ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (১৪)
রোকসানা_রাহমান
রাত আবার হাঁটা ধরলে সন্ধ্যাও আবার পিছু নিয়েছে। ওর আকুতি শোনার সময়টুকুও যেন রাতের নেই। রাত ক্লিনিক থেকে বেড়িয়ে উল্টো হয়ে দাড়াতেই সন্ধ্যার সাথে ধাক্কা খেলো।
“” আমার পিছু পিছু না ঘুরে তোর চুমুপ্রেমীর সাথে বিয়ের প্ল্যান কর,আর শ্বাশুড়ির সেবাযত্ন কর।কাজে লাগবে।””
~~
নাকে ঘামের বদলে বিরক্ত লেগে রয়েছে রিমার। আজ রিনাটা আসেনি। একা একা সে কতটা সামলাবে?? রান্নাঘরের চুলার আঁচে শরীর ভিজে গিয়েছে তার। তরকারির তীব্র ঝাঝালো গন্ধ তার একদম সহ্য হয়না,গন্ধ নাকে বাড়ি খেলেই লাগাতার হাঁচি শুরু হয়ে যায়। অথচ তাকেই রান্নার দায়ভারটা সামলাতে হয়। নাকের সামনে শাড়ীর আঁচলটা চেপে নিয়ে মশলা কষাচ্ছেন আর নানা ত্যক্তকথা আউড়াচ্ছিলেন রিমা। কিন্তু সুতি কাপড়ের সরু সুতার ফাঁক দিয়ে গন্ধ নাকে বাড়ি ঠিকই লাগছে। হয়তো অতোটা তীব্র নয়,তবুও সে আর হাঁচি আটকিয়ে রাখতে পারলোনা। কাঁপুনি দিয়ে হাঁচি দেওয়া শুরু হয়ে গেলো। পাশ থেকে তিয়ামতী নাড়ুনীটা নিয়ে মশলায় নাড়া দিতে দিতে বললো,,
“” তুই যা,আমি বাকিটা করে নিচ্ছি।””
রিমা শক্ত চাহনিতে তাকালেও কিছু বলে উঠতে পারেনি,পরপর দু/তিনটে হাঁচির দান শেষ করে মশলার মতো ঝাঝ নিয়েই বললেন,,
“” তুই আবার রান্নাঘরে এসেছিস? আমার কথা শুনতে তোর ভালো লাগেনা?? কি ভেবেছিস,সব দায়িত্ব আমার কাঁধে দিয়ে ভাইয়ার মতো পালিয়ে যাবি?””
রিমা ঝাড়ির সাথে সাথে তিয়ামতীর হাত থেকে নাড়ুনিটা ছো মেরে নিয়ে নিলেন।
“” আর কত দায়িত্বের বোঝা আমার উপর দিবি বল তো? আমি যে নুয়ে পড়ছি সে খেয়াল কি তোদের নেই?””
তিয়ামতী রিমার দিকে শান্তদৃষ্টিতে চেয়ে মুচকি হাসছে। দুটো ভাইবোন এমন কেন? ভালোবাসাগুলো সবসময় ঝাঝালো জিনিসের পেছনেই রাখে। একটু সামনে রাখলে কি খুব খারাপ হবে??
কষানো মশলাতে সবজি ঢেলে দিয়ে ঢাকনা ঢেকে বললো,,
“” এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন? আবার হাঁসছিসও। সমস্যা কি তোর? আমাকে দেখে তোর হাঁসি পাচ্ছে?? আমি কি রঙ মেখে সঙ সেজে আছি? তোকে সার্কাস দেখাচ্ছি?””
তিয়ামতী ওর কথার বিপরীতে রিমাকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,
“” তোরা আমাকে এতো ভালোবাসিস কেন বলতো?””
“” এখানে ভালোবাসা কোথা থেকে আসলো?””
