#অনুভবে
১২তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে মিহিকে নিজের বুকে আবিষ্কার করে হিমেল। এটাই শান্ত,স্নিগ্ধ সকাল বলা চলে। চাওয়া যখন পাওয়া হয় জীবন তখন স্বপ্নময় হয়ে ওঠে।
,
মিহি চোখ খুলে নিজেকে হিমেলের বুকে আবিষ্কার করে। কিন্তু মনের ভিতর না আছে লজ্জাভাব আর নাইবা বিরক্ত। যেন একটু পাথরকে হিমেল ভালোবাসার আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিয়েছে।
,
– মিহি আজকের দিন দিয়ে আমাদের নতুন জীবন শুরু হবে। জানি অতিত ভুলতে পারবেনা তুমি। তবে মুহিতের জন্য সমুদ্র পরিমান ভালোবাসা থেকে কি আমাকে একফোঁটা ভালোবাসা দেওয়া যায়না?
,
– আপনি এক কথা বারবার বলে কি বুঝাতে চান আমি আদৈ জানিনা। মুহিতের জন্য যদি আমার এক সমুদ্র ভালোবাসা থাকে তবে আমি সেখানে আরেক সমুদ্র ভালোবাসা দিতে চাই। তার ভাগ কাওকেও দেবোনা। সেটা একফোঁটাও না।
,
– সব কিছু সময় আর পরিস্থিতি বলে দেবে মিহি। তখন না থাকবে আমার কিছু করার আর না পারবে তুমি কিছু করতে। হয়তো
এমন ভাবে আমাকে ভালোবাসবে তুমি
স্মৃতিতে আজীবন থাকবো আমি।
,
মিহিকে সরিয়ে দিয়ে হিমেল উঠে যায়। মিহি খানিকটা অবাক হয় হিমেলের এমন আচরণে। কারণ মিহি খারাপ ব্যবহার করলেও হিমেল ঠিকই সামলে নেয় কিন্তু আজকে কিছু না হতেই কেন হিমেল মিহিকে বুক থেকে সরালো।
,
” না না এটা কি ভাবছি আমি। ও আমাকে বুক থেকে সরিয়েছে তো কি হয়েছে! আমার রাগ কেন হচ্ছে। তাহলে কি আমি….”
,
মিহি এর বেশি কিছু ভাবতে পারেনা, তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে পড়ে।
,
” এখন একটু আপুর ঘরে যাই, আপুর সাথে গল্প করলে উল্টাপাল্টা ভাবনা থেকে বের হতে পারবো।”
,
মিহি আরোহীর ঘরের দরজায় টোকা দিতে থাকে।
,
আরোহী একটি বিরক্তি নিয়ে বলে,
,
– এতো সকালে আবার কে দরজায় টোকা দিচ্ছে!
,
একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে মিহিকে দেখে ভীষণ অবাক হয় আরোহী। এতো সকালে তো মিহি ঘুম থেকে ওঠেনা।
,
– কি হয়েছে মিহি? এতো সকালে উঠলে যে!
,
– আসলে আপু আমার ভালো লাগছেনা। তাই তোমার কাছে আসলাম।।
,
– ও আচ্ছা এই ব্যাপার? এসো এসো ভিতরে এসো।
,
– চলেন ছাদে যাই।
,
– ওকে, চলো।
,
ছাদে মিহি নিজেকে একটু শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু মনের ভিতর অপরাধবোধ কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। গলা ঝাড়া দিয়ে মিহি বলা শুরু করলো,
,
– আপু, আমি যে বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি!
,
– হিমেল তো তোমাকে এ বিষয়ে বলেনি তাই আমিই বলতে চাই।
,
– কি বিষয়ে বলো!
