অনুভবে
৬ষ্ঠ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
“স্বামী বেচে থাকতেও অন্য একজনকে তুমি স্বামী হিসেবে মেনে নিচ্ছো? এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে।”
,
চোখ খুলতেই মিহি দেখলো সে বিছানায় শুয়ে আছে। সারা দেহ দরদর করে ঘামছে। এবার যেন সস্তি পেলো মিহি।
,
কল্পনায় মুহিতের একটা প্রতিচ্ছবি তৈরি করে তার সাথে কথা বলছে মিহি,
,
– তোমার উপস্থিতিতে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করছিনা মুহিত। সবাইতো জানে তুমি আর নেই। তোমার সন্তানকে জন্মের আগেই কিভাবে পিতৃহীন করে দিই। আমি শুধু ওকে একজন বাবা দিতে চাচ্ছি। হিমেল হবে শুধু আমার সন্তানের বাবা। আমার স্বামী তুমি ছিলে, আছো এবং থাকবে। এই জায়গা আমি কাওকেই দেইনি, দিবোও না।
,
একা একা মিহি তোতা পাখির মত সব কথা বলতে থাকে। কিন্তু ও এটা বুঝতে পারছেনা যে কল্পনার মানুষটা আর কিছুই শুনবে। কল্পনার কথা বেচে থাকলেই শোনা যায়না তো মারা যাওয়ার পর কিভাবে শুনবে!
,
মানুষের জীবন কি অদ্ভুত একজন মানুষ ভালোবাসার মানুষকে হারালো কিন্তু সন্তানের জন্য নতুন কাওকে বেছে নিলো, আবার নতুন সেই লোকটা নিজের দ্বায়িত্বের জালে বন্দী হয়ে বিয়েটা করতে রাজি হয়ে গেলো। কিন্তু এর শেষ পরিনতি কি! মিহি কি কোনোদিন হিমেলকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবে!
,
মিহির ঘরের দরজায় টোকা দিতে লাগলো কেও।
,
– এতো রাতে কে আসতে পারে?
,
এই বলে মিহি লাইটটা অন করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। দরজাটা খুলতেই হিমেলের বোন আরোহী উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
,
– কি হয়েছিলো মিহি তুমি গুংরাচ্ছিলে কেন?
,
– ইয়ে মানে আপু, একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি।
,
আরোহী ভালো করে খেয়াল করলো,
,
-মিহি! একি অবস্থা তোমার! সারা দেহ দিয়ে নদীর স্রোতের মত ঘাম ঝরছে।
,
মিহিকে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে,
,
– তুমি একটি বসো মিহি, আমি হিমেলকে এক্ষুনি ডেকে আনছি।
,
– আপু ওনাকে ডাকার দরকার নেই। আমি ঠিক আছি তো। এমনিতেই ওনার মনের অবস্থা ভালো নেই। আমার কিচ্ছু হবেনা, আপনি চিন্তা করবেন না।
,
– না, তা হয়না মিহি, স্ত্রী এভাবে অসুস্থ হয়ে থাকবে আর স্বামী ঘুমাবে এটা কেমন দেখায়?
,
– বিয়েই হয়নি তাহলে স্বামী কিসের! (মনে মনে)
,
– কিছু বললে বিড়বিড় করে মিহি?
,
– না, কিছুনা আপু।
,
এরপর আরোহী হিমেলকে ডেকে আনলো। হিমেল এসে মিহিকে দেখে খুব ঘাবড়ে যায়। কারণ কেও না জানলেও ও জানে যে মিহি প্রেগন্যান্ট। আর মিহির এমন হওয়ার কারণটা হয়তো ওর প্রেগ্ন্যাসি।
,
হিমেল ওর ঘরে গিয়ে ফোনটা নিয়ে এসে ডাক্তারকে ফোন লাগায়। মিহি বারবার বলে যেটা এটা অন্য কিছু নয়, একপ্টা খারাপ স্বপ্ন দেখেছে তাই সারা দেহ ঘেমেছে।
,
হিমেল বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করে আরোহী মিহির সারাদেহ ভালো ভাবে মুছিয়ে দেয়। কিন্তু একজন মেয়ে আর যায়হোক আরেকজন মেয়ের হাবভাব দেখে অনেক কিছুই বুঝতে পারে। আরোহীরও তাফ ব্যাতিক্রম হলো না। আরোহী মিহিকে বলল,
,
– মিহি, তোমাকে বেশ অন্যরকম লাগছে। যেমনটা একজন মেয়ে প্রেগন্যান্ট হলে হয়।
,
মিহি এবার দ্বিধায় পড়ে গেলো। আর কত মিথ্যা বলবে! মিথ্যা দিয়ে শুরু করা কোনো সম্পর্কের শেষটা কি ভালো হয়? যাকে মন কোনোদিন ভালোবাসবে বলে জানানই দেয় তার সাথে শুরুটা হচ্ছে মিথ্যা দিয়ে।
,
মিহির চুপ থাকা দেখে আরোহী আবার বলে,
,
– মিহি, তুমি একটু বেশিই ভাবনার জগতে বিচরণ করছো। একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করো। হিমেল ডাক্তারকে ফোন দিয়েছে। একটু পরই চলে আসবে।
,
ডাক্তার আসবে শুনে মিহির যেন দম আটকে আসছে। ডাক্তার আসা মানেই তো মিহির প্রেগ্ন্যাসির খবর সবাই জেনে যাবে। আর এটাও জেনে যাবে গর্ভের সন্তানও অন্য কারো। একজন বিধবা মেয়েকে তো খুব সহজেই মেনে নিয়েছে কিন্তু একজন গর্ভবতী মেয়েকে কি কেও সহজে মেনে নিবে?
,
হিমেল বাইরে দাড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে আর ভাবচে ডাক্তারকে কোনো ভাবেই এবাড়িতে আনা যাবেনা। তারপর বরং ডাক্তারকে আসতে বারণ করে দেওয়া যাক। আর মিহিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যাক। যেই ভাবনা সেই কাজ। হিমেল কল দিয়ে ডাক্তারকে আসতে বারণ করে দেয়।
,
ঘরের ভিতর এসে বলে,
,
– আপু তুই মিহিকে একটু সাহায্য কর। গাড়িতে তুলে দিতে হবে।
,
আরোহী একটু অবাক হয়ে বলল,
,
– কেন? তুইনা ডাক্তারকে কল দিয়েছিস?
,
– হ্যা দিয়েছি, কিন্তু ওনার সমস্যা আছে তাই আসতে পারবেন না।
,
– উনি না আসুক অন্য কাওকে ফোন দে! ওকে দেখে আমার কিছুই স্বাভাবিক লাগছেনা।
,
– সেজন্যই তো বলছি যে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
,
– ঠিক আছে চল আমিও যাবো তোদের সাথে।
,
হিমেল মনে মনে ভাবলো,” আপুকে এখন কোনোভাবেই সাথে নেওয়া যাবেনা। ওখানে চেকাপ করালে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে। কিন্তু ঝামালে তো একদিন হবেই। আজ হোক কাল হোক সত্যটার সামনে তো সবাইকে আসতেই হবে। যা হওয়ার এখনি হয়েযাক। না না অনুষ্ঠানের পর সব জানুক। তখন হয়তো প্রেসটিজের জন্য কেও কিছুই আর বলতে পারবেনা। ”
,
হিমেলও এখন দোটানায় ভুগছে।
,
অবশেষে আরোহীকে রেখেই হিমেল আর মিহি হাসপাতালে রওনা দিলো।
,
হাসপাতালে,
,
ডাক্তার চেকাপ করে যেটা জানানোর ছিলো তাই বলল যে মিহি প্রেগন্যান্ট। ডাক্তার রিয়াজ হিমেলকে বলল,
,
– বাবা হিমেল, তোমার তো বিয়ে আগামী সপ্তাহে শুনলাম। কিন্তু তোমার হবু বউ প্রেগন্যান্ট কিভাবে।
,
-ইয়ে মানে আংকেল, আমাদের বিয়েটা আগেই হয়েগেছে। এখন যে অনুষ্ঠানটা হচ্ছে সেটা জাস্ট একটা ফরম্যালিটিস মাত্র।
,
– ও আচ্ছা বুঝলাম। বউমার দিকে একটু খেয়াল রেখো। যদি প্রেগ্ন্যাসির এখনো দুই মাসও হয়নি তবে ওর শরীরের কন্ডিশন খুবই খারাপ। ওর ওজন হিসেবে সন্তান ধারণ খুবই বিপদজনক।
,
– আমি বুঝতে পেরেছি আংকেল। আমি সম্পুর্ন খেয়াল রাখবো।
,
,
ডাক্তার কেবিন হতে বের হতেই হিমেল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
,
“যাক, এ যাত্রা টেকেল দেওয়া গেলো। দেখা যাক সামনে কি আছে। ”
,
মিহি ঘুমিয়ে পড়েছে। হিমেল মিহির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। শুধু ক্লান্তিত ছাপ বললেও ভুল হবে চোখেমুখে মা হওয়ার পূর্ণতার ছোয়া রয়েছে। বেশ লাগছে মিহির ঘুমন্ত মুখখানা। ইচ্ছা করছে হাতের দ্বারা একটুখানি ছুয়ে দিতে। এই ইচ্ছার নাম কি ভালোবাসা?
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।