আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি,দ্বিতীয় পর্ব

0
2617

আকাশের চেয়েও বেশী তোমায় ভালোবাসি,দ্বিতীয় পর্ব
লেখনীতে:Waziha Zainab (নিহা)

সকাল সাতটায় আঁচল পরিপাটি হয়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো তার শাশুড়ী রাহেলা বেগম চুলায় চা বসিয়েছেন।আঁচল ধীরে পায়ে তার শাশুড়ীর সামনে গিয়ে বললো
“দিন মা আমি করে দিচ্ছি”
আঁচলকে দেখে তার শাশুড়ী বললো
“আরে মা তুমি এতো সকাল সকাল উঠেছো কেনো”
আঁচল ঘোমটা টা টেনে মুচকি হেসে বললো
“অভ্যাস”
আচঁলের শাশুড়ী মুচকি হেসে বললো
“অভ্যাস বললে তো চলবে না মা। তুমি আমার মেয়ের মতো। শোনো তুমি এখন বাড়ীর নতুন বউ সবকিছু মানিয়ে নিতে তোমার একটু সময় লাগবে তাই বিয়ের প্রথম দুই বছর তুমি সকালে নামাজ পড়ে আবার ঘুমাবে আর ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে সকাল দশটায়। দুই তিন বছর কেটে গেলে তুমিও সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে শিখবে তখন তোমার সকাল ছয়টায় উঠে সবার জন্য নাস্তা বানাতে হবে।। আমরা প্রত্যেকটা মেয়ে আগে বউ হয়ে আসি তারপর শাশুড়ী হই।প্রত্যেকটা শাশুড়ীর উচিত তার ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মতো করে আদর করার।কারণ অন্য বাড়ী থেকে একটা মেয়ে তার শ্বশুর শাশুড়ীর সাথে ঝগড়া/হিংসা করতে আসে না। চারদিকের ঝগড়া বিবাদ দেখেই সে ঝগড়া শিখে।”
আঁচল অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তার শাশুড়ীর দিকে। আঁচল মনে মনে ভাবছে এমন শাশুড়ীও হয় দুনিয়ায়। প্রত্যেকটা শাশুড়ী যদি এমন হতো তাহলে আর কোনো মেয়ের সংসার ভাঙতো না আর কোনো শাশুড়ীকেই বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হতো না।

আঁচল সবার জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে নিজের ঘরের দিকে উঁকি দিলো। আঁচল দেখলো আবির কম্পিউটারে কাজ করছে। আঁচল ধীরে পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো।৷ আঁচলের উপস্থিতি টের পেয়ে আবির কম্পিউটার অফ করে বারান্দায় চলে যায়। আঁচলও আবিরের পেছন পেছন বারান্দায় যায় গিয়ে আবিরকে বলে
“মা আপনাকে ব্রেকফাস্ট করতে ডাকছে”
আবির বিরক্তিকর ভাব দেখিয়ে বললো
“আমি ব্রেকফাস্ট করবো না”
আঁচল ভ্রু কুচকে বললো
“কেনো?”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“সব কেনো এর উত্তর হয় না”
আঁচল অবাক হয়ে বললো
“ভালোয় ভালোয় বলছি নাস্তা করতে চলুন। নাস্তা না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে”
আবির এবার ধমক দিয়ে বললো
“এই মেয়ে নূন্যতম লজ্জা কি তোমার মাঝে নেই। বুঝতে পারছো না আমি তোমাকে ঘৃণা করি।তুমি আমার সামনে এসে একদম জ্ঞান দিতে আসবে না। আমার ভালো মন্দ ভাবার জন্য আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। দু পয়সার মেয়ে। বড়লোক ছেলে দেখেছো তাই গলায় ঝুলে পড়েছো এটাই তো তোমাদের মতো থার্ডক্লাস মেয়েদের স্বভাব”
কথাগুলো বলে আবির আর একমুহূর্ত ওখানে দাড়ালো না। গাড়ীর চাবি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো

আঁচল ছলছল চোখে আবিরের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।আঁচল এক হাতে চোখের পানি মুছে নিজেকে সামলে নিলো। রাত দশটায় আবির বাসায় এলো তাও নেশাগ্রুস্থ অবস্থায়। আঁচল কলিংবেলের শব্দ শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখে আবির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। আবিরের কোনো হেলদোল নেই ঠিকভাবে দাড়াতেও পারছে না। আঁচল গিয়ে আবিরকে দেখে আঁচল তাড়াতাড়ি করে ধরে। আঁচল আবিরের এমন অবস্থা দেখে বুঝতে পারলো যে আবির নেশা করেছে। তাই আবিরকে ধরে ধীরে পায়ে ঘরে নিয়ে গেলো। আঁচল আবিরকে বিছানায় শুইয়ে সামনের দিকে পা বাড়াতেই আবির আঁচলের শাড়ীর আঁচলটা খামছে ধরে। আঁচল আবিরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রান্না ঘরে যায়। অনেক খোজাখুজির পর তেঁতুলের বৈয়ম পায় আঁচল। সেখান থেকে কিছু তেঁতুলের টক বানিয়ে ঘরে যায়। আবিরকে তুলে আঁচল নরম গলায় বললো
“এটা খেয়ে নিন”
আবির আঁচলের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
“তুমি খুব সুন্দর”
আঁচল নরম গলায় বলে
“হ্যা আমি জানি আমি সুন্দর কিন্তু আপনি এটা খেয়ে নিন”
আবির আবার বলে
“তোমার চুলগুলো বেশ লম্বা”
আঁচল ছোটো নিশ্বাস ফেলে বলে
“হ্যা এটা আগে খেয়ে নিন”
আবির বাচ্চাদের মতো জিজ্ঞাস করে
“এটা কি?”
আঁচল মুচকি হেসে বলে
“এটা জুস এটা খেলে গায়ে শক্তি বাড়ে”
আবির মুখ ভেংচি কেটে বলে
“এটা বাজে কেমন বাজে দুর্গন্ধ এটা খাবো না”

