অনুভবে ১৪তম পর্ব

0
2313

অনুভবে
১৪তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– দেখুন আংকেল আপনি অযথা এমন করতে পারেন না। প্রত্যেকের বেচে থাকার আলাদা ইচ্ছা থাকতে পারে তাইনা?
,
ডক্টর মালেক নিজের চশমা খুলে র‍্যাকের উপর রেখে বলল,
,
– আমি জানি আমি তোমাকে জোর করে ফেলছি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি অনেক জায়গায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
,
মুহিত একটু হতাশ কন্ঠে বলল,
,
– আমিও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আংকেল। আপনি দয়া করে আমাকে যেতেদিন। আমার মিহিকে কিছু করবেন না প্লিজ।
,
এমন সময় ঘরের ভিতর ২৭/২৮ বছর বয়সী একজন মেয়ে প্রবেশ করে। মুহিতকে সুস্থ দেখে জোরে কাদতে কাদতে এসে জড়িয়ে ধরে। সব কিছু এতো দ্রুত হয়ে যায় যে মুহিত কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা।
,
– আমি জানতাম রাকিব তুমি ঠিক হয়ে যাবে। তাইতো তোমার অপেক্ষায় দিন কাটিয়েছি। আজকে আমার সবচেয়ে খুশির দিন। সবাই আমাকে বলতো, রিতা রাকিব আর কোনোদিন ঠিক হবেনা। তুই একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নে। কিন্তু আমি জানতাম আমার রাকিব ঠিক হবেই হবে।
,
মুহিত পাথরের মতো চুপচাপ একজায়গায় দাড়িয়েই আছে। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা। এমন কি মেয়েটা তাকে জড়িয়ে ধরে আছে সেটাও যেন তার উপলব্ধির বাইরে।
,
মেয়েটা মুহিতের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে অদ্ভুত ভাবে মুহিতের দিকে তাকিয়ে থাকে। ডক্টর মালেক গলা ঝাড়া দিতে রিতে মুহিতের থেকে আলাদা হয়ে কেবিন থেকে দৌড়ে পালায়।
,
“ইশ! নিজের আবেগ কন্ট্রোল করে রাখতে পারলাম না। ধুর! অনেকদিন পর প্রিয়কে কাছে পেলে কার মাথা কাজ করে!”
,
নিজের সাথে কথাগুলো বলতে বলতে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে রিতা।
,
এদিকে কেবিনের ভিতর ডক্টর মালেক মুহিতকে বলছে,
,
– আর তোমাকে জোর করবো না। শুধু একবার তোমার মায়ের চোখের পানি, রিতার ভালোবাসা নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কিছুটা ভাবো। তারপর তোমার সিদ্ধান্ত জানাও কি করবে। আমি এখন আসি।
,
মুহিত এবার শক্ত কন্ঠে বলল,
,
– আমার সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবার সময় নেই। আমার ভাবনায় শুধুমাত্র একজন মানুষ আছে, মিহি। যার একদন্ড ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ৬ বছর না বরং ৬০ বছরও কোমায় থাকতে পারি।
,
– সব কিছুই জলদি ভেবে নিতে নেই। আমি রিতাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তুমি কিছু সময় ওর সাথে থাকো, কথা বলো। কিন্তু খবরদার নিজের আসল পরিচয় দিওনা। নাহলে মেয়েটা পাগল হয়ে যাবে।
,
মেয়েটার জন্য মুহিতের একটু মায়া হতে লাগলো। এটা অন্য কোন মায়া না। একজন মেয়ে কিভাবে পাথরের মত একটা মানুষের জন্য এত বছর অপেক্ষা করতে পারে এটা দেখেই একটু মায়া হল।
,
মনে মনে খুব গর্ববোধ হচ্ছে মুহিতের। মিহিও এখনও তার জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে।
,
,
?
