বিছিন্ন_ভালোবাসা
৩য় পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
সাদের ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর দেখলো আসেপাশে সুমনা নেই। হঠাৎ বারান্দার দিকে চোখ যেতেই দেখলো দরজা খোলা আছে। বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গেলো সাদ।
,
রেলিংএ হাত দিয়ে বাইরে কেমন একটা অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে সুমনা। সাদ সুমনার একদম পিছনে দাঁড়িয়ে সুমনার কোমরে হাত দিয়ে একদম নিজের কাছে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেই সুমনাকে।
,
সুমনা বুঝতে পারে পিছনে সাদ এসে দাড়িয়েছে তাই নিজেকে কিছুটা হেলিয়ে দেয় সাদের দিকে। সাদ সুমনাকে জিজ্ঞাসা করলো,
,
– এতো রাতে ঘুমাওনি কেন?
,
– ঘুম আসছেনা সাদ। কেন জিজ্ঞাসা করো না, আমিও নিজেও জানিনা এর কারণ।
,
– সুমনা, একটা কথা বলবে!
,
– কি কথা শুনতে চাও বলো!
,
– তুমি কি আমার সাথে সুখে আছো সুমনা?
,
– আজ বিয়ের এতো বছরের মাথায় এই প্রশ্ন কেন করছো?
,
– আমার কেন যেন মনে হয় তুমি আমাকে ভালোবেসে সংসার করছো না সুমনা। শুধু মনে হয় আমি তোমার স্বামী এটা তোমার দ্বায়িত্ব আর সেই দ্বায়িত্ব থেকেই তুমি আমার সাথে সংসার করছো।
,
সুমনা সাদের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সাদকে ইজি চেয়ারে বসতে বলে। সাদ সুমনার কথা মত ইজি চেয়ারে বসে। সুমনা সাদের কোলে বসে আচমকা তারপর বুকে মাথা রাখে।
,
– সাদ, হ্যা আমি একসময় দ্বায়িত্বের জন্য সংসার করতাম। তখন আমার মনে অন্যকেও বসবাস করতো, আমার বয়সটাও কম ছিলো, ভালোবাসা আর বিয়ে এই দুইটার পার্থক্য বুঝতাম না। আস্তে আস্তে আমার দ্বায়িত্ব বেড়ে যেতে থেকে। এখন আমি আমার দ্বায়িত্বটাকে ভালোবাসা।
,
– আর আমাকে?
,
– সাদ, সন্তান কিসের চিহ্ন?
,
– হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করছো?
,
– আগে উত্তর দাও তারপর বলবো।
,
– সন্তান স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার চিহ্ন।
,
সুমনা সাদের বুকে একটা চুমু দিয়ে বলে,
,
– এর মানেই তো আমি তোমাকে ভালোবাসি তাইনা? তোমার সাথে সংসার করে আমি কি কোনোদিন হতাশা দেখিয়েছি বা কোনোদিন তোমার সাথে আমার মনমালিন্য হয়েছে!
,
সাদা মাথা নাড়াই।
,
সুমনা বলে,
,
– এরমানেই আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর যদি কোনো প্রমাণ চাও সেটাও দেখাতি পারি সাদ। তবে বিয়ের ৭ বছর পর তুমি এই কথা বলবে আমি ভাবতেই পারিনি।
,
সাদ সুমনার কপালে একটা উষ্ণ ভালোবাসার স্পর্শ একে দিয়ে বলে,
,
– ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যেটা একজন মানুষ তার প্রিয়তমার কাছে বারবার তার মনের কথা শুনতে চায়। আমি বারবার, হাজারবার শুনতে চাই তুমি আমাকে ভালোবাসো।
,
সুমনা সাদের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে সাদের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে,
,
– আমার সব অতীত তুমি জেনেও আমাকে পাগলের মত ভালোবেসেছো সাদ তাহলে কেন আমি আমার পবিত্র বন্ধনের জন্য প্রেম ভালোবাসা নামক একটা ঠুনকো রোগকে ভুলে যাবোনা।
,
– প্রেম ভালোবাসাকে ঠুনকো রোগ বলো না সুমনা। তুমি আমার বউ, আমার প্রেমিকা। হাহাহা।
,
সুমনা সাদের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে আবার সাদের বুকে মুখ লুকায়।
,
মনের কোণে আকাশ নামটা থাকলেও সেটা এখন আর ভালোবাসার নাম নই, সুমনা চায় আকাশ শুধু ভালো থাকুক।
,
,
?
