ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (২২)
রোকসানা রাহমান
আমার আম্মুর স্বামী,কেমন আছেন? নিশ্চয় খুব ভালো আছেন? থাকবেননা কেন আপনার সব দায়িত্বতো আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আপনার বউ মানে আমার মা সে তো আমার কথা শুনছেনা। তাহলে আমি কি করে আমার দায়িত্ব পালন করবো বলুন তো?? আমি আর আপনার বউকে সামলাতে পারছিনা। আপনার যদি আমার উপর একটুও মায়া হয় তাহলে আমাকে এই দায়িত্ব থেকে মুক্তি দিন।
ইতি
আপনার বউয়ের নিরুপায় ছেলে
রাত চিঠিতে কয়েকদলা দীর্ঘশ্বাসসহ প্যাকেটবন্দী করলো। চেয়ারছেড়ে উঠছেনা। চেয়ারে পিঠ ঠেলে আলসেমিতে বসে আছে। চোখ বন্ধ করে বড় একটা দম টান দিতেই বুকটা উচু হয়ে নিচুতে গেলো। অসস্থিতে পুরো শরীরে অবশের উপস্থিতি। সে ও কি বাচ্চামীতে নাম লিখিয়েছে?? কাকে লিখছে আর কেন লিখছে?? কোন উদ্দেশ্যে লিখেছে?? আসলেই কি তা সম্ভব?? সম্ভব হলে তা এতোদিন চুপ করে পড়ে থাকার কথা না। মা-বাবার গল্প সে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আয়ত্ব করেছে। পাগলামীতে কারো থেকে তো কেউ কম নয় তাহলে??
রাত চট করে টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়িয়েছে। চিঠিটা হাতে নিয়ে মায়ের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। মাঝে মাঝে চিন্তা-ভাবনাগুলোকে আবেগে ভাসিয়ে দিলে খুব একটা ক্ষতি হয়না বরং ভালোই হয়। মনটা ক্ষনিকের জন্য হলেও আশার আলোতে গোসল করে নিতে পারে।
মায়ের রুমের দরজাটা খোলা,হালকা ভিড়িয়ে দেওয়া। দরজার সরু ফাঁক দিয়ে রুমের সবুজ আলোকরশ্মি ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। অনেকটা যাদুদরজার মতো লাগছে। তথাকথিত গুপ্তধনের সন্ধানী দরজা। এই গুপ্তদরজার পেছনে যে তার দুটো গুপ্তধন রয়েছে। রাত ঠোঁট টেনে হাঁসির রেখা ফুটালো। নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করে সোজা মায়ের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। বালিশের নিচে হাত দিলো। সাদা খাম বেরিয়ে এসেছে,খামটা খোলাই আছে। রাত পকেট থেকে নিজের চিঠিটা বের করলো। দুটো একসাথে আবার বালিশের নিচে রেখে দিয়েছে। উঠে দাড়াতেই কিছু একটা ভাবলো। পরক্ষণেই খামদুটো বের করে নিলো। দুটো চিঠির দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের চিঠির খামটা খুলে নিচ্ছে। মায়ের ঘুমন্ত চেহারায় তাকিয়ে ঠোঁট বাকানো হাঁসি।
চিঠির কার্যকলাপ শেষ করে বিছানার পাশ ঘেষে সন্ধ্যার কাছে এলো রাত। মুখের কাছটাতে ঝুকে এসে কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বিড়বিড় করছে,আমার বউ! আমার স্বপ্নবধু!! স্বপ্ন থেকে বাস্তবে এলি অথচ আমার থেকে দুরে। আমি যা চেয়েছি তা তুই আমাকে দিয়েছিস। আমি সামলেও উঠেছি কিন্তু তুই?? তোর পাওয়াটা কেন সামলাতে পারলিনা?? আমি তোর উপর রাগ ঝাড়ি এটাই তো চেয়ে এসেছিলি?? ইচ্ছেতে হোক আর অনিচ্ছাতে হোক,সেটাই তো হয়েছে! তাহলে সেটা সামলে নিতে পারলিনা কেন?? যা পূর্ণকরণ করার শক্তি তোর মধ্যে নেই সেই চাওয়া এতো বছর ধরে পুষে রেখেছিলি কেন?? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে। আমি যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। যে মেয়ে কারো কড়া কথাতে ছিটকে উঠে সে মেয়ে আমার কঠিনরূপটাকে কি করে সহ্য করতে পারবে?? আমি জানতাম বলেই এতোদিন আমার শাসনটা তোর সামনে আনিনি। যে ভয় নিয়ে তোকে বড় হতে দেখেছি সে ভয়টাই আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আমি এখন তোর কাছে একজন ভয়ংকর মানুষ হয়ে গিয়েছি। আমার কন্ঠ শুনে তুই ভয় পাস,আমার উপস্থিতিকে তুই ভয় পাস,আমার স্পর্শকে তুই ভয় পাস!
