ভোরের শিশির,পর্বঃ১১(অন্তিম পর্ব)
লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
হামিম অনেক খুঁজেও যখন আদিয়াকে পায় না,তখন হামিম তার ঘরে চলে আসে।এসে আলমারি চেক করে দেখে আদিয়ার জামা কাপড় সব আছে কী না!হামিম খুলে দেখে সবই ঠিক আছে তবে আদিয়া কোথায় গেলো?হামিম এবার হসপিটাল আর আদিয়ার বাবার বাড়িতে ফোন করে।কিন্তু আদিয়া সেখানেও নেই,হামিম এবার পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে।হামিম খাটে বসে পড়ে মাথা নিচু করে।
“আজ থেকে নতুন জীবন শুরু করব ভেবেছিলাম, কিন্তু এভাবে যে সব শেষ হয়ে যাবে ভাবি নি।
ভোরের শিশিরের মতই কী হারিয়ে গেলে?কোথায় চলে গেলে আমাকে ছেড়ে,বড্ড একা একা লাগছে।”
হামিমের চোখগুলো টলমল করছে পানিতে,যেকোন সময় ঝরে পড়বে গাল বেয়ে।
“আরে আপনি উঠে গেছেন দেখছি,বসুন আমি আপনার জন্য কফি নিয়ে আসছি।”
হামিম আদিয়ার গলার আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলে তাকায়।আদিয়া রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই হামিম ঝড়ের গতিতে আদিয়ার কাছে চলে যায়।আর আদিয়াকে পিছন থেকে শক্ত করে ঝাপ্টে ধরে।আদিয়া এমন কিছুর জন্য একদমই প্রস্তুত ছিল না।
“কককী করছেন ছছাড়ুন আমায়।”
আমার কথা মনে হয় উনার কানে যায় নি,তাই আবারও একই কথা বললাম।তাতেও উনার কোন সারা নেই,এভাবে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পর উনি হঠাৎ করে উনার দিকে ঘুরিয়ে গালে শক্ত করে হাত রাখে।এত শক্ত করেই গাল চেপে ধরেছে যে মনে হচ্ছে দাঁত খুলেই পড়ে যাবে।আমি এবার উনার চোখের দিকে তাকাই,উনার চোখ দেখেই মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে।
“কোথায় চলে গেছিলে?” (গম্ভীর গলায়)
উনার চাহনিতেই ত আমার ভয় করছে,আর এখন যদি বলি কোথায় গেছি তবে ত সারপ্রাইজই দেয়া হবে না।আর যদি না বলি তবে ত কাঁচা চিবিয়ে খাবে যা মনে হচ্ছে।আল্লাহ,আমার গাল গুলো শেষ।
“বলো কোথায় গিয়েছিলে?” (রেগে চিৎকার করে)
“লললাগছে আমার,প্লিজ ছাড়ুন বববলছি আমি।”
উনি আমার গাল ছেড়ে দেয়,আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
“এবার বলো কোথায় আর কেন গেছিলে?”
কী বলব এখন!সকাল সকাল কী মিথ্যা কথা বলব!
“একটা কাজ ছিল তাই একটু বাহিরে গেছিলাম।”
আমার কথাশুনে উনার ভ্রু কুঁচকে আসে।
“এত সকাল সকাল কী কাজ ছিল তোমার যে আমাকে না বলে বাইরে গিয়েছিলে।”(ধমকে)
উনার ধমকে আমি কেঁপে উঠি,বেটা ডাইনোসর খালি ধমকাইব।জীবনটা আমার এই ডাইনোসরের ধমকানিতেই যাইব।
“এখন বলব না,কাল বলব।”
“তোমাকে এখনই বলতে হবে কোথায় আর কেন গেছো?”
“আমি এখন বলব না,কাল বলব ত কালকের জন্য একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ।”(ইনোসেন্ট ফেস করে)
“ওকে।”
কথাটা বলেই উনি ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আর আমি খুশিমনে ওয়াশরুমে চলে যাই একটা শাড়ি নিয়ে।আমি মলির সাথে একটু বাজারে গিয়েছিলাম, বাজারে গিয়ে কিছু জিনিস নিয়ে এসেছি।যেসব কাল সকালে লাগবে উনাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।অতঃপর দুজন দুজনের কাজে চলে যাই।দিন শেষে রাতে দুজন বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে শুয়ে পড়ি।শোয়ার সময় উনি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমাকে।এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে কাজটা করব কীভাবে?কথাটা ভেবেই উনাকে বলে উঠি,,,
“এই যে শুনুন।”
“কী হয়েছে!” (বিরক্ত হয়ে)
“এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে আমি রাতে নড়তে পারি না,তাই প্লিজ একটু হাতটা সরান।”
“এত নড়াচড়া করতে হবে না,আজ আর তোমাকে ছাড়ছি না।আজ সকালে যে খেলা দেখাইছো তারপর ত আরো আগে ছাড়ব না।চুপচাপ ঘুমাও নয়ত মাইর খাবে।”
তারপর আর কী ওভাবে ধরেই উনি ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু আমার ঘুমালে চলবে না।তাই উনার ঘুমানোর পর খুব সহজে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে যাই।ভাগ্য ভালো ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ছিলাম নয়ত এখন উঠতেই পারতাম না।এবার তাড়াতাড়ি গিয়ে কাজটা সারতে হবে।কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম আমি।
______________________________________
ভোর পাঁচটা বাজে আদিয়া হামিমকে সেই কখন থেকে ডেকে চলেছে কিন্তু হামিমের কোন সারা শব্দই নেই।থাকবে কীভাবে বেচারা গতরাতে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়াইছে ত এত সকালে কী উঠতে পারবে নাকি?এবার আদিয়া এক গ্লাস পানি হামিমের মুখে ঢেলে দেয় আর হামিম ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে।
“কী হয়েছে?শরীর খারাপ লাগছে তোমার?”