,
জানালার ধারে বসে রাইসা টিপটিপ বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনে যাচ্ছে। একাএকা এই বৃষ্টির শব্দ শোনার মজাই আলাদা। আজকে সারারাত ধরে বৃষ্টি দেখেই কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে রাইসার। এখন ছাদে গিয়ে ভিজলেও মন্দ হতো না। কিন্তু হঠাৎ করে রাইসার কলিজা কেপে ওঠে। ছাদের এতো রাতে যদি ভূত থাকে! “শুনেছি বৃষ্টির রাতে ভূতেরা ছাদে ভিজতে থাকে আর নাচতে থাকে! ওরে বাবারে, আমার দরকার নেই ছাদে যাওয়া। আমি বরং জানালা দয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ছোয়া নিতে থাকি।”
,
রাইসা নিজের সাথে নিজেই কথা বলে হাত বাড়িয়ে দেয় জানালার বাইরে। বৃষ্টির শীতল ছোয়া সারাদেহের সাথে মনকেও দোলা দিয়ে যাচ্ছে। একবার মনে হচ্ছে একান্ত একা থাকায় ভালো আবার হঠাৎ করে মনে হচ্ছে এই বৃষ্টির রাতে প্রিয় মানুষটার বুকে মাথা রেখে বৃষ্টি ছুয়ে দেবে। “কিন্তু আমার তো প্রিয় মানুষ নেই”।
,
কি মনে করে রাইসা ঘর থেকে বের হয়ে নিচের তলায় যায়। বারবার রাফিদের বাসার দরজার কলিং বেইল বাজাতে থাকে। ১ মিনিটের মধ্যে রাফিদ চলে এসে দরজা খুলে দেয়।
,
রাফিদকে দেখে রাইসা জিজ্ঞাসা করে,
,
– এতো রাতে আপনি ঘুমাননি নাকি? বেল বাজানোর সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলেন যে!
,
– না ঘুমাইনি। তুমি বলো এতো রাতে কেন এসেছো এখানে। আন্টির শরীর খারাপ নাকি?
,
– না।
,
– তাহলে তোমার শরীর খারাপ নাকি? কই দেখি!
,
রাফিদ রাইসার কপালে হাত দেয় জ্বর আছে কিনা সেটা দেখার জন্য। রাফিদের আচমকা কপালে হাত দেওয়ায় শিউরে ওঠে রাইসা। রাফিদ দেখলো রাইসার জ্বর নেই তাই জিজ্ঞাসা করলো,
,
– আন্টির কিছু হয়নি তুমিও তো দেখছি ঠিক আছো। তাহলে এই মাঝ রাতে কেন এসেছো এখানে?
,
– ছাদে যাবো।
,
– যাও। ছাদ তো তোমার মাথার উপরে ছিলো তাহলে এখানে আসলে কেন?
,
– আপনাকে নিয়ে যাবো।
,
– তুমি একাই যাও এতো রাতে একটা মেয়ে আর একটা ছেলেকে একসাথে দেখলে কেও ভালো বলবে না।
,
– কিন্তু এতো রাতে কে দেখবে আমাদেরকে? ও, আপনি ওদের কথা বলছেন?
,
– কাদের কথা বলছি?
,
– ছাদে যে ভূতগুলো আছে তাদের কথা বলছেন তাইনা! আপনি গেলেই ওরা পালাবে। চলুন আমার সাথে।
,
রাইসা রাফিদের হাত ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে যায়। ছাদের উপর বৃষ্টির শব্দগুলো মনকে ভরিয়ে দিচ্ছে রাইসার।
,
– ওই দেখুন আপনি আসতেই তারা চলে গেছে।
,
– কারা?
,
– যে ভূতগুলো ছাদে নাচছিলো এতোক্ষণ।
,
রাইসার কথা শুনে রাফিদ হোহো করে হাসতে থাকে। একটা অনার্স পড়ুয়া মেয়ে এতোটা বাচ্চামি কিভাবে করতে পারে রফিদ যদি রাইসাকে না দেখতো তবে বুঝতেই পারতোনা।
,
পাশে তাকিয়ে দেখলো রাইসা নেই। সামনে চোখ যেতেই দেখলো দুইহাত মেলিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে গোলগোল ঘুরছে রাইসা।
পিচ্চি মেয়ের পাগলামি দেখছে রাফিদ। হ্যা পিচ্চিই তো রাফিদের থেকে বয়সে কমপক্ষে ৭/৮ বছরের ছোটো হবে রাইসা।
,
হঠাৎ বিকট শব্দে একটা বজ্রপাত ঘটে। রাইসা ভয়ে ছাদের উপরই শুয়ে পড়ে চোখ বুঝে। রাফিদ এটা দেখে ভাবে যে রাইসা অজ্ঞান হয়েগেছে। তাই রাইসার কাছে ছুটে যায়। রাইসাকে ডাক দিতেই আচমকা রাইসা রাফিদকে জড়িয়ে ধরে কাপতে থাকে।
,
বৃষ্টিতে দুজনই ভিজে একাকার। একজন মেয়ে একজন ছেলেকে জড়িয়ে ধরলে যেমন অনুভূতি হয় রাফিদের সেটাই হচ্ছে। এটা যে প্রকৃতির নিয়ম। রাইসা যেন রাফিদের সাথে চৌম্বকের মত আটকে আছে। ভয় এখনো কাটেনি তার।
,
,
বেশকিছুক্ষণ পর রাইসা কিছুটা স্বাভাবিক হয় এবং বুঝতে পারে সে রাফিদকে জড়িয়ে ধরে আছে। তাড়াতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সিড়ি বেয়ে দৌড়ে ঘরে চলে যায়। লজ্জা লজ্জা! এখনো সে রাফিদের সামনে যাবে কিভাবে বুঝতে পারছেনা। ইশ!
,
,
?
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।