শেষটায় তুমিআমি,পর্ব-৪

0
3004

শেষটায় তুমিআমি,পর্ব-৪
tani tass ritt

“আমার ডিভোর্স চাই”।

এই কথাটা রিদিতার কোনোভাবেই হজম হচ্ছেনা।সে বুঝতেও পারছেনা তুর্য তার সাথে এমনটা কেন করছে।

” তুমি এসব কি বলছো তুর্য? আমি জানি তোমার মজা করার স্বভাব আছে তাই বলে এতো জঘন্য মজা করবে?” রিদিতা খুব রেগে কথাটা বললো।

তুর্যের চোখ লাল হয়ে আছে রাগে।

“তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে মজা করছি? তোমার কি আমাকে জোকার লাগে? আর এতো ইনোসেন্ট সাজার কোনো মানে নেই।তুমি যে কতটা নাটক করতে পারো তা আমার খুব ভালো করে জানা আছে।তোমাদের মতো মেয়েরা পারে শুধু ছেলেদের ফাঁসিয়ে প্রেমের অভিনয় করতে। ”

রিদিতা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।এসব কি বলছে সে।

“তুমি কি বলতে চাইছো?”

“তুমি বুঝতে পারছোনা? ১ বছর আগে কি করেছিলে তোমার মনে নেই? ”

“তারমানে তুমি!!”

“জি ১ বছর আগে যার সাথে তুমি প্রেমের নাটক করে তাকে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দিয়েছিলে সে আমার খালাতো ভাই তিহাম।”

এটা শুনার পর রিদিতা হা করে তাকিয়ে আছে।এবার সে দুয়ে দুয়ে চার মিলাতে পারছে।

তুর্য রিদিতাকে টানতে টানতে একটি রুমে গিয়ে ফেলে দিলো।

রিদিতা চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো তার আর তিহামের অনেক ছবি দেয়াল জুড়ে। বেশিরভাগই রিদিতার সিঙ্গেল ছবি।তিহাম এগুলা কখন তুলেছে জানা নেই তার।

ঘরের এক কোণায় চোখ পড়তেই দেখলো একটি লোক বসে আছে চোখ বন্ধ করে।চুল বড় বড়। উষ্কখুষ্ক দাড়ি।মনে হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে তার যত্ন নেওয়া হয়না।রিদিতা ভালো করে খেয়াল করে দেখলো এটা তিহাম।

রিদিতার খুব কষ্ট হচ্ছে তিহামের এই অবস্থা দেখে।সে তাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু এতো কঠিন শাস্তি পাবে এটা কোনোদিনো ভাবেনি রিদিতা।

তিহাম রিদিতাকে দেখেই দৌড়ে আসলো।
“আমাকে প্রিয়কে এনে দাও। তুমি তো জানো আমি প্রিয়কে কত ভালোবাসি।ও আমার সাথে এমন কেন করলো বলো না? আমাকে প্রিয়র কাছে নিয়ে যাও না।”
এগুলো বলেই তিহাম কাঁদতে লাগলো।কিছুক্ষন পর আবার আচমকা হাসতে লাগলো পুরো বাচ্চাদের মতো।

রিদিতার খুব মায়া হচ্ছে তিহামকে দেখে।সে কি ভুল কিছু করে ফেলেছিলো। তখনি তুর্য রিদিতাকে টানতে টানতে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।

“তুমি কতটা জঘন্য মেয়ে হলে আমার ভাইয়ের মতো ভালো মানুষের সাথে এমনটা করতে পারো।আমার যখন ১২ বছর বয়স তখন আমার বাবা মা মারা যায়।খালা আমাকে এখানে নিয়ে আসে।আপন ছেলের মতো আদর দিয়ে বড় করে।আর তিহাম ভাইয়া তো আমাকে নিজের ছোট ভাইয়ের মতো আদর করতো।আমার আইডল ছিলো তিহাম ভাইয়া।আমি তার জন্য আমার জানটা দিয়ে দিতে পারি।তুমি যখন আমার ভাইয়াকে রিজেক্ট করেছিলে ভালোবাসার অভিনয় করে, তখন কি তোমার একটুও কষ্ট লাগেনি।জানো ভাইয়ার ঐদিন এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।সে পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে হাটছিলো।

ভাইয়ার জন্মদিন উপলক্ষে আমি রাজশাহী থেকে এসেছিলাম ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিতে।আর দেখো এসে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম।

ভাইয়ার এক্সিডেন্টের সময় শুধু প্রিয় প্রিয় করছিলো।

এতটুকু বলেই থেমে গেলো তুর্য। তার খুব রাগ হচ্ছে।

“আজ চুপ করে আছো কেনো।ঐদিন আমার ভাইকে কষ্ট দেয়ার সময় মনে ছিলো না?”

“যেদিন ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয় ঐদিন ভাইয়ার রুমে যেয়ে তোমার আর ভাইয়ার ছবি দেখতে পাই।তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করি এর মাশুল তোমাকে দিতেই হবে।তারপর প্ল্যান মোতাবেক তোমার সাথে দেখা। এরপর বিয়ে। ”

রিদিতা তুর্যের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুই বলছে না।আসলে কি বলবে তাই বুঝতে পারছে না।এভাবে তার সামনে তার অতীত চলে আসবে বুঝতে পারেনি সে।

“তিহাম ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে খালু স্ট্রোক করে আর তখন থেকেই প্যারালাইসিস হয়ে যায় খালু। তুমি একটা ফ্যামিলিকে ধ্বংস করে দিয়েছো রিদিতা।”

রিদিতা কিছু বলছে না দেখে তুর্যের রাগ এবার সপ্তম আসমানে উঠে গেলো।

রিদিতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,
“কবে ডিভোর্স লাগবে?”

