তোমাতেই পূর্ণ আমি ❤,পর্বঃ১১
লেখিকাঃজিন্নাত চৌধুরী হাবিবা
স্পর্শকে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখে মিনি জিজ্ঞেস করলো,
কি হয়েছে মুখটাকে এরকম বাংলার সাত বানিয়ে রেখেছেন কেন?
স্পর্শ মুখ ফুলিয়ে রেখেই বলল,
সব হয়েছে তোমার জন্য।আদিল ভাইয়া না জানি কি ভাবছে?ছিঃ,আমি কিনা বড়ো সালার বাসরে বাগড়া দিতে গিয়েছিলাম?
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
প্যারা নাই চিল।ভাইয়া কিছুই মনে করবেনা আপনার ব্যাপারে।ভাইয়া ভালো করেই জানে এগুলো তার বোনের কাজ।
স্পর্শ বলল,
সিরিয়াসলি?যেসব কাজ বন্ধুদের করার কথা সেগুলো কি-না ছোট বোন করছে?হাউ,,,,,
ডিজিটাল সিস্টার বলেই মিনি সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।স্পর্শ ও মিনিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
মিনির কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।মিনি অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,
ক,,,কি করছেন কি?ছাড়ুন।
চুপচাপ ঘুমাতে দাও।সারাদিন আমাকে দিয়ে আকাম-কুকাম করানোর শাস্তি এটা।বলেই স্পর্শ মিনিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে নিলো।
মিনি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু কিছুতেই সফল হচ্ছে না।অনেক ধস্তাধস্তির পরও যখন স্পর্শের সাথে পারলোনা,তখন চুপ করে যায়।
স্পর্শ পিঞ্চ মেরেই বলল,
কি?শক্তি শেষ?শুধু শুধু শক্তি টুকু খরচ করলে।
মিনি রাগে কথা বলতে পারছেনা।ইচ্ছে তো করছে বেটার চুল গুলো ছিড়ে টাক বানিয়ে ফেলি।ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে স্পর্শ আর মিনি।
এদিকে আদিল রক্তচক্ষু নিয়ে রিয়ার দিকে এগোচ্ছে।রিয়া ভয়ে পেঁচাচ্ছে।এক পর্যায়ে রিয়ার দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায়।আর পেছানোর জায়গা নেই।আদিল রিয়ার দুবাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলল,আমার সাথে মজা করা তাইনা?দেখাচ্ছি মজা করার ফল।বলেই রিয়াকে কোলে তুলে নেয়।রিয়া শক্ত করে আদিলের শার্ট খামছে ধরে।তারপর রিয়া আর আদিল হারিয়ে যায় ভালোবাসার অতল সমুদ্রে।
সকাল সকাল মিনির ঘুম ভাঙে দরজার কড়াঘাতে।বিরক্তিতে মিনির কপাল কুচকে যায়।এতো সকালে কে দরজা ধাক্কাচ্ছে।স্পর্শের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিরক্তি নিয়েই দরজা খোলে মিনি।
দরজা খুলেই মিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কারণ দরজার সামনে মাহিরা দাঁড়িয়ে আছে।এতো সকালে এই মেয়ে এখানে কি করছে?ভেবেই কপাল কুচকে যায় মিনির।
কুচকানো কপাল শীতল না করেই জিজ্ঞেস করলো,
কি ব্যাপার মাহিরা?তুমি এতো সকালে এখানে?কোনো দরকার?
মাহিরা আমতা আমতা করেই বলল,আ’ম সরি ভাবি এতো সকালে তোমাদের ডিসটার্ব করলাম।আসলে কালকে রাতেই আসতাম বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় আসিনি।
মিনি বলল,ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাসাপটা বলো,কি বলতে চাও?
রিজু আমার সাথে ব্রেকআপ করেছে কাল রাতে।ছবি দিনাই বলে।আমি বলেছি সুন্দর করে ইডিট করে কালকে দেবো।ও শুনলোইনা।বলেই ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কেঁদে ফেলে মাহিরা।
মিনি এবার প্রচন্ড বিরক্ত।সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে ওর আরামের ঘুমটা নষ্ট করলো।অসহ্য।কিন্তু মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে বলল,তুমি ছবি গুলো ইডিট করে এখনই পাঠিয়ে দাও দেখবে রিজুর রাগ পানি হয়ে গেছে।
সত্যি বলছো তো ভাবি?মাহিরা বলল।
মিনি বলল,হ্যাঁ সত্যি বলছি।যাও তাড়াতাড়ি য়াও।
মাহিরা চলে যেতেই মিনি দরজাটা ঠাস করে বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।এই মেয়ের আর কাজ নেই এই সামান্য বিষয়ে কেউ প্যানিক করে?
সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে।মিনি স্পর্শের পাশেই বসেছে।আদিল রিয়ার পাশে।রিয়া খাবার সার্ব করতে গেলেই মিসেস জামান রিয়াকে খেতে বসিয়ে দেয়।উনি বলেন,
সংসারটা তো তোমারই।এসব কাজ পরেও করতে পারবে।আগে কিছুদিন নিজেকে সময় দিয়ে সবার সাথে নরমাল হও।
মিসেস জামানের কথায় রিয়ার মায়ের কথা মনে পড়ে যায়।এখানে এসে ও আরেকটা মা পেলো।সবার খাওয়া শেষ।যে যার কাজে চলে গেলো।
কোত্থেকে মাহিরা দৌঁড়ে মিনিকে ঝাপটে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,থ্যাংক ইউ ভাবি!রিজুর রাগ কমে গেছে ছবি দেওয়ার পর।তারপর মিনিকে ছেড়ে দিয়ে খুশি মনে উপরে চলে যায়।
মাহিরার কান্ডে মিনি মুচকি হাসে।পাগলি মেয়ে একটা।
“কিছুদিন পর”
মিনিদের বাসা থেকে সবাই এসেছে কিছুদিন হলো।মিনি আর স্পর্শের সম্পর্ক এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।দুজনেই দুজনের জন্য কিছু একটা ফিল করে।এখন শুধু বলার অপেক্ষা।
স্পর্শ আজ অফিসে যায় নি।মিনিকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।সারাদিন ঘোরাঘুরির পর আসার পথেই একটা মেয়ে দৌঁড়ে এসে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে।স্পর্শ মেয়েটিকে ছাড়িয়ে বলল,কেমন আছো?
মেয়েটি জবাব দিলো,
ভালো,এতোদিন কোথায় ছিলে তুমি?জানো?কতো খুজেছি তোমায়।
মিনির চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।স্পর্শ মেয়েটার সাথে বেশ হাসি খুশি ভাবেই কথা বলছে।দেখে মনে হচ্ছে এখানে মিনি নামের কেউ নেই।মিনি ভাবলো স্পর্শ হয়তো মেয়েটাকে ভালোবাসে।তাই ওদের মাঝে না থাকাটাই বেটার হবে।মিনি ওখান থেকে চলে এলো।
স্পর্শ বলল,আমিও তো আর তোমার দেখা পাই নি।
মেয়েটি বলল,তোমার সাথে মেয়েটি কে ছিলো?
ওহ মিনি?মিট মাই ওয়াইফ,,,,
একি?মিনি কোথায় গেলো?মিনি?মিনি?
ও তোমার ওয়াইফ?মেবি ভুল বুঝেছে আমাদের দেখে।তাই হয়তো চলে গেছে।এনিওয়ে আমার বিয়ে সামনের মাসের ২তারিখ।ছেলে আমেরিকায় সেটেল।বিয়ের পর আমাকেও নিয়ে যাবে।তোমার ওয়াইফকে নিয়ে আসবে কিন্তু।
স্পর্শ বলল,অবশ্যই আসবো।আচ্ছা আমি যাই হ্যাঁ?মেয়েটা বড্ডো অবুঝ।মানাতে হবে।বায়।
মিনি একটা অটো ধরে বাড়ির সামনে এসে থামলো।মেয়েটা এতো ইমপরটেন্ট উনার কাছে?আমি কিছুই না?একটাবার আমার পেছনে আসলোও না।কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে মিনি।
স্পর্শ দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করছে।মেয়েটা নিশ্চয়ই কেঁদে কেটে সমুদ্র বানিয়ে ফেলেছে।এতোক্ষণ স্পর্শ যে মেয়েটির সাথে কথা বলছিলো?সে স্পর্শের কলেজ ফ্রেন্ড।এতোদিন যোগাযোগ থাকলেও বেশ কয়েকমাস কোনো যোগাযোগ নেই।ওরা একে অপরকে কলেজ লাইফ থেকেই
তুমি বলে এসেছে।আগের অভ্যাস ছাড়তে পারেনি তাই এখনো তুমি করেই বলে।
স্পর্শ বাসায় এসে হন্তদন্ত হয়েই রুমে ঢুকে।স্পর্শের কলিজায় মোচড় দিয়ে ওঠে।কারণ মিনি দুই হাটি ভাজ করেই হাটুতে মাথা ঠেকিয়ে কান্না করছে।
স্পর্শ ধীর গতিতে মিনির সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে।মিনির মাথা তুলে দুই হাতে আলতো করে মিনির গাল চেপে ধরে।মিনি নিজেকে স্পর্শের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কান্না জড়িত গলায় বলে উঠলো,
ছাড়ুন আমাকে।এখান থেকে যান কেন এসেছেন এখানে?সরুন আমার সামনে থেকে।
স্পর্শ বুঝলো তার বউটার বড্ডো অভিমান হয়েছে।তাই মিনিকে না ছেড়েই স্পর্শ বলতে লাগলো,
এই মেয়ে তুমি কেন বোঝনা আমার মনের কথা?তুমি কি সত্যিই এতোদিনেও বুঝতে পারোনি আমি কি চাই?তোমার একটিবারের জন্যেও মনে হয়নি?আমি তোমাকে ভালোবাসি?