“” আমার না মাঝে মাঝে তোকে জড়িয়ে ঘুমাতে ইচ্ছে করে। সেই যে ৮ বছর আগে আম্মুকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিলাম তারপর তো আর এ সুখটা পাওয়া হয়নি। ইদানিং আমার বাচ্চাদের মতো ইচ্ছে জাগে। এই যেমন এখন তোকে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।””
তিয়ামতী নিজের ইচ্ছে পেশ করার সাথে সাথে রিমার গালে চুমু খেয়ে আবার ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে রিমার। মেয়েটা স্বামীসুখটাও পেলোনা! আমার বান্ধবীটাই কেন এমন অভাগী হয়ে জন্মালো?? ওর কপালে একটু কি স্বামীসুখের ফোঁটা পড়েনি?? পড়লে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো?? কেন এমনটা হলো? আজ ভাইয়া থাকলে দিনগুলো অন্যরকম হতো!
চোখের কোনের পানিটা চোখেই শুকিয়ে নিলেন রিমা। ধরা গলাটা স্বাভাবিক করে বললেন,,
“” এমনি গরমে মরি মরি অবস্থা,আর তুই জড়াজড়ি শুরু করে দিয়েছিস। ছাড় তো আমাকে।””
তিয়ামতীকে জোর করে নিজ থেকে ছাড়িয়ে ওর কপালে হাত দিলো,,
“” জ্বরটা তো মনে হয় তুরতুর করে বাড়ছে। রাত কি জানে?””
“”জেনে কি হবে শুনি? ঐ তো গাদাগাদা ঔষধ ধরিয়ে দিবে। আর কত ঔষধ খাবো বল তো। আমার তো মনে হচ্ছে পুরো বিশ্বের সকল ঔষধ আমার পেটে জমে,পঁচে গলছে!””
“” তুই কি চাচ্ছিস,এই বয়সে আমার হাতে থাপ্পড় খেতে?””
তিয়ামতী নাক উচিয়ে বললো,,
“” যেমন ভাই তার তেমনি বোন। শুধু বকেই গেলো,জোর দেখিয়েই গেলো,একটু ভালোবাসলোনা!””
“” ভালোবাসার মতো কাজ করিস নাকি যে ভালোবাসবো?””
রিমা তরকারীতে ঝোল দিয়ে তিয়ামতীর দিকে এগুলো। ওকে নিয়ে সোজা ওর রুমের দিকে এগুচ্ছে।
~~
দুপুরের খাবার শেষ করে সবেই শুয়েছিলো তিয়ামতী। চোখে তার ঘুম নেই কিন্তু ঘুমেরা তাকে বড্ড জ্বালাতন করছে,চোখের পাতা ভারী করে রেখেছে অথচ পাতা বন্ধ করলে নাই। আজকাল ঘুমেরাও তার সাথে লুকোচুড়ি খেলে। তিয়ামতী চোখটা বন্ধ করে ভাবনা দুয়ারে পা ফেলবে তখনি সন্ধ্যার আগমন। বিছানার উপর ধপাস করে বসে পড়লো। তিয়ামতীর মুখের কাছে বসে শাসিয়ে বললো,,
“”তোমার ছেলেকে তুমি কিছু বলবে নাকি আমি সরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলবো?””
“” কিসের সরবত বানাবি রে?””
সন্ধ্যার শাসানিসুর মিলে গিয়ে অভিমান বাসা বেধেছে,,
“” মামি!””
“” শুনছি বল।””
“”আমি একটা গুরুতর কথা নিয়ে এসেছি আর তুমি শোয়া থেকে উঠলেও না?””
“” রাতের নামে নালিশ দিতে এসেছিস তো? একজনের নামে আর কত নালিশ দিবি বল তো? আমি তো বিরক্ত হয়ে পড়েছি,তুই হচ্ছিস না?””
“” হতে দিলে তো হবো। তোমার ছেলে কি আমাকে একটু শান্তি দেয়?? উফ!””
তিয়ামতী এবার শোয়া থেকে আধশোয়া হলেন।
“” এবার কি হয়েছে বল তো।””
“”তোমার ছেলে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। আমাকে বিয়ে দিবে।””
“” কার সাথে?””
