অনুভবে
১০ম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
মিহির প্রচুর রাগ হচ্ছিলো হিমেলের কাজে কিন্তু ওর কথা শুনে রাগগুলো উধাও হয়ে গেছে। কিন্তু হিমেলের বলা কথাগুলো তো এমন কোনো কথা ছিলো না যে ওটা শুনলে রাগ চলে যাবো। তাহলে কি মিহি হিমেলের কাছে নিজেকে সমর্পণ করছে!
,
“না না এই মনে নির্দ্বিধায় শুধু মুহিতের বসবাস। সেখানে হিমেলের কোনো জায়গা থাকবেনা। আমাকে নরম হলে চলবেনা।”
,
মিহির জোরে ধাক্কা দিয়ে হিমেলকে সরিয়ে দেয়। মিহির কাজে হিমেল একটুও অবাক হয়নি। এটাই স্বাভাবিক কিনা! একটা বিধবা মেয়ের মন থেকে তার পূর্বের স্বামীকে এতো সহজে কি মুছিয়ে দেওয়া যায়! কোনোদিনই সে তার অতিত কে ভুলতে পারবেনা আর নাই বা কেও সেটা ভুলিয়ে দিতে পারবে। শুধু তার কষ্টগুলোকে ভাগ করে নিতে পারবে। তার খারাপ সময়টাকে ভালো বানাতে পারবে। হয়তো একদিন মনের কোণে ছোট্ট একটা জায়গা হবে তবে সম্পুর্ন মন জুড়ে থাকে তার অতিত।
,
হিমেল চাই কোনো এক ছোট্ট কোনে মিহি জায়গা দিক হিমেলকে। বিন্দু বিন্দু পানির ফোটা থেকে যেভাবে সমুদ্রের সৃষ্টি তেমনি ছোটো একটুকরো অনুভূতি দিয়ে মিহিকে সর্বোচ্চ সুখ খুজে দিতে চায় হিমেল।
,
হিমেলকে ধাক্কা দিয়ে অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর মিহি বলে,
,
– দেখুন হিমেল, বারবার কেন আপনি আমার দেহে স্পর্শ করতে চান?
,
মিহি হয়তো চিল্লাবে ভেবেছিলো হিমেল কিন্তু এই ধারণা নিয়ে থাকবে ভাবতেই পারেনি হিমেল।
,
– মিহি বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ছুয়ে দেখি শুধু মাত্র আমার ভালোবাসার তৃষ্ণা মেটাতে। এর বাইরে আর কোনো চাহিদা নেই মিহি। যদি থাকতো তাহলে অনেক আগেই অনেক কিছু করতে পারতাম মিহি। আমি শুধু আমার পবিত্র ভালোবাসার ছোয়া দিতে চাই তোমাকে।
,
– যতদিন বিয়েটা না হচ্ছে ততদিন আমাকে ছোয়া আপনার অধিকারের বাইরে হিমেল, আর সেটা অপবিত্রও বটে।
,
হিমেল মাথা নিচু করে ছাদ থেকে চলে যায়। মিহি হতাশা নিয়ে নিচে বসে পড়ে। ইচ্ছা করছে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে।
,
” লোকটার রাগ ভাঙাতে ছাদে আসলাম কিন্তু এসে আরো মন খারাপ করে দিলাম। আমি কি একটা মানুষ। দুইদিন পর তো বিয়ে হবে তখন তো ওর সব অধিকার থাকবে তাহলে এখন এরকম করছি কেন? আসলেই কি সব অধিকার দেব ওকে? আমি তো জাস্ট আমার সন্তানের জন্য বিয়ে করছি তাহলে কিভাবে ওকে অধিকার দেবো?”
,
হঠাৎ করেই হাওমাও করে কাদতে থাকে মিহি। কারণটা কি ও নিজেই বুঝতে পারছেনা কিন্তু আকাশ কাপিয়ে কাদতে ইচ্ছা করছে। চোখ দিয়ে গলগল করে পানি বের হচ্ছে। কিছু কষ্ট আছে যার কোনো পরিত্রাণ নেই।
,
হাঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি মিশে একাকার। কেও বুঝতেও পারবেনা মিহি কাদছে। বোঝার দরকারই বা কি! কিছু কান্না শুধু নিজের একাকী সময়ের জন্য রাখতে হয়।
,
” কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে মুহিত? কেন কেন! আমার যে দিন চলছে না। যাকে নিয়ে মনের ভিতর কোনো অনুভূতি নেই তার সাথে কি আদৌ থাকতে পারবো আমি।
,
,
,
হিমেল খাটে হেলান দিয়ে ভাবনায় ডুবে আছে। এই দুনিয়ার সাথে তার কোনো যোগাযোগ নেই যেন। কি ভাবছে নিজেও জানে না হিমেল। মনের ভিতর কেমন যেন অস্থিরতা বিরাজ করছে। হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে নিজের শূন্য ভাবনা থেকে বের হয় হিমেল। হঠাৎ মনে পড়ে ও তো ছাদে আছে। শিড়ি বেয়ে তো এক একা নামতেও পারবেনা।
,
দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে ছাদের দিকে রওনা দেয় হিমেল।
,
ছাদে গিয়ে দেখ মিহি বসে আছে। বৃষ্টি পড়ছে কিন্তু মিহির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া কাজ করছে না। হিমেল দ্রুত মিহির সামনে যায়। নিজে একটু ভিজলেও মিহিকে ভিজতে দেওয়া যাবেনা।
,
মিহি মাথা নিচু করে আছে। মুখ থেকে বৃষ্টির ফোটা পড়ছে নাকি চোঝের জল সেটে বোঝা দায়। মিহির থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উচু করে হিমেল।
,
– মিহি একি অবস্থা তোমার চোখের? যেন রক্ত বের হচ্ছে।
,
মিহি নিভু নিভু চোখে হিমেলকে দেখতে থাকে। যেন ও হিমেলকে দেখছেনা, সামনে যেন মুহিত সয়ং বসে আছে।
,
– আমাকে একটু ভালাবাসা দিবে তুমি?
