বিছিন্ন_ভালোবাসা ২য় পর্ব

0
668

বিছিন্ন_ভালোবাসা
২য় পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– কখনো শুনেছো একজন স্বামী তার স্ত্রীকে সেই স্ত্রীর প্রেমিকার সাথেই বিয়ে দিতে চায়?
,
রাইসা নিজের ম্যাথ বইটা বন্ধ করে রাফিদের দিকে তাকালো। সাথে বেশ কৌতুহলী দৃষ্টি।
,
– এটা আপনি কি বলছেন ভাইয়া! একজন স্বামী তার স্ত্রীকে কখনোই বিয়ে দিতে চাইবে কেন! স্বামী স্ত্রীর বন্ধন তো অমূল্য এখানে তৃতীয় ব্যক্তি কেন ইন্টারফেয়ার করবে?
,
– যদি স্বামীটাই তৃতীয় ব্যক্তি হয় তো?
,
– ভাইয়া আপনি আমাকে সহজভাবে বলেন সব কিছু। এমনিতেই আজকে কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের অংক সমাধান কারাচ্ছেন তার উপর অংকের থেকেও জটিল কথা বলছেন।
,
– ধরো তুমি একজন ছেলে।
,
– না আমি ধরতে পারবোনা।
,
– আজব তো! তুমি ছেলে ধরলে তো আর ছেলে হয়ে যাচ্ছো না!
,
– কেন আপনি কি মেয়ে?
,
– কোন এংগেল থেকে আমাকে মেয়ে মনে হলো?
,
– তাহলে নিজেকে নিয়ে উদাহরণ দিন, আমাকে ছেলে বানানোর দরকার কি!
,
– এই সামান্য বিষয়ের জন্য এতো প্যাচাল করতে হবে তোমার?
,
– আমি কোনো প্যাচাল করছি না। এবার আপনার টপিকে আসেন।
,
– ঠিক আছে, ধরো আমি আর ধরো ‘x’ নামের একজন মেয়ে প্রেম করি।
,
– ওয়েট ওয়েট!
,
– এখন আবার কি হলো?
,
– আপনার সামনে একজন মেয়ে থাকতে ‘x’ নামক মেয়ের নাম কেন নিলেন?
,
– এখন কি মেয়ে হিসেবে তোমাকে ভাবতে হবে?
,
– অবশ্যই।
,
এই বলে রাইসা তার ৩২ দাত বের করে একটা হাসি দেয়।
,
– আচ্ছা ধরো আমি আর তুমি প্রেম করি। কিছুদিন প্রেম করার পর তোমার বাবা অন্যকোথাও তোমার বিয়ে দিয়ে দিলো! এরপর সেই স্বামী তোমার আর আমার সম্পর্কের কথা জেনে গেলো, তারপর তোমাকে আবার আমার সাথে বিয়ে দিতে চাইলো। তখন আমার করনীয় কি?
,
– একটু আগেও বললাম না! স্বামী স্ত্রীর বন্ধনটা খুবই পবিত্র।। স্বামী যতই অভিমান করুক বা স্ত্রী যতই অভিমান করুক না কেন, দিন শেষ স্ত্রী যদি স্বামীর বুকে মাথা না রাখে তাহলে দুইজনের কেউই সুখ খুজে পাবেনা।
,
– আমার উত্তর পায়নি রাইসা!
,
– উত্তরটা খুন সিম্পল। স্বামীকে আপনি বোঝাবেন পবিত্র সম্পর্ক কি। আর নিজেও সেই ভালোবাসার মানুষ থেকে দূরে থাকবেন যাতে কোনোদিন আপনার সামনে সে না পড়ে।
,
– ম্যাথ নিয়ে অনার্স না দিয়ে তো তুমি যুক্তিবিদ্যা নিয়ে পড়তে পারতে রাইসা!
,
– সেটা আমার মা কে বোঝান যেয়ে। আজকে আমার পড়ার মুড চলে গেছে। এখন যাচ্ছি আমি।
,
রাইসা তার বই নিয়ে চলে গেলো। তিনতলা বাসার নিচের তলায় মটোর গ্যারেজ ২য় তলায় রাফিদ আর তার মা থাকে। উপরের তলায় রাইসা আর তার মা থাকে। একজন বড় ভাই আছে। বউ নিয়ে বাইরের দেশে থাকে। আগামী বছর এখানে চলে আসবে আজীবনের জন্য।
বাসাটা মুলত রাইসাদের। রাইসার মায়ের বিশেষ অনুরোধে রাফিদ তাকে প্রতিদিন ম্যাথ সলভ করে দেয়।
,
,
,
রাত ১২টা,
,
ছাদের দোলনায় বসে উপরের আকাশের দিকে তাকিয়ে নিকোটিনের ধোয়া উড়াচ্ছে আকাশ। আজকে আকাশের সাথে বড্ড কথা বলতে ইচ্ছা করছে নিচের আকাশের।
,
– আকাশ তুমি বড্ড সুখি জানো? তোমার বুকে কোটি কোটি তারার মেলা। তার হলেই তোমার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায়। কিন্তু আমার যে রাত আর দিন দুইটাই সমান। আমার মনের মধ্যে সুখ নেই কেনো? ভালোবাসাকে হারিয়েছি ছাত্র জীবনে, নিজের স্ত্রীকেও হারাতে চলেছি।