“” মনে হচ্ছে তুমি বেশ খুশি?””
“” তাই বললাম নাকি?””
“” তাহলে কার সাথে বিয়ে সেটা জেনে তোমার কি কাজ? তুমি তোমার ছেলেকে কিছু বলবে নাকি তাই বলো।””
“” এভাবে কিভাবে বলবো? আগে তো আমায় সবটা জানতে হবে তাইনা?””
সন্ধ্যা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিয়ামতীকে সবটা খুলে বলছে। তিয়ামতীও বেশ মনোযোগী ভঙ্গিমায় শুনে যাচ্ছে,সাথে তাল দিয়ে মাথাটা ডানে-বায়ে,উপর-নিচ করছে। মাঝে মাঝে কপালে ভাজ ফেলে,ভ্রু সংকুচিত করে ভাবও প্রকাশ করছে।
তিয়ামতী সবটা শোনার পর আগের ন্যায় শুয়ে পড়ে বললো,,
“” যাওয়ার পথে জানালার পর্দাটা নামিয়ে দিয়ে যাস তো,আজকে রোদের তাপটা বেশিই তীব্র!””
সন্ধ্যা বসা থেকে উঠে দাড়ালো। নাক ফুলিয়ে বললো,,
“” আমি কি তোমাকে রুপকথার গল্প শোনালাম যে তুমি ঘুমাতে যাচ্ছো?””
“” আমার তো তাই মনে হলো।””
“” মামি! বুঝছি তোমরা আমাকে কেউ ভালোবাসোনা। থাকবোনা আর এ বাসায়। যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই চলে যাবো।””
সন্ধ্যা অভিমান নিয়ে বের হতে চাইলে ওকে জোর করে নিজের পাশে বসিয়ে দিয়েছেন তিয়ামতী। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,
“” আমার পাগলাটাকে এতো ক্ষেপাস কেন বল তো? হয় তো সে তোর সামনে কঠিনভাবে কখনো আসেনি কিন্তু তোর তো অজানা নয় তাও এমন করিস? দেখিস লাগাম ছেড়ে যখন টগবগিয়ে উঠবে তখন কপাল চাপড়িয়ে মরবি!””
“” তাহলে আমি যা চাই সে তা দেয়না কেন?””
“” তুই কি তাকে দিয়েছিস? এভাবে চললে তো দেখা যাবে দুজন দুপথের বাসিন্দা হয়ে যাবি। তুই তো জানিস রাত তোকে কত ভালোবাসে তাও কেন ওকে এভাবে জ্বালাচ্ছিস? এবার তো বন্ধ কর!””
“” করবোনা। তোমার ছেলে যদি রিদ মামার ছেলে হয়,আমিও রিদ মামার ভাগ্নি। তার জেদ থাকলে আমারও আছে। দেখি কার জিত হয়।””
সন্ধ্যার কথায় তিয়ামতী হতবিহ্বল। সন্ধ্যা ভালোবাসার বাধন ছেড়ে উঠে পড়লে তিয়ামতী বলে উঠলো,,
“” অতি জেদ ভালোনা,হিতে বিপরীত হয়ে গেলে সামলাতে পারবিতো?””
সন্ধ্যা থমকে গেলেও আবার পা চালিয়েছে। দরজার কাছটাতে গিয়ে বললো,,
“”তোমার ছেলেকে সাবধান করে দিয়ো। ফের যদি আমার সামনে বিয়ের কথা পারতে আসে,আমি কিন্তু গলা টিপে দিবো। আর হ্যা,আমি যা চাই তা না নিয়ে তোমার ছেলের চাওয়া আমি দিবোনা। এখন সে যতই ছলছাতুরী করুকনা কেন। এই বিয়েও হবেনা আর তোমার ছেলে জিততেও পারবেনা। আগে আমার পাওনা চাই।””
“” এমনটা করা কি ঠিক হচ্ছে?? তোর কি মনে হচ্ছেনা বেশি বেশি করছিস?””
সন্ধ্যা এবার তিয়ামতীর দিকে ঘুরে দাড়ালো। দরজা ছেড়ে ওর কাছে এসে কাঠ গলায় বললো,,
“” তোমার ছেলে করতে পারলে আমিও পারি।””
“” আরে বাবা ও তো তোর কথা ভেবেই…””
“” আমি বলেছি ভাবতে? সেই ছোট্টবেলা থেকে দেখে আসছি,তোমার ছেলে আমার জীবনের অতি ক্ষুদ্র পদক্ষেপের সিদ্ধান্তটাও সে নেয়। আমি কোথায় থাকবো,কিভাবে থাকবো,কোন পথে পা চালাবো,কোন জামাটা পড়বো,কোন খাবারটা খাবো,সব! সবটা তার মতে চলে আসছে। মামি,সে কেন এমন করছে এতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই,তার ইচ্ছে হলে আমি ছোট্টরুমে বন্দী থাকতেও প্রস্তুত,কিন্তু সেটা তার আমাকে বলতে হবে। অন্য কারো দ্বারা নয়। তোমার ছেলে কেন আমাকে এসে বলেনা,সন্ধ্যা তুই এমনটা করবিনা,ওমনটা করবিনা,তোকে গার্লস কলেজেই পড়তে হবে,কোনো ছেলের সাথে কথা বলবিনা। এমনটা কেন বলেনা?? কেন আব্বুর মাধ্যমে,আম্মুর মাধ্যমে নাহয় তোমার মাধ্যমে জানতে হয়?? তোমাদের হুকুম ভেবে পালন করতে হয়?? আমি তো তার হুকুম মানতে চাই। সে এটা কেন বুঝেনা?? কেন কেন কেন?””
তিয়ামতী একটু ভাব নিয়ে বললেন,,,
“” এবার তো বলেছে তাইনা? যা বিয়েটা করে ফেল,তোর ইচ্ছেও পুরন হবে আর রাতেরও!””
সন্ধ্যা চোখগুলো ছোটছোট করে রাগ রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে তিয়ামতীর দিকে। কিন্তু রাগটা পড়ার আগেই সেখানে আদ্রমায়া জায়গা করে নিয়েছে,,,
“” মামি,তোমার গলাটা এমন ফুলো ফুলো লাগছে কেন? দেখি দেখি!””
সন্ধ্যা হাত বাড়িয়ে দেখতে গেলে তিয়ামতী আটকিয়ে বললো,,
“” আরে বেহারে শুলে ঐ একটুআধটু হয়।””
তিয়ামতীর অযুহাত গায়ে মাখেনি সন্ধ্যার। দ্রুত গলায় নরম কাপড় পেচিয়ে দিতে দিতে বললো,,
“” মামি,আমি তোমার সেবা করতে চাই। অন্যকারোনা। তোমার ছেলেটাকে একটু বুঝাবে প্লিজ? নাহলে আমি কি থেকে কি করে বসবো,আমি নিজেও জানিনা। তাকে ছাড়া তো আমার দুনিয়া শুন্য!””
তিয়ামতী সন্ধ্যার গালে হাত রেখে বললো,,
“”তোদের দুটোর পাগলামি দেখলে আমার শুধু হাঁসি পায়। তুই ক্ষেপিয়েছিস,তুই শান্ত কর। লাগামটা ঠিকমতো ধরে রাখিস।””
~~
ফ্যানের ঠিক মাঝ বরাবর বিছানাতে আরাম আসনে বসে আছে রাত। কোলে ল্যাপটপ,চোখে অনুসন্ধান আর হাতের আঙুলের পায়চারী। এমন মনোবিক্ষণ হয়ে কি দেখছে?? দরজায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাই ভাবছিলো সন্ধ্যা।
“” তোর বরের জন্য রিং সিলেক্ট করছি। কোনটা চায় তোর? হিরা নাকি সোনা?””
রাতের এমন দ্রুত বয়ে যাওয়া প্রশ্নে সন্ধ্যা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এলো। অন্যমনস্কটা ছাড়িয়ে ধপধপ পা ফেলে রাতের দিকে তেড়ে এসে বললো,,
“” তোমাকে বলেছিনা আমি বিয়ে করবোনা?””
