বিছিন্ন_ভালোবাসা
৪র্থ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– যদি আপনার সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হয় তাহলে আপনি কি করবেন?
,
– আমার নিজের হাতেই আমি আমার স্ত্রীকে হত্যা করব, এতে যত পাপ হয় হোক।
,
আজ একমাস হলো আকাশ বাড়ির বাইরে আছে।
সেদিন আকাশ এবং কাজল এক হয়ে যাবার দুইদিন পর আকাশ অফিসের কাজে ইংল্যান্ডে চলে আসে। এখানে আসার 20 দিন পর আকাশের মা আকাশ কে কল দিয়ে জানায় যে কাজল প্রেগন্যান্ট।
কথাটা শুনে যেন আকাশের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।
,
আকাশ বুঝে উঠতে পারছে না এটা কিভাবে সম্ভব। বড্ড অস্থিরতা কাজ করছে মনের মধ্যে। “এটা তো আমার সন্তানও হতে পারে! কিন্তু ডাক্তারের রিপোর্টটা ভূল কিভাবে হতে পারে!” এমন হাজার রকমের দ্বিধার মিশ্রণ চলছে আকাশের মনে।
,
কোম্পানির একজন স্টাফ আকাশকে বলে, কেন আকাশ এত অস্থির হচ্ছে। এর জবাবে আকাশ এই কথাটা বলে,
-যদি আপনার সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও আপনার স্ত্রী গর্ভবতী হয় তাহলে আপনি কি করবেন?
,
তখন কর্মকর্তা উত্তরে বলে,
,
– আমার নিজের হাতেই আমি আমার স্ত্রীকে হত্যা করব, এতে যত পাপ হয় হোক।
,
আকাশ মুচকি হেসে বলে,,
,
– আমি কিন্তু এই কাজটা করব না জনাব আতিফ। আমি সত্যতা যাচাই করা মানুষ। আপনারা অফিসের অনেক কিছুই অজান্তেই ভুল করেন, সেগুলা আমি যাচাই করি। অতএব এখানেও সেটাই করব তারপর স্ত্রীকে তার কাছে তুলে দেবো যার সন্তান তার গর্ভে এসেছে।
,
আকাশের কথায় আতিফ বলল,
,
– কিন্তু স্যার একটা স্ত্রী স্বামীকে রেখে অন্য একটা পুরুষের সাথে যদি শারীরিক সম্পর্ক করে তার তো মৃত্যু ছাড়া আর কোন ভাল শাস্তি হতে পারে না।
আকাশ বলে
,
– একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকমের। আমি একরকম ভাববো আপনি আরেক রকম ভাববেন।
,
– সেটা বুঝলাম স্যার কিন্তু এই ঘটনাটা কার সাথে ঘটেছে? আপনার পরিচিত কারও সাথে কি?
আকাশ চাইনা তার স্ত্রীর দিকে কেও আঙ্গুল তুলুক।
কথা বলতে বলতে প্রায় প্লেনের কাছে চলে এসেছে। এবার প্লেনে ওঠার পালা, এরপর দেশে গিয়ে কত বড় একটা দায়িত্ব পালন করবে আকাশ। বুকে পাথর রেখে কাজলকে তার সন্তানের আসল বাবার কাছে দিয়ে আসবে। কি অদ্ভুত নিয়তি। কলেজ লাইফে একটা সাধারণ ছেলের সাথে সুমনার বাবা সুমনাকে বিয়ে দিতে চাইনি। তখন আকাশের না কিছুই ছিলোনা। তখন নিজের ভালোবাসাকে ধরে রাখতে পারেনি আকাশ।
আজও কাজলকে ধরে রাখতে পারবেনা। আকাশ বারবার কাজলে চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলো,
‘ কাজল আমি তোমাকে খুব ভালোবাসা। তোমাকে পবিত্র ভাবে ভালোবাসি। তোমাকে যতটা ভালোবাসি তার এক অংশও সুমনাকে ভালোবাসিনি। সুমনাকে ভালোবেসে বাচতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমাকে ভালোবেসেছি মরার জন্য। একসাথে মরতে চাই।’ কিন্তু আপসোস আকাশের ভালোবাসার কোনো মূল্য কাজল দিতে পারলো না।
,মেঘের উপর দিয়ে প্লেন চলেছে। মেঘভেলাগুলো গ্লাসের ভিতর থেকে খুব ভালো দেখা যাচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে মেঘের সমুদ্রের উপরে সাতার কেটে প্লেন চলেছে।
,
উতলা মন হঠাৎ বলে ওঠে, ‘ কাজল যদি তোকে ভালোই না বাসবে তবে তোর কাছে থাকতে চাইতো কেন? তোকে যদি ভালোই না বাসবে তবে তোর ইগনোর ওকে পুড়াতো কেন? তোকে যদি ভালোই না বাসবে তবে তোকে কাছে পাওয়ার জন্য মরিয়া হবে কেন?’। প্লেন চলেছে মেঘের সমুদ্রের উপরে আকাশের মন চলেছে দ্বিধার সমুদ্রে।
,
?