,
– ইয়ে মানে, আসলে আমি গর্ভবতী।
,
আরোহীর সমস্ত শরীর যেন থরথর করে কাপতে থাকে। কালকে বিয়ে হয়েছে আর আজকেই কেও যদি বলে সে গর্ভবতী তাহলে নিশ্চয় সে পাগল হয়েগেছে আর না হয় কাওকে বোকা বানাচ্ছে। মিহি তো বোকা নয়, তার মানে আরোহীকে বোকা বানাচ্ছে।
,
আরোহী একটু হাসি দিয়ে বলল,
,
– এসব প্র্যাঙ্ক আমার সাথে চলবে না মিহি। আমি জানি তুমি মজা করছো।
,
– আপু আমি সত্যি বলছি। আচ্ছা তুমিই বলো এসব নিয়ে কি কেও মিথ্যা বলে? তাছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে আমি এসব কেন বলবো।
,
আসলে মিহি নিজেও জানেনা যে এসব কথা কেন বলছে। সে তো নিজের খারাপ মন ভালো করার জন্য আরোহীর সাথে সময় কাটাতে চেয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ কি একটা হয়ে গেলো যে সব সত্য বলে দিতে হচ্ছে মিহি নিজেও জানেনা।
,
আরোহী মিহির ঘাড়ে হাত রাখতে মিহি ভাবনা থেকে বের হলো।
,
– কি হলো মিহি কিছু বলছোনা কেন?
,
– আমি আমাদের বিয়ের আগে থেকেই আমি প্রেগন্যান্ট।
,
– হোয়াট? বারবার এমন ইয়ার্কি মারার মানেটা কি মিহি?
,
হঠাৎ পিছন থেকে হিমেল বলে ওঠে,
,
– আপু মিহির গর্ভের সন্তানটি আমারই। ওটার একমাস বয়সও হয়েছে।
,
– কিন্তু তোরা তো অনুষ্ঠানের সপ্তাহ খানিক আগেই বিয়ে করেছিস, তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব। ওয়েট ওয়টে, তার মানে বিয়ের আগেই তোরা….
,
আরোহী কথা শেষ করার আগেই হিমেলের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়।
,
– এটা তোরা কি করেছিস? মাত্র কয়টাদিন কেন অপেক্ষা করিস নি? এটা নিশ্চয় তোর কাজ? মেয়েটা তোর কথা অমান্য করার সাহস পায়নি তাইনা।
,
এটা বলে আরোহী হিমেলের গালে আবার একটা চড় মারে।
,
হিমেলে মাথা নিচু করে গটগট করে বলতে থাকে,
,
– হ্যা আপু, বিয়ের আগে আমিই জোর করেছিলাম মিহিকে। যার ফল এখন ওর গর্ভে কিন্তু এখন তো সব কিছুই ঠিক আছে তাইনা। তাহলে প্রব্লেম কোথায়?
,
আরোহীর এখন আর হিমেলের সাথে কথা বলতে রুচি নিচ্ছেনা। নিজের ছোটো ভাই বিয়ের আগে এমন নোংরামো করেছে ভাবলেই গা গুলিয়ে আসছে আরোহীর।
মিহির কাছে গিয়ে ওকে বলে,
,
– মিহি তুমি ওকে বাধা দাওনি কেন?
,
মিহির দুই কাধ ঝকিয়ে ঝাকিয়ে বলতে থাকে।
,
মিহি আর কি জবাব দেবে! হিমেলে এমন বলবে ও তো ভবতেই পারেনি। যে কাজ হিমেল করেই নি তার জন্য চড় খেতে হলো আজকে। মিহির চোখ বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে।
,
আরোহীর চড় হিমেলের গালে পড়লেও ব্যাথা যেন মিহির লেগেছে। একজন মানুষ আর কত স্যাক্রিফাইস করবে মিহির জন্য।
,
হটাৎ হিমেলের কষ্ট মিহি উপলব্ধি করছে কেন? এই অনুভূতির নাম কি ভালোবাসা? মিহি যদি হিমেলকে একটু ভালোবাসে তাহলে কি খুব ক্ষতি হবে?
,
,
চলবে….
,
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন