বিছিন্ন_ভালোবাসা ৯ম পর্ব

0
1506

বিছিন্ন_ভালোবাসা
৯ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– কাজল আমাদের বিছিন্ন ভালোবাসা আর ভালো লাগছেনা। চলোনা এক হয়ে যায়! আমাদের সন্তান আসবে পৃথিবীতে। আমাদেরকে বেধে দেবে আজীবনে।
,
কাজল অপর পাশ থেকে কাদতে কাদতে বলে,
,
– সেটা হয়তো আর কোনোদিন সম্ভব না আকাশ।
,
– তুমি কারণটা কেন বলছোনা কাজল? বারবার সম্ভব না কেন বলছো? একবার বলো তুমি কোথায়?
,
– আকাশ বাসের ব্রেক ফেইল করেছে। গাড়ির গতিও কমানো যাচ্ছেনা। এই মুহুর্তে আমি কিভবে তোমাকে আশ্বাস দেবো বলো।
,
– উপরওয়ালার উপর বিশ্বাস রাখো কাজল। তিনিই তোমাকে রক্ষা করবেন। এখন বলো কোথায় আছো।
,
কাজল কাদতে কাদতে বলে,
,
– আমি জানিনা আকাশ। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের বাসে উঠেছিলাম কিন্তু এখন কোথায় আমি জানিনা।
,
– তুমি চিন্তা করো না কাজল আমি এক্ষুনি আসছি। তোমার নাম্বারটি চালু রেখো।
,
আকাশ ফোন কেটে দিয়ে তার এক বন্ধুকে কল লাগায়। সে পুলিশ ফোর্সে কাজ করে, লোকেশন ট্রাক করে।
,
আকাশের কল রিসিভ করতে আকাশ বলে,
,
– সাব্বির আমি তোকে একটা নাম্বার দিচ্ছি তুই একটু ট্র‍্যাক করতে থাক।
,
– আকাশ কি হয়েছে? কার নাম্বার এটা?
,
– কাজল খুব বিপদে দোস্ত। তুই আর কথা বাড়াস না।
,
ভাগ্যভালো সে সময় সাব্বির অফিসেই ছিলো। তাই ঠিকানা ট্র‍্যাক করা শুরু করলো। আকাশ নিজের গাড়ি নিয়ে দ্রুত বের হয়ে পড়লো।
,
সাব্বিরের সাথে কন্টাক্ট রেখেই চলেছে একটা ফোনে। ২য় ফোনে আবার কাজলের নাম্বার থেকে কল আসলো।
,
আকাশ দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে বলে,
,
– কাজল আর একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি।
,
– না আকাশ তুমি আসতে পারবেনা। একবার ভাবোতো কিভাবে আসবে! যেখানে গাড়ি ফুল স্পিডে চলছে সেখানে সেই গাড়িকে রিচ করবে কিভাবে।
,
– আমার জীবন গেলেও আমি তোমাকে রক্ষা করবো কাজল।
,
কাজল শান্ত গলায় বলল,
,
– তুমি আমার কথাটা শোনো আকাশ। আল্লাহ ছাড়া কেও রক্ষা করতে পারেনা। তিনি হয়তো চাননা তাই আমার সমাপ্তি এখানেই। তুমি জোরে গাড়ি চালিওনা প্লিজ। আমার দোহাই লাগে। তুমি নিজের গাড়ি থামাও। আমাকে তোমার সাথে কথা বলার শেষ সুযোগটা দাও আকাশ প্লিজ।
,
আকাশ কাজলের কথা শুনে গাড়িটা সাইড করে রাখে।
কাজল নিজের কান্না দমিয়ে বলে,
,
– দেখো আকাশ কারো জীবন অন্যের জন্য বসে থাকেনা। আমি গেলেও অন্যকেও তোমার জীবনে আসবে। তাকেও ঠিক ভালোবাসবে। আমি স্মৃতির কোনে একটু জায়গা নিয়ে থাকবো হয়তো।
,
আকাশ চিৎকার করে কাদতে থাকে,
,
– কাজল আমার শুধু তোমাকে চাই। আমি তো শুধু তোমার ভালোবাসা পেতে চাই। তোমার আমার বিছিন্ন ভালোবাসা এক করে নিতে চাই।
,
– সবার চাওয়া একজীবনে পূর্ণ হয়না আকাশ। দেখো, তুমি যাকে ভালোবাসতে সে তোমার ভাগ্যে জোটেনি, আমার ক্ষেত্রেও তাই। আবার আমাদের একসাথে থাকাটাও হয়তো এক্ষানেই শেষ।
,
– কে আমার অতীত, কে তোমার অতীত এই নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই কাজল। আমি শুধু তোমাকে চাই।
,
– আমিও মৃত্যুর এই সময়টা তোমাকেই চেয়েছিলাম আকাশ তাইতো তোমাকে কল দিলাম। এখন……
,
কাজল আর কিছু বলার আগেই বিকট একটা শব্দ হয় আর কাজল চিৎকার করে ওঠে। ফোনের লাইনটা এখনো চালু আছে কিন্তু ওপাসে কথা বলার কেও নেই। আকাশ বারবার হ্যালো বলার পরও কোনো উত্তর নেই। নিয়তি হয়তো কাজলকে অনেক দূরে নিয়ে চলে গেছে।
,
?
