অনুভবে ৫ম পর্ব

0
5187

অনুভবে
৫ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– এই মেয়ের তো আগেও বিয়ে হয়েছে। এর স্বামী মারা গেছে। মুহিত ওর নাম। আমার বন্ধু ছিলো।
,
মিহি এবার চমকে উঠলো। এতক্ষণ সব ঠিক থাকলেও এবার আর কিছুই ঠিক থাকবেনা। এটা তাহলে বিয়ে এনাউন্সমেন্ট রইলো না, এটা এখন হবে মিহিকে এই বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার এনাউন্সমেন্ট।
,
মুরাদ আহমেদ যেন আকাশ থেকে পড়লো। শেষমেশ ছেলেটা কিনা একটা বিয়ে হওয়া মেয়েকে বিয়ে করলো। যে চোখে মিহিকে নিজের মেয়ের মত দেখছিলো সে চোখে এখন একটা ঠকবাজকে দেখছে মুরাদ আহমেদ।
,
মুরাদ শান্ত গলায় হিমেলেএ দিকে তাকিয়ে বলল,
,
– আরে তুই বললে তো দেশের মেয়েদের লাইন লেগে যেত তোর সাথে বিয়ে করার জন্য কিন্তু তুই এটা কি করলি? এমন একটা বিয়ে হওয়া মেয়েকে বিয়ে করলি শেষমেশ?
,
-বাবা, কারো আগে বিয়ে হলে প্রব্লেমটা কোথায়? ওতো একটা মানুষ, ওর তো নিজের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন থাকতেই পারে।
,
– দেশের সব মেয়েদের স্বপ্ন পুরোনের টেন্ডার কি তোমাকে দেওয়া হয়েছে?
,
– বাবা তুমি ২১ শতকে বাস করে এখনো এসব নিয়ে পড়ে থাকলে হবে? আর তাছাড়া আমি মিহিকে ভালোবাসি এটাই বড় সত্য।
,
– তোমাকে যখন এই বাড়ি থেকে বের করে দেবো তখন তোমার ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাবে আর তুমি হুমড়ি খেয়ে পড়বে আমার পায়ের কাছে আর বলবে, বাবা আমি ওলে ছেড়ে দিচ্ছি কিন্তু তুমি আমাকে বঞ্চিত করো না।
,
মিহি এই ঝামেলাটা আর বেশি দুর এগোতে দিতে চায়না। যদিও স্বার্থের জন্য সে বিয়েটা করতে চেয়েছিলো কিন্তু তার মানে এটা নয় যে ওর জন্য বাবার কাছ থেকে একজন ছেলে আলাদা হয়ে যাক। তাই মিহি চলে যাবে এক্ষুনি।
,
– মিস্টার হিমেল, আমি চাইনা আমার জন্য আপনাদের বাবা-ছেলের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাক। আমিই চলে যাচ্ছি।
,
মুরাদ আহমেদ কর্কশ কন্ঠে বলল,
,
– একটু দাড়াও মেয়ে।
,
নিজের ঘরে গিয়ে টাকা একটা বান্ডেল এনে মিহির হাতে দিয়ে বলল,
,
– এইটাকাটা সাথে নিয়ে যাও। বাকি জীবিনের অনেকটা সময় চলে যাবে। আর টাকা ফুরিয়ে গেলে আবার টাকা নিয়ে যেও। এইজন্যই তো আমার ছেলেকে ফাসিয়েছিলে তাইনা? টাকা তুমি পাবে, বারবার পাবে, যতবার ফুরাবে ততবার পাবে। এখন তুমি আসতে পারো।
,
আজকে নির্লজ্জের মত টাকা নিতে হচ্ছে মিহির। কিছুই যে করার নেই। পেটের সন্তানের জন্য হলেও তো বাচতে হবে। আত্মহত্যার স্বাদ চলে গেছে অনেক আগেই। এখন প্রাণ ভরে বাচবে।
,
গুটিগুটি পায়ে বাড়ির দরজার দিকে এগোতে থাকে।
আর মনে মনে বলে,, “মা, আপনাকে দেওয়া শেষ কথা রাখতে পারলাম না। আপনার ছেলের সাথে আমার কোনো বন্ধন নেই। না প্রেমের, না বিয়ের, না বন্ধুত্বের। আমাকে মাফ করবেন।”
,
চোখের পানি ফেলতে ফেলতে মাথা নিচু করে এগোতে থাকে মিহি। পার্টির লোকজন সবাই হাসি ঠাট্টা করতে থাকে মিহিকে নিয়ে। কেও কেও এমন অকথ্য ভাষায় কথা বলছে যেগুলো প্রকাশ করাই যায়না। দরজার সামনে গিয়ে মিহি একবার হিমেলের দিকে তাকালো। হিমেলও মাথা নিচু করে ছিলো। শেষবারের মত মিহিকে দেখে নেবার লোভ সামলাতে পারছেনা হিমেল।
,
মিহির চোখে চোখ পড়তেই হিমেল আতকে উঠলো। কাজলটানা চোখ দুটো যেন বারবার হিমেলকে কিছু বলতে চায়। বুকে ভিতর একটা তীব্র ব্যাথা হচ্ছে হিমেলের। এই ব্যাথার নামকি সেটা হিমেলের জানা নেই।
,
এই দেখা শেষ দেখা হতে পারেনা। ওই চোখগুলোর দিকে তাকিয়তো সারাজীবন চলা যাবে। হঠাৎ করেই হিমেলের ভিতর কিছু একটা ঘটে।
,
– মিহি দাড়াও।
,
এই বলে হিমেলে নিজের ঘরে গিয়ে ১০ মিনিট পর আবার ফিরে আসে। কাধে একটা ব্যাগ।
,
আরোহী ভাইয়ের এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়,
,
– কিরে তুই ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে বের হইলি কেন?
