অনুভবে
৭ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
ভালোবাসার অনুভূতিটাই অদ্ভুত একটা জিনিস। বারবার প্রিয়জনকে ছুয়ে দিতে ইচ্ছা করে।
,
“প্রেমে তো সেদিনই পড়েছি যেদিন মরতে গেছিলে।
ভালোবাসাটা একদিন আগে হলো। তোমাকে বারবার ভালো বাসতে চাই। তুমি কি আমার ভালোবাসাকে গ্রহণ করবে?”
,
স্নিগ্ধ সকালে মিহির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে কবিতার মত করে বিড়বিড় করে কথা বলতে থাকে হিমেল। ওটা আদৌও কবিতা কিনা হিমেলের জানা নেই। না আছে সুর আর নাইবা আছে ছন্দ তাহলে কিভাবে ওটা কবিতা হয়!
,
মিহি চোখ মেলে দেখলো হিমেল কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। হিমেলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা মিহির নেই। কারণ ওর চোখে আকাশের মত বিশাল কিছু দেখা যাচ্ছে। যার কোনো শেষ নেই। যেন ওর চোখের দিকে তাকালে মিহি শূন্যে মিলিয়ে যাবে।
,
– এখন কেমন ফিল করছো মিহি?
,
– জ্বি ভালো। আগেও ভালো ফিল করছিলাম। অকারণে হাসপাতালে আনলেন।
,
– অকারণে না মিহি। তুমি জানোনা তোমার ব্লাডপ্রেশার অনেক বেড়ে গেছিলো। এখানে এনে ভালো করেছি। তাছাড়া বাসায় থেকে তো আমি তোমাকে হেল্পও করতে পারতাম না।
,
হিমেলের কথা শুনে মিহি খানিকটা ভ্রু কুচকালো। হিমেলকে বোঝাতে চায়লো এই কথা বলার মানে কি।
,
হিমেল মিহির চোখের ভাষা পড়ে নিয়ে বলল,
,
– এই ধরো, তোমার আমার কোনো বন্ধন নেই এখন। তাই তোমাকে ঠিকঠাক ভাবে স্পর্শ করলেও মনের মধ্যে দ্বিধা কাজ করতো।
,
– মানে! কি বুঝাতে চাচ্ছেন আপনি?
,
– তোমাকে এখন আমি এগুলো কিভাবে বুঝাই?
,
এই বলে হিমেল মাথা চুলকাতে থাকে।
,
– ভালো ভাবে বুঝালে পাগলেও সব কিছু বোঝে। আপনি বলবেন তো আগে।
,
– ধরো তোমার আমার সত্যিই যদি বিয়েটা হতো তাহলে গতকাল যে আপু তোমার সারা দেহ মুছিয়ে দিলো সেটা আমিও করতে পারতাম তাইনা? আরো নাকি অনেক হেল্প আছে যেগুলোও আমি করতে পারতাম।
,
হিমেলের কথায় মিহি খানিকটা হাসলো,
,
– ও, এটা বোঝাতে চাচ্ছিলেন?
,
– অবশ্যই।
,
মিহি এবার খুব উৎফুল্লতার সাথে হাসতে থাকলো। হিমেল তৃষ্ণার্ত চোখে মিহির হাসি দেখছে। এটা অন্য কোনো তৃষ্ণা না এটা ভালোবাসার তৃষ্ণা। সাহিত্যিকরা একটা কথা প্রায়শই বলে যে প্রিয়তমর হাসিতে যেন মুক্তা ঝরে পড়ে। কথাটা যে একশ শতাংশ সঠিক সেটা হিমেল উপলব্ধি করতে পারছে। কারণ জানতে অজান্তেই মিহি হিমেলের মনের সেই কুটিরের জায়গা করে নিয়েছে যেখান থেকে বের হওয়া সম্ভব না।
,
হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে সকালেই বাসায় রওনা দেয় হিমেল আর মিহি।
,
গাড়ি থেকে হিমেল আগে নেমে আসে। উপর পাশের দরজায় গিয়ে আগেই দরজা খুলে দেয়। মিহি এমন কেয়ার আশা করেনি। পা বাড়িয়ে নামতেই হিমেল মিহিকে ধরার চেষ্টা করে। মিহি হাত দিয়ে ইশারা করে জানায় যে সে একাই পারবে। কিন্তু গাড়ি থেকে নিচে নামতেই হোচট খায় মিহি। হিমেল দ্রুত ওকে ধরে নেয়। হাত দ্বারা একটা সুরক্ষা এলাকা বানিয়ে রেখেছে যাতে মিহির কোনো আঘাত না লাগে।
,
মিহি কিছু বলার আগেই হুট করে হিমেল ওকে কোলে তুলে নেয়। এটা দেখে মিহির চোখ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
,
হিমেলের কোলে বিরাট অস্বস্তি লাগছে মিহির। তাই নামার জন্য উশপিশ করতে লাগলো।
,
হিমেল বলল,
,
– হাটার শক্তি নেই আবার কোলে থাকতে অসুবিধা কোথায়?
