বিছিন্ন_ভালোবাসা ১০ম ও শেষ পর্ব

0
3419

বিছিন্ন_ভালোবাসা
১০ম ও শেষ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– তাহলে আমার স্ত্রী কোথায়?
,
লোকটা আকাশকে বলে,
,
– আপনার স্ত্রীর পরিচয় বলুন।
,
– ওই বাসে আরো একজন গর্ভবতী মেয়ে ছিলো।
,
– ও হ্যা হ্যা। আমার সাথে আসুন।
,
আকাশ এখন সম্পুর্ন অনুভূতিহীন ভাবে আছে। হাসি বা কান্না কোনোকিছুই তার মুখে নেই। বরং প্রিয়কে দেখার আগ্রহ তার চোখে দেখা যাচ্ছে।
,
লোকটার পিছু পিছু একটা কেবিনের সামনে গেলো আকাশ। গ্লাসের দরজা দিয়ে উকি দিয়ে বেডের উপর গলা পর্যন্ত কাপড় দিয়ে ঢাকা রয়েছে কাজল। চোখমুখ অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে। তবে এখন আকাশ কাজলকে ফিরে পেয়েছে৷ কাজলকে দেখে যেন আকাশের পৃথিবী ফিরে এসেছে। মুখে এক চিলতে হাসি, চোখের জল থুতনি বেয়ে টপটপ করে পড়ছে।
,
আকাশ কেবিনের দরজা খুলতে গেলে লোকটি বলে,
,
– এখন রোগী ডিস্টার্ব করতে নিষেধ করেছেন ডাক্তার। আপনি আমার সাথে চলুন। ডাক্তার বলেছিলো ওনার কেও আসলে যেন তার সাথে দেখা করেন।
,
আকাশ লোকটির সাথে ডাক্তারের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।
,
কেবিনে,
,
– দেখুন মিস্টার আকাশ, কথাটা আপনার জানা দরকার তাই এখানে আসতে বলা।
,
– জ্বি বলুন।
,
– সরি টু সে ইউ বাট আমরা আপনার সন্তানকে বাচাতে পারিনি।
,
আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
,
– এতো বড় এক্সিডেন্টের পর ও বেচে আছে তার জন্যই আমি খুশি।
,
সন্তান হারানোর যন্ত্রণা আকাশকে পুড়িয়ে দিচ্ছে তবুও কাজল বেচে আছে এটা ভাবলেই কষ্টগুলো উবে যাচ্ছে।
,
ডাক্তার আকাশের মনের অবস্থা বুঝতে পারে তাই বলে,
,
– আমি জানি আপনার মনে কি চলছে তবে একটা ভালো খবরও আছে তা হল, আপনার স্ত্রী মা হারানোর ক্ষমতা হারাননি। আল্লাহ চাইলেই আপনারা আবার সন্তান নিতে পারেন।
,
আকাশ ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে,
,
– আমি কি এখন ওর সাথে দেখা করতে পারবো?
,
-কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। জ্ঞান ফিরলেই আপনাকেই আগে ডাকা হবে।
,
আকাশ ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো। গ্লাসের ভিতর দিয়ে এক পলক দেখে নিলো কাজলকে তারপর পাশের চেয়ারে বসে রইলো কখন তাকে ডাকা হবে তার অপেক্ষায়।
,
প্রায় ৩ ঘন্টা পর কাজলের জ্ঞান ফেরে। আকাশকে ভিতরে যাওয়ার পারমিশন দেওয়া হয়। আকাশ ধীরেধীরে গিয়ে কাজলের পাশের টুলে বসে। কাজল চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, সে এখনো আকাশকে দেখতে পায়নি।
,
আকাশ কাজলের একটা হাত নিজের মুঠোয় রাখতে কাজল চোখ মেলে। আকাশকে দেখে চোখের ভিতরে জমে থাকা পানিগুলো সব বের হতে থাকে। মুখের কথা যেন চোখে বলতে চায় কাজল। আকাশ কাজলের চোখের ভাষা যেন বুঝতে পারছে। কাজলেএ চোখে ভিতরে আকাশকে ছেড়ে থাকার যন্ত্রণা দেখতে পাচ্ছে।
,
– আমাকে মাফ করে দিও আকাশ। সেদিন আমি মায়ের কথায় বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম। আমি এটাই ভাবতে পারিনি যে আমার আকাশ আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবেনা।
,
আকাশ কাজলের হাতে একটা চুমু একে দিয়ে বলে,
,
– সেসব কথা বাদ দাও। এখন তো আবার এক হয়েছি আমরা। দিন শেষে সত্যিকারের ভালোবাসার পূর্ণতা পায় কাজল, আমাদের তাই হয়েছে। আমাদের সত্যি ভালোবাসা আবার আমাদের এক করে দিয়েছে।
,
– ঠিক বলেছো আকাশ। এখন থেকে তুমি আমি আর আমাদের বাবু একসাথে থাকবো। এই দেখো আমাদের বাবু।
,
কাজল আকাশের হাতটা নিজের পেটের কাছে রাখতেই আতটে ওঠে।
,
– আকাশ আমার বাবু কই?