,
– আমার স্ত্রীর যেখানে থাকার অধিকার নেই সেখানে আমিও থাকবোনা।
,
হিমেলের কথা শুনে মিহি যেন বরফের মত জমে গেছে। একপাও নাড়াতে পারছেনা। হিমেল একটু আগে কি বলল সেটা ভালো ভাবে বোঝার চেষ্টা করছে মিহি।
,
আরোহী হিমেলের পাগলামি মার্কা কথা শুনে ওকে ধমক দিয়ে বলল,
,
– তুই কি পাগল হয়েছিস? একটা মেয়ের জন্য তুই আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবি?
,
– একটা মেয়ে আমার উপর ভরসা করে এ বাড়িতে এসেছে। তার আশ্রয় একমাত্র আমি, আমি কারো ভরসা নষ্ট করতে পারবোনা। এর জন্য সবকিছু ছাড়তে হলেও কিছু করার নেই।
,
মুরাদ আহমেদ এবার বেশ ক্ষেপে গেলেন,
,
– বের হয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। যে সন্তান একটা মেয়ের জন্য বাবার সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিতে চায় তাকে অন্তত ছেলে বলে পরিচয় দেওয়া যায়না।
,
– তোমার আমার সম্পর্কটা রক্তের অভিমান, রাগ,এমনকি ঘৃণা হলেও সম্পর্ক শেষ করার ক্ষমতা নেই। কিন্তু এখানে কারো ভরসার কথা বলেছি বাবা। যে মেয়েটা আমাকে ভরসা করে এই বাড়িতে এসেছে আমি কিভাবে তার ভরসাটা নষ্ট করি? অতএব তুমি যায় বলো না কেন আমাকে যেতেই হবে। আমি আসি দোয়া করো।
,
,
এই বলে হিমেল মিহির হাত ধরে বাড়ির বাইরে পা বাড়ায়। হিমেল যখন মিহির হাত স্পর্শ করে তখন মিহি মনে এক অন্য অনুভূতির ঝড় বয়ে যায়। যেটার নাম ওর জানা নেই। তবে এ ঝড় কোনো ভালোবাসার না। মিহির কাছে ভালোবাসা মানেই মুহিত। আর হিমেল? হ্যা হিমেলের জন্যও অনুভূতি জমা হয়েছে মিহির মনে তবে সেটা ভালোবাসার নয়। সেটা সম্মানের। হ্যা, হিমেলের প্রতি মিহির সম্মানটা অনেক বেড়ে গেছে।
,
,
মিহিরা পা বাড়াতেই মুরাদ আহমেদ পিছন থেকে ডাক দেয়,
,
– দাড়াও।
,
মিহি আর হিমেল পিছনে ঘুরে দাড়ায়।
,
মুরাদ আহমেদ বলেন,
,
– আজকে আমাকে হার মানতে বাধ্য করলে তোমরা। জানিনা এই মেয়েটার অতিতে কি ঘটেছে। তোমারা বাড়ি ছেড়ে যেওনা। বিয়েটা হবে। আগামী সপ্তাহেই হবে।
,
মুরাদ সাহেব পার্টির সবাই বিয়ের নিমন্ত্রণ জানায়।
?
,
” আমি বেচে থাকতেও অন্য কারো সাথে বিয়ে করে নিলে মিহি। এই বলতে শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমার হয়ে থাকবে। আমি মারা গেলেও। কিন্তু আমি বেচে থাকা অবস্থায় তুমি কিভাবে অন্যকে বিয়ে করতে পারো মিহি? তোমার মুহিতকে শেষমেশ ভুলেই গেলে? আমি আসছি মিহি, আমি আসছি। তোমার সব স্বপ্ন তছনছ করে দিতে আমি খুব শীঘ্রই আসছি। মুহিত এবার অন্য রূপে আসবে। তোমার ভালোবাসার মুহিত রূপে না। তোমাকে ঘৃণা করার জন্য আসছি আমি। তোমার লোভকে ভেঙ্গে চুরমার করতে আমি আসছি।”
,
,
চলবে
,
আজকে চেক দেওয়া হয়নি। বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here