অনুভবে ১৯তম পর্ব

0
2896

#অনুভবে
১৯তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,

এই কয়েক মাসে মুহিত মিস্টার মালেককে সম্পূর্ণভাবে কনভেন্স করতে সক্ষম হয়েছে যে সে বাংলাদেশে বেড়াতে যাবে। সঙ্গে রিতাকেও নিয়ে যাবে।। এইতো গত কালকের কথা, মিস্টার মালিক তার পারসোনাল রুমে বসে ডায়েরি জাতীয় কিছু একটাই কিছু একটা লেখালেখি করছিলো।
,
হঠাৎ মুহিতকে রুমের ভেতরে ঢুকতে দেখতেই সেটা লুকিয়ে ফেলে।
,
– ড্যাড কি করছো এখানে?
,
-নেক্সট ট্রিপে কি কি এক্সপোর্ট করবো আর কি কি এখানে নিয়ে আসব সেগুলোর একটা লিস্ট বানাচ্ছিলাম।
,
মুহিত বলল,
,
– তোমার সঙ্গে একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
,
মিস্টার মালেক মুহিতের দিকে ঘুরে বলল,
,
– ঝটপট বলে ফেল দেখি।
,
– ড্যাড আমি আর রিতা কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে বেড়াতে যাচ্ছি।
,
মিস্টার মালেক কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। “তাহলে বাংলাদেশে গিয়ে রিতা কি সবকিছু রাকিবকে বলে দেবে! বাংলাদেশে যাওয়াটা বন্ধ করতেই হবে।”
,
মিস্টার মালেক একটু চিন্তিত কন্ঠে বলল,
,
-এখন কি যাওয়াটা খুব জরুরী?

মুহিত কথার প্যাচ লাগিয়ে দিয়ে বলল,
– জরুরী না হলেও আমার যেতে বড্ড ইচ্ছা করছে। এই যান্ত্রিক শহর আমার যে আর ভালো লাগছে না তাই রিফ্রেসমেন্টের জন্য কিছুদিন সেখানে গিয়ে থেকে আসি। এতে তুমি এতো ঘামছো কেন ড্যাড?
,
মিস্টার মালেক থতমত খেয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলে ফোটা ফোটা ঘাম জমেছে কপালে। এসির পাওয়ার ফুল তবুও ঘেমেই চলেছে। এটা তো গরমের ঘাম না, এটা হলো চিন্তার ঘাম।
,
মিস্টার মালেক নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক করে বলল,
,
-সেটা নিশ্চয়ই যাবি। তবে আগে তোদের বিয়েটা সম্পন্ন হয়ে গেলে ভালো হতোনা!
,
-ড্যাড সেটা এখন দরকার নেই। আমরা বাংলাদেশ ঘুরে আসি তারপর এসব বিষয়ে ভাবা যাবে।
,
অগত্যা ছেলের কথা মিস্টার মালিককে মেনে নিতে হলো, কিন্তু মনের ভিতরে একটা ভয় ভয় কাজ করছে। সেটা হচ্ছে রিতা যদি সবকিছু বলে দেয়?
,
মালেক আবার বলল,
– ঠিক আছে বাবা তোরা আগে ঘুরে আয়। তবে আসার পর কিন্তু একটুও দেরী করবোনা তোদের বিয়ে দিতে!
