অনুভবে
২২তম পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
রিতার সমস্ত গোছগাছ শেষ। রাত ৯ঃ৩০ মিনিটের বাসে ঊঠবে মুহিত এবং রিতা। মুহিত যদিও প্রাইভেট কার ভাড়া নিতে চাচ্ছিলো কিন্তু রিতা বাধা দেয়। পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট মানেই অনেক লোক আর অনেক মানুষের ভিড়ে মুহিতের মন খারাপ হওয়ার সুযোগ হবেনা খুব একটা।
,
রিতার সব কথায় মুহিত চুপচাপ মেনে নিচ্ছে। সে চায়না তার একটা কথার দ্বারাও মেয়েটা কষ্ট পাক। ভালোবাসা হারিয়ে মেয়েটা যে একদম নিঃস্ব। এভাবে রিতার জীবনটা কাটবে কি করে! আর মুহিত! তার কি ভালোবাসা আছে? সেও তো চলে গেছে না ফেরার দেশে। তবে কেন যেন রিতার কষ্টের আড়ালে মুহিতের বেদনাটা ঢাকা পড়ে গেছে। আর সে তার কষ্টটা কাওকে দেখাতেও চায়না।
,
মুহিতও নিজের গোছানো শেষ করে রিতার রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে।
,
রিতাও রেডি তাই নক করার ১ মিনিটের মধ্যেই বের হয়ে পড়ে। ৯ঃ৪০ এ বাস কাউন্টারে পৌঁছে যায়। ১০ মিনিট লেট। তবুও বাস এখনও ছাড়েনি। তড়িঘড়ি করে দুইজন বাসে উঠে পড়ে।
,
আপন গতিতে বাস চলছে। ঢাকার বড় বড় দালান গুলোসব পিছন দিকে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত সৌন্দর্য! প্রিয় মানুষটা পাশে থাকলে কি খুব খারাপ হতো! যদি নসীবে নাই থাকবে তাহলে কেন এই মায়া কেন এই ভালোবাসা!
,
রিংরিং করে মুহিতের ফোন বেজে ওঠে। নাম্বারটা দেখে একটা বিদ্রুপের হাসি দেয় মুহিত। রিতা জিজ্ঞাসা করে,
,
– কি হয়েছে মুহিত, কারো কল দেওয়া দেখে তোমার চোখে ঘৃণার ছাপ কেন রয়েছে?
,
– কারণ কলটা দিয়েছে মিস্টার মালেক। হাহাহা।
,
– রিসিব করবে?
,
– এতোদিন পর কল দিলো, রিসিভ তো করতেই হবে আর এটাও জানাতে হবে তার গেম তারই সাথে খেলে এসেছি। আর বেচারি ছেলেকে পাওয়ার খুশি পালন করছে সেটাও ভেঙে দিতে বড্ড ইচ্ছা করছে।
,
– তাহলে সত্যি জানিও দাও ওনাকে।
,
মুহিত ফোন রিসিভ করতেই মিস্টার মালেক বলে,
,
– হ্যালো মাই সান, এতোদিন যোগাযোগ করতে না পারার জন্য সরি। একটু ব্যাস্ত ছিলাম।
,
– আপনার ব্যাস্ততা কি সেটার কোনো কিছুই জানার বাকি নেই মিস্টার মালেক।
,
– মুহিত?
,
– হ্যা মুহিত?
,
– রাকিবের ফোন তোমার কাছে কিভাবে গেলো? তুমি কি ওর সাথে রয়েছো?
,
– কারেকশন প্লিজ আংকেল, আমিই নকল রাকিব আমিই মুহিত। মানে যাকে আপনি বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন সেটা আমি মুহিত। একটা ছোট্ট নাটক করে আপনাকে বোকা বানাতে হলো। হাহাহা। তার জন্য আমি খুবই দুঃখিত।
,
– কাজটা তুমি ঠিক করো নি মুহিত? তার মানে রাকিব সেদিনই মারা গেছিলো!
