ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (৩)
রোকসানা_রাহমান
রাত ডিনার শেষে রুমে পা রাখতেই পেছন থেকে দরজা লাগানোর শব্দ! পিছে ঘুরতেই সন্ধ্যা ওর শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে দিয়েছে।
“” আরে কি করছিস?””
“” আজকে ছয় কাপড় খুলবোই খুলবোই!””
“” আরে আমি ছয় কাপড় পড়িনি তো।””
“” তোহ! কি হয়েছে? পড়োনি তো পড়ে নিবে।””
রাত সন্ধ্যার হাতদুটো আটকে নিয়ে বলল,,
“” কি পড়বো?””
সন্ধ্যা নিজের দুপায়ের সাহায্যে আটকে রাখা একটা ব্যাগ বের করলো। বিছানায় উল্টো করে ঢালতেই নানা রকমের কাপড় ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা মুখভর্তি হাঁসি নিয়ে বললো,,
“”এগুলো””
রাত অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে আটকে আছে। মেয়েলি পাঁচকাপড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা বক্ষবন্ধনীটার দিকে চোখ যেতেই রাতের চোখ চরকগাছ।
“”সন্ধ্যা,তুই এখনি আমার রুম থেকে বের হবি। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি!””
সন্ধ্যা রাতের করুন আদেশের কোনো পাত্তা দিলোনা। ভুল করে মুখের সামনে মাছি চলে আসলে যেমন বিরক্ত নিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ঠিক তেমনি সন্ধ্যা রাতের কথাটা সেভাবে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কাপড় গুছিয়ে নিয়ে বললো,,
“” শার্টটা খোলা শেষ হলে প্যান্টটাও খুলবে। উফ! আমার যে কি খুশি লাগছেনা রাত ভাইয়া!! আমি হয়তো প্রথম নারী যে সব ছেলেকে হারিয়ে দিয়ে ছয় কাপড় খুলবে!””
রাতের চোখ গরম হয়ে আসছে। সাথে মাথার তালুটা টগবগিয়ে ফুটছে। ছেলেমানুষির লিমিট থাকে। তাই বলে এতোটা?? ও কি আসলেই ছেলেমানুষি করছে নাকি ইচ্ছে করেই আমাকে জ্বালানোর জন্য এমন উৎভুক কর্মকান্ড নিয়ে হাজির হচ্ছে?? ১৩ পার হয়ে চৌদ্দতেও পড়েছে। বয়সের তুলনায় ছেলেমানুষিটা কি বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?? এমন নয় তো মাথায় বুদ্ধীর ফোটা কম পড়েছিলো?? নাহ! বুদ্ধীতো ঠিকই আছে যেখানে মনে চাচ্ছে সেখানে ঠিকই লাগাচ্ছে।
সন্ধ্যা লাল,নীল,হলুদ বর্নের শাড়ী,ব্লাউজ,পেটিকোট পরপর সাজিয়ে নিচ্ছে। সবার আগে কোনটা পড়াতে হবে সেটাও ভেবে নিচ্ছে। ছোট থেকে বড় আকারে পরপর সাজিয়ে সব থেকে ছোট বক্ষবন্ধনীটা হাতে নিয়ে বললো,,,
“” রাত ভাইয়া,এটা কিভাবে পড়তে হয়??””
সন্ধ্যা কোনো উত্তর না পেয়ে পেছনে ঘুরলো পুরো রুম ফাঁকা!
সন্ধ্যা চটপট পুরো রুম ঘুরে ঘুরে খুজে খুজে না পেয়ে ওয়াশরুমেও দেখলো। কোথাও না পেয়ে ধপধপ পা ফেলে রাতের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। এক সেকেন্ডের মধ্যে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো?? রাত ভাইয়া কি হাওয়া হয়ে যাওয়ার ম্যাজিক শিখেছে??
