখতে শেষ প্রান্তে গিয়ে মিনির নজর আটকে য়ায একটা গাছে।গাছটা কৃষ্ণচূড়া ফুলের।মিনির সবচেয়ে প্রিয় ফুল কৃষ্ণচূড়া আর কাঠগোলা।খুশিতে মিনি গাছটির দিকে এগোতেই পেছন থেকে ডাক পড়লো।

ভাবি,,,,,, কি করছো…..?(মাহিরা)

মিনি পেচনে তাকিয়ে মাহিরাকে দেখে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল,বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।কিন্তু তুমি এখন এখানে কেন তোমার তো এখন স্কুলে থাকার কথা।

মাহিরা আমতা আমতা করে বলল ওই এমনি ভালো লাগছিলো না তাই চলে এলাম।তাছাড়া তোমার সাথে ও তো তেমন কথা হয়নি,তাই ভাবলাম আজ তোমার সাথে গল্প করবো।

মিনি ভ্রুকুটি করে তাকায় আজ হঠাৎ আমার সাথে গল্প করতে কেন চাইছে মেয়েটা….?তারপর নিজের মনে বলে ওঠে কিজানি আমার এতসব বুঝে কাজ নেই।

তারপর মিনি আর মাহিরা বাগানটা ঘুরতে ঘুরতে গল্প করতে লাগলো।গল্প করার মাঝেই মাহিরা মিনির ফ্রেন্ডদের কথা জিজ্ঞেস করে, কয়টা ফ্রেন্ড, ক’জন ছেলে,ক’জন মেয়ে।মিনি ও তার উত্তর দিচ্ছে।মাহিরা শুধু মিনির ফ্রেন্ড রিজুর কথাই বারবার বলছে,প্রসংশা করছে।
মিনি কিছু একটা আন্দাজ করে নিঃশব্দে হাসলো।

আজ স্পর্শ নাক চুলকোবার সময় পাচ্ছে না।বিয়ের কারনে অফিসে আসতে পারেনি তাই প্রচুর কাজ পেন্ডিংপড়ে আছে।সেগুলোই করছে।পিয়ন কফি দিয়ে গেছে প্রায় ত্রিশ মিনিট হবে।কফি ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে।

ড্রাইভার মিনির সব বই এনে দিয়েছে।মিনি সেগুলোই গুছিয়ে রাখছে স্পর্শর রুমে কর্নারে রাখা একটি টেবিলে।বই গুলো গুছিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিচে গেলো।মা,মাহিরা,আর মিনি লাঞ্চ করছে।বাবা কোনো এক ফ্রেন্ডর বাসায়, স্পর্শ অফিসে। খাওয়া শেষ করে মিনি রুমে এসে মোবাইল নিয়ে গেমস খেলতে লাগলো।এটা ওর বিয়ের আগের মোবাইল।বিয়ের কিছুদিন আগেই আদিল কিনে দিয়েছিল।গতকাল ও বাড়ি থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছে।গেমস খেলতে খেলতে মিনি ঘুমিয়ে পড়ে।

স্পর্শ বেশ রাত করেই বাসায় এসেছে।কাজ শেষ করতে দেরি হয়ে যায়।রুমে ঢুকেই স্পর্শ শুনতে পেলো কেউ ফাটা গলায় গান গাইছে,

“Tomame la mano que tu eres cosa buena
Esta nocha quiero bailar sobre la arena”

“No say una ajena,no say nada mal
Ven paka,ven paka,y ahora”

স্পর্শ অনেক টায়ার্ড, এরমাঝে এরকম ফাটা বাঁশের গলায় গান শুনে প্রচন্ড বিরক্ত।অফিসের ব্যাগ রেখে স্পর্শ ফ্রেশ হতে চলে যায়।স্পর্শ এসেছে দেখেও মিনি ভ্রুক্ষেপ করলোনা।খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছে।ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে মিনি সেদিকে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।স্পর্শের মুখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি টপটপ করে পড়ছে।হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি,মুখের সেই লাল তিল, চোখের পাপড়ি গুলো পানিতে ভিজে আছে,ঠোঁট দুটি গোলাপি হয়ে আছে।সিল্কি ভেজা চুলগুলো কপালের উপর আছড়ে পড়েছে।পরনে একটা ব্লু কালার স্লিভলেস গেঞ্জি আর অফ হোয়াইট ট্রাউজার।সব মিলিয়ে মিনির কাছে মনে হচ্ছে সে যেন স্বপ্নে কোনো হিরোকে দেখছে।চোখ বুজলেই যেন স্বপ্ন ভেঙে যাবে।সে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে স্পর্শের দিকে, চোখের পলক ফেলছেনা।

এদিকে মিনিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ বেশ জোরেই বলল
এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন..?মনে হচ্ছে আমাকে চোখ দিয়েই গিলে খাবে।তোমার আমাকে গেলা হলে এবার আমাকে গিলতে দাও।

স্পর্শের কথায় মিনি বেশ লজ্জায় পরে যায়।সত্যিই তো ও কিরকম বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো স্পর্শের দিকে।কিন্তু স্পর্শের শেষের কথাটা মিনি ঠিক হজম করতে পারলোনা।ওনাকে গিলতে দিবো মানে কি..?