,
পিউকে ঘুম পাড়িয়ে সুমনা রাইসার ঘরে আসে। রাইসা একটা শাড়ি গায়ের উপর দিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে৷ সুমনা গিয়ে রাইসার পাশে বসলো। রাইসা সুমনাকে দেখে নিজের ভাবনা জগৎ থেকে বের হয়ে আসলো,
,
– ভাবি! কখন এলে?
,
– এইতো এখনই। বাসায় আসলে হাসিখুশি কিন্তু হঠাৎ কতেই উদাস হয়ে গেলে কেনো?
,
– না মানে ভাবি।
,
সুমমা রাইসাকে থামিয়ে বলে,
,
– এখনও সময় আছে রাইসা। মনের কথা চেপে রেখোনা।
,
– ভাবি, কিছু আবেগ প্রকাশ করতে নেই। সেটা অন্যের কাছে অপ্রয়োজনীয় হতে পারে আর আমি হতে পারি হাসির পাত্র। তাই আবেগটাকে চেপে রেখেছি।
,
– কিন্তু এভাবে থাকলে তুমি যে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে। মনের কথা না বলার কষ্টটা তুমি সইতে পারবেনা রাইসা।
,
– এতোদিন তাকে কোনোকিছুই না জানিয়ে যতক্ষণ থাকতে পেরেছি আজও পারবো ভাবি।
,
সুমনা অবাক চোখে রাইসার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার চোখ এক কথা বলছে আর মন আরেক কথা বলছে। সুমনা রাইসাকে অপ্রস্তুত করতে চায়না তাই সেখান থেকে নিজের ঘরে চলে যায়। মেয়েরা বারবার স্যাক্রিফাইস করবে এটাই হয়তো সমাজের নিয়ম। সুমনা বাবার জোরে আকাশকে ছেড়ে সাদকে বিয়ে করেছে, যদিও সাদের সাথে অসুখী ছিলোনা। আবার তার ননদটাও নিজের ভালোবাসাকে লুকিয়ে রেখেছে।
,
,
সকালে,
,
এক্সিডেন্ট করা বাসের সবাই চট্টগ্রাম সিটি হাসপাতালে ভর্তি জানতে পেরেই আকাশ সেখানে চলে যায়। রাতেই চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো, কারণ ফেইসবুকে জানতে পেরেছিলো চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটা বাসে অর্ধেক লোকের মৃত্যু হয়েছে।
,
হাসপাতালের বাইরে অনেক ভিড়। সবাই তার প্রিয়জনের সাথে দেখা করতে এসেছে। কেও জীবিত দের সাথে, কেওবা মৃতদেরর সাথে।
,
দুইজন মহিলা আকাশের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় বলছিলো,
,
– ইশ, মেয়েটার পেটে মনে হয় বাবু ছিলো। খুব খারাপ লাগছে।
,
অন্যজন বলে,
,
– হ্যা বুবু, খারাপ লাগছে বেচারি স্বামীর জন্য। তাকে এই দুনিয়ায় একা করে মেয়েটা আর সন্তানকে উপর ওয়ালা নিয়ে নিলো।
,
কথাগুলো যেন আকাশের কানে ঝনঝন শব্দে বাজতে লাগলো। দৌড়ে রিসিপশনে চলে যায়। সেখানে সব কিছু বলতে তারা ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলে।
,
২০ মিনিট পর সাদা কাপড়ে ঢাকা কাওকে একটা স্ট্রেচারে করে। আকাশ ধীরপায়ে সেখানে গিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে আর পাগলের মত কাদতে থাকে,
,
– তুমি শেষমেশ তোমার কথায় রাখলে কাজল? আমাকে একা করে চলেই গেলে? আমি এখন কি নিয়ে থাকবো?
,
হঠাৎ আকাশের পাশে আরেকজন পুরুষ লোক এসে সেও একই ভাবে কাদতে থাকে। বিষয়টি আকাশকে অবাক করে। তার সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা।
,
পিছন থেকে কেও একজন আকাশকে লক্ষ্য করে বলে,
,
– স্যার এটা ওই লোকের স্ত্রী।
,
আকাশ বেশখানিকটা অবাক হয়। “তাহলে কাজল কি ঠিক আছে?” হঠাৎ করেই মনের কোনে সোনালী সূর্যের দেখা মেলে।
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন
,
গল্পটা কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে না মেলানোর অনুরোধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here