,
– প্লিজ আপনি নামিয়ে দেন। আমার ভালো লাগছেনা।
,
– আজকে তো শুধু কোলে নিয়েছি বিয়ের পর আরো কত কিছুই না হবে!
,
হিমেলের এই কথাটাই মিহি প্রচন্ড রকমের রেগে যায়।
,
ঠাস করে হিমেলের গালে একটা চড় দিয়ে দেয়।
,
– নামান বলছি আমাকে।
,
হিমেল মিহির এমন কাজে সত্যিই বেশ অবাক হয়ে যায়। এখানে এমন কোনো সিরিয়াস বিষয় হয়নি যে ওর চড় খাওয়া লাগবে। মিহিকে নামিয়ে দেয়। মিহি আবার বলে,
,
– আমিতো ভেবেছিলাম আপনি একটা অসহায় মেয়েকে আর তার সন্তানকে জায়গা দেওয়ার জন্য বিয়েটা করছেন। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করে দিলেন আপনি। আপনি আমার শরীর টাকে চান, এখন বুঝতে পারছি।
,
মিহির কথা শুনে হিমেলের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেলো আর সাথে প্রচন্ড রাগও হলো।
,
– জানিনা কি ভেবে তুমি এমন কথাটা বললে তবে একটা জিনিস শুনে রাখো হিমেল আহমেদ মনে করলে তোমার মত হাজার মেয়েকে ইউজ করতে পারে। কিন্তু আমার ইমান আর আমার মায়ের দেওয়া শিক্ষা আমাকে অন্য কিছু শিখিয়েছে। নাহলে তোমার মত অচেনা একটা বিধবা গর্ভবতী মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাইতাম না ওকে? একটা সুন্দরী পরিচিত কোনো মেয়েকে বিয়ে করতাম। যার কোনো অতিত থাকতো না তোমার মত। কিন্তু মাকে দেওয়া কথা আর আমার দ্বায়িত্ববোধ তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমাকে বাধ্য করছে। এইজন্যই বিয়েটা করছি আমি।
কিন্তু আজকে তুমি যে রিয়েকশনটা দিলে তাতে করে অনেক কিছুই বুঝে গেছি আমি।
,
হিমেল মিহিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে গাড়ির পার্কিং-এ রেখেই চলে যায় বাসার মধ্যে।
,
মিহি থপ করে নিচে বসে পড়লো।
,
“এটা আমি কি করলাম। যে মানুষটা আমাকে আশ্রয় দিয়েছে তাকে এইভাবে ভুল বুঝলাম! এখন যদি আমাকে আর না বিয়ে করে তাহলে আমার গর্ভের সন্তানের কি হবে। বিয়েটা শুধু ওর জন্যই করা।”
,
কিছুক্ষণ পর আরোহী আসলো মিহির কাছে।
,
– মিহি, এখন কেমন আছো? চলো উপরে যায়।
,
– আপু আপনি জানলেন কিভাবে আমি এখানে আছি।
,
– পাগলি মেয়ের কথা শোনো। তোমার পরাণ পিয়া আমাকে বলছে নাহলে জানবো কিভাবে!
,
– বাহ আমার উপর রাগও করবে আবার কেয়ারও করবে। একেমন মানুষ। মানুষ এই যুগে এতো ভালোও হয়! (বিড়বিড় করে)
,
– কিছু বলছো মিহি?
,
– না আপু।
,
এরপর আরোহী মিহিকে নিয়ে ওর রুমে পৌঁছে দেয়।
,
– তুমি একটু রেস্ট করো আমি খাবার নিয়ে আসছি।
,
– আপু আমি গোসল করবো।
,
এরপর আরোহী মিহিকে বাথরুম ঢুকতে সাহায্য করে।
,
– তুমি গোসল সেরে নাও। আমি হিমেলকে দিয়ে তোমার ড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি।
,
– এমনিতেই উনি আমার উপর রেগে আছেন। উনিকি আমার ড্রেস আনবেন? আর তাছাড়া আমাকে এই অবস্থায় যদি উনি দেখেন আমি লজ্জায় মরে যাবো।
,
শাওয়ারের নিচে ভিজতে ভিজতে মিহি এসব ভাবতে থাকে। হঠাৎ বাথরুমের দরজায় কারো টোকা দেওয়ার শব্দ শুনতে পায়।
,
– এখন আমি কি করবো! নিশ্চয় মিস্টার হিমেল এসেছেন। আমি ভেজা গায়ে ওনার সামনে দরজা খুলতে পারবোনা। তার থেকে বরং দরজাটা হালকা খুলে হাত বাড়িয়ে ড্রেসগুলো নিয়ে নেবো। কিন্তু যদি বাই চান্স দরজা সম্পুর্ন খুলে যায়!
,
চলবে…….
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।