হৃদয়ের_ঠিকানা ৪/৫ম পর্ব

0
3328

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৪র্থ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
আমার মামী আমাকে এতো ভালোবাসে তবুও আমি কেন যে মুখ ফুটে বলতে পারিনা, মামী আমি তোমার ছেলেকে ভালোবাসি। কাইফ ভাইয়া তো আমার থেকে একলাইন উপরে। সে তো তার মাকে বলতে পারতো যে সে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু না,
সে কখনো বলেনি আমাকে ভালোবাসার কথা।

মিতু আপুকে পছন্দ করে তো বলেছেই তাহলে আমার এসব নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আমি বরং আমার ঘরে যাই।

আমি আমার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কাইফ ভাইয়া বলে ওঠে,
– ওই ঘরে মিতু থাকবে যে কয়দিন এখানে আছে। তুই কোথায় থাকবি সেটা তো বলেই দিয়েছি। নিজের ঘরে যা এখন।

আমি এই বাড়ির আশ্রিতা, এরা যা বলবে আমাকে শুনতেই হবে, খুশি মনে কিনবা কষ্ট পেয়ে। আমি সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলি,
– আমি এখনি স্টোর রুমে যাচ্ছি কাইফ ভাইয়া।

এই বলে আমি স্টোর রুমের দিকে যেতে লাগলাম। আমার যাওয়া দেখে কাইফ ভাইয়া বলল,
– আমি বললাম আর চলে যাচ্ছিস? তোর বালিস, কাথা, জামা-কাপড় কে নিয়ে যাবে ওই ঘরে? ওইগুলো সহ স্টোর রুমে যা।

আমি ঘুরে আমার ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। মামী আমার সামনে এসে আমার হাত ধরে দাড় করালো। রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
– তুই যদি ওই ঘর থেকে একটা জিনিস বের করিস আমার মরা মুখ দেখবি।

মামীর এই কথায় ভালোবাসা ছিলো নাকি অন্য কিছু ছিলো আমি ঠিক বুঝতে পারিনি তবে হঠাৎ করেই আমার মনে বড্ড অভিমান জমলো। একজন বলছে যাও একজন বলছে যেওনা, যেন আমাকে নিয়ে মা-ছেলে মজা করছে। আমি অসহায়ের মত চুপ করে দাড়িয়ে থাকলাম। মিতু আপু আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

– সাওদা কেন অন্য কোথাও শুয়ে থাকবে! আমরা দুইবোন এক ঘরে থাকবো। ঠিক বলেছি না সাওদা?

আমি মিতু আপুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে বললাম,

– সবাই যেটা সিদ্ধান্ত নেবে আমি সেখানেই থাকবো।

মিতু আপু একটু অভিমানী স্বরে বলল,

– আমিই মনে হয় নষ্টের গোড়া। আমিই চলে যাচ্ছি।

মিতু আপুর এমন কথা শুনে কাইফ ভাইয়া আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো, যেন আমি কোনো বড় অপরাধ করেছি। আমার থেকে চোখ ফিরিয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,
– তুই চলে যাবি মানে? যাওয়ার কথা বললে তোর কপালে শনি ডাকবে।

মিতু আপু কাইফ ভাইয়াকে বলল,
– তুই নতুন একটা বাড়ি কেন বানাচ্ছিস না?

– ভাই রে ভাই, আমি এখন পড়াশোনা শেষ করলাম এখনই কিভাবে সব করবো! একটা চাকরি তো করি আগে।

মিতু আপু বলে,
– যে একটা কোম্পানির পার্টনার সে চাকরি করবে। বাহ বাহ! চলো সাওদা আমরা নিজেদের ঘরে যায়।

– ওরে তুই এই অংক বুঝবিনা। একদিন সব বোঝাবো তোকে। এখন যা ঘরে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নে।