রাত উদাসীভাবনাতে সন্ধ্যার গাল ছুয়ে আছে। হাতের ছোয়া আরেকটু গাঢ় করে সন্ধ্যার কানের কাছে ঝুকে এলো,ফিসফিস করে বলছে,,তোকে ছুতে ইচ্ছে করছে! গভীর নিরবধি ছোয়া!!
রাতের কথা শেষ হতেই সন্ধ্যা দুরন্তগতিতে চোখ মেললো। চোখদুটো রসগোল্লার আকার ধারণ করছে,ঠোঁট কাঁপিয়ে চিৎকার দিবে অমনি রাত ওর মুখ চেপে ধরলো। নিচু স্বরে বললো,,
“” চুপ,চিৎকার করবিনা। আম্মু জেগে যাবে।””
রাত ধমক দিচ্ছে নাকি অনুরোধ করছে সেটা ভাবনায় নিচ্ছেনা সন্ধ্যা। নিজের খোলা চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। ডানহাত হাতরিয়ে তিয়ামতীর শরীর খামচে ধরলো।
“” রাত,তুই?””
মায়ের বিস্মিত কন্ঠে রাতের চোখ সন্ধ্যার দিকে থেকে সরে গেলো। মায়ের দিকে পড়েছে। সেই সুযোগে সন্ধ্যা রাতের হাত থেকেও ছুটে গেলো। রাতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে খাটের অপরপাশে গিয়ে লুকিয়ে পড়েছে। রাত আর তিয়ামতীর দুজনের চোখই তখন সন্ধ্যার উপর। সন্ধ্যা তিয়ামতীর একটা হাত টেনে নিয়ে মুখ লুকিয়ে বললো,,
“” তোমার ছেলে আমাকে মেরে ফেলতে এসেছে! আমি এখনি দম আটকে মরে যাচ্ছিলাম।””
সন্ধ্যার কথাতে রাত বাকরুদ্ধ। শূন্যদৃষ্টি সন্ধ্যার আড়াল হওয়াতে।
“” তুই ওকে মেরে ফেলতে এসেছিলি? রাত তুই কি খুনি হতে চাচ্ছিস?””
মায়ের প্রশ্নে রাত থতমত। বউ আর মা মিলে তাকে খুনি বানিয়ে দিয়েছে। আহা! এই তার গুপ্তধন??এই গুপ্তধনের সন্ধানে সে পৃথিবীতে এসেছিলো??
“” কিরে চুপ করে আছিস কেন?””
“” তো কি করবো? উত্তর দেওয়ার মতো প্রশ্ন তো করোনি যে উত্তর দিবো।””
“” এমন ঘাড়ত্যাড়া উত্তর দিচ্ছিস কেন??””
“” আমার ঘাড়ের সব তার ত্যাড়া হয়ে গিয়েছে তো তাই।””
রাত পাশে পরে থাকা বালিশটা মাটিতে ফেলে দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো। মাথার তালু টগবগিয়ে ফুটছে। ইচ্ছে করছে নিজের শরীরের মাংস কেটে তালুতে সিদ্ধ করতে। মানুষের মাংস খেতে কেমন সেটা জানা উচিত।
~~
“” তুই কি না খেয়ে বেরিয়ে যাবি?””
রাত শার্ট প্যান্টে গুজতে গুজতে ব্যাস্ত গলায় বললো,,
“” হুম!””
“” কেন?””
“” জানিনা।””
“” এটা কেমন উত্তর হলো?””
রাত আয়নায় নিজেকে ভালোমতো দেখে চুলে আঙুল বুলিয়ে বললো,,
“” তাও জানিনা।””
তিয়ামতী এবার রাগী মেজাজ নিয়ে বললেন,
“” রাত,তুই কিন্তু আমাকে রাগাচ্ছিস!””
রাত মাথা ঝুকে নিয়ে বললো,,
“” আম্মু,একটু ফু দিয়ে দাও তো। অফিসের প্রথম দিন। দিনটা যেন ভালো হয়। দোয়া করে দাও।””
তিয়ামতী বিড়বিড় করে কিছু পড়লো। ছেলের মাথায় ফু দিয়ে বললো,,
“” অফিস মানে? কিসের অফিস?””
“” ফুপার কাছ থেকে জেনে নাও। এখন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।””
রাত ব্যস্ত পা চালিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তিয়ামতী পেছন থেকে উচু গলায় বললেন,,
“” আজকের নাস্তাটা সন্ধ্যা বানিয়েছে।””
তিয়ামতীর গলার স্বর রাতের কানে বেজেছে। পা দুটো থমকেও গিয়েছে। সামনে সদর দরজা,ডানপাশে ডাইনিং। সিকান্দার সাহেব আয়েশ করে খাচ্ছেন,পাশেই দাড়িয়ে আছেন রাতের ফুপি রিমা। মাথাটা ডানদিকে আরেকটু ঘুরতেই রান্নাঘরে চোখ পড়লো। তার গিন্মিসাহেবা ডিম ভাজছেন। তেলের তীব্র গন্ধ রাতের নাকে বাড়ি খেলো। বুকভরে গন্ধ টেনে পা’টা ডানদিকেই চালালো রাত।
রাত চেয়ার টেনে বসে আছে। সামনে এখনো নাস্তা আসেনি। তাতে কি সে অপেক্ষায় সময় পার করবে,আজ তার চাকরীর প্রথম দিনকে শেষ দিন বানাবে তবুও সে বউয়ের হাতের ডিম ভাজাটা খাবেই খাবে। বিয়ের বয়স পনেরো দিন হতে চললো,নিরামিষিটা ভাঙা দরকার। বউয়ের জায়গায় নাহয় আজ তার হাতের ডিমভাজা দিয়েই ভাঙবে। বউয়ের মতো ডিমটাও তো আমিষেই পড়ে!
রাতের চোখ বন্ধ। পা নাচুনির সাথে হাতের পাঁচ আঙুল গালেও নেচে যাচ্ছে। এক গভীর অপেক্ষার দোলনায় সে দুলছে। হঠাৎ দুলুনি বন্ধ করে তিয়ামতী ওর সামনে নাস্তা রেখে পাশের চেয়ারটায় নিজেও বসে পড়লো। রাত হাত আর পায়ের নাচুনি বন্ধ করে বললো,,
“” তুমি নাস্তা নিয়ে এলে যে?””
“” তোর নাস্তা তো আমিই আনি। এতো অবাক হওয়ার কি আছে?””
তিয়ামতীর প্রতিত্তোরে রাত কিছু বললোনা। আশেপাশে কোথাও সন্ধ্যাকে দেখতে পাচ্ছেনা। রান্নাঘরেও নেই।
“” আম্মু,সন্ধ্যা কোথায় গেলো? ও খাবেনা?””
“” খাচ্ছে তো।””
“” কোথায়?””
“” আমার রুমে। এতো করে সাধলাম মেয়েটা এলোইনা।””
রাত চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লো। সামনে থাকা পানির গ্লাসটা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে সদর দরজার দিকে চলে যাচ্ছে।
~~
আজ বেলা করে গোসল করেছে তিয়ামতী। শরীরটা কেমন জানি লাগছে। অসুস্থের কোনো গন্ধ নেই এ অন্য গন্ধ। বুকের ভেতরটা কেমন কাঠ ফাঁপা অস্থিরতা জায়গা করে নিচ্ছে। এমন অদ্ভুত অনুভূতির সাথে সে আগেও পরিচিত হয়েছিলো তবে তা বহু আগে। যখন তার রিদ ভাইয়ার আসার খবর পেয়েছিলো। কিশোরী বয়সের সেই অনুভূতিটা আজ এতোবছর পর কেন নড়ে উঠেছে বুঝতে পারছেননা তিয়ামতী। চুল থেকে ভেজা টাওয়ালটা খুলে হাতে রেখেই দাড়িয়ে রইলেন। জানালার কাঁচটা সরিয়ে নিয়েছেন। না চাইতেও বিকেলের ব্যস্তপথে চোখ পড়ে যাচ্ছে। তার চোখটা কাউকে খুজছে। কিন্তু কাকে? কারো তো আসার কথা না। তাহলে?? রাতের জন্য কি? ছেলেটা সেই সকালে রাগ দেখিয়ে বাড়ি ছেড়েছে। পেটে খাবারটাও ফেলেনি। বাইরে থেকে কিছু খেয়েছে নাকি কে জানে? যদিও কিছুক্ষণ আগে নিজেই কল করে জানিয়েছে বাহির থেকে খেয়ে নিয়েছে। সাথে তো এটাও জানিয়েছে,আসতে রাত হবে। তাহলে আর কার অপেক্ষায় চোখদুটো বারবার পথপানে আটকে যেতে চাইছে??
