অনুভবে
১৭তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
– তোমার আর আমার দ্বিতীয় শিকল আমার পেটে। তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারিনা। তুমি প্লিজ এটা বলোনা আর। ভাবলেই আমার দম আটকে যায়।
,
হিমেল গলাটা ভালোভাবে ঝেড়ে নিয়ে বলে যদি আমাদের সন্তান তোমার গর্ভে না আসতো?
,
– তবুও হয়তো আমি তোমাকে ভালোবাসতাম হিমেল। কারণ বিধাতা আমার কপালে তোমাকেই হয়তো লিখেছেন।
,
– তবুও স্বীকার করবেনা তুমি শুধুমাত্র আমার জন্যই ভালোবাসো তাইতো?
,
– এতে স্বীকার করার কিছুই নেই হিমেল। আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই চরম সত্য। কখন, কোথায়, কিভাবে জানিনা। শুধু জানি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার কষ্টের জল মাটিতে পড়ার আগেই যে আমাকে একটুকরো সুখ এনে দেওয়ার জন্য নিজের ঘাম আগে মাটিতে ফেলে তাকে ভালো না বাসলে যে আমি আমার কাছে ঘোর অপরাধী হয়ে থাকবো।
,
হিমেল মাথা দুলিয়ে বলল,
,
– হুম, বুঝলাম। চোখ বুঝলে একটা ভাবনা এসে আমার মনে শীতল ছোয়া দিয়ে বলে যায়,’ মিহি তোকে ছাড়বে না, কোনোদিন ছাড়বেনা’।
,
– এখন আমাকে কোলে নিয়ে ঘরে চলো। মেয়েটাকে ফেলে পাগলের মত এখানে রাত কাটিয়েছি।
,
হিমেল আলতো করে মিহিকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায়।
,
,
মুহিত ঘরের ভিতর চুপচাপ বসে আছে। কিভাবে মিস্টার মালেককে তার করা ফাদে ফেলেই এখান থেকে চলে যাবে। সাথে করে রিতা নামের মেয়েটাকেও নিয়ে যেতে চায়। এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত করতে চায় মেয়েটাকে। কোনো মায়ায় না শুধুমাত্র কর্তব্যের খাতিরেই এসব করতে চায় মুহিত।
,
কিছুক্ষণ পর রিতা খাবার নিয়ে ঘরে ঢোকে। সামনে খাবার রেখেছে তবুও যেন মুহিত কিছু দেখতে পারছেনা। ও যেন এই দুনিয়ায় নেই। ভাবনার জগতে ভেসে বেড়াচ্ছে। রিতা গলা ঝাড়তেই মুহিতের ভাবনা ভঙ্গ হলো। দেখলো সামনে খাবার রাখা আছে আর রিতা দাঁড়িয়ে আছে সামনে।
,
মুহিত কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
,
-কি ব্যাপার আপনি কখন আসলেন?
,
রিতা ম্লান হেসে বলল,
,
– আমি তো এখনই আসলাম কিন্তু আপনি যেভাবে ভাবনার মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন আমি তো একঘন্টা আগে আসলেও বুঝতে পারতেন না।
,
– হয়তো। এখন আমি বুদ্ধি বের করছি কিভাবে এই নরক থেকে আপনাকে উদ্ধার করবো আর নিজেও এখান থেকে চলে যেতে পারবো।
,
রিতার খাবারের ঢাকনা সরিয়ে বলল,
,
– সে পরে ভাবা যাবে। আপনি এখন খেয়ে নিন। আর খেলে মাথা কাজ করে ভালো।
,
– আমারও ব্যাপকভাবে ক্ষুধা পেয়েছে। দিন আগে খেয়ে নিই।
,
রিতা খাবার দিতে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
,
-আমি ফ্রিতে একটা বুদ্ধি দিতে পারি আপনাকে।
,
-“বলুন কি বুদ্ধি দিবেন।” মুহিত খেতে খেতে বলল।
,
-আমি আপনাকে একজনের কন্ঠ শোনাচ্ছি আপনি ঠিক এমনই কণ্ঠ দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবেন।
,
এরপর রিতা তার মোবাইল থেকে কয়েকটা গান শুনায় মুহিতকে।
,
– কন্ঠটা শুনে মনে হচ্ছে যেন কোন সংগীতশিল্পী নিজে গলায় গান গাইছে। আপনি যে কন্ঠটা শোনালেন এটা আসলে কার?
,
– যাকে আমি উপলব্ধি করি শুধুমাত্র এই কন্ঠের মাধ্যমে, যার কন্ঠ শুনে আমি আমার ভালোবাসার তৃষ্ণা মিটিয়ে ফেলি, যার অস্তিত্ব সব সময় কন্ঠের মাধ্যমে উপলব্ধি করি।
,
– ও বুঝতে পেরেছি আপনি আপনার রাকিবের কথা বলছেন, তাই তো?
,
রিতা দৃষ্টি শূন্যে দিয়ে বলল,
,
-জি ঠিক ধরেছেন।
,
– কিন্তু এই কন্ঠ শুনে আমার লাভটা কি?