~~
গভীর রাতের ঘনঘটা নিরিবিলি পথ পেরিয়ে বন্ধু সায়নের বাড়ি হাজির হলো রাত। আজ আমি এখানেই ঘুমাবো। কিছুতেই বাসায় যাওয়া যাবেনা। কিছুতেই না। এই মেয়েটা বড় হতে হতে আমার মান সম্মানের ছিটেফোটাও রাখবেনা। শেষে দেখা যাবে বিয়ে করতে চাইলে বলবে,তোমার মতো মানসম্মানশূন্য ছেলেকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবোনা। আমারতো মানসম্মানভর্তি ছেলে লাগবে। যাতে প্রতিরাতে একটু একটু করে খশিয়ে আমি আনন্দে গড়াগড়ি করতে পারি!
সায়নের সাথে আড্ডায় মেতে উঠলেও মনটা কেমন উশখুশ করে উঠছিলো বাসায় যাওয়ার জন্য। তাই ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিলো রাত। আজকে ও বাড়ি যাওয়া যাবেনা মানে যাবেইনা। একেতো ঘুম আসছেনা তার উপর ঘড়ির কাটাও ঘুরছেনা। আজ যেন সময় কাটাগুলোর থমকে যাওয়ার আন্দোলন চলছে। তাদের দাবি মানা না হলে তারা চলবেনা। কিন্তু দাবিটা কি??
রাত বিছানা ছেড়ে শার্টটা পড়তে নিলে সায়ন বলে উঠলো,,
“” এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস?””
“” বাসায়।””
“” তুই না বললি আজকে এখানে থাকবি?””
“” বলেছিলাম বলে কি থাকতেই হবে?””
“” তা না। কিন্তু এতো রাতে না গেলেই কি নয়? রাতটা তো পার হতে দে। সকালে নাহয় চলে যাবি!””
রাত শার্টের বোতাম লাগিয়ে ফোনটা পকেটে পুরে বললো,,
“” আর এক সেকেন্ড এখানে থাকলে আমি অক্সিজেন,হাইড্রোজেন,নাইট্রোজেনসহ আরো যত জেন,অক্সাইড আছে সবকিছুর অভাবে মারা যাবো!””
“” সেকি রে,কেন?””
“” যার মুখ দেখে আমার সকাল শুরু হয়। যার মুখ দেখে আমার রাতটা শেষ হয়,যার অনুপস্থিতে আমার একবেলার ভাতও পেটে পড়েনা তাকে ছাড়া একরাত কাটানো ইম্পসিবল। মানুষের বাঁচতে হলে যেমন অক্সিজেনের উপস্থিতি অত্যাবশ্যকীয়। ঠিক তেমনি আমার বাঁচার জন্য অক্সিজেনের জোন হিসেবে সন্ধ্যার মুখদর্শন,নিশ্বাসের শব্দ প্রয়োজন।””
~~
রাতের বাসায় পৌছুতে প্রায় চারটে বেজে গিয়েছে। চুপিসারে নিজের রুমের দিকে পা ফেলতেই চোখ পড়লো আম্মুর রুমে। দরজার নিচ দিয়ে আলোর দীপ্ত ঠিকরে বের হয়ে আসছে। চুপিসারীকে বিদায় দিয়ে গটগট করে তিয়ামতীর রুমের দিকে ছুটছে। পুরো রুম অন্ধকারে ছেয়ে আছে। এই অন্ধকারের খানিকটা গভীরতা নষ্ট করতেই হয়তো তিয়ামতী মোম লাগিয়ে নিয়েছে। ছোট টেবিলটার কোনে মোমের আলোতে জ্বলজ্বল করছে সবুজ সুতিশাড়ী পরিহিতার।
“” তুমি আবার রাত জেগে লিখালিখি করছো?””