“” একি মামি,এই বেলা গোসল করলে যে? চুলের পানিটাও তো ঠিকমতো মুছোনি!””
তিয়ামতীর হাত থেকে টাওয়ালটা নিয়ে চুল মুছতে শুরু করেছে সন্ধ্যা।
“” তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?””
সন্ধ্যার প্রশ্নে তিয়ামতী পথ থেকে চোখদুটোকে আলগা করলো। নিজেই নিজের চুল বেধে নিয়ে বললো,,
“” না। এমনি ভালো লাগছেনা।””
“” চলো লুডু খেলি!””
সন্ধ্যার এমন খাপছাড়া বাক্যে তিয়ামতী অবাক। হঠাৎ লুডু এলো কোথা থেকে??
তিয়ামতীর মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করে সন্ধ্যা রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। মিনিট পাচ পার করে একহাতে লুডু আরেক হাতে ওর মা রিমাকে নিয়ে হাজির। রিমার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে উনাকে ঘুম থেকে তুলে এনেছে।
মা আর মামিকে দুপাশে বসিয়ে সন্ধ্যা লুডুর গুটি গুছানোতে ব্যস্ত। রিমা তখনো হামি টেনে ঝিমুচ্ছে। তিয়ামতী সন্ধ্যার গুটি সাজানোর দিকে চেয়ে থাকলেও ডুবে আছে সন্ধ্যার মাঝে। মেয়েটাকে সে বুঝতে পারছেনা। যে মেয়েটা সারাদিন রাতের আশেপাশে ঘুরঘুর করতো সে মেয়েটা এখন রাতের অনুপস্থিতে স্বাভাবিক আচরনে আনন্দিত। তাহলে কি ও চাইছে রাত ওর জীবনে আর না আসুক?? কিন্তু এটা কি করে হতে পারে?? একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক আত্মা দুভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। আসলেই কি রাতের উপস্থিতে সন্ধ্যার মনে ভয় জায়গা করে নেয় নাকি সব এগুলো অভিনয়? এমন নয়তো যে এটাও ওর নতুন চাল??
“” ও মামি,কোথায় হারিয়ে গেলে?””
তিয়ামতী ধ্যান না কাটিয়েই উত্তর দিলো,,
“” তোর মাঝে। তোকে বুঝার চেষ্টা করছি। তোর মাঝে কি চলছে? তুই কি চাচ্ছিস বলতো?””
“” আমি আবার কি চাইলাম?””
“” রাতের সামনে পাগলের মতো আচরন করিস কেন? বিয়ে হয়েছে,স্বামীর সাথে সাথে ঘুরবি তা না শ্বাশুড়ীর আঁচলের নিচে লুকোচ্ছিস? কি সমস্যা??””
রাতের নামটা শুনতেই সন্ধ্যার ঠোঁটের হাসিটা মিলিয়ে গেলো। মামির কাছ ঘেসে এসে বললো,,
“” তোমার ছেলে আমায় একটুও ভালোবাসেনা। আমাকে দেখলেই খুন করতে চায়। আমি এত জলদি মরতে চাইনা,মামি!””
সন্ধ্যার কথায় তিয়ামতীর ভ্রু সংকুচিত।
“” রাত তোকে খুন করতে চায়?””
“” তা নাহলে কি? ঐদিন আমার গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছিলো,কাল রাতেও তো আমার নাক,মুখ চেপে ধরেছিলো,তুমি দেখনি? আমার এমন খুনি স্বামী চাইনা। তুমি আমাকে একটা শান্তশিষ্ট,ভদ্র ছেলে দেখে বিয়ে দিও তো!””
সন্ধ্যা নিজের বাক্যব্যয় শেষে গুটি ভাগ করে নেওয়ায় ব্যস্ত। রিমা বসে বসে ঘুমোচ্ছে। তিয়ামতী চোখদুটো বড়বড় করে হা করে আছে,এই মেয়ে কি জানে এই কথাটা রাতের কানে গেলে সত্যি সত্যি খুন হয়ে যাবে।
~~
অফিস আওয়ার পাঁচটা পর্যন্ত হলেও রাত বাড়ি ফিরেছে ৮টার দিকে। নিজের শূন্যরুমটার দিকে তাকিয়ে শরীরের ঘামটা আরো বারিয়ে তুলছে। ক্লান্ত শরীরটা আরো বেশি ক্লান্ত লাগছে। চোখ বুঝে অনুভব করছে সন্ধ্যার অনুপস্থিত। স্বামী সারাদিন খেটে এসেছে,কোথায় বউ দৌড়ে এসে ঘাম মুছে দিবে,দুএকটা আদুরী গলায় ক্লান্তি দুর করে দিবে,দুটো চুমু খেয়ে ভালোবাসায় দুর্বলতাকে হাওয়াই উড়িয়ে দিবে। তা না সে এখন ফোন টিপায় ব্যস্ত। ইচ্ছে করছে নিজেই ফোন সেজে ওকে গিয়ে বলতে,নে এবার আমাকে টিপ!
~~
মনের ভেতরের আনচানটা সারাদিনেও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তিয়ামতী। কাটাবে কি যত সময় গড়াচ্ছে তত বাড়ছে। অস্থিরতা এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে সে কোনো কাজেই মন বসাতে পারছেনা। না বসে শান্তি পাচ্ছে,না শুয়ে! এমন কি খাওয়াতে এসেছে প্রচন্ড অনিহা। খাবেনা খাবেনা করেও ছেলের জোরাজুরিতে খাবার টেবিলে এসে হাজির হয়েছে।
রিমা খাবার সাজিয়ে তরকারীটা আনতে রান্নাঘরে যাবে অমনি শাড়ীর আঁচলে টান পড়লো। বেশ তিক্ত কন্ঠেই হাকিয়ে উঠলো,,
“” তখন থেকে দেখছি,আমার কাপড় ধরে টানাটানি করছিস। কি হয়েছে তোর?””
মায়ের ঝাড়িতে সন্ধ্যা চুপ। আঁচলটা হাতের মুঠোতে নিয়ে খালি প্লেটের দিকে তাকিয়ে আছে।
“” ছাড় বলছি,অসহ্য একটা। বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখনো আমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে।””
রিমার কথার বিপরীতে সিকান্দার সাহেব মুখ খুললেন।
“” দেখছো মেয়েটা ভয়ে কুকরিয়ে যাচ্ছে। তাও ওকে ঝাড়ি দিচ্ছো? মেয়ে মায়ের আঁচল ধরবে না তো কি বাপের ধরবে? তোমার যদি এতোই বিরক্ত লাগে তাহলে আমাকেই শাড়ী পড়িয়ে দাও। আমার মেয়ে আমার শাড়ী ধরুক।””
রিমা গরম চাহনি সন্ধ্যার বাবার দিকে ফেললেন। সাথে সাথে সিকান্দার সাহেবের চড়া গলা নিচু হয়ে গেলো। ঠান্ডা সুরে মেয়েকে বললেন,,
“” মা,আমার তো আঁচল নেই,তুই বরং আমার পান্জাবীটাই ধর!””
রাত আর তিয়মাতী চুপচাপ ওদের কথোপকথনে মনোযোগী। রাতের গরম চোখ সন্ধ্যার উপর। মায়ের পাশে সে থাকাতে যে সন্ধ্যা বাবা-মায়ের আশ্রয়ে সিটিয়েছে সেটা সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
রাত মায়ের প্লেটে ভাত দেওয়ায় তিয়ামতী অভিযোগ করে বসলেন,,
“”তুই কিন্তু বলেছিলি,আমার খেতে হবেনা। তোর পাশে বসে তোর খাওয়া দেখলেই চলবে।””
“” তাই বলেছিলাম?””
“” রাত,আমি কি তোর বান্ধুবী লাগি? আমার সাথে মশকরা করছিস।””
“” আমি মশকরা করলাম কখন, আম্মু?””
“” রাত!””
মায়ের শাসনি ডাকে রাত হেঁসে উঠে বললো,,
“”একটুখানি খেলেই চলবে। তোমার ঔষুধ খেতে হবে আম্মু।””
দুজনের কথার মাঝখানে রিমা ফোড়ন কেটে বললেন,,
“”ছেড়ে দে তো রাত। ও যখন খেতে চাচ্ছেনা তখন জোর করিসনা। আজকাল ওর মর্জিতে আর কারো মর্জি চলেনা।””
রাত ফুপির উদ্দেশ্যে কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে ভারী পুরুষকন্ঠ,,
“” তাই নাকি তিল? তোর মর্জিই সব?””
সন্ধ্যা,সিকান্দার সাহেব,রাতের দৃষ্টি পুরুষকন্ঠকে অনুসরন করলেও তিয়ামতী করলোনা। সে চুপচাপ বসে রইলো। ঘাড় বাকিয়ে পুরুষকন্ঠির লোকটিকে দেখার প্রয়োজনবোধটাও করছেনা।
চলবে