এরপর মিতু আপু আমার হাত ধরে আমার ঘরে নিয়ে আসলো। আমাকে খাটে বসিয়ে আমার পাশে বসে বলল,
– তুমি কি কাইফের কথায় কষ্ট পেয়েছো? ওর হয়ে আমি তোমার কাছে মাফ চেয়ে নিচ্ছি।

বাহ বাহ। এতো তাড়াতাড়ি সব হয়ে গেলো। ওর হয়ে আমি মাফ চেয়ে নিচ্ছি! এতোদুর গড়িয়ে গেছে! তারমানে আমি কি তাহলে একটা ফান ম্যাটেরিয়াল ছিলাম। কাইফ ভাইয়া ভালোবাসি ভালোবাসি বলে কি তাহলে আমার সাথে মজা করতো!

আমার চুপ থাকা দেখ্ব মিতু আপু বলল,
– তুমি কি ভাবছো? এখনো ওকে মাফ করতে পারোনি?

বাব্বাহ মাফ চেয়েই শুনবে যে দেখছি। আমি মিতু আপুকে বললাম,
– মাফ চাওয়ার কিছু নেই আপু। এই বাড়িটা তার সে যা বলবে আমাকে তাই শুনতে হবে। একজন আশ্রিতাকে আর কত যত্ন করবে তারা। আমাকে যথেষ্ট কেয়ার করে এ বাড়ির সবাই। মামা দেশে থাকেনা তবুও মামীর কাছে কখনো ভালোবাসার ঘাটতি পাইনি আমি। নিজের সন্তানের মত আগলে রেখেছে।

মিতু আপু বলল,
-তুমি বসো আমি একটু আসছি৷

এরপর সে চলে গেলো। আমি চুপচাপ খাটের উপর বসে রইলাম। হটাৎ মেঘের গর্জন শুনতে পেলাম। হয়তো একটু পর বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টির শুরুর মুহুর্তটাকে আমি মিস করতে চাইনা তাই দৌড়ে ছাদে চলে গেলাম। আমার মন খারাপ থাকলে বৃষ্টি আমার মন ভালো করে দেওয়ার ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

ছাদে পৌছে দেখলাম হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আমি ঠিক মাঝখানটাই যেতেই ঝুম করে বৃষ্টির গতি বেড়ে গেলো। আমি দুই হাত মেলে বৃষ্টিকে স্বাগত জানাতে লাগলাম। আজকে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। যে কাইফ ভাইয়া আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবনায় থাকতো আজকে সে আমাকে স্টোর রুমে শোয়ার জন্য বলছে। আমাকে যেন সে জেনেশুনেই অবহেলা করতে চায়।

আমার কষ্ট আজকে বৃষ্টির যাথে ধুয়ে যাচ্ছেনা। বরং বেড়েই চলেছে। সিদ্ধান্ত পালটে আবার ঘরে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। আমি ঘরে ঢুকবো তার আগেই আমার ঘরের ভিতর থেকে মিতু আপু আর কাইফ ভাইয়ের গলা শুনতে পেলাম।

কাইফ ভাইয়া একটু রাগীস্বরে বলছে,
– তুই খুব বেশি বুঝিস? ওকে কেন এই ঘরে রাখার কথা বললি বলতো? ও থাকলে আমি কি এই ঘরে আসতে পারবো?

বড্ড হাসি পেলো এই কথা শুনে৷ তবে এই হাসি মজা পাওয়ার হাসি না। বরং তাচ্ছিল্যের হাসি। যে মানুষ আমার বিনা অনুমতিতে যখন তখন এই ঘরে প্রবেশ করতো আজকে নাকি আমি তার বাধা হয়ে দাড়িয়েছি৷ আমার এখন এই ঘরে থাকা উচিৎ না। আমার উচিৎ এখন মামীর ঘরে মামীর কাছে শোয়া৷

আমি এমন একটা ভাব নিলাম যেন আমি কিছুই শুনতে পাইনি। ঘরের ভিতরে ঢুকতেই মিতু আপু বলল,
– একি সাওদা তুমি হঠাৎ ভিজে গায়ে কেন? বৃষ্টিতে ভিজছিলে বুঝি?

