ভোরের শিশির,পর্বঃ৩

0
2159

ভোরের শিশির,পর্বঃ৩
লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম

আমি আমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা বোরকা আর হিজাব পড়ে তৈরি হয়ে নেই।কারন উনার কড়া নির্দেশ কোথাও বাহিরে গেলে হিজাব আর বোরকা পড়ে যেতে হবে।তৈরি হয়ে নিচে নামতেই দেখি হামিম নেই এখানে।সেটা দেখে আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

“যাক বাবা ডাইনোসরটা এখানে নেই,থাকলে আবার কী না কী করত আল্লায়ই জানে!”

কথাটা বলেই আমি ধাপ ধুপ পা ফেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি।আর বাইরে গাড়ির সামনে এসেই আমার চোখ কপালে।কারন আমি যে গাড়িতে করে যাব সেই গাড়িতে হামিমও বসে আছে।আমি থেমে যাই,সেটা দেখে হামিম মুচকি হাসে।

“থেমে গেলে কেন!তাড়াতাড়ি আসো লেট হয়ে যাচ্ছে।”

“মানেহ!আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

“কেন হসপিটালে।”

আমি যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হয়েছে,এই লোকটা অতি চালাক এর সাথে এমনি এমনি পারা যাবে না।তাই আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে বসি।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে আর আমি একটু পরপর বাইরের দিকে তাকাচ্ছি।আর হামিম নিজ ফোনে ফোন টিপছে।

“চাচা গাড়িটা ঐ শপিংমলের সামনে থামান ত।”

আদিয়ার কথা শুনে হামিম ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আদিয়ার দিকে তাকায়।

“কেন গাড়ি থামাতে বলছো?”

“আমার একটা ফোন দরকার ত সেটাই কেনার জন্য গাড়ি থামাতে বলছি।”

“গাড়ি থামানোর দরকার নেই চাচা আপনি হসপিটালেই যান।”

হামিম কথাটা বলেই আবার ফোন টিপায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।আর আমি রাগে ফুঁসছি,লোকটাকে কতগুলো কড়া কথা শুনিয়ে দেয়ার ইচ্ছে হচ্ছে।

“আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন এবার।”

আমার কোন কথা উনি পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ ফোন টিপছে।আজ বাড়িতেও ত মনে হয় নিয়ে যাবে না এই ডাইনোসর টা।বাড়িতে গেলেও কিছু একটা করা যেত।
বেশ কিছুক্ষণ পর দুজনেই হসপিটালে এসে পৌঁছাই।আমি গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময় আড়চোখে একবার উনার দিকে তাকাই।একি উনিও নামছে কেন?

“আপনি নামছেন কেন?আপনার ত,,,

” এক কথা কতবার বলব তোমাকে!তখন বলি নি হসপিটালে আসব।চুপচাপ ভিতরে আসো নয়ত কী হবে তুমি ভালো করেই জানো।”

কথাগুলো বলে হামিম ভিতরে চলে যায়,আর আমিও অসহায় মুখ করে উনার পিছন পিছন যাই।হসপিটালে ডুকার পরপরই উনি একটা ভয়ানক কাজ করে বসে।
আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই।আর উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আমার কাঁধে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে আর এক হাত পকেটে দিয়ে হেঁটে চলেছে।আমি হাত সরাতে চাইলে উনি আরো জোড়ে চেপে ধরে।আর আশেপাশের বাকি সবাই অবাক চোখে দেখছে আমাদের।আর যারা পরিচিত তারা সবাই আমাদের দুজনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে আমাদের নতুন জীবনের জন্য।আমার চেম্বারে ডুকার পরপরই উনি আমার কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে আমার চেয়ারে বসে পড়ে।আর আমি বোকার মত উনার দিকে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে আছি।

“এটা কী হল?আপনি হসপিটালে ডুকার পর আমার কাঁধে হাত কেন দিয়েছেন?আর এখন আমার চেয়ারেই বা কেন বসেছেন?উঠুন বলছি।”

“আমার যা মন চাইবে আমি সেটাই করব,আর তার কৈফিয়ত কাউকে দেই না আমি।”

ব্যাস উনার এই একটা কথায় আমার সব উওর পাওয়া হয়ে গেছে।কোন দুঃখে যে সেদিন উনার মত গাউড়ার সাথে আমার দেখা হল।পুরাই তাড়ছিড়া মার্কা জামাই পড়ছে আমার কপালে।
উনি বসে থেকে কাউকে কল দেন,আর একটু পর চেম্বারে ড্রাইভার চাচা এসে উনার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়।

“এই যে মিসেস বউ এবার যান।”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাই উনার দিকে কই যাব আমি সেটা জানার জন্য।

“বাইরে যান।”

“বাইরে যাব মানে কী?আমার পেশেন্ট গুলো কী তবে আপনি দেখবেন?”

