#অনুভবে
১৫তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
” কি অদ্ভুত অনুভূতি! আমি মিহিকে ভালোবেসে ওর গর্ভের সন্তানকে মেনে নিয়েছি কিন্তু পরিস্থিতি কতটা বদলাতে পারে! আজকে এই সন্তানের জন্য আমি মিহিকে ভালোবাসি। হয়তো মেয়েটা আমার রক্তের না তবুও আমার মেয়ে। ওকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হয়।”
,
-আব্বু চলো আমি রেডি।
,
মেয়ের ডাকে ভাবনা থেকে বের হয় হিমেল।
,
– বাব্বাহ! আমার পরী আম্মুটাকে তো লাল টুকটুকে বউ মনে হচ্ছে!
,
মিহি নিজের চুল ঠিক করতে করতে সোফায় বসলো। মুখ থেকে ক্লিপটা চুলের খোপায় লাগিয়ে বলল,
,
– তোমার মেয়ের কথা যদি শুনতে তাহলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাইতে।
,
হিমেল একটু নড়েচড়ে বসে।
,
– কেন, কি করেছে আমার জান পাখিটা?
,
– সে নাকি শাড়ি ছাড়া কিছু পরবেনা। তার নাকি একটা বর লাগবে।
,
হিমেল হোহো করে হেসে উঠলো। হাসি থামলে মিলিকে জিজ্ঞাসা করলো,
,
– আম্মুজান, তুমি কি বর চাও?
,
– আমাকে শাড়ি পড়া দেখে বুঝতে পারছোনা? যত্তসব!
,
– শাড়ি পড়া দেখলে কিভাবে বুঝবো?
,
– তোমাকে আমার আব্বু হতে কে বলেছিলো বলো তো? দরকার ছিলো তোমাকে আমার ছেলে হওয়া। অবুঝ কোথাকার!
,
মেয়ের এমন পাকাপাকা কথা শুনে মিহির তো চোখ বের হওয়ার উপক্রম। ছোট্ট মেয়েটা বাবাকে কিনা বলে অবুঝ! হিমেল তো হেসেই খুন।
,
– আচ্ছা আচ্ছা ধরো আমিই তোমার ছেলে, এখন বলো শাড়ি পড়লে কি হবে?
,
– শাড়ি পড়লে আমার বিয়ের বয়স হয়েছে মনে হবে, অনেকেই পছন্দ করবে। তারপর তোমাদের কাছে বিয়ের কথা বলবে।
,
– সেই হিসেবে তো দেখতে গেলে, তোমার মাও তো শাড়ি পড়েছে। তাকেও যদি কেও বিয়ের প্রস্তাব দেয়!
,
মিলি এবার হাত দিয়ে কপাল চাপড়াতে লাগলো।
,
– আম্মুর না তুমি আছো? তাহলে কেন অন্যকেও বিয়ের কথা বলবে!
,
মিহি এবার মিলিকে একটা ধমক দিয়ে বলল,
,
– চুপ কর মেয়ে। সারাদিন শুধু বুড়ো মানুষের মত কথা। কবে দেখবি তোকে কেও চুরি করে নিয়ে যাবে।
,
মুরাদ সাহেব সিড়ি থেকে নামতে নামতে বলল,
,
– আমার নাতনীকে কেও চুরি করে সুবিধা করতে পারবেনা। শেষমেশ দেখা যাবে চোরকেই ও বিক্রি করে দিয়েছে।
,
মিহি মাথায় কাপড় দিয়ে বলে,
,
– তা যা বলেছেন বাবা। আপনি বসুন আমি চা করে আনছি।
,
– এখন আর চা করতে হবেনা। তোমরা বরং বের হয়ে পড়ো। আজকে সারাদিন আমার দিদিভাইকে খুব মিস করবো।
,
– না বাবা, এখনও কিছুটা পর বের হবো। আপনার ছেলে ফ্রেশ হয়ে নিক ততক্ষণে আমি আপনাকে চা দিচ্ছি।
,
হিমেল অফিসে যাওয়ার আগে গোসল করে গেছিলো মাত্র ২ ঘন্টা আগে। এখন সে কিছুতেই গোসল করতে রাজি না। মিহি জোর করে ঠেলেঠুলে ঘরে পাঠিয়েছে হিমেলকে।
,
২০ মিনিট পর একটা পাঞ্জাবি পরে বের হয় হিমেল। দেখতে একেবারে মাশাল্লাহ। মিহি যেন চোখ সরাতে পারছেনা।
,
হিমেলে হাত দিয়ে ইশারা করতেই মিহির ধ্যান ভাঙ্গে।
,
হিমেল মিহিকে বলে,
,
– যাও বাকি গোছগাছ সেরে আসো।
,
কিছুক্ষণ পর বাসা থেকে মুরাদ আহমেদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘুরতে বের হয় মিহি, হিমেল এবং মেয়ে মিলি। সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান হয়ে বাসায় ফেরে সবাই।
মিলি তো ক্লান্তিতে ঘুমিয়েই গেছে। গাড়ি থেকে নেমে হিমেলে মিলিকে কোলে তুলে নেয়। মিহিও ক্লান্ত চোখে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে।
,
ঘরে ঢুকেই মিলিকে বিছানায় শুইয়ে দেয় হিমেল। মিহি ফ্রেশ হয়ে এসে মিনিটের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে।
,
মধ্য রাতে মিহির ঘুম ভেঙে যায়। পাশেই মিলিকে দেখতে পায়। মিহির দিকেই কাত হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মিলির একটা অভ্যাস হিমেলের মত। ঘুমালেও চোখ পিটপিট করে। হ্যা হিমেলে মিলির আসল বাবা না ঠিক আছে তবে এই বৈশিষ্ট্য টা উপরওয়ালা মিলির ভিতর যেন হাতে করেই দিয়েছেন যাতে সবাই বুঝতে পারে এটা হিমেলের মেয়ে।
,
হিমেলের কথা মনে হতেই মিলির উপর পাশে চোখ যায় মিহির। জিরো বাল্বের আলোয় দেখা যাচ্ছে হিমেল ওখানে নেই। মিহি ভাবলা হিমেলে বারান্দায় আছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে বারান্দায় কেও নেই।
,
এখন হিমেলের থাকার একটাই জায়গা, ছাদ। ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে ছাদের দিকে পা বাড়ায় মিহি।
,
ছাদে গিয়ে দেখে হিমেল সিগারেট হাতে নিয়ে দোলনায় বসে আছে। মিহি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হিমেলের পাশে বসে।
হিমেলের মাথা কপালে হাত দিয়ে বলে,
,
– জ্বর তো আসেনি। খারাপ লাগছে বুঝি?