মিনি হকচকিয়ে গিয়ে বলল,
ম,,মানে….?

স্পর্শ বলল,মানে আমিকি খাবোনা..?দুপুরে ও কাজের চাপে খেতে পারিনি।তাড়াতাড়ি ডাইনিং এ খাবার দাও।

মিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,ওহ,,,,,

স্পর্শ ভ্রুকুটি করে বলল,কেন…?তুমি কি ভেবেছিলে।

নাহ কিছু না।আমি আবার কি ভাববো(মিনি)।

মিনি যে কি মিন করেছে তা বুঝতে পেরে দুষ্টু হেসে বলল,তুমি যা ভেবেছো সেটা হলে ও খুব একটা খারাপ হতো না।

অসভয় লোক বলে মিনি এক মূহুর্তের জন্য না দাড়িয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মিনি বেরুতেই স্পর্শ হু হা করে হেসে ওঠে।মেয়েটাকে ভালোই জব্দ করতে পেরেছে সে।

আজ খুব ভোরেই মিনির ঘুম ভাঙে।কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর মিনির মনে হলো ও কোনো শক্ত কিছুর উপর শুয়ে আছে।জিনিসটা কি দেখতে গিয়ে মিনি অবাক কারণ ও স্পর্শের বুকে স্পর্শকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে শুয়েছিলো,স্পর্শের একহাত ওর পিঠে।মিনি আস্তে আস্তে সরে এলো।ইস স্পর্শ জেগে থাকলে কি লজ্জাতেই না পড়তে হতো মিনিকে।

ঘড়িতে সকাল ০৭ঃ০০ টা বাজে। স্পর্শ ঘুম থেকে উঠে পাশে মিনিকে দেখলো না।হয়তো ওয়াশরুমে আছে।কিন্তু না আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ওয়াশরুম, ব্যালকনি কোথাও দেখতে পেলো না মিনিকে।পাশেই ছোট্ট টেবিলটায় এক মগ কফি রাখা।প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই কফি খাওয়া স্পর্শের ডেইলি রুটিনের মধ্যে পড়ে।কফির মগটা হাতে নিয়ে খুব সফটলি চুমুক দেয় স্পর্শ।চুমুক দিয়েই স্পর্শ ভ্রু-কুচকায়।কারণ আজ কফির স্বাদটা অন্যরকম।কফিটা বেশ ভালোই লাগলো স্পর্শের কাছে।কফির স্বাদ অন্যদিনের চেয়ে আলাদা হওয়ায় স্পর্শের বুঝতে বাকি নেই কফিটা কে বানিয়েছে।মায়ের হাতে বানানো কফির স্বাদ স্পর্শ খুব ভালো করেই চিনে।বাকি রইলো মাহিরা সে এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবেনা। তারমানে কফিটা নিশ্চয়ই মিনি বানিয়েছে।ব্যালকনিতে দাড়িয়ে খুব আয়েশ করেই কফির মগে চুমুক দিচ্ছে স্পর্শ সাথে আশপাশটা দেখছে।হঠাৎ ওর চোখ যায় বাগানের এক কোনায় কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালে কেউ ঝুলে আছে।জামা দেখে মনে হচ্ছে এটা মিনি।মেয়েটা ওখানে কি করছে…?

