ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (২৪)

0
3520

ভালোবাসার রাত Season_2,পর্ব (২৪)
রোকসানা রাহমান

রিদান মাথা উচু করে নাক উচিয়ে বললো,,

“” কেমন গন্ধ গন্ধ লাগছে রে তিল,কোথা থেকে আসছে বলতো?””

রিদান মাথাটা বামে-ডানে ঘুরিয়ে গন্ধের উৎস খুজার ভঙ্গি করছে। সেই ফাঁকে তিয়ামতী চট করে বামহাতে নাকটা মুছে নিলো। মিহিসুরে বললো,,

“” কোথায় গন্ধ,আমি তো পাচ্ছিনা।””
“” দেখি তোর হাতটা দেখাতো!””

হাত লুকিয়ে তিয়ামতী করুণভাবে রিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিদের তাড়াসুর,,

“” কি হলো,দেখা। হাত কই তোর? খেয়ে ফেলেছিস?””

তিয়ামতী বামহাতটা নিজের পিঠের নিচে লুকিয়ে ডানহাত বাড়িয়ে ধরলো। রিদান হাতের তালুতে গভীরভাবে নাক ডুবিয়ে বললো,,

“” আরেক হাত কই?? মাইক দিয়ে পে পে করে বলতে হবে যে হাতদেবী,আপনার বা’হাতটা কি আমি একটু দেখতে পারি? একটু গন্ধ শুকতাম!””

তিয়ামতী মুখে আধার এনে বা’হাতটাও বাড়িয়ে ধরলো। হাতের দিকে তাকিয়েই রিদান বলে উঠলো,,

“” ছি!ছি!!ছি!!! তুই টয়লেট ছেড়ে হাত ধোসনা গন্ধে তো আমার বমি আসছে!””

রিদান দু’গালে বাতাস ভরে বমি করার ভাব ধরেছে। এইবুঝি পেট উল্টিয়ে সব বের হবে। তিয়ামতী কান্নাসুরে বললো,,

“” আপনি পচা কথা কেন বলছেন? আমি তো এই হাত দিয়ে নাকেল ঘাম মুছেছিলাম!””

রিদান তিয়ামতীর নাকের দিকে তাকিয়ে অট্টস্বরে হেঁসে উঠলো,,

“” তারমানে তোর নাকে জীবানুরা পায়খানা করেছিলো?? তাইতো বলি এমন নিকৃষ্ট গন্ধ কোথা থেকে আসছে।””

রিদ তিয়ামতীর নাকে গাঢ়দৃষ্টি দিয়ে বললো,,

“” এই দেখ,দেখ আবার পায়খানা জমছে!””

রিদ আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। হাসির সুরে তার মুখমন্ডল ছোটছোট নড়নে নড়ছে। তিয়ামতীর এখন ঠোঁট ভেঙে কান্না আসতে চাইছে। কিন্তু সে কাঁদবেনা। সে এখন তার রিদ ভাইয়াকে দেখবে। ইশ! কতযুগ পর দেখছে! চোখের দেখাটা পাবে তা তো সে কল্পনাও করেনি।

কপালের কাছঘেষা চুলে দু/একটা সাদা চুল উকি দিচ্ছে। এতে যেন রিদের ফর্সামুখের সৌন্দর্যটা দ্বিগুন হারে বেড়েছে। ছোটবেলা পাঠ্য বইয়ের এক গল্পে পড়েছিলো,বুড়ো হলে মানুষ আরো বেশি সুন্দর হয়ে যায়। কথাটা কি রিদ ভাইয়ার সাথে মিলে যাচ্ছে?? সত্যিই কি তাই নাকি সব তার মনের ভুল। ওর রিদ ভাইয়া তো হাতে লাঠি ধরা বুড়ো নয়,চেহারায় এখনো যুবক বয়সের ছাপ স্পষ্ট! আর ব্যবহার??

তিয়ামতীর ভাবনায় ছেদ পড়ে রিদের আরেকদফা অট্টহাসিতে। ভাবনার ছেদ জোড়া লাগিয়ে আবার ভাবনারাজ্যে ডুব দিলো। মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর,রাগী,একরোখা,গম্ভীর,স্বল্পবাক্য ছেলেগুলোর অট্টহাসি দুই রকম হয়। এক. বোকা হাসি,যেটা তাদের চেহারার সাথে একেবারেই যায়না ২. বাচ্চাহাসি। রিদের হাসিটাকে তিয়ামতী দুই নাম্বারে ফেললো।

রিদান হঠাৎ করেই তিয়ামতীর উপর থেকে সরে গিয়ে বললো,,

“” কাত হয়ে শো’তো। এভাবে শুয়ে আরাম পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে তোকে ভালো করে ছুতে পারছিনা,আর কথাও বলতে পারছিনা।””

তিয়ামতী রিদানের ভাবসাব বোঝার চেষ্টা করছে। রিদান বড্ড অধৈর্য্য হয়ে নিজেই ওকে ডানপাশে ঘুরিয়ে দিলো। বা’পাশে নিজে শুয়ে নিয়ে তিয়ামতীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো। তিয়ামতীর পেটে হাতের নরম স্পর্শ দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। গলার ভাজে ছোট্ট চুমু খেলো। তিয়ামতীর চোখ বুঝে আসছে,গাঢ় ঘুমের ডোরাকাঁটা জ্বালা চোখে নিয়ে রিদের মধ্যে গুটিসুটি মেরে মিশে যাওয়ার প্রবল প্রনবতা!

তিয়ামতীর গালের সাথে নিজের গাল মিশিয়ে নিলো। রিদানের ফিসফিস সুর,,

“” কি ভেবেছিলি? আমি মরে গিয়েছি?””

এইবাক্যটা যে তিয়ামতীর খুব অপছন্দ হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে রিদ। ও সরে যেতে নিলেই রিদের হাতের স্পর্শ শক্ত হয়ে পড়লো তিয়ামতীর পেটে।

“” চুপচাপ শুয়ে থাক। অনেক কথা বলার আছে,অনেক কিছু জানানোর আছে। আমাকে ক্ষেপাস না। তুই জানিস আমার এতো ধৈর্য্য নেই। তবুও এখন ধৈর্য্য চেপে ধরে আছি।””

রিদের অনুশাসনে তিয়ামতীর শক্ত হয়ে আসা শরীরটা আবার নরম হয়ে আসলো। চুপচাপ শুয়ে রইলো।

“”যেদিন তোকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠালাম সেদিনটার কথা আমি আজও ভুলতে পারিনি। তোর চোখের পানিগুলো আমাকে বড্ড জ্বালিয়েছে রে,প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে আমাকে পুড়িয়েছে। তোর ভেতরটা শূন্য হয়ে যাচ্ছিলো তবুও তুই মুখ ফুটে একটাবার বলতে পারিসনি,আমি যাবোনা,আমি আপনার কাছে থাকবো। কিন্তু চোখের জলে সব বলে দিচ্ছিলি। আর আমি তোর চোখের ভাষা বুঝতে পেরেও তোকে ফেরত পাঠালাম।কাধে বয়ে বেড়াচ্ছিলাম তোর আর আমার একটি ভালোবাসার রাত! তুই আমার বলা প্রত্যেকটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিস। না নিজে আমার খোঁজ করতে এসেছিস আর না কাউকে খোঁজ করতে দিয়েছিস। তোর বুকে তুই কত বড় পাথর চেপে রেখেছিলি তার পরিমাপটা আমি টের পেয়েছিলাম। কিছুদিন বাদেই তুই আমাকে চিঠি লিখলি। জাস্ট একটি লাইন ছিলো চিঠিতে,*কেমন আছো,লিদ ভাইয়া* আমি জানি এই একটি লাইনের দশটা অক্ষরে ছিলো তোর অজস্র সুপ্ত অভিমান। আমি সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম। ইচ্ছে হচ্ছিলো এখনি চলে আসি তোর কাছে। তোকে বুকে চেপে ধরে বলি,আমি তোকে ছাড়া একটুও ভালো নেই। ভালো থাকা সম্ভবও না। কিন্তু তুই তো জানতিস আমি নিরুপায়। তারপর তোর দ্বিতীয় চিঠি। যেখানে তুই আমায় জানালি আমার ভালোবাসার মুক্তোর দানা তোর পেটে। সেদিনও আমি অনেক কেঁদেছিলাম কিন্তু ওটা সুখের কান্না ছিলো। কারণ,তোর চাওয়া পুর্ণ হতে চলেছে। আমার তখন তোর মুখটা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো খুব। কিন্তু তা আমার ভাগ্যে ছিলো কই। এরপর থেকে তুই আমাকে নিয়মিত চিঠি লিখতে শুরু করলি। এখন আর এক দুই লাইন নয়,এক/দুই পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো তোর চিঠি। খুটে খুটে তোর আর আমার ছেলের কথা লিখতি। তুই বিশ্বাস কর,তোর চিঠি পড়ার সময় আমি ভুলেই যেতাম আমি তোদের মাঝে নেই। অনেকটা দুরে,হয়তো কখনো কাছে আসতেও পারবোনা। আমি তো সব আমার চোখের সামনে দেখতে পারতাম। মনে হতো তোরা আমার মাঝেই আছিস। এভাবেই চলছিলো।

তোর চিঠি আর আমার অসুস্থতা সমান তালে চলছিলো। যত তোর চিঠি আসছিলো তত আমার অবস্থা শোচনীয়ের পথে। দিনকে দিন শারীরিক দুর্বলতা আমাকে খেয়ে ফেলছিলো। এর মাঝেই আমার ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষক এসে হাজির। আমাকে খুব স্নেহ করতেন উনি,ছেলের মতো ভালোবাসতেন। উনি আমাকে দেখে খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমাকে বিভিন্ন হ্যালথকেয়ারের পরামর্শ দিলেন। অনেক যুক্তি,উপযুক্তিতে আমাকে বুঝাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। যেখানে আমি জানতাম আমি আর কিছুদিনের অতিথি সেখানে এসব ঝামেলায় গিয়ে কি হবে?? আমার মতো উনিও জেদ চেপে বসলেন,আমার এখানে ঘনঘন আসতে লাগলেন। হয়তো খুব বেশিই আমার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলেন অথবা কোনো এক অদৃশ্য টান অনুভব করছিলেন আমার জন্য!

এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো আমার দিন। আমার অবস্থা এতোই খারাপ যে আমি বিছানা বাসী। যেখানে ভেবেছিলাম,হয়তো আর এক/দুবছর নিশ্বাস নেওয়ার শক্তি আমার সেখানে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে তখনও আমি দিব্যি নিশ্বাস নিতে পারছি। যদিও শরীর তখন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই দিকে তোর পাঠানো রাতের হাজারও ছবি,দুষ্টুমীর ছন্দ আমার ভেতর লোভ জাগাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সব নিয়মকানুনের বাইরে চলে যেতে যেখানে আমার নিয়মে সব হবে,আমার ইচ্ছেতে সব হবে। যেখানে থাকবো তুই আমি আর আমাদের ভালোবাসার রাত।

নিজের ভাগ্যের সাথে লড়াই করে পেরে উঠছিলাম না। অবশেষে নিজের জেদ ছেড়ে স্যারের আশ্রয়ে সিটিয়ে গেলাম। মনের কোনে ছোট্ট ইচ্ছা,দেখিনা কি হয়। উনি বেশ উৎসাহেই আমাকে অন্যত্র শিফট করালেন। যেখানে আমার মতো হাজারও রোগী আশার আলো খুজছেন। তাদের দেখে আমার মনে অন্যরকম বল তৈরী হলো।

কঠোর নিয়মকানুন,জীবনচর্চায়,চিকিৎসাধীনে আমার শরীরের অনেকটাই পরিবর্তন আসছিলো। মনের ভেতর আবার ক্ষীণ আশার আলো জাগছিলো। মাঝে মাঝেই স্বপ্নে তোকে ছুতে চাইতাম। আমার ছোট্ট পৃথিবীকে আকড়ে ধরে বাঁচার প্রবল উন্মেদনায় ভুগতাম। ধীরে ধীরে আমি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠছিলাম।