আঁচল অনেক জোরাজোরি করে আবিরকে টক টা খাওয়ায়। তারপর ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে
“আপনার বমি পাচ্ছে?”
আবির মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। আঁচল আবিরকে ধরে ওয়াশ্রুমে নিয়ে যায়। আবির বমি করে। আঁচল আবিরকে বিছানায় শুইয়ে নিজে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।।বিছানায় এসে আবিরের পাশে গা এলিয়ে দিতেই আবির আঁচলকে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আঁচল প্রথমে কোনো রিয়েক্ট করলো না কিন্তু পরক্ষণেই আবির আঁচলের ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আঁচল এক ঝাটকায় আবিরের থেকে সরে যায়। আবির আবারো আঁচলকে জড়িয়ে ধরে। আঁচল এবার আবিরকে নিজের গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে আঁচল উঠে বারান্দায় চলে যায়। আঁচল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আবির এখন হুসে নেই। ওর অসহায়ত্বের সুযোগ নেওয়াটা নিতান্তই অন্যায় হবে।চরম অন্যায়।। তাই এই মুহুর্তে আঁচলের আবিরের থেকে দূরে থাকাটাই শ্রেয়।।।

এভাবেই কাটতে লাগলো দিন। আবিরের বাজে কথাগুলো শোনা এখন আঁচলের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। প্রতিবাদী মেয়েটাও এখন চুপচাপ কথা হজম করতে শিখে গেছে।

ভোর পাঁচটায় আঁচল ঘুম থেকে ওঠে। আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে আবির এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আঁচল আবিরের কপালে আলতো করে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। গোসল শেষে আঁচল একটা কালো রঙের শাড়ী পরেছে।শাড়ী টা সিল্কের। আঁচল নামাজ পড়ে আবিরকেও নামাজ পড়ার জন্য জাগিয়ে দেয়।

আবির ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে আঁচল আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শাড়ী ঠিক করছে। আবির গিয়ে আঁচলের পেছনে দাঁড়িয়ে বলে
“তো কবে বিদায় হচ্ছেন মেম”
আঁচল আবিরের কথাটা বোঝার চেষ্টা করে ভ্রু কুচকে বললো
“মানে?”
আবির নিজের চুল ঠিক করতে করতে বললো
“স্নেহা আজ দেশে ফিরছে।। আর ও যদি জানে আমি এখনো তোমার সাথে রুম আর বেড শেয়ার করছি তাহলে মেয়েটা অনেকটাই কষ্ট পাবে। তাই তুমি কবে বিদায় হচ্ছো সেটা বলো”
আঁচলের চোখের কোণে পানি জমে গেলো আবিরের কথা শুনে। আঁচল নরম কন্ঠে বললো
“হুম”
আবির বাম হাতে ঘড়ি পরতে পরতে ভ্রু কুচকে বললো
“হুম মানে কি? কবে যাচ্ছো সেটা বলো। আর ইতিমধ্যে আমার উকিল সাহেবের সাথেও কথা হয়ে গেছে৷ উনি খুবতাড়াতাড়ি আমাদের ডিভোর্স পেপারটাও পাঠিয়ে দেবে”
প্রতিটা কথা যেনো আঁচলের হৃদয়ে গিয়ে আঁচড় কাটে। আঁচলের কোনো রেসপন্স না পেয়ে আবির দরজার দিকে পা বাড়ালো।
আবিরকে চলে যেতে দেখে আঁচল পেছন থেকে বললো
“জানি পেছন থেকে ডাক দেওয়া ঠিক না তবুও বলছি ব্রেকফাস্ট করে গেলে ভালো হতো।আর এতো সকাল বেলা কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
আবির বিরক্তিকর ভাব নিয়ে বললো
“আমার জীবনে তুমি আসার পর থেকে কিছুই ঠিক নেই। আর আজকে স্নেহা দেশে ফিরবে তাই স্নেহাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে যাচ্ছি।ব্রেকফাস্টটাও ওর সাথে করে নেবো এসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না তুমি শুধু এটা ভাবো কিভাবে আমার জীবন থেকে দূরে থাকবে”
এতোটুকু বলেই আবির চলে যায় আর আঁচল অসহায়ের মতো আবিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।।

আবির এয়ারপোর্টে পৌছালো।স্নেহা পেছন থেকে এসে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বললো
“Hello baby….কতোক্ষণ তোমার জন্য ওয়েট করছিলাম তুমি জানো? বেবী তোমাকে অনেক হট লাগছে”
স্নেহার কথা টা কেনো জানি আবিরের ভালো লাগলো না। তবুও আবির হাসি মুখে বললো
“কেমন আছো জান”
স্নেহা আবিরকে ছেড়ে কপাল ভাজ করে বললো
“একদমই ভালো না আমি বেবী। তুমি জানো কতোক্ষণ ওয়েট করছিলাম আমি তোমার জন্য”
আবির হাত দিয়ে নিজের দুই কানে হাত দিয়ে বললো
“সরি জান রাস্তায় ভীষণ জ্যাম ছিলো”
স্নেহা হাসি দিয়ে বললো
“হইছে আর ঢং করতে হবে না। Let’s go”

চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here