অনুভবে ৯ম পর্ব

0
2413

অনুভবে
৯ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– মিহি আমি তোমাকে ভালোবাসি। জানিনা কখন, কিভাবে, কেন। শুধু জানি ভালোবাসি। ভাবতে পারো এতো দ্রুতই সব হয়ে গেলো! অনুভূতির আত্মসমর্পণ করতে সময় লাগেনা। আজকে তুমি কৃতজ্ঞতা থেকে আমার কষ্টে কষ্ট পাচ্ছো কিন্তু দুইদিন পর ভালোবাসবে তখন ভালোবাসার অনুভূতি থেকে আমার কষ্টে তোমার কষ্ট হবে।
,
-আমি আপনাকে ভালোবাসবো না কোনোদিন। আমি শুধুমাত্র মুহিতকেই ভালোবাসি। শুধু মুহিতকেই ভালোবাসি।
,
– আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায়না মিহি? আমি যে বড্ড তৃষ্ণার্ত তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য।
,
– দেখুন হিমেল, দুইদিন পর আপনার এসব আবেগ আর থাকবেনা তখন কি বলবেন আপনি?
,
– নাউস জোক্স মিহি! দুইদিন পর ভালোবাসা বাড়বে কিন্তু কমবেনা। কারণ এখন কোনো বন্ধনে আমরা আবদ্ধ হতে না পারলে আর কয়দিনের মধ্যে আমরা এমন এক বন্ধনের ভীতর আটকে যাবো যার পরিসীমা হবে পৃথিবীর থেকেও বেশি। যার কোনো শেষ থাকবেনা।
,
– জানেন হিমেল, এই কথাগুলো বাসর রাতে আমার হাত ধরে মুহিতও বলেছিলো কিন্তু ভাগ্য আমার সাথে এক অজানা খেলায় মেতেছে। আমাকে সে খেলার একটা চাল করে রাখা হয়েছে। আমার নিজের ইচ্ছার কোনো প্রাধান্য নেই।
,
– বাসর? তুমি তো বলেছিলে তোমাদের বিয়ের খবর কেও জানতো না তাহলে বাসর? কখন, কিভাবে, কোথায়?
,
– আপনাকে বলেছিমনা কক্সবাজারে গেছিলাম ট্যুরের নাম করে। ওইদিন আর কি।
,
কথাটা বলে মিহি একটু লজ্জা পেলো। হবু স্বামীর কাছে কিভাবে আগের বাসরের বর্ণনা দিচ্ছে ভাবতেই কুকড়ে যেতে চায়লো মিহি।
,
হিমেল নিজের হাত দিয়ে মিহি গালটা আলতো করে ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে মিহি কেপে উঠলো।
,
” এই লোকটার ছোয়া আমার কাছে এতো পরিচিত লাগে কেন? যেন এই ছোয়া বারবার আমার মুহিত কে মনে করিয়ে দেয়।”
,
মিহির চুপ থাকা দেখে হিমেল বলে,
,
– মিহি, হঠাৎ তুমি চুপ হয়ে গেলে যে! কিছুতো বলো!
,
– কি বলবো আর! আমার সব কথায় তো আপনাকে জানিয়েছি। নতুন কিছুই যে বলার নেই।
,
– চাইলে অনেক কিছুই বলা যায় মিহি। মানুষের চাওয়া পাওয়ার উপর সব কিছুই নির্ভর করে। মানুষ আজকে নিজেদের চাওয়ার শক্তি দিয়ে মহাকাশ কি সেটা নিয়ে গবেষণা করছে। ছোটো ছোটো বিন্দুর মধ্যে কোনটা তারা আর কোনোতা গ্যালাক্সি পৃথিবীর বুকে বসেই নির্ণয় করছে। সব কিছু নিজের ইচ্ছা শক্তি দিয়েই।
,
মিহির এবার হিমেলের কলার ধরে চিৎকার করে বলল,
,
– সব যদি ইচ্ছা আর চাওয়া দিয়ে হয় তাহলে কেন আমার মুহিতকে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হলো? আমার তো ইচ্ছা ছিলো বুড়ো-বুড়ি একসাথে নিজেদের শেষ জীবন কাটাবো একইসাথে। কিন্তু হলোনা কেন? কোথায় গেলো চাওয়া আর ইচ্ছা শক্তিরা। কোথায় গেলো।
,
মিহি হিমেলের কলার ধরে ঝাঁকি দিতে দিতে হঠাৎ করে হিমেলকে জড়িয়ে ধরল। হিমেল আকস্মিক ঘটনাই যেন বিশাল আকারের শক খেলো। তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে মিহিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল।
,
মিহির চিৎকার করে উঠার শব্দ আরোহী শুনতে পায়। ও তো ভাবে হিমেল আর মিহির মধ্যে কোনোবিষয় নিয়ে ঝগড়া হচ্ছে।
“আচ্ছা হিমেল ছাদ থেকে লাফ মারেনি তো?”