তুর্যের এমন প্রশ্নে তুর্য হতভম্ব। মানে এই মেয়ের মধ্যে কি ন্যুনতম গিল্টনেস নেই।

“চিন্তা করোনা।তুমি ডিভোর্স পেয়ে যাবে।যেদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে খুব দেরি যাতে না হয়ে যায়।”

তুর্য কিছু বললো না।বারান্দায় যেয়ে দাড়িয়ে। আবার সিগারেট ধরালো।কেমন উলোটপালোট হয়ে গেলো তার জীবনটা।রিদিতাকে সে আগেই দেখেছিলো।দেখেই তার পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো।লাভ এট ফার্স্ট সাইট যাকে বলে।কিন্তু এই রিদিতাই যে তার ভাইয়ের জিএফ ছিলো এমনকি তার ভাইয়ের সাথে এতো বড় গেইম খেলেছে ভাবতেই পারেনি সে।তার ভিতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।জীবনে প্রথম কোনোমেয়েকে ভালোবেসেছিলো।আসলেই তার কপাল খারাপ।ছোটবেলা থেকে হারাতে হারাতে বড্ড ক্লান্ত সে।

কিছু একটা ভেবে সে রিদিতার কাছে যায়।
“তোমার এখানেই থাকতে হবে।তুমি ভাইয়ার সেবা করে ভাইয়াকে সুস্থ করবে।আমার থেকে ভুলেও স্বামীর অধিকার আশা করবে না।”

রিদিতা কিছু বললো না।আচমকাই তুর্যকে জড়িয়ে ধরলো।কিন্তু তুর্য রিদিতাকে ধরছেনা।সে চোখ বন্ধ করে তার মনে বয়ে যাওয়া ঝরকে শান্ত করতে চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ পর রিদিতা নিজ থেকেই তুর্যকে ছেড়ে দিলো। তারপর সে পা বাড়ালো তিহামের রুমের দিকে।

এটা দেখে তুর্যের ভিতরটা কেমন যেনো দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।তার মধ্যে কেমন যেনো এক জেলাছি কাজ করছে।সে থাকতে না পেরে সব কিছু ভাংচুর শুরু করলো।

খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো তুর্যের। তার মনে পরে গেলো কাল রাতের কাহিনি। সে উঠেই রিদিতাকে খুঁজতে লাগলো।পুরো বাড়ি খুঁজেও রিদিতাকে পেলো না।হতাশ হয়ে নিজের রুমে ফিরে এলো।টেবিলের উপর একটা কাগজ রাখা।তার ভিতরটা কেমন যেনো হাহাকার করছে। কাগজটা হাতে নিয়ে,

প্রিয় তুর্য,
তোমার জন্য আমি অপ্রিয় হলেও আমার জন্য কিন্তু তুমি খুব প্রিয়।তুমি নিতান্তই একজন ভালোমানুষ। জানো কাউকে বিশ্বাস করা ভালো কিন্তু অন্ধবিশ্বাস ভালোনা।আমার উচিৎ ছিলো তোমাকে আমার অতীত সম্পর্কে সবটা বলে দেয়া। কিন্তু ঐটা যে বলার মতো কোনো অতীত ছিলোনা।আমি চাইনি আমার বর্তামান আমার অতীত নষ্ট করুক।আর ভাগ্যের কি পরিহাস দেখো তাই হয়েছে।একদিন তুমি তোমার ভুল বুঝতে পারবে।আমি আমার হয়ে কোনো সাফাই গাইবোনা। এভাবে তোমার সাথে থাকাও আমার সম্ভব না।ভালো থেকো। আমাকে খুঁজতে চেষ্টা করবেনা কোনোদিন।সবকিছুর উপরে একটা সত্য আছে সেটা হলো তুমি আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসো।তোমার এই ভালোবাসা নিয়েই আমি কাটিয়ে দিতে। পারবো সারাটা জীবন।কিন্তু তোমার সামনে থাকলে তুমি আমাকে ভালোবাসবে না আমি জানি।তাইতো চলে যাচ্ছি। ভালোবাসাটা না হয় দূর থেকেই থাকুক।
তোমার রিদি।

তুর্য চিঠিটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলো।

৬বছর পর,
রিদিতার খুবই মেজাজ খারাপ।সে ট্রেনে আলাদা কেবিন পায়নি।খুবই বিরক্ত লাগছে তার।জানালার কাছে বসে আছে সে।তার অপসিট সিটে একটা পিচ্চি মেয়ে একা বসে আছে।বয়স আর কতই বা হবে ৪-৫। খুব মিষ্টি দেখতে মেয়েটি।

রিদিতা পিচ্চিটাকে কাছে ডাক দিলো।
“মামনি তোমার নাম কি?
” আমাল নাম প্লিয়।”
রিদিতা নামটা শুনে চমকে গেলো। তখনি একটা লোকের কন্ঠস্বর শুনা গেলো।প্রিয় প্রিয় করে ডাকছে।
লোকটা কেবিনে আসতেই প্রিয় পাপা পাপা বলে দৌড়ে গেলো।
রিদিতা খুব ভালোকরে লোকটাকে খেয়াল করলো।সেই পরিচিত মুখ।রিদিতা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
তখনি তার বয়সি এক মেয়ে এলো প্রিয়র কাছে।এসেই প্রিয়কে কোলে নিলো।

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here