,
রাইসার মনটা আজকে সকাল থেকে বেশ ফুরফুরে কারণ তার প্রিয় ভাইয়া ভাবি আর ছোট্ট পিউ দেশে ফিরে আসবে।
এয়ারপোর্টে আনতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে রাইসা।
ইতিমধ্যে মা অনেকবার বলে গেছে তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিতে এমনকি ধমকানোও শেষ কারণ রাইসা এত পরিমান সময় নিয়ে সাজতে বসেছে যে মনে হচ্ছে এক সপ্তাহ শুধু সাজা সাজির কাজে লাগিয়ে দেবে।
,
অনেক্ক্ষণ পর অবশেষে রাইসার সাজাসাজির পর্ব শেষ হলো।
নীল শাড়ি আর হাতের সাদা চুড়িগুলো বেশ মানিয়েছে।
,
অনেক্ক্ষণ ধরে রাফিদ ড্রয়িং রুমে বসে অপেক্ষা করছে রাইসার জন্য। অবশেষে রাইসার ঘর থেকে বের হলো। রাফিদকে দেখেই রাইসার চোখ ছানাবড়া। রাফিদও নীল পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা পরেছে। একেবারে ম্যাচিং ম্যাচিং যাকে বলে।
,
কিছুক্ষণের মধ্যে রাফিদ আর রাইসা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
,
?
,
কাজল রোজিনা চৌধুরীর পা জড়িয়ে বসে আছে কিন্তু তাতে রোজিনা চৌধুরীর ওকটুও মায়া হচ্ছেনা। কাজলকে দাড়করিয়ে রোজিনা চৌধুরী গালে একটা ঠাস করে চড় লাগিয়ে বলে,
,
– তুই বলে যা কলঙ্কিনী। আমার এতো সুন্দর সংসারটাকে তুই এভাবে নষ্ট করে দিলি!
,
– মা আপনি আমাকে আরো মারুন তবে এই বাড়ি থেকে বের করে দেবেন না। আপনিই বলুন আমি কোথায় যাবো! আপনারা ছাড়া আমার কে আছে!
,
– তাহলে তোর পেটের নষ্ট সন্তানকে নেওয়ার সময় কেন এই কথা ভাবিসনি?
,
কাজল কাদতে কাদতে বলে,
,
– এতো বড় অপবাদ দেবেন না মা। এটা আপনার ঘরের আলো,আপনার বংশধর। আপনার নাতনি না নাতি হবে।
,
রোজিনা চৌধুরী কাজলের গালে আবার একটা চড় বসিয়ে দেয়। তারপর বলে,
,
– আরে কলঙ্কিনী আমার ছেলেটার তো সন্তান দেওয়া ক্ষমতায় নেই। এখন বল তাহলে তোর পেটের সন্তানটা কার হতে পারে।
,
শ্বাশুড়ি মুখ থেকে এমন কথা মোটেও আশা করেনি কাজল। মনে হচ্ছে তার পৃথিবী ভনভন করে ঘুরছে। কাজল নিজেকে সামলানোর জন্য মাথায় হাত দেয়। বিষয়টি রোজিনা চৌধুরীর চোখ এড়ায়না। উনি বলে,
,
– এসব ন্যাকামো আমার সামনে চলবেনা। তুই এখন বের হ এই বাড়ি থেকে। ১০ দিন ধরে তোকে সহ্য করছি। ভেবেছিলাম ছেলেটা আসলে এর বিচার করবো কিন্তু ও আজকে ফোন দিয়ে বলে দিলো তোকে তাড়িয়ে দিতে।
,
– না মা আমার আকাশ এমনটা করতে পারেনা। ও আমাকে ভালোবাসে।
,
-ভালোবাসা না ছাই। ও বলেছে তোকে যেন না দেখে এই বাড়িতে। ও যদি এসে তোকে দেখতে পায় তাহলে সোজা ছাদে চলে যাবে। তারপর ছাদ থেকে লাফ দেবে।
,
– না মা, আকাশ ভালো থাকুক এটাই চাই। আমিই চলে যাচ্ছি মা। তবে মনে রাখবেন আমার গর্ভের সন্তান শুধুমাত্র আকাশের। আর এটাই আমার আর আকাশের ভালোবাসার সাক্ষী। তবে আকাশ যেহেতু আমার মুখ দেখার চেয়ে মৃত্যুটা বেশি প্রাধান্য দিয়েছে তবে আমি চলে যাচ্ছি।
,
কাজল আর কথা না বাড়িয়ে আকাশের বাড়ির বাইরে পা বাড়ায়। রোজিনা চৌধুরী অনেক বছর পর এবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। অবশেষে ঝামেলা বিদায় করা গেলো। কিন্তু আকাশ ফিরলে কি বলবে! সেটাও ম্যানাজ করা যাবে। হাহাহা।
,
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।