,
কথাটা মাথায় আসতেই আরোহীর বুকটা ধ্বক করে উঠলো।
তাই দ্রুত পায়ে ছাদের দিকে রওনা দেয় কিন্তু তাদের দরজাটা আলতো ফাঁকা করে দেখতে পাই দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। আরোহীর বুক থেকে যেন দশ মনের বোঝা নেমে গেল।
,
মুচকি একটা হাসি দিয়ে দরজাটা একটু ভিড়িয়ে দিয়ে আবার নিচের দিকে রওনা দেয় আরোহী।
,
অনেকক্ষণ পর মিহির খেয়াল হলো সে ভুল কিছু একটা করে ফেলেছে। তাড়াতাড়ি হিমেলের থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে মিহি। হিমেল বুঝতে পারে যে মিহি নিজ ইচ্ছা তাকে জড়িয়ে ধরেনি সম্পুর্ন আবেগের বশে তাকে জড়িয়ে ধরেছে। হিমেল নিজের মাথায় ছোট্ট একটা চাপড় মেরে মনে মনে বলে,
“আমিও পাগল বটে। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে ও আমাকে ভালবাসতে পারে! তাড়াতাড়ি ওকে আমি ওকে ভালবাসতে পারি কারণ আমার কোন অতীত নেই। কিন্তু ওর যে একটা চরম অতীত আছে যেটা আমি কেন পৃথিবীর কেউ মুছে দিতে পারবে না। তবে হ্যাঁ আজকে আমি শপথ করছি যে, আমার ভালোবাসা দিয়েই ওর সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে দেবো ওর সমস্ত চোখের পানি নিজের ভালোবাসার চিহ্ন বানিয়ে দেবো।”
,
,
মিহি নিজেকে হিমেলের থেকে সরিয়ে নিয়ে একটু দুরে দাড়িয়ে থাকে। আজকে হিমেলের বড্ড জেদ চেপেছে। মিহিকে আনার বুকে নেওয়ার জেদ।
,
,
মিহির হাতটা ধরে জরে টান দেয় হিমেল। মিহি নিজেকে সামলাতে না পেরে হিমেলের বুকে গিয়ে পড়ে। হিমেল মিহির মাথাটা বুকের সাথে আরো গভীর ভাবে ধরে।
,
– মিহি, তুমি যদি জেদ ভাবো তো জেদ, ভালবাসা ভালো তো তাই। তবে আমি সবসময় চাই তোমার এই মাথাটা আমার বুকে এভাবে আজীবন থাকুক। জানি আমার হঠাৎ তোমাকে বুকে জড়িয়ে নেওয়া ঠিক হয়নি। আমাকে হয়তো ঘৃনা বা আমার জন্য অনেক রাগ হবে তোমার কিন্তু তাতে আমার আসে যায়না।
,
,
মিহির প্রচুর রাগ হচ্ছিলো হিমেলের কাজে কিন্তু ওর কথা শুনে রাগগুলো উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু হিমেলের বলা কথাগুলো তো এমন কোনো কথা ছিলো না যে ওটা শুনলে রাগ চলে যাবো। তাহলে কি মিহি হিমেলের কাছে নিজেকে সমর্পণ করছে!
,
,
,
চলবে
,
,
বানান ভুল গলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
,
,
পারিবারিক অনেক সমস্যার কারণে এতোদিন গল্প দিতে পারিনি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here