,
– ঠিক আছে আমি তাহলে আসি এখন। বাইরে কিছুটা কাজ আছে ঠিক আছে।
,
– ঠিক আছে যা আর যাওয়ার সময় একটু মনে করে রিতাকে ওখানে পাঠাবি।
,
মুহিত বাসা থেকে বাইরে যাওয়ার আগে রিতাকে মিস্টার মালেকের রুমে যাওয়ার কথা বলে যায়।
,
রিতা জানে যে মিস্টার মালেক আরো একবার তাকে শাসিয়ে দেবে যাতে সে সব সত্য রাকিবকে(মুহিত) না বলে।
তবে রিতার মনে মনে একটা পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে যে, মিস্টার মালেক যাকে রাকিব ভাবছে সে তো রাকিব না আর যে কথাগুলো না জানানোরর জন্য এখন রিতাকে শাসাবে তার সব কথাই এই লোকটা জানে।
,
রিতা নিজেকে একটু ভীতু লুক বানিয়ে, একটা ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে মিস্টার মালেকের রুমে প্রবেশ করে।
,
রিতার পায়ের শব্দ পেতেই মিস্টার মালিক ঘুরে বসে আর বলে,
– আমার সামনে আসো।
,
রিতা মিস্টার মালেকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
,
মিস্টার মালেক গম্ভীর গলায় বলে,
,
-তোমাকে আগেও বলেছি যেন কোন কথাই রাকিব জানতে না পারে, আর এখনো বলছি। আর যদি ও সমস্ত কথা জেনে যায় তাহলে তোমাকে তো মেরে ফেলবোই আমার ছেলেটাকেও মেরে ফেলতে খুব একটা কষ্ট হবে না। ছয় বছর আগে ওর মৃত্যুর শোক একবার পালন করা হয়েগেছে এখন আর খুব একটা মনে কষ্ট লাগবে না। কারণ হারানোর ক্ষত একবার পেয়েই গেছি।
,
যদিও মুহিত মিস্টার মালেকের সন্তান না। তবে মিস্টার মালেক তো জানেনা যে সে তার ছেলে রাকিব না। তবুও তার এ ধরনের কথা শুনে রিতা বেশ চমকে যায়।
,
একটা মানুষ নিজের কতটা খারাপ রূপ যে দেখাবে!
,
রিতা বেশ শান্ত গলায় বলল,
,
– আপনি কোন চিন্তা করবেন না আংকেল। আমি সব সত্য কথা রাকিবকে বলে রাকিবকে বা নিজেকে কোনো বিপদের মধ্যে ফেলতে চাই না। আমরা আমাদের বাকি জীবনটা একসাথে কাটাতে চাই সেটা অবশ্যই সুখে এবং সেই সুখটা যদি কোন খারাপ পথে আসে তবুও আমি সেটা নিয়ে এখন আর কিছু ভাবছিনা, কারণ রাকিবকে যে আমি পেয়ে গেছি। এটাই তো আমার প্রাপ্তি এর চেয়ে বড় কিছু আর চাইনা।
,
কথাগুলো বলার সময় রিতার চোখ দিয়ে বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আজকে একটা মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মৃত রাকিবকে নিয়েও অভিনয় করা লাগছে তার।
,
মিস্টার মালেক রিতার কথা শুনে বেশ খুশি হয় এবং বলে,
,
– আমিও এটাই চাই রিতা। তুমিতো তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে ভাবো আর আমাকে নিয়ে গবেষণা করা ছেড়েই দাও তাহলে সবার জন্যই ভালো হবে।
,
রিতা মাথা নিচু করে জবাব দিলো,
,
– জ্বি আচ্ছা আঙ্কেল, আমি এটা মাথায় রাখবো সবসময়।
,
– গুড গার্ল এখন তাহলে যাও।
,
দুই দিন পর,
,
সমস্ত লাগেজ গোছানো শেষ। এখনই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে রিতা এবং মুহিত। মিস্টার মালেক রাকিব(মুহিত) কোথায় থাকবে সে চিন্তাই একটা হোটেলে দুইটা রুম বুক করতে চেয়েছিলো। কিন্তু রাকিব বলেছে যে সে কোন একটা বন্ধুর বাসায় থাকবে।
,
যে ছেলে বাংলাদেশে মোট গিয়েছে তিন থেকে চারবার তার আবার বন্ধু কিভাবে হলো এটা জিজ্ঞাসা করতেই মুহিত বলে,