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানাই। মিতু আপু কিছু বলতে গেলে কাইফ ভাইয়া তাকে বাধা দিয়ে বলে,
– সাওদা তুই বরং তোর পোশাক নিয়ে আমার ঘরের ওয়াসরুমে যা। আমি আর মিতু একটু গল্প করছি।

আমি কথা না বাড়িয়ে কাভার্ড থেকে আমার পোশাক নিয়ে কাইফ ভাইয়ার ঘরে চলে আসি। ওয়াসরুমে ঢুকেই মনে হলো কেন এই লোকটার ঘরে এলাম। একদিনেই আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে ফেলেছে লোকটা। আমিতো মামীর ঘরের ওয়াসরুমে গেলেও পারতাম। যায়হোক সময় নষ্ট না করে আমি। পোশাক পালটে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে এলাম।

ঘর থেকে বের হবো ঠিক তখনই দেখলাম কাইফ ভাইয়ার টেবিলে একটা বই বা ডায়েরি জাতীয় কিছু খুলে রাখা রয়েছে৷ ওটা বন্ধ করে দিতে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম। ডায়েরিই ছিলো ওটা, বন্ধ করতে যাওয়ার আগে হঠাৎ মনে হলো চুপিচুপি কাইফ ভাইয়ার ডায়েরির কিছুটা পড়ি। শুরু থেকে পড়বো নাকি শেষ থেকে ভাবতে লাগলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আজকাল কি লিখেছে সেটা পড়তে হবে। তাই শেষের দিকের পৃষ্ঠা উলটে দেখলাম৷ প্রায় দেড় পেইজ মত লেখা আছে তবে এখবো সম্পুর্নটা লিখে শেষ করেনি। যতটুকু আছে ততটুকুই পড়তে লাগলাম,
‘সাওদা আমাকে মাফ করে দিস। তোকে কষ্ট দিতেই হবে। তুই সব বুঝেও না বোঝার ভান করিস আমি জানি৷ এর এটাও জানি তুই আমাকে কতটা ভালোবাসিস। তুই ভেবেছিস আমি কিছুই জানিনা তোর মনের কথা! কিন্তু তুই ভুল রে। তুই কোনোদিন কিছু না বললেও জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস। কিন্তু সব প্রেমিকের একটা ইচ্ছা থাকে সে তার ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনবে। আমিও এর ব্যাতিক্রম নই। তুই হয়তো ভাবিস আমার মা এটা মেনে নেবে না৷ কিন্তু তোর মনে হয় এটা জানা নেই যে তোর জন্মের আগেই যখন সবাই জানতে পারে ফুফুর মেয়ে হবে মানে তুই হবি তখন মা ঠিক করে রাখে তোর আর আমার বিয়ে হবে। কিন্তু তুই তোর মনের ভিতর আগাম সবকিছু সাজিয়ে বসে আছিস। এজন্য মিতুকে এখানে আসতে বলেছি৷ আমি জানি তুই ওকে আমার সাথে বেশি বেশি দেখলে সহ্য করতে পারবিনা তাই মনের কথা বলে দিবি৷ আমি জানি তোর মনের কথা তবুও তোর মুখে শুনিবোই কারণ…..

