স্ত্রীর অধিকার,পর্বঃ১২
লেখিকাঃফারহানা ইসলাম
অভ্রের সাথে কথা বলে আমি রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।তখন রিয়া আমাকে ইশারা দিয়ে ডাকলো।আমি কিছু না বুঝে ই ওর দিকে গেলাম।তখন রিয়া আমাকে অর্নবের রুমের দিকে ইশারা করলো।দুজনে অর্নবের রুমের দিকে উঁকি মেরে দেখলামঅর্নব কাকে যেনো ফোন করছে।নিশ্চয় ই ওর হুব বউ ই হবে।আমি আর রিয়া দুজনে মিলে চুপি চুপি অর্নবের রুমে গেলাম।যেই না অর্নব হ্যালো বললো আমি আর রিয়া দুজনে মিলে ওর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলাম।মোবাইলের ওপাশ থেকেও কেউ ই হ্যালো বললো।ঐ কণ্ঠটা শোনে আমি আর রিয়া অবাক হয়ে দুজনের দিকে দুজনে ই তাকিয়ে আছি।কারন একটা বুড়ি কথা বলছে।কণ্ঠটা শোনার পর আমার আর রিয়ার জ্ঞান হারানোর উপক্রম হয়েছে।শেষ পর্যন্ত নাকি আমাদের অর্নবের মতো একটা ছেলে একটা বুড়ি কে ই বিয়ে করবে।এইটা কী ভাবা যায়।
এইদিকে অর্নব তো আমার আর রিয়ার কাছ থেকে মোবাইলটা কেড়ে নেওয়ার জন্যে দিওয়ানা হয়ে আছে।রিয়া কোনোমতে ওকে আটকাচ্ছে।
আমি এইবার হ্যালো বললাম তখন মোবাইলের ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বলছে,,,,,,,,,,
দেখো না অর্নব নানী আর দাদী দুজনে ই আমার থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়েছে!!আমাকে তোমার সাথে কথা বলতে দিচ্ছে না!!(মেয়েটি)
মেয়েটির কথা শোনে আমি স্বজ্ঞানে ফিরে আসলাম।এখন বুঝতে পারলাম আমরা যে গোয়েন্দাগিরি করছি ওখানে ও ঐ গোয়েন্দা গিরি চলছে।
তখন আমি মেয়েটাকে আস্তে আস্তে করে বললাম,,,,,,,
আমি অর্নব নই।অর্নবের বড় ভাবী অনু??(অামি)
আসসালামু আলাইকুম ভাবী কেমন আছেন??(মেয়েটি)
ওয়া আলাইকুমুস সালাম।ভালো।তুমি কেমন আছো??(আমি)
ভালো আছি!!(মেয়েটি)
তোমার নামটা কী??(আমি)
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আমার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিলো।ঘুরে দেখি অর্নব।অর্নব আমাকে বললো ওর নাম মিমি।ভাবী তোমরা দুজন এখন যাও।নিচে তোমাদের দুজনকে সবাই ডাকছে।যাও!যাও!
অর্নবের কথা শোনে আমি আর রিয়া দুজনে ই হেসে অস্থির।রিয়া তখন বলে উঠলো হ্যাঁ এখন তো আর ভাবীদের প্রয়োজন নাই তাই না।পরে আবার এসে বলিও ভাবী আমাকে একটু সাহায্য করো।তখন দেখবে তোমার কী হাল করি।।
,
,
অর্নবের সাথে একটু মজা করে নিচে নামতে যাবো ঠিক তখনি আমার মোবাইলের রিং বেজে উঠে।তখন আমি রিয়াকে বললাম রিয়া তুমি যাও আমি একটু পরে আসছি।রিয়া বললো আচ্ছা।
রিয়া চলে যাওয়ার পর আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।আননোন নাম্বার দেখে আমার অনেকটা অস্বস্তি হলো।তাও মনের অনিচ্ছা স্বত্বেও কলটা রিসিভ করলাম।কল রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে কেউ বললো,,,,,,,,,,,
হ্যালো!!(অপরিচিতা)
হ্যালো বলার পর আমি বুঝতে পারলাম কল করা ব্যক্তিটি পুরুষ না;;কোনো মহিলা।যাইহোক অন্তত রাহুল তো নয়।
হ্যালো!!কে বলছেন??(আমি)
ধরে নিন আমি আপনার কোনো শুভাকাঙ্খী।।(মেয়েটি)
আমার কোনো শুভাকাঙ্খী!!(আমি)
জ্বী।তা ভাবতে পারেন!!(মেয়েটি)
মেয়েটির কথা শোনে আমি অনেকটা আশ্চর্য হয়ে গেলাম।কে এই মেয়ে।
দেখুন আপনি কে আমি আপনাকে জানি না।প্লীজ নেক্সট টাইম কল করলে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলবেন।রাখছি।(আমি)