রাত সন্ধ্যার কথা হাওয়াই উড়িয়ে দিয়েছে এমন ভাব করে নিজের ল্যপটপটাতে মনোযেগি হলো। এটাওটা টিপে সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে ধরলো,,
“” দেখ এই পেজটার কালেকশান বেশ ভালো,এক্সক্লুসিভ। আমি ভেবেছি তোদের দুজনের রিং আমার পক্ষ থেকে গিফট হবে। অনলাইনেই অর্ডার করবো। এদের ডেলিভারি রেটিংও বেশ চাঙ্গা। কোনটা পছন্দ জলদি বল।””
সন্ধ্যা রাতের হাত থাকে ল্যাপটপটা কেড়ে নিতে যাবে তা বুঝতে পেরে চট করে সরিয়ে নিলো,রাত। এতে যেন সন্ধ্যার রাগ তরতর করে বেড়ে গিয়ে মাথার তালু ফুটো হয়ে যাওয়া অবস্থা। ইচ্ছে হচ্ছে ল্যাপটপকে নয় রাত ভাইয়াকে তুলে একটা আছাড় মারতে,এই গাম্বুসটাকে তো একটা মারলে হবেনা,অনেকগুলো মারতে হবে,কম করে হলেও শতাধিক।
রাত ল্যাপটপটা অন্যপাশে রেখে বললো,,
“” কি করতে যাচ্ছিলি এটা? আমি পুরো দুঘন্টা ধরে এই দুটো আংটি খুজে বের করেছি। আমার এতো পরিশ্রম তুই এভাবে মাটিতে আছাড় মারতে চাইছিলি?””
সন্ধ্যা আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলোনা, সোজা রাতের আরাম আসনের উপর নিজেই ল্যাপটপের ন্যায় বসে পড়েছে। রাতের ছোটছোট ঝাকড়া চুল মুঠিতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। রাগে ফেটে পড়ে চুল টানতে টানতে বিলাপ করে যাচ্ছে,,
“” আমি বিয়ে করবোনা করবোনা করবোনা করবোনা।””
“” সন্ধ্যা,ছাড় আমাকে। এইরে,আমার সব চুল আজ মরণদেশে পা ফেলবে নাকি? তখন তো আমি টাকলু বনে যাবো। ছাড় না,লাগছে খুব!””
সন্ধ্যা চোখের সাথে সাথে যেন কানের পর্দাও বন্ধ করে নিয়েছে। রাতের আর্তনাদ তার কর্ণদ্বয়ে পৌছাচ্ছেনা৷ সে তার কাজ আরো সুক্ষ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে সন্ধ্যার হাত নিজের হাতের মুঠোয়পুরে নিলো রাত। বেশ শক্তিপ্রয়োগে দখলে এনে ওর পিঠে ঘুরিয়ে নিয়েছে। দুহাত একে অপরের উপরে পড়ে আছে রাতের হাতের শক্ত বাধনের চাপে। সন্ধ্যা তখনো চোখ বন্ধ করে আছে। বন্ধাবস্থায়ও চোখের পাতা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভেতরের মনিগুলো হয়তো অস্থির হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত রাগের ফলে নিশ্বাসটাও কেমন গরম হয়ে উঠেছে। রাত মন্ত্রমুগ্ধের মতো সন্ধ্যার বদনখানি দৃষ্টিপাত করছে। আমাকে অনেক জ্বালিয়েছিস,এবার নিজে একটু জ্বলে নে। তারপর দুজন একসাথে জ্বলবো,আদরের দহনে। রাত নিজের অন্তর্কন্ঠে কথা শেষ করে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বললো,,
“” ছি! ছি!!ছি!!! সন্ধ্যা এভাবে পরপুরুষের কোলে চড়ে আছিস?? সায়নের তো কপাল পুড়বে মনে হচ্ছে। এভাবে যারতার কোলে বসে পড়লে তো সর্বনাশ!