স্পর্শের কথায় মিনি ছলছল চোখে তাকায় স্পর্শের দিকে।
স্পর্শ বলল,হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি।কখন কিভাবে ভালোবেসেছি জানিনা।যদি বলো কেনো ভালোবাসি?সেটাও জানিনা।কারণে অকারনে ভালেবাসি।আমার জীবনের শেষ মূহুর্তটাও তোমার সাথে কাটাতে চাই।তুমি কি?আমাকে সেই সুযোগটা দিবে?
মিনি এবার ফুপিয়ে উঠেই বলল,
তাহলে ঐ মেয়েটি কে ছিলো?আর কেনোই বা আপনাকে জড়িয়ে ধরলো?
স্পর্শ জবাবে বলল,ও আমার ফ্রেন্ড।অনেকদিন পর দেখা হয়েছে তো তাই আবেগটাকে কন্ট্রোল করতে পারেনি।আমরা একে অপরকে কলেজ লাইফ থেকেই তুমি বলে সম্বোধন করে এসেছি।তাই এখনো তুমিই বলি।
আরেকটা কথা ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।সামনের মাসেই বিয়ে।তোমাকে আর আমাকে ইনভাইট করেছে।
এবার মিনি স্পর্শকে ঝাপটে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর বলছে,আমিও আপনাকে ভালোবাসি।তাইতো ওই মেয়েটার সাথে আপনাকে দেখে আমার খুব রাগ হয়েছিলো।
স্পর্শ যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা।মিনি ওকে ভালোবাসি বলেছে।তাই স্পর্শ বলল,কি বলেছিলে? আবার বলো।
মিনি এবার বেশ লজ্জা পেল।
স্পর্শ বলল,কি হলো?বলছো না কেন?আমি কিন্তু শুনিনি তুমি কি বলেছো।
মিনি মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে আবারো বলল,আমি আপনাকে ভালোবাসি।
স্পর্শ যেন হাতে চাঁদ পেলো।ও মিনিকে শক্ত করেই বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।কিছুক্ষণ পর স্পর্শ আদুরে কন্ঠ বলল,
মিনি?
হুম
আমি যদি আজ তোমাকে একেবারে নিজের করে চাই?আমার ভালোবাসায় তোমাকে রাঙাতে চাই? তাহলে কি খুব ভুল হবে?
মিনি পারছে না লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যায়।ও স্পর্শকে আরেকটু শক্ত করে আকড়ে ধরে।
স্পর্শ তার উত্তর পেয়ে গেছে।সে মিনিকে পাঁজা কোল করে খাটের দিকে এগিয়ে যায়।মিনি লজ্জায় স্পর্শের বুকে মুখ লুকায়।
আজ পূর্ণতা পাবে দুটি হ্রদয়ের ভালোবাসা।একে অপরকে সম্পূর্ণ উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসে খুঁজে নিক তাদের পূর্ণতা।
সকালে মিনির ঘুম ভাঙতেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে স্পর্শকে দেখতে পায়।মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছে।হাত দিয়ে চুলের পানি ঝারছে।মিনি কাঁথা দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে রেখেছে।
ওর কাল রাতের কথা মনে হতেই প্রচন্ড লজ্জা লাগছে।
স্পর্শ আয়নার দিকে তাকিয়েই বলল,কাল রাতে এতো কিছুর পরেও আমি তোমার লজ্জা ভাঙতে পারলাম না?আফসোস।
মিনি এবার আরো লজ্জা পেলো।স্পর্শ একটানে কাঁথাটা সরিয়ে মিনির ওপর আধশোয়া হয়ে শুয়ে পড়ে।
মিনির যেনো যায় যায় অবস্থা।বেচারী উঠতে ও পারছেনা।স্পর্শ মিনির ছটফটানি দেখে মিনির অধর যুগল দখল করে নেয়।মিনির দম বন্ধ হয়ে আসছে।স্পর্শকে সরানোর চেষ্টা করছে।না পেরে স্পর্শের বুকে কিল ঘুষি মারতে শুরু করলো।আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে মরেই যাবে।পাক্কা দুইমিনিট পর স্পর্শ মিনিকে ছাড়লো।ছাড়া পেতেই মিনি এক দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।স্পর্শ হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।
মিনিতো ওয়াশরুমে জামাকাপড় আনেনি।এখন কি হবে?এখন রুমেও যেতে পারবেনা মিনি।কারণ ওর পরনে শুধু স্পর্শের টি-শার্ট।
এদিকে স্পর্শ বেশ আয়েশ করেই খাটে হেলান দিয়ে আছে।আর মিটিমিটি হাসছে।কারণ মিনি জামাকাপড় ছাড়াই ওয়াশরুমে ঢুকে গেছে।
চলবে…..