হঠাৎ এমন কন্ঠের ঝংকারে কেঁপে উঠেছে তিয়ামতী। তাড়াহুড়োতে মোমটা পড়ে গিয়েছে। রাত জলদিতে ছুটে গিয়ে মোমটা উঠাতে উঠাতে ভালোবাসায় শব্দে লিখা চিঠিটাতে আগুন লেগে গেলো। রাত কাগজটা নিচে ফেলে বললো,,
“” তুমি আমার কথা কেন শুনোনা,আম্মু?? যে স্বার্থপরের মতো তোমাকে একা ফেলে দিয়েছে তার জন্য তুমি এখনো পথ চেয়ে আছো??””
রাতের কথাতে তিয়ামতী চোখ পাকিয়ে বললো,,
“” আমার লুম থেকে এখনি বেলিয়ে যাবি।””
“” যাবোনা৷ যে নেই তার জন্য তোমার রাত জাগাটা আমি সহ্য করতে পারিনা। দিনে দিনে তুমি কতটা অসুস্থ হয়ে পড়ছো সেটা কি একবারও খেয়াল করেছো? আমার যে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই সেটা জানানো?””
“” না,জানিনা।””
“” আম্মু!””
তিয়ামতী রাতের কাধটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,
“” তোল আব্বু বেঁচে আছে। উনাকে বেঁচে থাকতেই হবে। আমাল জন্য আল তোল জন্য।””
“” না নেই।””
“” আমি বলছিতো আছে।””
“” তাহলে তোমার চিঠির উত্তর আসেনা কেন? বলো কেন আসেনা??””
“” আসবে দেখিস একদিন ঠিক আসবে। চিঠিল উত্তল হিসেবে উনি স্বয়ং হাজিল হবেন।””
“” কিছু আসবেনা। তুমি মিথ্যে আশায় পড়ে আছো।””
“” লাত!””
মায়ের চোখের অশ্রু রাতের ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। তিয়ামতীর পায়ের কাছে গাটু গেড়ে বসে বললো,,
“” আম্মু,প্লিজ তুমি উনার জন্য আর এক ফোটাও চোখেরজল ফেলবেনা। আমি সয়তে পারিনা!””
তিয়ামতী ছেলের মাথায় হাত রাখতে গিয়েও থমকে গেলো। চোখের পানি মুছে নিয়ে উল্টো হয়ে ঘুরে দাড়ালো।
“” আমি এখন ঘুমোবো!””
বিছানা ঠিকঠাক করে তিয়ামতীকে শুয়িয়ে দিয়ে কম্বলটা টেনে দিলো রাত।
“” সরি আম্মু!””
তিয়ামতী পাশ ফিরে বললো,,
“” যাল জন্য তোকে পেয়েছি,তাল ভালোবাসায় আমি অশ্রুলফোটা কেন,লক্ত ফোটা ফেলতেও দ্বিধা কলবোনা।””
“”তাহলে তার খোজে যাচ্ছোনা কেন? আমাকেও তো যেতে দিচ্ছোনা।””
“”” আমি তাকে কথা দিয়েছি সে না চাইলে তাল সামনে গিয়ে কেউ দালাবে না!””
রাত অভিমান নিয়ে চলে আসতে নিলে তিয়ামতী পেছন থেকে বললো,,
“” সন্ধ্যাকে লাগিয়েছিস কেন? না খেয়েই ঘুমিয়ে পলেছে মেয়েটা!””
~~
প্লেটভর্তি ভাত নিয়ে সন্ধ্যার রুমে ঢুকে পড়লো রাত। রুমের লাইটটা জ্বালাতে গিয়ে থমকে গিয়েছে। ধীর পায়ে সন্ধ্যার কাছে মাথার পাশটায় বসলো।
সোজা হয়ে শুয়ে থাকলেও হাত-পা সব আঁকাবাকা হয়ে আছে। পা একটা একটু ভাজ তো অন্য পা মেলে রেখেছে। হাত একটা বালিশের নিচে তো আরেকহাত কাধটা ছুয়ে আছে। পা দুটো পাশাপাশি সমানতালে রেখে হাতদুটো পেটের উপর রাখতে গিয়ে কিছু সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলো রাত। আকাশী রঙের জামাটা পেটের দিক থেকে কিছুটা সরে আছে। গভীর অন্ধকারের নীল ড্রিম আলোতে জামার রঙটা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলেও পেটের রঙটা যেন আরো বেশি ভেসে উঠেছে! জামাটা টেনে ঠিক করে দিয়ে সন্ধ্যার হাতদুটো পেটে রেখে বিড়বিড় করে বললো,,আমার বেখেয়ালি,তুই কবে খেয়ালি হবি??