,
– অবশ্যই! রিতার জন্য সব কিছু সম্ভব হয়েছে।
,
– ও আশাকরি তোমার পাশেই আছে। ফোনটা কি দেওয়া যাবে?
,
– সিওর, এই নিন।
,
মুহিত এরপর ফোনটা রিতার কাছে দেয়। রিতা হ্যালো বলতেই রাগে যেন আগুন হয়ে গেছেন মিস্টার মালেক।
,
– ভালোবাসা হারিয়ে খুব যে অন্য ছেলের সাথে দিন-রাত কাটাচ্ছো!
,
– মুখ সামলে কথা বলবি জানোয়ার। তোকে বাবার চোখে দেখতাম কিন্তু তোর কথা বলে দিচ্ছে তুই বাবা না তুই একটা শয়তান যে নিজের মেয়ের মত একজনকে নষ্ট কথা বলতে পারে।
,
– খুব ভুল করলে রিতা এর ফল খুব খারাপ হবে।ভেবো না বাংলাদেশে গিয়ে।
,
– যেটা পারেন করে দেখান ফোনে হুমকি না দিয়ে।
,
এই বলে ফোনটা রেখে দেয় রিতা।
,
,
মিস্টার মালেক এবার শয়তানি হাসি দিতে থাকে।
,
– হাহা হা নিজের ছেলেকেও আমি ১০০% বিশ্বাস করতাম না। তাইতো ফোনে মাইক্রোচিপ লাগিয়ে রাখতাম। আজকে সেটা কাজেই দিলো।
,
মিস্টার মালেক ফোন বের করে একটা নাম্বারে কল দিয়ে বলে,
,
– আমি একটা লোকেশন দিচ্ছি। ওটা ফলোকরতে করতে যাও। আর কোনো একটা জঙ্গলে দুইজনের লাশ ফেলে এসো। যাতে করে পশুরা খেয়ে ফেলে।
,
– ওকে বস।
,
,
,
,
হিমেল টুকটুক করে গাড়ি চালাচ্ছে। আর মিহি পিছনের সিটে বসে আছে, কোলে বাবু। মিলি ঠিক তার পাশেই বসে কার্টুন দেখছে হিমেলের ট্যাবে। বানা হিমেলের পাশের সিটে বসে আছে।
,
আর একদম ব্যাক সাইডের তিন সিট সম্পুর্ন ফাকা। বড় গাড়ি কিন্তু লোক একদম কম। চলতে চলতে মিলি হঠাৎ বায়না ধরলো যে সে দাদুর কোলে বসবে। দুইসিটের মাঝখান দিয়ে এসে দাদুর কোলে বসে বসে কার্টুন দেখবে আর সামনের ভিউ দেখবে সে। পিছনে বসে বড্ড বোর হচ্ছিলো সে।।
এখন বড্ড খুশি।
,
,
ফেনী পার হয়ে এসেছে অনেক আগে। হঠাৎ দেখলো একটা মেয়ে হাত উঠিয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছে আর ঠিক রাস্তার ধারেই আরো একটা দেহ পড়ে আছে। বাবা তাড়াতাড়ি গাড়ি রাখতে বলল।
,
হিমেল গাড়ি রেখেই মেয়েটার কাছে গেলো। মেয়েটা খুব ভিত গলায় বলল,
,
– প্লিজ আপনারা আমাদের হেল্প করুন। আমরা খুব বিপদে।
,
– কিন্তু হয়েছেটাকি সেটাতো বলবে? আর এই লোকটাই বা কে।
,
রিতা ভাবল এখন সে যদি বলে তারা ফ্রেন্ড তাহলে এরা ভাববে ফ্রেন্ড হলে এতো রাতে এখানে কি! তাই বেশি কিছু না ভেবে যাতে বলে,
,
– এটা আমার স্বামী রাকিব। আমার নাম রিতা। দয়া করে আমাদেরকে হেল্প করুন।
,
হিমেলে কোনোরকমে ধরাধরি করে পিছনের সারিরি সিটে শুয়াইয়ে দেয় মুহিতকে।। রিতা মুহিতের মাথাটা নিজের কোলের উপর নিয়ে বসে থাকে।
,
মিহি রিতাকে বলে,
,
– ভাবি কি হয়েছিলো বলবেন একটু। এতোরাতে আপনারা এই জায়গায় কেন?