এরপর আর কিছু লেখা নেই বা হয়তো আছে কিন্তু আমার আর পড়ার ইচ্ছা নেই। আমি সব সময় ভুল ছিলাম এখনও ছিলাম। ভাগ্যিস এইখানে এসেছিলাম নাহে হয়তো জানতেই পারতাম না আমাকে নিয়ে মামীর মনে কি চলে। ইশ! বড্ড লজ্জা লাগছে আমার।

কাইফ ভাইয়ার প্লান শুরুর আগেই ভেস্তে গেলো ভাবতেই হাসি লাগছে বড্ড। কি দরকার ছিলো ডায়েরি খুলে রাখার হাহাহা।

বৃষ্টিতে ভিজেও যে কষ্ট কমেনি এইমাত্র এই ডায়েরিটা পড়ে তার থেকে কয়েক গুন বেশি সুখে মনটা ভরে উঠেছে। ইচ্ছা করছে এখনি কাইফ ভাইকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলি, কাইফ ভাইয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি।

হয়তো ভালোবাসি বলতে গিয়ে কাপাকাপা গলায় সব কথা ঠিকভাবে বের হবেনা। কাইফ ভাইয়া কি সব কিছু ঠিক ভাবে বুঝে নিতে পারবে।
,
,
চলবে
,
,
রিচেক দেওয়া হয়নি তাই দয়া করে বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Rafiza Akhtar ShaathiকিQ

#হৃদয়ের_ঠিকানা
৫ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
সে তো জানেই তাকে ভালোবাসি, তবুও ফর্মালিটিস মানার জন্য তো আমাকে বলিয়েই ছাড়বে। তার আগে এককাজ করি লোকটার নাকে দড়ি দিয়ে কিছুদিন ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াই।

এই ঘরে আর বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবেনা। আমার ভিজে পোশাকগুলো নিয়েই মামীর ঘরে গেলাম। মামী এখন গল্পের বই পড়ায় মন দিয়েছে। আমি মামীর পাশে বসে বললাম,

– খাওয়ার সময় তুমি এখানে বসে গল্পের বই পড়ছো? আমাদের খেতে কে দেবে?

মামী একটু আহত গলায় বলল,
– তোরা খেয়ে নে মা। আমার আজকে খুধা নেই।

আমি মামীকে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে বললাম,
– তোমার মন খারাপের কারণ কি মামী? তোমার ছেলে কি তোমার ইচ্ছার বাইরে বিয়ে করছে?

মামী আমার কপালে একটা চুমু একে দিয়ে বলল,
– আমার ইচ্ছা বাদে সে বিয়ে করবেনা। এই ভরসা আমার আছে রে মা। কিন্তু সে আজকে তোর সাথে যেমনভাবে কথা বলল, আমি যেন আমার ছেলেকে নতুনভাবে চিনলাম।

আমার তো এখন সব জানা তাই মামীকে বুঝিয়ে বললাম,
-যে বিষয়ে তুমি নিজেও জড়িতো সেই বিষয়ে তুমি দুঃখ কেন পাচ্ছো! আমাদের জীবন তো সুখের হতে চলেছে তাইনা?

আবেগ ধরে রাখতে না পেরে প্রায় মামীর সামনে বলেই দিয়েছিলাম যে আমাদের নিয়ে তার প্লান আমি জেনে গেছি। কিন্তু মামী আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল,
– দুঃখ হয়রে মা। তোর বয়স হয়েছে। বিয়ের উপযুক্ত তুই। কিন্তু কাইফের আগে আমি তোকে বিয়ে দিতে পারছিনা।

মামীর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো যেন। তার কথার ভাব শুনে তো মনেই হচ্ছেনা সে আমাকে নিজের ঘরের বউমা করবে। সে বরং তার ছেলের বিয়ে দিতে চায় আমার আগে। অন্যকোথাও। আমার জীবনটা যেন কেমন একটা হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ সুখ আবার হঠাৎ দুঃখ। কাইফ ভাইয়ার ডায়েরির লেখাগুলো কি তাহলে মিথ্যা ছিলো! হতেও পারে। একজন্যই হয়তো লোকটা আমাকে তার ঘরের ওয়াসরুমে যেতে বলেছে আর বুদ্ধি করেই হয়তো নিজের ডায়েরিটা খুলে রেখে এসেছে।

আমি অনেক্ষণ ধরে চুপ রয়েছি এটা দেখে মামী আমার মাথাটা উচু করে আমাকে বলল,
– চল মা খেয়ে নিবি তুই। ওদেরকেও ডাক।