,
– ড্যাড বন্ধু হওয়ার জন্য বাংলাদেশ শত বার যাওয়া লাগে না। এখন ভার্চুয়াল যুগ। সোশ্যাল সাইটের সাহায্যে কতই না বন্ধু হয়ে যায়।
,
মিস্টার মালেকের কনফিউশান দূর করতে পেরে আরো একধাপ হালকা লাগছে। এই ধাপটা পার করতে পারলেই আজীবনের জন্য উড়াল দেবে এখান থেকে। যেটা পাস হতে গেছে মুহিত।
,
মুহিত এবং রিতা মিস্টার মালেকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
,
মিস্টার মালেক মনে মনে খুব খুশী যে রিতা তার কোনো কিছুই আর রাকিবকে বলবে না কারণ রিতা এখন কিছুটা বুঝতে পেরেছে এবং নিজের বাকি জীবনটা সুখে কাটাতে চায়।
,
কিন্তু কোনো সত্যই জানা হলো না মিস্টার মালেকের।
,
ওদিকে বাংলাদেশে,
,
গতকালকে মিহিকে এবং বাড়ির নতুন অতিথিকে, না না, নতুন সদস্যকে হিমেল বাসায় নিয়ে চলে এসেছে।
,
মিলি মনে মনে খুব এক্সাইটেড। সে সব সময় চাচ্ছে যে তার ভাইয়ুকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। মিহি বা হিমেল কেউই ছোট্ট বাবুকে কে মিলির কোলে দিতে রাজি না কারণ ও বাবুকে কোলে রাখতেই পারবেনা মিলি।
হতে পারে ওর হাত থেকে পড়ে গিয়ে বাবু অনেক আঘাত পাবে এবং অনেক বড় দুর্ঘটনাও হয়ে যেতে পারে।
,
,
বাচ্চা নিয়ে ওঠা নামার অসুবিধার জন্য হিমেল নিজেদের ঘর উপর থেকে নিচের তলায় শিফট করেছে।
,
ঘরের মধ্যে ছোট বাবু ঘুমাচ্ছে আর মিলি মাঝে মাঝে তার হাত-পা আঙ্গুল নিয়ে খেলা করছে। দুইদিন আগেও যে মেয়েটি তার ছোটভাই হবে আর তার ভালোবাসা কমে যাবে এই নিয়ে রাগ করে বসেছিল আর আজকে যেন সে তার ছোট্ট ভাইটির উপরে আসক্ত হয়ে গেছে। ওর কাছে ছাড়া থাকতেই ইচ্ছে করছে না।
,
এখন ঘরে কেও নেই। এই একটা সুযোগ ভাইয়ুকে কোলে নেওয়ার। মিলি ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো মিহি রান্নাঘরে পানি গরম করছে আর হিমেল ড্রয়িং রুমে বসে মোবাইলে কিছু একটা করছে। এই সুযোগ সে তার ছোট্ট ভাইয়ুকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর আব্বু আম্মুকে দেখাবে যে সে ভাইয়ুকে কোলে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত।
যে ভাবনা সেই কাজ। মিলি তার ছোট ভাইকে কোলে নিলো এবং হিমেলের কাছে আসার জন্য ঘর থেকে পা বাড়ালো কিন্তু বাচ্চা মানুষ ঠিকভাবে ভাইকে কোলে নিতে নিজের ভারসাম্য কিছুটা হারিয়ে ফেলেছে। তাই হঠাৎ করে পা ফসকে যায়।
তবুও বুদ্ধি করে ছোট ভাইকে আঘাতের হাত থেকে বাঁচিয়ে নেওয়ার জন্য নিজে ফ্লোরে গা এলিয়ে দেয় যাতে তার উপরে ছোট্ট ভাইটি থাকে, ফ্লোরে আঘাত না লাগে।
,
হঠাৎ একটা ছোট্ট আঘাত লাগার কারণে ছোট্টবাবু হুট করে কেঁদে ওঠে।
,
হিমেল ঘাড় ঘুরিয়ে এটা দেখে বেশ খানিকটা অবাক হয় এবং এর রেগেও যায়। আজকে মিলিকে একটা চড় মারতেই হবে। ওর এতো বড় সাহস কিভাবে হলো ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও বাবুকে কোলে নেওয়ার!
,
,
চলবে……
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
,
পরবর্তী পর্ব কালকে পাবেন ইনশাআল্লাহ।
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here