এতো বছরেরও তোর কোনো চিঠির উত্তর আমি দেইনি। কিইবা লিখতাম বল?? লেখার মতো কিছু ছিলো কি?? কিন্তু এইবার পুরো ৯ বছর বাদে তোকে লিখতে বসেছিলাম। একটু সুখের ছন্দ। কিন্তু ডাকবাক্সে চিঠি ফেলার আগেই আমার জীবনের ছন্দপতন ঘটলো। হঠাৎ করেই শরীর খারাপ হতে লাগলো। ডক্টররা চেকআপ করে জানালেন,আমার শরীরে বাস করছে ব্লাডক্যানসার! আমি আবার ভেঙে পড়ি। আমার একটু একটু করে সাজানো সেই আশার আলো দমকা হাওয়াই আবার অন্ধকারে মিলে গেলো। ছিড়ে ফেললাম তোর চিঠির উত্তর। ভেঙে গেলো আমার জীবনচর্চার কঠোর নিয়ম।

আমি আর ওখানে পড়ে থাকতে পারছিলাম না। একাকিত্ব আমাকে গ্রাস করে ফেলছিলো। ডুবে যাচ্ছিলাম হতাশায়। আমি এতোটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে আমি আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজটাও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার আশার আলো নিভে গেলেও স্যারের যায়নি। উনার মধ্যে কিছু তো ছিলো। যা আমাকে নতুন জীবন দেওয়ার জন্য উনাকে উন্মাদ করে তুলছিলো। তার বেশ কয়দিনবাদে উনি আমার কাছে আসেন এক নতুন ইচ্ছের ফুল নিয়ে। উনি আমার শরীরে স্টেম-সেল প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। এটি বিভিন্ন ক্যানসারের প্রতিকরণের করা হয়। ২০০৩ সালে একজন এইডস রোগী ক্রমাগত স্টেম-সেলের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। সেই রেখা থেকেই স্যার আমাকে এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে বলেন। যদিও এটি একটি ব্যয়বহুল,জটিল এবং ঝুকিপূর্ণ। আবার কোনো টেকসই ব্যবস্থাও না। কিন্তু যেখানে আমার বেঁচে থাকার সামান্য কোনো আশা নেই সেখানে আমি দ্বিমত প্রকাশ করেই কি করবো?? আমি আমার নিজ থেকে নিজেকে বিসর্জন দিলাম। যা হবার হবে!

তারপর উনার তত্ত্ববধানে আমি দীর্ঘসময় কাটাচ্ছিলাম। ডক্টররা বারবার পরীক্ষা করেও কোনো পজেটিভ ফলাফল পাচ্ছিলেননা। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সেই চেষ্টাতে আর তোর ভালোবাসার টানেই মনে হয় আমার এতকিছুর মাঝেও নিজের নিশ্বাসটা আটকে ছিলো। নিশ্বাসটা তো আর আমার নামে না তোর নামেই চলছিলো। তাই আজ আমি তোর কাছে।

আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নই,আর কখনো হয়তো হয়ে উঠাও হবেনা। তবুও আমার কোনো দুঃখ নেই। আবার যে তোর কাছে,তোর ছোয়ায় বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছি আমার এতেই চলবে। আমি জানিনা কি করে কি হয়েছে,তবে সৃষ্টিকর্তা চাইলে কিছুই অসম্ভব নয়।

কতদিন বাঁচবো জানিনা। তবে তোকে ছাড়া আমি আর এক সেকেন্ডও বাঁচতে চাইনা। এমনিতেও আমাদের দেশের গড়আয়ু ৬০-৬৫ বছর। আমি তো অলরেডি প্রায় ৫০ বছরেই রয়েছি। তাহলে আর কিসের চিন্তা?? সুস্থ হোক আর অসুস্থ হাতে সময় খুব কম। এই কম সময়টাতে আমার তোকে চাই। কিরে থাকবি তো আমার হয়ে?””

তিয়ামতী তখনো চুপ। আজ যেন তার কর্ণদ্বয় সার্থক! এই মানুষটার কন্ঠস্বর শোনার অপেক্ষায়তো সে বেলায় বেলায় বিরস সময় কাটিয়েছে। রিদান তিয়ামতীর বুকে মাথা রেখে বললো,,

“” তোর ভালোবাসায় আমি সত্যি মুগ্ধ। এতো ভালোবাসা তুই কোথা থেকে শিখলি বলতো?””