সন্ধ্যাকে ঠিকঠাক করে লাইটটা জ্বালিয়ে এসে ওকে ডাকতে গিয়েও আবার থেমে গেলো। সন্ধ্যার মুখপানে চেয়ে আছে গভীর মনোরন্জনায়! চুলগুলো চিকন রাবারব্যান্ডে বাধা থাকলেও চারপাশ থেকে খুলে গিয়ে পাখির বাসার মতো হয়ে আছে। ছোট কপালের নিচেই গভীর কালো ব্রুযুগলের মধ্যভাগে বেয়ে আছে সরু নাকের ভারী পাতা,ভাসাভাসা চোখদুটো এখন আর ভাসা বুঝা যাচ্ছেনা। ফর্সা গালের গোলগাল মুখটিতে চিকন ঠোঁটের কোনেই কালো ছোট্ট তিল। তিলের দিকে চোখ পড়তেই রাতের মনে হলো তিলটা আগের থেকে বড় হয়ে গেছে। সত্যিই কি তাই?
রাত সন্ধ্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,
“” স্বপ্নবধু,তুমি কি জানো,,আমার স্বপ্নে তুমি বধু সাজে আমাকে পাগল করে দিয়েছিলে? সেই পাগলামিতেই তোমার বড় হওয়ার ভাজে ভাজে আমি মাতোয়ারা হয়ে ভাসছি তার থেকেও বেশি উথালপাথাল হয়ে যাবো তোমার বাস্তব বধু সাজে?? তখন আমাকে সামলানোর দায়িত্বটা কিন্তু তোমারই!””
সন্ধ্যা একটু নড়ে উঠতেই রাত নিজেকে সামলে নিয়ে আদুরী কন্ঠে ডেকে উঠলো,,
“” সন্ধ্যা? জলদি উঠে বস।””
সন্ধ্যা চোখ মেলে রাতকে দেখে নিয়ে উল্টোদিকে ঘুরে বললো,,
“” তোমার সাথে কথা নাই।””
“” কথা বলতে বললাম কখন? খেতে বলেছি।””
“” যার সাথে কথা নাই তার কথাতে আমি খাবো কেন?””
“” সত্যি খাবিনা?””
“” না।””
রাত প্লেটে ভাত মেখে নিয়ে বললো,,
“” তা কথা নাই কেন? এতো জলদি তোর কথা ফুরিয়ে গিয়েছে?””
সন্ধ্যা শুয়ে শুয়ে কথা বলে আরামবোধ না পেয়ে উঠে বসলো। ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বললো,,
“” তুমি আমাকে বিজয়ী হতে দাওনি। তুমি শুধু আমার না সব মেয়েজাতিকে অপমান করেছো।””
“” ওমা আমি কখন অপমান করলাম?””
“” তাহলে কি করেছো?? যুদ্ধের ময়দানে আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছো। আমাকে ছয় কাপড় খুলতে দাওনি!””
রাত ভাতের দলা পাকিয়ে সন্ধ্যার মুখের সামনে ধরে বললো,,
“” আমি মোটেও অপমান করিনি। তুই ভুল সময়ে যুদ্ধে নেমেছিলি। মনে আছে ঐদিন তুই আমাকে কি বলেছিলি?””
সন্ধ্যা মুখের সামনে ধরে রাখা ভাতের দলাটা সরিয়ে বললো,,
“” কি?””