আমার খাওয়ার সমস্ত ইচ্ছা যেন উধাও হয়ে গেছে। মনের ভিতর সব অংক মিলিয়ে ফেলেছি। তাই আমার গলা দিয়ে ভাত নামবে না এখন। সুঃখগুলো সব বাষ্পীভূত হয়ে গেল যেন। মামীর কথায় আবারও চুপ করে থাকলাম। মামী আমাকে বলল,
– কিরে মা স্বপ্নে হারিয়ে গেলি নাকি স্বপ্নের রাজকুমারের সাথে? মনের ভিতর যদি কোনো রাজকুমার থেকে থাকে তাহলে আমাকে বলবি তার কথা কেমন?

আমার মনে এই মুহুর্তে কি চলছে সেটা যেন আমি ভুলেগেছি। আমি হেরে যেতে পছন্দ করিনা। কাইফ ভাইয়াকে আমি ভালোবাসি তাহলে কেন আমি নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার চেষ্টা করবোনা। আমি মামীকে বলবো তার ছেলেকে ভালোবাসি। সে আমার গালে কয়েকটা চড় দিলেও বলবো আমি তার ছেলেকে ভালোবাসি। এভাবে নিজেকে হার মানিয়ে বসে থাকার মানেই হয়না।

মামী আমার দুই হাত ধরে আমাকে নাড়া দিয়ে বলল,
– তুই কি চোখ মেলে ঘুমিয়ে আছিস নাকি সাওদা মা? নাকি কথা বলায় ভুলে গেলি।

আমি হাওমাও করে কাদতে কাদতে মামীকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– আমি একটা অন্যায় করেছি মামী। আমি জানিনা এই অন্যায়টা কীভাবে করলাম। তুমি আমার গালে আগে কয়েকটা চড় মারো নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে।

আমি দুই হাত দিয়ে আমাকে আকড়ে ধরে বলল,
– কি এমন ভুল করেছিস মা যে তোর গায়ে হাত তোলা লাগবে?

– আমি একটা জিনিস ভেঙে ফেলেছি মামী। নিজের অজান্তেই ভেঙে ফেলেছি।

মামী আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো আর বলল,
– এই বাড়ির সমস্ত জিনিস ভেঙে ফেললেও আমি তোকে কিছু বলবো এটা কিভাবে ভাবলি তুই? এই বাড়ির সবকিছুতে তোর অধিকার আছে। ইচ্ছা হলে সব ভেঙে ফেলবি। পরে নতুন জিনিস আনবো দরকার পড়লে।

– মামী আমি যা ভেঙেছি তা দেখা যায়না, তা অনুভব করে কষ্ট বা সুখ পাওয়া যায় শুধুমাত্র। তুমি আমাকে মাফ করে দিও৷ একটুখানি আগেও ভেবেছিলাম তুমি আমাকেও এই বিষয়ে সাপোর্ট করো কিন্তু আমি ভুল৷ আমি শুরু থেকেই ভুল করে আসছি। তোমাদের খেয়ে তোমাদের সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। আমি দোষী, আমার কথা শেষ হলে আমাকে ইচ্ছামত শাস্তি দিও। ছোটো থেকেই আমি কাইফ ভাইয়ার পাশেপাশে থাকতে পছন্দ করতাম সে আমার চুল টেনে দিলেও তার পিছুপিছু চলতাম। জানো মামী কাইফ ভাইয়া যেদিন আমার চুল টেনে দিতো সেদিন ও নিজেই আমার মাথায় নারিকেল তেল দিয়ে দিতো, অগোছালো বিনুনি করে দিতো। সেটা আমি নাচতে নাচতে তোমাকে আর মামাকে দেখাতাম।
দিন গড়িয়েছে পিছুপিছু থাকার অনুভূতির পরিবর্তন হয়েছে, সারাক্ষণ তার পাশাপাশি থাকতে মন বলে। সারাক্ষণ নয়, সারাজীবন তার পাশে থাকতে চাই আমি। আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি মামী, তোমাদের অবাধ্য হয়েই যে তোমার ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছি। একটুখানি আগেও ভেবেছিলাম কাইফ ভাইয়ার অন্যকোথাও বিয়ে হয়ে যাবে, আমি চোখের পানি ফেলবো কিন্তু আমি নিজের কাছেই হেরে গেছি মামী। তোমার ছেলেকে ছাড়া আমার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার মত অবস্থা হবে মামী। আমি তোমার ছেলেকে ভালোবাসি। আজকে নির্লজ্জের মত তোমার কাছে সব বলতে হচ্ছে। কারণ তাকে হারানোর মত মনবল আমার নেই। তাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা।