,
রিতা বলা শুরু করলো,
,
– আমি আর আমার স্বামী রাকিব(মুহিত) বাসে চেপে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিই। এখানে হঠাৎ একদল লোক বাস আটকাই। বাসের সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকে আর রাকিবকে বাস থেকে বের করে নেয়। তারপর ড্রাইভারকে বাসটা ছেড়ে দিতে বলে। বাস ভলে যায়। তারপর তারা আমাদের পাশের জঙ্গলের ভিতর নিয়ে যায়। এরপর যখনই আমাদের মারতে যাবে তখন একটা কল আসে তাদের কারো ফোনে। বুঝতে পারি যে আমাদেরকে মারতে লোক পাঠিয়েছিলো সে কল দিয়েছে।
খুব কষ্ট হচ্ছিলো জানেন। নিজের জন্য না এই লোকটার জন্য। এই লোকটা সব কিছু হারিয়েছে। হারানোর আর যে কিছুই নেই।
,
মিহি রিতার কথা কপ করে ধরে ফেলে আর বলে,
,
– আপনি তো তার স্ত্রী, আপনি তো রয়েছেন। তাহলে সব হারিয়েছেন মানে কি?
,
রিতা বুঝতে পারলো আবেগের বসে অনেকটা গোপন কথা বলে ফেলছিলো। তাই নিজেকে সামলে বলে,
,
– সে কথা বাদ দিন। আগে শুনুন। এরপর তারা ফোন রেখেদিয়ে হঠাৎ করেই সেখান থেকে চলে যায়। আমরা অবাক হয়ে যায় বিষয়টি দেখে। যায়হোক ভাবতে থাকি এ যাত্রা মনে হয় বেচে গেলাম। কিন্তু আরেক বিপত্তি ঘটলো। আমার স্বামীর অন্ধকারকে খুব ভয় পায়। ওর একটা রোগ আছে।
,
মিহির যেন সারা গায়ে বিদ্যুৎ বয়ে গেলো কিছু সময়ের জন্য। এমন রোগ মুহিতেরও ছিলো। কি অদ্ভুত মিল। একবার লোকটাকে দেখতে ইচ্ছা করছে মিহি।
,
বুকের ধুকপুক বাড়তেই চলেছে। হালকা একটু উচু হয়ে লোকটার চেহারা দেখলো। যাক, এটা মুহিত না। মুহিত হবেই বা কি করে ওতো বেচেও নেই।
,
মিহির আবার জিজ্ঞাসা করলো,
,
– তারপর কি হলো।
,
– হঠাৎ ও কাপতে শুরু করলো। আমি ওর সাপোর্ট কোনোভাবে নিজের কাধে নিই। আর ও কোনোমতে আমার সাথে তাল মিলাতে চেষ্টা করে কিন্তু কিছুদুর আশারপর হঠাৎ ও নেতিয়ে পড়ে। আমি দিশেহারা হয়ে যাই। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। একটাই কথা মাথায় আসছিলো মেইনরোডে আসতে হবে।
ওকে একরকম টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে আসি। তারপর আপনারা হেল্প করলেন।
,
মিহি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। ভেবেছিলো লোকটার অনেক ক্ষতি হয়েছে কিন্তু না। আল্লাহ জোর বাচানো বাচিয়েছে। হয়তো কিছু সময়ের মধ্যেই লোকটার জ্ঞান ফিরে আসবে।
,
জ্ঞান ফেরার পর মিহিকে দেখলে কি রিয়াকশন হবে মুহিতের! হিমেল কি করবে!
,
,
চলবে…
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
,
পরবর্তী পর্ব কালকে পাবেন ইনশাআল্লাহ।