সন্ধ্যা তাৎক্ষনিক চোখ খুলে বললো,,
“” তুমি পরপুরুষ?””
“” পরপুরুষ নই?””
“” না।””
“” তাহলে কি?””
“” তুমি তো আমার ভালো..””
সন্ধ্যা ঠোঁটদুটোকে বৃত্তের মতো গোল করেই আটকে গিয়েছে। রাত উৎকন্ঠে বললো,,
“” ভালো কি?””
সন্ধ্যা নিজের হাতের বাধন খুলার জন্য ছটফট করতে করতে বললো,,
“” ভালো ভাইয়া! ছাড়ো আমি ঘুমোতে যাবো।””
সন্ধ্যার কথার প্রেক্ষিতে রাত বাধ্যছেলের মতো হাত ছেড়ে দিয়েছে। সেও রাতের কোল থেকে নেমে রাতের রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
সন্ধ্যার চলে যাওয়ার পথে চেয়ে আছে রাত। ভেবেছিলাম ভালোবাসা নয় কবুল শুনবো। কিন্তু তুই মনে হয় তা চাস না। তাহলে যেটা চাস সেটাই হোক,আমি আবার সেই পুরনো চাওয়াতেই ফিরে গেলাম,আমার এখন ভালোবাসা চাই,তারপর কবুল!
~~
বিয়ের টেনশনে সারারাত ঘুম হয়নি সন্ধ্যার। বিয়েটা কিভাবে ভেস্তে দিবে তার ছককাটায় ব্যস্ত ছিলো। কিন্তু তার ছকে তো লাল বাতি,সবুজ বাতি পড়েনি। এখন কি হবে? কিভাবে আটকাবে সে এই বিয়ে?? রাতের কাছে নিজের সব কুকীর্তির গল্প বিনষ্ট করে নিজের মনের কথা জানানো ছাড়া আর কোনো উপায় মেলেনি সন্ধ্যার। কিন্তু এইভাবে হেরে যাবে এটাও যেন মেনে নিতে পারছেনা। করবেটা কি??
সন্ধ্যা সারাটারাত বিছানায় ছটফট করে শুয়ে থাকলেও ভোর হওয়ার পর আর পারছেনা। সকালের মিষ্টি আলোর রোদটা যতটা কড়া হচ্ছে তার বুকের ভেতরটায় ততটাই তোলপাড় শুরু হয়ে যাচ্ছে। করবেটা কি?? বিছানা ছেড়ে খালিরুমে পায়চারী শুরু করে দিয়েছে। কয়েকবার এপার থেকে ওপারে হাঁটাচলা করতেই রুমে কারো আসার প্রতিধ্বনি পাচ্ছে। সন্ধ্যা দৌড়ে বিছানায় উঠে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। চোখদুটো গভীরভাবে বন্ধ করে কানখাড়া করে আছে।
“” কিরে,এখনো বিছানা ছাড়িসনি? তোর চুমুপ্রেমীতো এসে পড়েছে।””
রাতের কন্ঠে সন্ধ্যা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে,তবে এখন সে ঝাঝটা দেখাবেনা। তাই ঝাঝটা নিজের মাঝে আটকে নিয়েই চোখ টিপে বন্ধ করে শক্ত হয়ে শুয়ে রইলো।
রাত সন্ধ্যার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,
“” আজকের অভিনয়টা অনেক বেশিই কাঁচা। উঠবি নাকি আমি কোলে তুলে সায়নের কোলে বসিয়ে দিয়ে আসবো?””
সন্ধ্যা চট করে উঠে পড়লো। রাত মুচকি মুচকি হাঁসছে। সন্ধ্যা সেদিকে তাকিয়ে ভাবছে,
*যার বিয়ে তার খবর নাই,পাড়া পড়শির ঘুম নাই এবং উঠ ছেরি তোর বিয়ে* এই দুটো প্রবাদবাক্য যেন একমাত্র তার জন্যই গুনীজনরা আউড়িয়ে ছিলেন!
চলবে