কাদতে কাদতে ভাঙা গলায় কোনোভাবে কথাগুলো শেষ করলাম। মামী আমাকে তার বুক থেকে তুলে আমার মুখটা তার মখের সোজাসুজি ধরলো। আমাকে তার দিকে তাকাতে বলল।

মামীর চোখের দিকে তাকিয়ে আবার আমার চোখ নামিয়ে নিলাম৷ সে রাগান্বিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি অপরাধী হয়ে ওই চোখে চোখ মিলাতে পারিনা। কিন্তু মামী আমাকে বলল,
– আমার চোখের দিকে তাকা। (রাগান্বিত কন্ঠে)

মামীর হুমুক আমি মানতে বাধ্য। আমি আবার মামীর চোখের দিকে তাকালাম কিন্তু আমি মামীর মুখে একচিলতে হাসি দেখতে পেলাম। মামী সব সময়ের ন্যায় আবারও আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুই কি ভেবেছিলি মামী তোমে স্বার্থপর ভাববে? আমি তোকে স্বার্থপর ভাবতাম তখন যখন তুই নিজের মনের কথা আমাকে না বলতিস! আজকে তুই তোর মনের কথা বলে দিয়েছিস। আজকে থেকে আমার ছেলেটাকে তোর দায়িত্বে ছেড়ে দিলাম। আমার ঘরে এমন পরীলোকের লালপরী থাকতে অন্যকারো চিন্তা করি কিভাবে বলতো! তুই তো এই বাড়িরই বউমা হবি।

মামীর বুক থেকে মাথা তুলতে একদম ইচ্ছা করছেনা। ইচ্ছা করছে কয়েকদিন শান্তিতে তার বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে প্রশান্তির ঘুম দিই। আমি আমার ভালোবাসার সার্টিফিকেট পেয়েগেছি। কে আটকাবে আমাকে। সুখে থাকলে ঘুম লাগে এটা মনে হয় আমি না সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
মামীর বুকে মাথা রেখেয় ঘুমিয়ে পড়লাম৷ দুপুরে খাওয়াও হলোনা৷

চোখে মেলে দেখলাম আমি এখন মামীর ঘরে শুয়ে আছে। এখানেই তো থাকার কথা, অন্য কোথায় থাকবো আবার! পাশেপাশে মামী নেই। ভিজে কাপড়গুলো কাঠের চেয়ারের উপর রেখেছিলাম, এখন সেগুলোকেও দেখছিনা। কেউকি আমার পোশাকগুলো ছাদে মেলে দিয়েছে। দেখে আসা দরকার তাই বিছানা থেকে উঠলাম। হঠাৎ মামীর ঘরের দেয়াল ঘড়িতে চোখ গেলো, ৭টা ২৬ বাজে। তার মানে আমি প্রায় ৪/৫ ঘন্টা ঘুমিয়েছি দিনের বেলায়।

ঘর থেকে বাইরে বের হলাম কিন্তু কোথাও কাওকে দেখছিনা। আমার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম। বাড়িতে কেও এইজন্য একটু ভয় ভয় করছে আমার মধ্যে। অন্ধকারে আমার ঘরে প্রবেশ করতেই কেও আমার মুখ চেপে ধরলো। আমি চিৎকার দিতে গিয়েও পারলাম না কারণ সে খুব জোরেসোরেই আমার মুখ চেপে ধরেছে। আমি আবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে যাবো তার আগেই লোকটা আমার কানে কানে বলল,
– আমি তোর কাইফ ভাইয়া। ভয় পাসনা, আমি তোর কোনো ক্ষতি করবো না।

আমি কাইফ ভাইয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে, এক মহাপ্রশান্তিতে বলতে লাগলাম,
– আমি তোমাকে ভালোবাসি কাইফ ভাইয়া। এটা মিথ্যা নয়, বান্ধবীকে বলা নাটম নয়, আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। আজ আর আমার ভয় নেই, আমার মামী আমাকে তোমাকে ভালোবাসার সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছে। তাই আমি আবার বলছি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া একমুহুর্তও আমি থাকতে পারবোনা আর।

কাইফ ভাইয়া আমাকে টাইট করে জড়িয়ে ধরে বলল,
– ভেবেছিলাম তোর মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতে অনেক খড়কুটো পোড়াতে হবে কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই সব বলে দিলি।

হঠাৎ ঘরে লাইট জ্বলে উঠলো। আশেপাশে মামী, মিতু আপু সহ পরিচিত সব আত্মীয়সজনরা রয়েছে আর সবাই হাসি মুখে হাত তালি দিচ্ছে। ইশ, এতো মানুষের মধ্যে আমি তাকে ভালোবাসি বলেছি ভাবতেই যেন লজ্জায় মরে যাই যাই৷ ‘

গাড়ির ঝাকুনিতে বাস্তবে ফিরে এলাম। পরী আমার কোলে বসে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। মামীও ঘুমিয়ে আছে। ড্রাইভারকে বললাম,
-হঠাৎ কি হলো?
– তেল ফুরিয়ে গিয়েছে আপামনি। আমি তেলের মিটারের দিকে খেয়াল করিনি। খেয়াল করলে আগেই তেল ভরে রাখতাম। আসেপাশে তো তেল পাম্প নেই। আমরা গাড়িতেই বসুন। আমি কোনো ব্যাবস্থা করতে যাই। এখান থেকে ১০ মিনিটের দুরেই একটা পাম্প আছে। আমি যাবো আর চলে আসবো।

এরপর তেলের একটা ঢপ নিয়ে সে তেল আনতে চলেগেলো। আমি পরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর বাইরের পরিবেশ দেখছি। হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে কল আসলো, ফোন রিসিব করেই হাসি মুখে বললাম,
– বাবা কেমন আছো তুমি? সওয়াম কি করছে? তোমরা কখন রওনা দেবে?

ওপাশ থেকে বলল,
– কালকেই যেতে পারবো সব ঠিক থাকলে। তুই তোর ছেলের সাথে কথা বল।

এরপর ওপাশ থেকে বলল,
– মাম্মি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো, তুমি পঁচা।

আমি হাসি দিয়ে বলি,
– কালকে আবার আমার সোনার ছেলেটার সাথে দেখা হবে৷ রাগ করেনা।

– রাগ করবো না তো কি হবো। তুমি আমাকে ফেলে ওই দেশে চলে গেলে কেন? আমার দাদিমার সাথে দেখা হবে কখন?

-কালকেই হবে সোনাপাখি।
,
আরও কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলাম। অবশেষে সাওয়ামের রাগ ভাঙাতে পেরেছি। কালকে আবার আমাদের দেখা হবে এটা বুঝতে পেরেই সে খুশি

সাওয়াম আমার একমাত্র ছেলে, বয়স ৬ বছর ২মাস।
,
,
চলবে…

বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

Rafiza Akhtar Shaathi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here