এদিকে মিনি ঘুম থেকে উঠেই বাগানে এসে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে।এক কাপ কফি হলে ভালো হয়।তাই ছুটে রান্না ঘরে এসে কফি বানিয়ে নেয়।কফি বেশি হওয়ায় দুটো মগে ঢেলে এক মগ নিজের জন্য রেখে অন্য মগ স্পর্শের জন্যে রেখে আসে।তাড়াতাড়ি জেগে গেলে খেয়ে নিতে পারবে।আর যদি ঠান্ডা হয়ে যায় তাহলে তো খাওয়া যাবে না।
নিজের জন্য রাখা মগটা হাতে নিয়ে আবার বাগানের দিকে যায় মিনি।কফি শেষ করে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে গিয়ে ঝরে যাওয়া ফুল গুলো কুড়িয়ে নেয়।তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবে এখন যদি বাতাসে ওর গায়ে ফুল ঝরে পড়ে তাহলে ব্যাপারটা দারুন হবে।কিন্তু এখনতো কোনো বাতাস নেই। আচ্ছা আমি যদি একটা ঢাল ঝাঁকুনি দি তাহলে তো আমার গায়ে ফুল পড়বে।যেইভাবা সেই কাজ,সবচেয়ে নিচু ঢালটা দেখে মিনি লাফিয়ে ঢালটা ধরার চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।পরে একটা চেয়ার টেনে তার উপর দাঁড়িয়ে মিনি ঢালটা ধরতে সক্ষম হয়।কিন্তু বিপত্তি বাধলো চেয়ারটা পড়ে গিয়ে।এখন আর মিনি নামতে পারছে না,গাছের ঢাল ধরেই ঝুলে আছে অনেক্ক্ষণ।

হঠাৎ করে কেউ কোমর জড়িয়ে ধরায় মিনি হকচকিয়ে যায়।তাকিয়ে দেখে স্পর্শ।মিনিকে নামাতে নামাতে স্পর্শ দাঁতে দাঁত চেপে মিনিকে জিজ্ঞেস করলো,,
এই সাত সকালে এখানে এসে ঝুলে আছো কেন…?সমস্যা কি তোমার।
মিনি আমতা আমতা করে বলে,
ওই আসলে হাটতে বেরিয়েছি।তারপর গাছ থেকে ফুল নিতে গিয়ে চেয়ারটা পড়ে যায়,আর আমি ঝুলে যাই।

সিরিয়াসলি,,,,,?তুমি ফুল নিতে গাছে উঠেছো..?এগুলো তোমার দ্বারাই সম্ভব বলে স্পর্শ হাটা ধরলো বাসার ভিতর।

সবাই একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করছে।আজ আর স্পর্শ রেডি হয়ে আসেনি।যদি আজো মিনি পানি ঢেলে দেয়….?ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠতে নিলেই মামুন চৌধুরী স্পর্শকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, মিনিকে আজ কলেজে পৌঁছে দিতে।
স্পর্শ বলল,আগে তো একাই যেত।
মামুন চৌধুরী বললেন, আমি এতো কথা শুনতে চাইনা।আগে ও কিভাবে কলেজ যেতো তা আমার জানার দরকার নেই।এখন ও এই বাড়ির বউ তাই ওর সমস্ত রেসপনসেবলিটি আমাদের।

স্পর্শ মিনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,আমার সাথে যেতে হলে ১০ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নাও।মিনি খাবার ছেড়ে দৌঁড়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো রেডি হতে।স্পর্শ রুমেই রেডি হয়ে নেয়।তারপর দুজন একসাথে বেরিয়ে পড়ে।স্পর্শ ড্রাইভিং সিটে বসেছে,আর মিনি ফ্রন্ট সিটে।
গাড়ি চলতে শুরু করলো তার আপন গতিতে।মিনি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।স্পর্শ মাঝেমাঝে আড়চোখে মিনিকে দেখছে।গাড়ি এসে থামলো কলেজর সামনে।মিনি নেমে সোজা কলেজের ভেতর ঢুকে গেলো।স্পর্শ ও গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

কলেজের ভেতর গিয়ে মিনি তার ফ্রেন্ডদের একজায়গায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেল।ক্লাসের বাকি আর পাঁচ মিনিট আছে তাই সবাই ক্লােস চলে গেলো।মিনি যে আজ কলেজে আসবে তা ওর ফ্রেন্ডরা জানে।মিনি সকালেই ফোন করে সবাইকে জানিয়েছে।

ফাস্ট পিরিয়ডে ইংরেজির ক্লাস।ইংরেজির টিচার একমাসের জন্য ট্রেনিং এ গেছে।তাই একজন গেস্ট টিচার মিনিদের ইংরেজি ক্লাস নেয়।ক্লাস শেষ করে স্যার যাওয়ার সময় মিনি দাড়িয়ে বলল,
এক্সকিউজ মি স্যার,,!জিলাপির ইংরেজি কি….?
প্রত্যুত্তরে স্যার বলল,তোমার কি এখন জিলাপি খাইতে মন চায় নাকি।আর কোনো কথা না বলেই স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেলেন।ক্লাসের সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।মিনি ভ্যবলার মতো তাকিয়ে আছে স্যারের যাওয়ার পানে।তারপর নিজের মনকে বুঝালো,,,,কামন মিনি কি এতো ভাবছিস,স্যার নিজেও জানে না জিলাপির ইংলিশ কি তাইতো তোকে বলতে পারেনি।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here