,
আজকে মিলি স্কুলের প্রথম। মাত্র ৪ বছর ৪ মাস বয়সেই প্রথন স্কুলে যাবে সে। কেজি স্কুলের প্লে ক্লাসে ভর্তি হবে। কিন্তু বায়না ধরেছে প্রথম দিনই সে স্কুলে যাবে না। মিহি সকাল থেকে মিলির পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে কিন্তু বাগে পাচ্ছেনা পাকনি মেয়েটাকে।
,
মিহি শেষমেশ বিরক্ত হয়ে হিমেল কে ফোন লাগালো,
– তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসো। তোমার আদরের মেয়ে স্কুলে যাবে না বলছে।
,
হিমেল হালকা হাসি দিয়ে বলল,
,
-দেখি ফোনটা আমার আম্মুর কাছে দাওতো।
,
মিহি বিরক্তি নিয়ে নিজের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে মিলির কানে ধরল। হিমেল আদুরে গলায় মিলিকে বলল,
,
– আম্মু তুমি স্কুলে কেনো যাবে না?
,
বাবার আদর মাখা কথা শুনে মিলি ঠোঁট উল্টে ভ্যাঁ করে কেঁদে দিল।
,
হিমেল বুঝতে পারলো যে যতক্ষণ না সে বাড়িতে ফিরবে মেয়ের কান্না বন্ধ হবেনা। তাই দিনের সব কাজ ম্যানেজারকে বুঝিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
,
৪০ মিনিটের রাস্তা ২৫ মিনিটে পার করে বাড়িতে উপস্থিত হলো। হিমেল দরজা খুলতেই দেখলাম ড্রইংরুমে সোফার উপর গালে হাত দিয়ে বসে আছে মিহি।
পাশে তাকিয়ে দেখলো মিলি নিজের দুই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দুই চোখ বারবার মুছে ফেলছে।
কিছু সময় পর পর ফুঁপিয়ে উঠছে আবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছছে।
এভাবেই সময় পার করছে। হিমেল তাড়াতাড়ি এসে মিলিকে কোলে তুলে নেয়। কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বলে,
,
– আমার আম্মুটার এতো কান্না কেন পাচ্ছে?
,
হিমেলকে দেখে মিলির কান্না কমে না বরং একটু বেশি ইমোশনাল হয়ে কান্নার পরিমান আরো বেড়ে যায়।
,
হিমেল মিলিকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলে,
,
– তোমার আম্মু তোমাকে বকেছে?
,
মিহি মাথা উঁচু নিচু করে আর মুখে “হুমম” বলে আর আঙ্গুল দিয়ে মায়ের দিকে ইশারা করে বলে,
,
-উনি পঁচা। আমাকে জোর করে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে।
,
মিহি এতোটুকু মেয়ের কান্ড দেখে অবাক কান্ড দেখে অবাক। এই মেয়ে বাবাকে পেয়ে এখন মিহিকেই বোকা বানিয়ে দিচ্ছে!
,
– এই পাজি মেয়ে আমি কখন তোকে জোর করে স্কুলে নিয়ে যেতে চাইলাম! তুই তো বললি, পাশের বাসার এলিনা আপু স্কুলে যায় তুইও যাবি।
,
– তখন কি জানতাম নাকি স্কুলে পড়া কষ্ট!
,
– এটা তোকে কে বলেছে?
,
– দাদু ভাই বলেছে।
,
মিহি চুপ করে থাকলো। শ্বশুর মশাই যে তার মেয়েকে এসব বুঝিয়েছে এখন পৃথিবীর সবাই এসেও ওকে আর বুঝাতে পারবে। তাই মিহিকে বলে,
,
– চলো আজকে আমরা বেড়াতে যাবো।
,
মিলি চোখেরজল নিয়ে ফিক করে হেসে দেয়।
,
– আম্মু আমাকে কোলে নাও। তারপর আমাকে সাজিয়ে দিবে চলো।
,
মিলি মিহির দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
মিহি হিমেলের কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে রেডি করাতে নিয়ে যায়। আজকে ঘুরতে যাওয়াই ফাইনাল।
,
হিমেল সোফায় বসে দেহটা এলিয়ে দেয়।
,
” কি অদ্ভুত অনুভূতি! আমি মিহিকে ভালোবেসে ওর গর্ভের সন্তানকে মেনে নিয়েছি কিন্তু পরিস্থিতি কতটা বদলাতে পারে! আজকে এই সন্তানের জন্য আমি মিহিকে ভালোবাসি। হয়তো মেয়েটা আমার রক্তের না তবুও আমার মেয়ে। ওকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হয়।”
,
,
চলবে…..
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here