তিয়ামতী রিদানের চুলে আঙুল ঢুকিয়ে বললো,,

“” আপনাল থেকে।””

রিদান সাথে সাথে ওর বুক থেকে মাথা সরিয়ে ফেললো। তিয়ামতীর দিকে সন্দিহানদৃষ্টিতে চেয়ে আছে,কপাল কুচকে বললো,,

“” আমি কি কখনো বলেছি আমি তোকে ভালোবাসি?””
“” বললেই কি না বললেই কি,আমি সব বুঝি!””
“” বাব্বাহ! এতো বুঝ?””

তিয়ামতী লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিতেই রিদান ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,,

“” আমি তোর এখানে ছিলাম বলেই আজ আবার ফিরে এলাম। যদিও ইচ্ছে ছিলো আরো কিছুদিন পর আসবো কিন্তু মা-ছেলের জন্য আর দুরে থাকতে পারলাম কই!””

রিদান তিয়ামতীর বামহাতটা নিজের চোখের সামনে ধরলো। শাহাদাৎ আঙুলে নিজের পড়িয়ে দেওয়া আংটি দুটো এখনো চকচক করছে। খুব বেশিই যত্ন পড়েছিলো মনে হয়। রিদান ঠোঁটে মিস্টি হাসি এনে আরেকটা প্লাটিনামের সরু আংটি পড়িয়ে বললো,,

“”তোর যত্নের আরেকজন ভাগীদার বানালাম।””
“” মানে?””
“” সেবার তোর আর আমার ভালোবাসার রাত এসেছিলো,এবার তোর আর আমার ভালোবাসার ভোর আসবে!””

তিয়ামতীর চোখদুটো বড় হয়ে আসছে বুঝতে পেরে রিদ ওর হাত দিয়ে চোখ ঢেকে, দ্রুততার সাথে বললো,,

“” একদম অবাক হওয়ার ঢং করবিনা। তুই যদি ভেবে থাকিস বয়সের দোহায় দিয়ে আমাকে দুরে রাখবি,সমাজের দোহায় দিয়ে আমাকে দমিয়ে রাখবি তাহলে আমি শুনবোনা। আমি কোনো দোহায় শুনবোনা,কোনো মানা শুনবোনা,কোনো বাধা মানবোনা। আমার সব চাই,আমার তোকে চাই,আমার বউকে চাই। নতুন বউয়ের মতো চাই। তোর লাজুক মুখ দেখতে চাই। বাবুরভারে বড় হওয়া পেটে চুমু খেতে চাই। আমার ছোট্ট বাবুকে কোলে নিতে চাই। ওর মুখে প্রথম বুলি শুনতে চাই,আমার বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতে চাই। আমার হাত ধরে হাঁটা শিখাতে চাই। আমার সব সব সব চাই,তিল। আমার এক ছেলেকে তুই তোর মতো করে বড় করেছিস। আরেক ছেলেকে আমার মতো করে বড় করবো। তুই কিচ্ছু বলবিনা। কিচ্ছুনা!””

তিয়ামতী জোর করে রিদানের হাতটা নিজের চোখ থেকে সরিয়ে বললো,,

“” এক ছেলে থাকতে আবার ছেলে কেন? আমার তো এখন মেয়ে চাই।””

তিয়ামতী নিজের কথা শেষ করেই দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে নিলো। ইশ! এটা সে কি বলে ফেললো? লজ্জায় তিয়ামতীর বিছানার সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। তিয়ামতীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে রিদান শব্দ করে হেসে উঠলো। এতে যেন তিয়ামতীর লজ্জা দ্বিগুন হারে বেড়ে গেছে। ইচ্ছে করছে রিদ ভাইয়াকে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যেতে। সত্যিই কি পালাবে? কিন্তু যদি ধরে ফেলে?? তিয়ামতী কিভাবে পালাবে সেই ছক সাজানোতে ব্যস্ত।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here