,
– তাহলে শুনুন,………………………।
,
– বাহ খুব সুন্দর আইডিয়া। কিন্তু যদি ধরা পড়ে যাই।
,
– সব ঠিকঠাকই হবে। আমিতো আছি ব্যাকআপ দেয়ার জন্য। আর বাকি যেসব তথ্য আপনার লাগবে সবকিছুই আমি দেবো, সো চিন্তা করবেন না।
,
– ঠিক আছে তাই। তবে এই ঘটনাটি অন্য কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে।
,
– হ্যাঁ দেখেছেন তবে সেটা বাস্তবে না, সিনেমার পর্দায়।
,
– সিনেমার নামটা কি বলতে পারবেন?
,
– ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের সিনেমা। নামটা সঠিক মনে নেই। তবে নায়কের নাম মনে আছে, প্রভাস।
,
– এবার মনে পড়েছে,”বিল্লা”।
,
– বাহ আপনি তো সবকিছু ঠিকঠাকই বুঝেছেন তাহলে।
এক মাস পর আমাদের মিশন শুরু হবে।
,
এক মাস পর,
,
,
মিস্টার মালেক খবরের কাগজ পড়ছিলেন। হঠাৎ তড়িঘড়ি করে রিতা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে।
,
মালেক গম্ভীর গলায় বলে,
,
– কি হয়েছে রিতা, কিছু বলবে?
,
-আঙ্কেল, মুহিত নামের যে ছেলেটা এখানে ছিল তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
,
– হোয়াট! আমার বিজনেসের কি হবে তাহলে?
,
রিতা কাপা কাপা গলায় বলে,
,
– আঙ্কেল জীবনের শেষ সময় টা একটু ভালভাবে কাটাতে কি ইচ্ছা হয়না?
,
-তুমি এত জ্ঞান দিওনা ঠিক আছে? তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি এজন্য যে তুমি আমার ছেলের ভালোবাসার মানুষ।
,
,
– না আংকেল। আমি জানি আমি আমার প্রতি আপনার অনেক মায়া। মেয়ের জন্য যেমন মায়া থাকে আরকি।
সেজন্যই তো আমাকে আপনি কিছু করতে পারেন নি।
,
– এখন যাও এখান থেকে। তোমার কথা শুনতে ভালো লাগছেনা। আমাকে এই ছেলেকে খুঁজে বের করতেই হবে না হলে অনেক বড় লোকসান হয়ে যাবে।
,
রিতা ঘর থেকে বের হতে হতে,
,
-এইতো খেলা তাহলে জমেই গেছে।
,
,
,
মিলি ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে আছে। বারান্দায় হিমেল ইজি চেয়ারে বসে আছে আর ঠিক তার বুকের মাঝখানে মাথা রেখে কোলে চড়ে আছে মিহি। যেন পাখি তার বাসার ভিতর নিজেকে গুছিয়ে রেখেছে।
,
– হিমেল তুমি যে সারাদিন প্রায় আমাকে মাটিতে পা রাখতে দাও না, তোমার কি একটুও কষ্ট হয়না?
,
– ভালোবাসায় কোনো কষ্ট হয় না? এখানে শুধু সুখ আর সুখ আর যখন ভালোবাসার জয় হয় তখন কষ্টগুলোকে ফুল মনে হয়।
,
– হাউ রোমান্টিক!
,
মিহি আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ বলে ওঠে,
,
-দেখোনা হিমেল, আমার পাগুলো কেমন মোটা হয়ে গেছে।
,
– এসময় এমন তো হবেই। মনে নেই মিলি যখন তোমার পেটে ছিল তখন এমন হয়েছিল?
,
– কিন্তু তখন পাগুলো এত ফুলে উঠেনি।
,
– এটা একটা নেচারাল ঘটনা। তাই এ নিয়ে কোন চিন্তা করো না। এখন চলো ঘুমিয়ে পড়ি। না হলে আবার আমার পাকা মেয়েটা উঠে বলবে, তোমরা প্রেম করার সময় পাওনা?
,
– হা হা হা ঠিক বলেছ। চলো তাহলে।
,
প্রতিবারের মতো এবারও হিমেল মিহিকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দেয় আর নিজেও মিলির অপর পাশে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হিমেল ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।
,
মিহির চোখে ঘুম আসছেনা। অনেক সময় চলে গেছে, আর হয়তো কয়েক মাস পর আরেকটা জীবন এই পৃথিবীর বুকে আসবে। কিছুটা সুখ আর পেটের ব্যথায় কিছুটা কষ্ট হলেও ভালোলাগায় যেন একাকার হয়ে আছে মিহি।
,
এপাশ-ওপাশ করে ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ঘুম কোন মতেই আসছে না। হঠাৎ মিলির দিকে চোখ যায়। মিষ্টি মেয়েটার যেন সৌন্দর্য আরো বেড়ে যাচ্ছে যখন দেখলো মেয়েটা হিমেলের হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছে। হিমেল যেন সুরক্ষা বেস্টনি দিয়ে ঘিরে রেখেছে মেয়েকে।
,
মিহি ভাবতেই পারেনি হিমেল এতো কেয়ারিং একটা ছেলে। কিভাবে নিজের জাদু দিয়ে মিহিকে বসে করে ফেললো।
,
ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে মিহিও ঘুমের দেশে পাড়ি জমায় শেষ রাতের দিকে।
,
,
বিঃদ্রঃ জানি সবাই বিরক্ত আমার এমন অনিয়মিত গল্প দেওয়াই কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। দয়া করে আমাকে মাফ করবেন। গল্পটা দ্রুত শেষ করতে পারলেই আমিও মুক্তি পাই।
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
,