,
মিহির কথা শুনে হিমেল চমকে ওঠে।
,
“মিহি ভালোবাসা চায়? তাও আমার কাছে? ভাবতেই পারছিনা। ”
,
– কি বলছো মিহি এসব?
,
– আমি ঠিকই বলছি, তোমার ভালোবাসার সমুদ্রে আমি ভাসতে চাই। অনেকদিন তোমার ভালোবাসা পাইনি আমি। আমার তৃষ্ণা পেয়েছে বড্ড। তোমার ভালোবাসার তৃষ্ণা। একটু ভালোবাসা দিবে আমাকে?
,
– তোমাকে তো মন উজাড় করে ভালোবাসতে চাই মিহি।
,
– নায়ায়ায়া। আজকেই ভালোবাসতে হবে। দাওনা ভালোবাসা, একটুস খানি দাও, একদম এট্টু। দিবেনা মুহিত?
,
হিমেলের খুশির সূর্যে হাজারও মেঘের বর্ষণ শুরু হলো।
,
” আমিও বড্ড বোকা, বারবার ভাবি ও আমাকে ভালোবাসতে ধরেছে, কিন্তু ওর মনে আমার কোনো জায়গা নেই সেটা বুঝে যাই আমি প্রতিবারই।”
,
মিহিকে কোলে তুলে নেই হিমেল। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কাপড় চেঞ্জ করানোর জন্য কাওকে ডাকতে পা বাড়াতেই মিহি হিমেলের হাত টেনে ধরে।
,
– ভালোবাসা না দিয়ে কোথায় যাচ্ছো?
,
হিমেল ভালোই জানে মিহি মেন্টালি একেবারেই ভেঙে পড়েছে তাই সামনের মানুষটি কে এটা বিবেচনার ক্ষমতা ওর ভিতর নেই।
,
– মিহি তুমি নিজের হোশে নেই। আমি আপুকে ডেকে দিচ্ছি তোমার ড্রেস চেঞ্জ করতে। সব একে বারে ভিজে শেষ।
,
মিহি নেশার্ত কন্ঠে বলে,
,
– তুমি দাও ড্রেস চেঞ্জ করে।
,
– মিহি তুমি বোঝার চেষ্টা করো। তুমি যাকে এক্সপেক্ট করছো আমি সে না!
,
কিন্তু নিজের মধ্যে না থাকা মিহি হিমেলের কোনো কথায় কানে নেইনা। অগত্যা জোর করে হিমেল মিহির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেই।
,
আরোহী এসে মিহির ড্রেস পালটে দেয়। এর মধ্যে হিমেলও নিজের ড্রেস পালটে মিহির ঘরে আসে।
,
আরোহী হিমেলকে জিজ্ঞাসা করে,
,
– কি হয়েছে হিমেল? মিহি হঠাৎ করে এমন মাতালের মত করছে কেন?
,
– ওর ভিজলে হয়তো এমন হয় তাই!
,
– তাহলে ওকে ভিজতে দিলি কেন?
,
হিমেল সত্যটা না বলে বলে,
,
– তুই বুঝবিনা। ভালোবাসার মানুষের আবদার ফেলা যায়না। ও ভিজতে চেয়েছে তাই আমি অনুমতি দিয়েছি।
,
– যাহ বাবা এতো ভালোবাসা! তা কবে হলো এতো ভালোবাসা শুনি?
,
– জন্মের শুরু থেকেই। শুধু মানুষটাকে কাছে পাইনি তাই দেখাতে পারিনি। কিন্তু মানুষটা আজ আমার কাছে তাই ভালোবাসা প্রকাশ পাচ্ছে।
,
– বাহ ভালো ভালো!
,
বলতে বলতে আরোহী ঘরের বাইরে চলে যায়।
,
হিমেল মিহির সামনে বসে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
,
– আর মাত্র তিনদিন তারপরই তুমি আমার হবে মিহি। আমার ভালোবাসায় তুমি ভাসবে আজীবন।
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।