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না বুঝাই।
“তবে কী হয়েছে এভাবে পানি ঢাললে কেন ভোরবেলা?”
আমি উনার হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বললাম।
“ফ্রেশ হয়ে এগুলো পড়ে বাগানে আসুন।”
“কেন?”
“যেটা বলেছি আপাতত সেটাই করুন,গেলে সবটা জানতে পারবেন।উঠুন তাড়াতাড়ি আর তৈরি হন জলদি।”
উনি আমার কথামত ওয়াশরুমে চলে যায় আর আমি অন্য একটা রুমে গিয়ে শাড়ি পড়ে বাগানে চলে যাই।
বেশ অনেকক্ষন পরে হামিম সাদা রঙের একটা পান্জাবি আর পায়জামা পরে বাগানে চলে আসে।বাগানে পা রাখার সাথে সাথে হামিম আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়।বাগানটা খুব সুন্দর করে সাজানো।বাগানের ঠিক মাঝামাঝি একটা উঁচু জায়গায় আদিয়া সুন্দর একটা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে।হামিম মুচকি হেঁসে সামনে এগোয়,আর আদিয়া হামিমকে দেখে ছোটখাটো একটা ক্রাশ খায়।আদিয়ার সামনে হামিম দাঁড়ালে আদিয়া হাত বাড়িয়ে হামিমকে উপরে তুলে নেয়।হামিমকে উপরে উঠানোর পরপরই আদিয়া হামিমের হাতটা ধরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।হামিম অবাক চোখে আদিয়ার দিকে তাকায়।
“আপনার বাবুর আম্মু হতে চাই,
দিবেন কী আমাকে সেই অধিকার?”
আদিয়ার কথাশুনে হামিম যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না।হামিম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আদিয়ার দিকে।আদিয়া আবারও বলে উঠে,,,
“ভালবাসি আপনাকে।”
হামিম এবার কোন কিছু না বলে আদিয়ার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে আদিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।আদিয়া তার উওর পেয়ে গেছে,আদিয়াও হামিমকে জড়িয়ে ধরে।আদিয়া জড়িয়ে ধরলে হামিম আদিয়ার গালে হাত দিয়ে সারা মুখে ভালবাসার পরশ একে দেয়।আদিয়া চোখ বন্ধ করে হামিমের প্রতিটা স্পর্শ উপভোগ করছে।
“আমিও খুব খুব খুব খুব বেশি ভালবাসি তোমাকে।প্লিজ আমাকে কখনও একা করে দিও না।তাহলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব,তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।”
“হুম জানি আমি,পরসু রাতে আপনি বাগানে এসে যা বলেছেন সবটাই শুনেছি আমি।”
হামিম আদিয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকালে আদিয়া বলে উঠে।
“হ্যাঁ আমি সবটা শুনেছি,আর তাই আজ আপনাকে আমার মনের কথা বলার সাহস পেয়েছি।আমিও আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি।আমাদের বিয়ে হওয়ার পরই ভালবেসে ফেলি আপনাকে।কিন্তু ভয়ে বলতে পারি নি কখনও,আর কাল আপনার কথাশুনে আমি সাহস পেয়েই আজ মনের কথা বলে ফেললাম।”
উনি আবারও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর হামিম আমাকে ছেড়ে কোলে তুলে নেয়।আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরি,উনি আমাকে দোলনায় বসিয়ে আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
“চুলে একটু হাত বুলিয়ে দাও না।”(বাচ্চাদের মত কিউট ফেস করে)
আমি মুচকি হেঁসে উনার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আজকের এই ভোর আমার জীবনের বেস্ট একটা মুহুর্ত।কখনও ভুলব না আজকের কথা আমি।ইস্ সময়টা যদি এখানেই থেমে যেত কতই না ভালো হত।”
আমি উনার কথায় শুধু মুচকি হাসছি,উনি এবার বেশ আবেগ মিশ্রিত গলায় বলে উঠে,,,
“সারাজীবন ভালবেসে আমার হয়ে থেকো,
আমিও ভালবেসে তোমায় আমার করে রাখব।”
আমি উনার কথায় মুচকি হেঁসে উনার কপালে একটা ভালবাসার পরশ একে দেই।হামিম তার উওর পেয়ে গেছে।এভাবেই ভালো থাকুক প্রতিটা ভালবাসার মানুষ।
সমাপ্ত