,
– না খারাপ লাগছেনা?
,
– এতো রাতে তাহলে না ঘুমিয়ে ছাদে সিগারেট হাতে বসে আছো কেন?
,
– ভালো লাগছিলো না।
,
– তাহলে বললে কেন খারাপ লাগছেনা?
,
– তুমি যেমন খারাপ ভাবছো তেমন খারাপ লাগছেনা। আসলে ইদানীং মনের ভিতর খুব খচখচ করছে।
,
মিহি হিমেলের হাত থেকে সিগারেট ছিনিয়ে নিয়ে সেটা ছাদের একটা কোণায় ছুড়ে ফেলে। এরপর হিমেলের বুকে আলতো করে মাথা রাখে। হিমেল মিহির কপালে আলতো একটা চুমু দিয়ে নিজেকে আরেকটু হেলিয়ে দেয় যাতে মিহি ভালোভাবে বুকে মাথা রাখতে পারে।
,
বাম হাত দিয়ে মিহির চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে আর ডান হাত দিয়ে মিহির কোমর জড়িয়ে রাখে যাতে মিহির হিমেলের বুকে মাথা রাখতে সমস্যা না হয়।
,
– মিহি!
,
হিমেলের বুকের মধ্যে মুখ গুজে,
,
– হুম বলো।
,
– তোমার মনে কি আমার মানটা লিখতে পেরেছি?
,
– তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও কিনবা আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাই এটা শুরুর দিকে চাইতাম হিমেল কিন্তু এখন একদিন তোমাকে চোখের সামনে না দেখলে যেন নিশ্বাস আটকে আসে। গত মাসে তুমি চট্টগ্রাম গেছিলে দুইদিনের জন্য তখন বুঝেছিলাম তুমি আমার কি!
,
হিমেল জানে তার বউটা তার প্রেমে এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। কতদিন একটা মানুষ আর পিছুটান নিয়ে থাকবে! বাকি জীবনের জন্য এটা করা অবশ্যক ছিলো। মিহিও ভালোবেসেছে হিমেলকে।
,
– আমি কি?
,
হিমেলের কথার উত্তর দেওয়ার সময় কোথায়? সে এখন তার পরম শান্তির জায়গায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। যেন হিমেলের বুকটাই তার জন্য আছে কষ্ট মুছে দেওয়ার জাদুর পাথর। যেটা মাথা দেওয়া মানেই পরম শান্তি।
,
হিমেল মুচকি হাসি দিয়ে মিহিকে কলে তুলে নিলে। এবার বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে একটুও ঝামেল হবেনা মিহির আর নায়বা ঝামেলা হবে পেটে থাকা ৭ মাসের বাবুটার।
,
,
?
অনেক অনুরোধের পর ডাক্তার মালেক মুহিতকে নিয়ে বাইরে হাটতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে রিতাকে।
,
বাইরের দেশের পার্কগুলো খুব পরিষ্কার পরিছন্ন হয় বাংলাদেশের তুলনায়।
,
একটু হাটাহাটির পর একটু রেস্ট নেওয়া দরকার। মুহিত এখনও স্বাভাবিক হতে পারেনি।।রিতা মুহিতকে একটা বেঞ্চ দেখিয়ে বলল,
,
– চলো রাকিব ওইখানটাই বসি।
,
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর রিতা নিজেই বলল,
,
– আপনি গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে গেছেন মিস্টার মুহিত।
,
রিতার কথা শুনে মুহিত পুরো অবাক। যে মেয়ে ১ মিনিট আগে রাকিব নামে ডেকেছে সে এখন মুহিত বলছে কারণটা কি! আর গোলকধাঁধায় বা কিসের!
,
,
চলবে
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।