“” বলেছিলি বিয়ের পর ছেলেরা মেয়েদের পাঁচ কাপড় খুলে। তাহলে তুই বিয়ে না করেই যদি ছয় কাপড় খুলিস তাহলে কি হবে?? বিজয়ী হতে হলে তোকে সব রুলস ফলো করতে হবে। মানে তোকে আগে বিয়ে করতে হবে।””
সন্ধ্যা রাতের হাত টেনে ভাত মুখে পুরে খেতে খেতে বললো,,
“” সত্যিইতো। আমি তো রুলস ভঙ্গ করতে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস তুমি মনে করে দিলে। কিন্তু এখন আমি কাকে বিয়ে করবো?””
রাত দ্বিতীয় বারের মতো ওর মুখের সামনে ভাত ধরে বললো,,
“” কাউকেনা।””
সন্ধ্যাও ভাতটা সরিয়ে বললো,,
“” কেন?””
“” কারন তুই এখন পিচ্চি মেয়ে। আর পিচ্চি মেয়েকে কোনো ছেলেই বিয়ে করবেনা।””
সন্ধ্যা আবার রাতের হাত টেনে মুখে ভাত পুরে বললো,,
“” তাহলে তুমি করবে।””
রাত ভাতের প্লেটটা রেখে বললো,,
“” তোর কি আমাকে ছেলে মনে হয়না?””
“” সেটা কখন বললাম?””
“” তাহলে কোনো ছেলের মাঝে কি আমি পড়িনা?””
সন্ধ্যা ভাতের প্লেটটা রাতের হাতে তুলে দিয়ে বললো,,
“” তুমি সবার মাঝে কেন পড়বে? তুমি তো আমার রাত ভাইয়া। তুমি আমাকে কত ভালোবাসো। এই যে আমাকে খায়িয়ে দিচ্ছো,অন্যরা তো দিচ্ছেনা। তাই তুমি আলাদা। আলাদা বলেই তো তুমি বিয়ে করতে পারবে। আমরা এখনি বিয়ে করবো। তারপর ছয় কাপড় খুলে আমি বিদ্রোহী নারী হবো!””
রাত ভাতের প্লেট নিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,,
“” আমি কোনো পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করতে পারবোনা।””
“” কেন?””
“” তোর জন্য কি আমি বাল্য বিয়ে করে জেলখানায় পচে মরবো?””
সন্ধ্যা অসহায় মুখ করে বললো,,
“” তাহলে আমি কাকে বিয়ে করবো?””
“” আগে তো আঠারোতে পা দে। তারপর ভাবিস।””
“” তখন ভেবে আমি সময় নষ্ট করতে পারবোনা। আমার আঠারো হলেই তুমি আমাকে সাথে সাথে বিয়ে করে নিবে।””
“” সামান্য ভাবতে গেলেও তোর সময় নষ্ট হয়ে যাবে?””
“” হুম।””
“” তোর সময় এতো দামী?”
“” হুম!””
রাত সন্ধ্যার দিকে পানি বাড়িয়ে ধরলো।
“” পানি খাবোনা।””
“” পানি আবার কি অপরাধ করলো?””
“” তুমি আগে আমাকে প্রমিস করো,আমার বিয়ে হওয়ার পর তুমি আমাকে ছয় কাপড় খুলতে দিবে।””
“” ওকে।””
“” এভাবে বললে হবেনা।””
“” তাহলে?””
সন্ধ্যা দৌড়ে নিজের টেবিলে গিয়ে একটা খাতা নিয়ে কি সব লিখে এসে বললো,,
“” এখানে সাইন করো!””
রাত কাগজটা নিয়ে দু লাইনের লিখা পড়তে লাগলো,,
**আমি কথা দিলাম সন্ধ্যাকে বিয়ে করার পর ওকে ছয় কাপড় খুলতে দিয়ে ওকে বিদ্রোহীনারীতে গড়ে উঠার সুযোগ করে দিবো**
“” এটাতে সাইন করলে কি হবে?””