,
– ওকে বাচানো যায়নি কাজল।
,
আকাশ মাথা নিচু করে নেয়। কাজল চিৎকার দিয়ে কেদে ওঠে,
,
– আমাকে আমার সন্তান এনে দাও আকাশ। প্লিজ আকাশ।
,
কাজলের কান্না থামাচ্ছেনা আকাশ। কান্না না করলে কষ্ট কমে না। নিজেও চোখের পানি ফেলতে থাকে এছাড়া যে কিছুই করার নেই তার।
,
কাজল কান্না করতে করতে আকাশকে বলে,
,
– তুমি আমাকে এখানে ফেলে চলে যাও আকাশ। আমি আমাদের সন্তানকে বাচাতে পারিনি। তুমি আনার মত খারাপ মানুষকে রেখে চলে যাও।
,
আকাশ টুল থেকে উঠে কাজলের পাশে বসে মাথা একটা চুমু দিয়ে বলে,
,
– উপরওয়ালার ইচ্ছা বিরুদ্ধে কিছুই হয়না। তুমি মন খারাপ করোনা কাজল। আল্লাহ চাইলে আবার আমাদের ঘরে আলো করার মত কেও আসবে।
,
আকাশ যতই সান্তনা দিকনা কেন, সন্তান হারিয়ে কোনো মা শান্ত থাকতে পারেনা।
,
সাতদিন পর,
,
আকাশ কাজলকে নিয়ে তার নতুন বাসা চলে আসে। কাজল কিছুটা স্বাভাবিক হলেও। মনের কষ্ট কিছুটা থাকবেই এটাই স্বাভাবিক। মা অনেক বারবার কাজল আর আকাশকে নিতে এসেছে কিন্তু আকাশ কাজলকে কোনো দিন ওই বাড়িতে রাখবেনা।
,
?
,
আজকে রাইসার বিয়ে। একদম সাধারণ বিয়েটা হবে রাইসার। ছেলে পক্ষ আসে বিয়ে পড়িয়ে রাইসাকে নিয়ে চলে যাবে। রাইসার মা ছেলের মামার কাছে কল দিয়ে জানতে পারলো তারা বের হচ্ছে এখন।
,
রাইসাকে সুমনা সাজিয়ে দিচ্ছে।
,
সুমনা- রাইসা, এখনো সময় আছে।
,
– না ভাবি। ভাগ্যে যা আছে তাই হোক।
,
ওদিকে রাফিদ ছাদের উপর পায়চারি করতে থাকে। কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছেনা সে। হঠাৎ তার বিবেক বলে ওঠে,”আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি। ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কতটা সেটা আমি জানি। আমার জন্য কেও যদি তার ভালোবাসাকে পেয়ে যায় তাহলে আমি কতোটুকু ত্যাগ করতেই পারি। কাজল যদি আকাশের সাথে সুখে থাকে, আমার থেকেও যদি আকাশকে ভালোবাসতে পারে তাহলে আমি কেন রাইসাকে ভালোবাসতে পারবোনা।”
,
আজকে রাফিদ মনের কথায় শুনবে তাই পা বাড়ায় রাইসার বাসায়। বাসায় কলিং বেইল বাজাতেই রাইসার মা দরজা খুলে দেয়।
,
– বাবা রাফিদ তুমি এতো দেরি করে কেন এলে। ছেলে পক্ষ তো চলে আসবে।
,
– আন্টি বিয়েটা বন্ধ করেন।
,
– কেন বাবা? কি হয়েছে?
,
– আমি রাইসাকে আর রাইসা আমাকে ভালোবাসে।
,
রাইসার মা পিছনে তাকিয়ে দেখে সুমনা দাঁড়িয়ে আছে। সুমনা শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে মাথার ইশারায় বলে, ‘হ্যা’।
,
নিজের ফোন থেকে তাড়াতাড়ি ছেলের মামার কাছে কল দিয়ে বলেন,
,
– আমাকে মাফ করবেন ভাই সাহেব। মেয়েটা পালিয়ে গেছে। আপনারা আসবেন না।
,
ছেলে পক্ষ আর আসেনা। সেদিন রাতেই রাইসা আর রাফিদের বিয়ে হয়ে যায়।
,
রাইসার মন থেকে বিছিন্ন থাকা মানুষটা এখন একান্তই তার হয়ে যায়। এটাই সুখ এটাই ভালোবাসা।
,
কাজল-আকাশ ভালো থাকুক তাদের অতীত ভুলে। হয়তো কোনো একদিন তাদের ঘরে একটা রাজপুত্র বা রাজকন্যার ছোটো ছোটো পায়ের আনাগোনা হবে। বিছিন্ন ভালোবাসা, বিছিন্ন সুখ ডানা মেলে ধরা দেবে।
,
,
সমাপ্ত
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পের শেষটা একটু অগোছালো হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here