শোনেন আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম একটু।আমি অভ্রের ছোটো বেলার বন্ধু।আর তাছাড়া আপনি আমাকে চিনবেন ই কারন দুইদিন আগে আমার আপনার সাথে কথা হয়েছিলো।।(মেয়েটি)
কে আপনি??(আমি)
আমি ডাক্তার নীলিমা চৌধুরী (যুথি)।(মেয়েটি)
ও আচ্ছা।এখন চিনতে পেরেছি।।(আমি)
আসলে আমি কাল দেশে ফিরেছি।আর আমি চাই অভ্র র ট্রিটমেন্ট শুরু করতে।আর সেটাও কালকের মধ্য থেকে শুরু করবো!!(নীলিমা)
কালকের মধ্য থেকে।।কিন্তু বাড়িতে এখন একটু ঝামেলা আছে।আসলে আমি একটু ব্যস্ত।(আমি)
আমি সব জানি।অনু প্লীজ তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো।আমি আমেরিকার থেকে এসেছি মাত্র কয়েকদিনের জন্যে।কয়েকদিন পর আমাকে আবার আমেরিকাতে ই ফিরে যেতে হবে।আমি তো এইখানে শুধু অভ্রে জন্যে এসেছি।ওকে সুস্থ করে তুলতে।(নীলিমা)
আচ্ছা ঠিক আছে।আমি সব ব্যবস্থা করে নিবো।আপনি চিন্তা করবেন না।।(আমি)
ওকে!!বায়!!(নীলিমা)
জ্বী।রাখছি!!(আমি)
,
,
ডাক্তার নীলিমার সাথে কথা বলে আমি ভীষন অবাক হয়ে যাই।কারন আমাদের বাড়িতে যে অর্নবের বিয়ে নিয়ে আমরা সবাই ঝামেলায় আছি সেটা উনি জানলো কীভাবে??উনি তো সবেমাত্র কাল দেশে ফিরেছে।এতো তাড়াতাড়ি তো উনার এতো কিছু জানার কথা নয়।
কথাগুলো শুধু ভাবছি।হঠাৎ মনে পড়লো আসলে ঐদিন অধরা ঠিক ই বলেছিলো।আমি সবসময় একটু বেশি ই ভাবি।আরে অভ্র আবার আগের মতো হাঁটতে পারবে।আমি কোথায় সেই বিষয় নিয়ে একটু আনন্দিত হবো তা নয়।উল্টে আমি নিজে অন্য চিন্তাগুলো মাথায় আনছি।
,
,
আমি তাড়াতাড়ি করে বাবার ঘরে গেলাম।সেখানে গিয়ে দেখলাম বাড়ির সবাই সেখানে উপস্থিত।
আমি তাদের সকলকে উদ্দেশ্য করে বললাম আপনাদের সবাইকে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
আমার কথা শোনে সবাই একটু চমকে গেল।কিন্তু দাদী বললো কী কথা অনু বল।
আমার কথাগুলো বলতে একটু অস্বস্তি হলো।কারন কে কী মনে করবে।কিন্তু তাও সব দ্বিধা মুছে তাদের সবাইকে সব কথা খুলে বললাম।
আমার কথা শোনে আমার শ্বাশুড়ি একটু রেগে গেলেন।উনি একটু রাগীস্বরে বললেন কী অনু তুমি আমাকে কী এখনো অভ্র র শত্রু মনে করো।আর তাই বলে আমাদের থেকে সবকিছু এইভাবে লুকিয়ে রেখোছে।
আমার শ্বাশুড়ির কথা শোনে আমি বললাম আম্মা আপনি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝছেন।আসলে সব এতো তাড়াহুড়োর মধ্যে হয়ে গেলো আমি আপনাদের জানানোর সময় পর্যন্ত পাই নি।
তখন আমার শ্বাশুড়ি বললো আমি তো তোমার নিজের শ্বাশুড়ি না।অভ্র র সৎ মা।মানে তোমার সৎ শ্বাশুড়ি।তাই আমাকে তোমার সব কথা না জানালে ও চলবে।
কথাগুলো বলে উনি উঠে চলে যাচ্ছিলেন।তখন আমি উনার হাত দুটো ধরে বললাম আম্মা আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে মাফ করে দিন।আমি তো আপনার মেয়ের মতো।
আমার কথা শোনে উনি চুপ করে রয়েছেন।তখন বাবা বললো তোমার বৌ মা যখন নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে তখন আর ওর ওপর রাগ করে থেকো না।ওকে ক্ষমা করে দাও।ও তো তোমার অধরার মতো ই।
বাবার কথা শোনে উনি বললেন ঠিক আছে!আজকের মতো মেনে নিলাম।কিন্তু আর কখনো এমন যেনো না হয়।মনে থাকে যেন।
,
,
আম্মার কথা শোনে আমি একটু স্বস্তি পেলাম।যাইহোক অর্নবের বিয়ের আগ পর্যন্ত অন্তত কোনো ঝামেলা হচ্ছে না।কিন্তু হঠাৎ,,,,,,,,,,,,
চলবে