“” তুমি যদি আমাকে ছয় কাপড় খুলতে না দাও তাহলে আমি তোমার নামে মামলা করবো।””
রাত চোখদুটে বড়বড় করে বললো,,
“” তুই আমার নামে মামলা করবি?””
“” হুম। সাইন করোনা। আমার গলায় ভাত আটকে আছে। পানি খাবো।””
“” আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস?””
“” হুম।””
রাত সাইন করে ওর হাতে কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,,
“”যত্ন করে তুলে রাখিস। তোর কাজে না আসলেও আমার আসতে পারে!””
~~
সময়ের তালে তাল মিলিয়ে সন্ধ্যা বড় হয়ে উঠছে। আর তার চঞ্চলতার কৌতুহলগুলোকে কমাতে রাত নানা চিন্তায় বিভোর। সন্ধ্যার জন্য ৪ টা প্রাইভেট টিউটর রেখেছে। দরকার হলে আরো রাখবে। এই মুহুর্তে ওর মাথায় নতুন নতুন আজগুবি চিন্তা-ভাবনাকে দমাতে হলে ওকে ব্যস্ত রাখাটাকেই বেশি প্রশ্রয় দিচ্ছে রাত। সেফটি হিসেবে সবগুলো টিউটরই মেয়ে হিসেবে রেখেছে।
প্রাইভেটের পড়া,ক্লাসের পড়া,কোচিংয়ের পড়া,এ পরিক্ষা-সে পরীক্ষা আবার সামনেই টেস্ট শুরু হওয়াতে বেশ ব্যস্ত আর ক্লান্ত সময় কাটাচ্ছিল সন্ধ্যা। এতে যেন রাতের ভেতরে অজানা ভয়ের আশংকা কমে আসছিলো। ঠিক এ সময়েই হঠাৎ সন্ধ্যা বই খাতা নিয়ে হাজির। চুপচাপ রাতের পাশে চেয়ার টেনে অংক কষতে শুরু করে দিয়েছে।
রাত কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলেও করছেনা। ভেতরে ভয়েরা এক দফা নাচানাচি শুরু করে দ্বিতীয় দফাতে শুরু করবে। না জানি আজ কি ইচ্ছে নিয়ে হাজির হয়েছে। দেখতে দেখতে এক ঘন্টা পার হয়ে দ্বিতীয় ঘন্টার জানান দিচ্ছে ঘড়ির কাঁটা কিন্তু তখনো সন্ধ্যা অংক কষেই যাচ্ছে। এতে রাতও একটু সস্তি পেলো। তাহলে কি মেয়েটা এবার সত্যি বড় হচ্ছে? হবেনা কেন? কয়েক মাস পরেই যে এসএসসি দিবে!
সন্ধ্যা চুপচাপ দুঘন্টা অংক কষে নিয়ে রাতের সামনে খাতাটা দিয়ে বললো,,
“” রাত ভাইয়া,দেখোতো সব ঠিক আছে নাকি?””
রাত গভীর পর্যবেক্ষনে কলম খুচিয়ে দেখায় যেইনা ডুব দিয়েছে তখনি সন্ধ্যা বলে উঠলো,,
“” তুমি কি সিগারেট খাও?””
রাত নিজের মনোযোগ খাতাতে রেখেই ছোট্ট করে বললো,,
“” না।””
“” তাহলে আমি সিগারেট কোথায় পাবো?””
এবার রাতের টনক নড়ে উঠলো। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“” তুই সিগারেট দিয়ে কি করবি?””
“” দরকার আছে। তুমি আমাকে এনে দাও!””
“” তোর কি এখন আমাকে সিগারেটের ধোয়া খাওয়ানোর ইচ্ছে জেগেছে নাকি?””
“” তোমাকে খাওয়াবো কেন? আমি ছেকা খাইছি। আমি খাবো!””
চলবে