“অবশ্যই না,তোমার পেশেন্ট তুমিই দেখবে।কিন্তু আমার প্যান্টটা নিশ্চয়ই তুমি পড়বা না আমিই পড়ব।ত বাইরে যাও,আমি চেন্জ করব।”

উনার কথাশুনে আমি উনার পায়ের দিকে তাকাই,আর যখনই একটা চিৎকার করতে যাব উনি বসে থেকেই উনার ঠোঁটে এক আঙুল চেপে ধরে বুঝায় চুপ থাকতে।

“শসস একদম চিৎকার করবা না,এমন করছো যেন আমাকে থ্রি কোয়াটার প্যান্টে কখনও চোখেই দেখো নি।”

“মানে কী?আপনি এভাবেই তখন সবার সামনে দিয়ে এসেছেন?আল্লাহ আমার মান সম্মান সব চশমা হইয়া গেছে।এই লোকটার জন্য আমার এতদিনের অর্জন করা সব মান সম্মান গেলো গো।”

“একদম চুপ করো নয়ত থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব।আর আমি এক থেকে তিন গুনব এর মধ্যে তুমি বাইরে যাবে তারপর আমি ডাকলে ভিতরে আসবে,নয়ত!”

উনি কথাটা বলার পরপরই আমি বাইরে চলে আসি।কারন আমি জানি উনি এরপর কী বলবে,বজ্জাত বেডা একটা।

আর হামিম ভিতরে নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছে।

“হামিম তোর লজ্জা সরম কী কিছুই নাই নাকি রে।এভাবে কেমনে পারলি থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়ে এতগুলো মানুষের সামনে দিয়ে আসতে।তোর কী দরকার ছিল না মনে করে প্যান্টটা চেন্জ করে আসার জন্য।তোর কপাল ভালো চাচা তোকে একটা নতুন প্যান্ট কিনে দিয়ে গেছে।নয়ত চাচা না আসলে তকে এভাবেই থাকতে হত।ইস্ ভাবতেই সরম করতাছে কেমনে এতগুলো মানুষের সামনে দিয়ে আসলাম আমি।”

_______________________________________

আমার চেম্বারে বসে আমি পেশেন্ট দেখছি আর উনি পাশেই একটা চেয়ার নিয়ে বসে আছে।বিরক্তিকর লোকটা,শান্তিতে পেশেন্টও দেখতে দিবে না আমাকে।এমন বন্দি জীবন কার ভালো লাগে,আমার একদমই ভালো লাগছে না এমন জীবন।শুধু কাজের জিনিসটা হাতে পাই তারপর চান্দু বুঝাব তোমাকে এখন এভাবেই সবটা মুখ বুঝে মেনে চলতে হবে।

অন্যদিকে হামিম আদিয়ার আড়ালে মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে বলে চলেছে।

“তোমাকে আমি এত সহজে ছাড়ছি না বউ,আর না সহজে তোমাকে তোমার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি দিব।রাতের আঁধার কেটে গিয়ে সকালের আলো ফুটবে ঠিকই কিন্তু তুমি আমার থেকে ছাড়া পাবে না।”

এসব ভাবনার মাঝেই হামিমের ফোনটা বেজে উঠে,আর হামিম ফোনটা রিসিভ করে।আদিয়া হামিমের দিকে তাকায় কিন্তু আদিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই হামিম বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় খুব উত্তেজিত হয়ে।

“আমি আমার গার্ডকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তুমি তার সাথে বাড়িতে চলে এসো।খবরদার চালাকি করার চেষ্টা করবা না,তুমি যাই করো না কেন সবটা আমার কানে আসবেই।ত যাই করো ভেবে চিন্তে করো,আমি আসছি আমার একটা কাজ আছে।”

কথাগুলো বলে আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়েই বেরিয়ে যায়।কিছুই বুঝতে পারলাম না কী হল,উনি এভাবে বেরিয়ে গেলেন কী কাজ থাকতে পারে!আমি এসব নিয়ে আর বেশি না ভেবে আমার চেম্বার থেকে বেরিয়ে রিসিপশনে আসি।আর সেখান থেকে একটা নাম্বারে ডায়াল করি,প্রথম বারেই কলটা রিসিভ হয়।

“আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

“——”

“স্যার আমি এখন অবধি কিছুই করতে পারি নি,আমাকে কিছু করার সুযোগই দেয় নি।সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকে,চোখে চোখে রাখে আমাকে।আমার এমন বন্দি জীবন একদমই ভালো লাগছে না।”

“——-”

“জি স্যার আমি জানি,সবটাই বুঝতে পারছি আমি।আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করব।”

“——-”

“ওকে স্যার রাখি এখন,আমি কিছু জানতে পারলে আপনাকে অবশ্যই জানাব।”

“——-”

“আল্লাহ হাফেজ।”

________________________________________

সারাদিন হসপিটালে কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরি,গাড়ি থেকে নামার পরই আমার পিছন পিছন দুইজন গার্ডও আসে।ভাল্লাগে না এমন বিআইপি মার্কা জীবন,সাধারণ মানুষের মত জীবন কাটানোতেই আনন্দ।
ক্লান্ত পায়ে বাড়িতে ডুকি আর বাড়ির ভিতরে ডুকার আগেই কেউ আমার চোখ বেঁধে দিয়ে মুখও বেঁধে দেয়।আমি ছোটার চেষ্টা করলেও পারি না,লোকটা আমার হাত,মুখ,পা বেঁধেই আমাকে কোলে তুলে নেয়।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here