,
উপরের আকাশের সাথে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলো হাতের সিগারেট সম্পুর্ন শেষ। আগুন হাতের আঙুল কিছুটা পুড়িয়ে কালসিটে করে দিয়েছে তবুও আকাশ বুঝতে পারছেনা।
,
সিগারেটের শিখা এমনিতেই নিভে গেলো। দোলনায় নিজেকে হেলিয়ে দিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো আকাশ।
,
,
কিছুক্ষণ পর নিজের পায়ের উপর বৃষ্টির পানির ছোয়া পেলো হয়তো। চোখ মেলিয়ে দেখলো পায়ের কাছে কাজল বসে আছে। উপরে তাকিয়ে দেখলো আকাশে মেঘের ছিটেফোঁটাও নেই। তারাহুলো জ্বলজ্বল করছে।
,
– কাজল এটা তুমি কি করছো?
,
– আকাশ তোমার দূরে সরিয়ে দেওয়া আমাকে বড্ড পোড়াচ্ছে। আমাকে একটু ভালোবাসা প্লিজ। তোমার ভালোবাসা আমার বড্ড দরকার। আমি যে বড্ড পিপাসার্ত, ভালোবাসার পিপাসা পেয়েছে।
,
– ঘরে যাও কাজল।
,
– না আকাশ, আমি ঘরে যাবোনা। আজকে আমাকে ভালোবাসতেও হবে তোমাকে। কেন আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো বলতে হবে আকাশ!
,
– কাজল কিছু অপুর্ণতা আমাকে তোমার কাছে ঘেষতে দিচ্ছেনা। নিজের কাছে বড্ড অপরাধী লাগছে।
,
কাজল আকাশের পায়ের কাছ থেকে উঠে আকাশের পাশে বসলো। নিজের মাথাটা আকাশের কাধে রাখলো।
আজকে আকাশ কাজলকে বাধা দিতে পারছেনা। আজকে দিনটা থাকুক না কাধে মাথা দিয়ে। আকাশের চুপ থাকা দেখে কাজল বলল,
,
– আকাশ বলো আজকে দেবে ভালোবাসা?
,
– ওইযে অপুর্ণতা আমাকে বাধা দিচ্ছে।
,
– আকাশ তোমার কোনো অপুর্ণতা থাকলে তুমি আমাকে বলতে পারো। আমি তোমাকে ভালোবাসি আকাশ। ওই যে আকাশের তারা দেখছো, আমি চাই ওই তারা মধ্যে কোনো জোড়াতারার মত আমরাও আকাশে জ্বলে বেড়াবো।
,
– কল্পনা আর বাস্তবতা বড়ই আলাদা কাজল। তুমি বাস্তবতা জানলে আমার সাথে বেচে থাকা বা মরে যাওয়ার স্বপ্নটা মুছে যাবে।
,
– একবার বলেই দেখো আকাশ আমাকে।
,
– নাহ থাকুক। আজকে বরং তোমার চাওয়াটা পূর্ণ করি আমি।
,
এরপর আকাশ কাজলে কোলে তুলে নিজের ঘরের দিকে রওনা দেয়। আজকে সে কাজলকে ভালোবাসবে। নিজের সব অপূর্ণতাকে ভুলে ভালোবাসবে। হয়তো এই ভালোবাসার শেষ সাক্ষী হিসেবে উপরের আকাশ থেকে জানান দেবে মিটমিটিয়ে জ্বলা তারা গুলো।
,
সন্তান দিতে না পারাটা একটা স্বামীর জন্য সেরা ব্যর্থতা। আকাশ জানে এটা কাজল জানলে ওকে ছেড়ে যেতে চাইবেনা তাই অন্যকোনো ভাবে তাকে রাফিদের একটা ভালোছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে। ছেলেটা তো ফাইনাল হয়েই আছে, রাফিদ।
,
,
,
বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির শব্দটা মন্দ লাগছেনা সুমনার। বাবু ঘুমিয়ে গেছে, বাবুর আব্বুও ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু তার আজকে ঘুম আসছেনা কেন সে নিজেও জানিনা। আজ অনেক বছর পর মনের কোনে কেন জানি আকাশ উঁকি দিচ্ছে। হঠাৎ বাইরে বজ্রপাত হলো। বজ্রপাতের আলোয় রাস্তায় হঠাৎ যেন আকাশকে দেখতে পাচ্ছে।
,
যেন চিৎকার করে কাদতে কাদতে বলতে চাচ্ছে,
,
– আমি ভালো নেই সুমনা। আমি ভালো নেই। তুমি চলে আসার পর থেকে আমি একটুও ভালো নেই। না নিজে ভালো আছি না কাজলকে ভালো রাখতে পারছি।
,
সুমনা চাইনা আকাশ অসুখি থাকুক। সব সময় আকাশ ভালো থাকুক, নতুন কাওকে ভালোবাসুক এটাই চায় সুমনা। কিন্তু মনের কল্পনাগুলো সুমনাকে মাঝে মাঝে ভালো থাকতে দেয়না।

,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here